×

সারাদেশ

চট্টগ্রামে পুকুর-জলাশয় উদ্ধারে সংশ্লিষ্টরা নীরব, সচেষ্ট জেলা প্রশাসন

Icon

কাগজ প্রতিবেদক

প্রকাশ: ২১ জুন ২০২৩, ১০:৩২ এএম

চট্টগ্রামে পুকুর-জলাশয় উদ্ধারে সংশ্লিষ্টরা নীরব, সচেষ্ট জেলা প্রশাসন

ছবি: ভোরের কাগজ

চট্টগ্রামে পুকুর-জলাশয় উদ্ধারে সংশ্লিষ্টরা নীরব, সচেষ্ট জেলা প্রশাসন
চট্টগ্রামে পুকুর-জলাশয় উদ্ধারে সংশ্লিষ্টরা নীরব, সচেষ্ট জেলা প্রশাসন
চট্টগ্রামে পুকুর-জলাশয় উদ্ধারে সংশ্লিষ্টরা নীরব, সচেষ্ট জেলা প্রশাসন

চট্টগ্রামে অবৈধভাবে ভরাট করে ফেলা পুকুর-দীঘি-জলাশয় রক্ষায় সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ রহস্যজনকভাবে নীরব ভূমিকা পালন করছে। যদিও নগরীর মধ্যেকার এসব জলাশয় রক্ষার প্রধান দায়িত্ব সিটি কর্পোরেশন কর্তৃপক্ষের। পাশাপাশি অবশ্যই পরিবেশ অধিদপ্তর ও ফায়ার সার্ভিসের। তবে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের আগে এসব জলাশয় থেকে উপকারভোগী এলাকার যেসব নাগরিক রয়েছেন তাদের। কিন্তু অধিকাংশ ক্ষেত্রে এসব উপকারভোগীরাই কিন্তু অজ্ঞতাবশত অথবা ইচ্ছেকৃতভাবে সাময়িক লাভের আশায় এসব জলাশয়গুলোকে ভরাট করে ফেলছেন। কিন্তু এতে করে প্রাকৃতিক পরিবেশের ভারসাম্য যেমন নষ্ট হচ্ছে তেমনি আগুন লাগলে সেই আগুন নেভানোর জন্য তেমন কোন প্রাকৃতিক জলাধার খুঁজে পাওয়া যায়না চট্টগ্রাম নগরীতে।

তবে এতসব নেতিবাচক কার্যকলাপ ও তথ্যের মধ্যেও মাঝে মধ্যে কিছু সুখবর, কিছু ভালো উদ্যোগের খবরও পাওয়া যাচ্ছে। অর্থাৎ ভরাট হয়ে যাওয়া বা ভরাটের পায়তারা করছেন কোন অবিবেচক গোষ্ঠী এমন খবরে তা সমাধানে এবং প্রাণ বৈচিত্র রক্ষায় সম্প্রতি চট্টগ্রামের জেলা প্রশাসন এগিয়ে আসতে শুরু করেছে। চট্টগ্রামে বেশকিছু পরিবেশবাদী সংগঠন রয়েছে। কিন্তু এসব সংগঠনকে অধিকাংশ সময়ে মানববন্ধন বা আলোচনাসভা-শোভাযাত্রার মধ্যেই সীমাবদ্ধ থাকতে দেখা গেছে। চট্টগ্রাম নগরীতে কোন জলাশয় রক্ষা করতে এসব সংগঠন স্থানীয় জনসাধারণকে উদ্বুদ্ধ করে আন্দোলন গড়ে তুলেছেন বা জলাশয় ভরাট না করার জন্য সত্যিকার অর্থে কার্যকর কোন ভূমিকা রেখেছে অতিসম্প্রতি তেমন কোন ঘটনা ঘটেনি।

তবে আশার বিষয হলো চট্টগ্রাম জেলার অপেক্ষাকৃত তরুণ জেলা প্রশাসক আবুল বাসার মোহাম্মদ ফখরুজ্জামান তার তারুণ্যদীপ্ত একঝাঁক উদ্যমী কর্মকর্তাদের নিয়ে মাঠে নেমেছেন। চট্টগ্রামে জেলা প্রশাসনের দায়িত্ব নিয়েই তিনি বেশ সাহসের সঙ্গে বেশ কিছু অভিযান পরিচালনা করে সাধারণ নগরবাসীর দৃষ্টি আকর্ষণ করতে সক্ষম হয়েছেন। এরই মধ্যে ভোগ্যপণ্যে, ওষুধে ভেজাল দেয়ার বিরুদ্ধে বেশ কিছু কাজ করেছেন জেলা প্রশাসনের নির্দেশে তার সহকর্মীবৃন্দ। বেদখল হয়ে যাওয়া বেশকিছু সরকারি জায়গাও উদ্ধার করেছেন তারা এরই মধ্যে। পাশাপাশি নিত্যপ্রয়োজনীয় ভোগ্যপণ্যসহ অন্যান্য নিত্যপ্রয়োজনীয় গৃহস্থালি পণ্যের অস্বাভাবিক দাম বৃদ্ধির বিরুদ্ধেও কার্যকর বেশ কিছু পদক্ষেপ নিয়ে জেলা প্রশাসনের এসব ভ্রাম্যমাণ আদালতের টিম ইতিমধ্যেই প্রশংসা অর্জন করতে সক্ষম হয়েছেন। শুধু তাই নয়, নগরী ও জেলার বিভিন্ন স্থানে বেদখল হয়ে যাওয়া শত শত কোটি টাকার খাস জমিও উদ্ধার করা হয়েছে জেলা প্রশাসনের উদ্যোগে। চট্টগ্রাম কলেজের আশপাশ এলাকায় জামায়াত- শিবির নেতাকর্মীরা সরকারি জমি ও সনাতন ধর্মাবলম্বীদের জমি অবৈধভাবে দখলে নিয়ে নির্বিঘ্নে কোটি কোটি টাকার বাণিজ্য করে আসছিল। ইসলামী সমাজকল্যাণ পরিষদের (ইসকপ) নামে সরকার ও রাষ্ট্রবিরোধী কর্মকাণ্ডও পরিচালিত হতো ইসকপ ও একটি কোচিং সেন্টারের নামে। জেলা প্রশাসনের সাহসী ও সঠিক সিদ্ধান্তের ফলে এসব মূল্যবান জায়গাই শুধু অবমুক্ত হয়নি সেইসাথে দেশ ও সমাজবিরোধী ষড়যন্ত্রের দুটি মূল জায়গা অন্তত বন্ধ হলো এর ফলে।

চট্টগ্রাম মহানগরীর উত্তর কাট্টলী এলাকার কালীবাড়ির ঐতিহ্যবাহী শতবর্ষী পুকুরটির ভরাট কাজ চলছিলো। জেলা প্রশাসক আবুল বাসার মোহাম্মদ ফখরুজ্জামানের নজরে এলে তিনি এ বিষয়ে প্রয়োজনীয় আইনানুগ ব্যবস্থা নিতে নির্দেশনা দেন। তারই প্রেক্ষিতে এরই মধ্যে কাট্টলী সার্কেলের সহকারী কমিশনার ভূমি উমর ফারুক সরেজমিনে ঘটনাস্থল পরিদর্শন করে যারা এই অপকর্মের সঙ্গে জড়িত তাদেরকে ৩ দিনের মধ্যে ভারাটকৃত মাটি সরাতে নির্দেশনা দেন। ফলে মঙ্গলবার থেকে এই শতবর্ষী পুকুরে অবৈধভাবে ভরাট মাটি সরানো শুরু হয়েছে।

সহকারি ভূমি কমিশনার উমর ফারুক জানান, সরেজমিনে দেখা যায়, সরকারের বিনা অনুমতিতে অবৈধভাবে প্রাকৃতিক জলাধার সংরক্ষণ আইন ২০০০ এর বিধান ভঙ্গ করে বে-আইনিভাবে কয়েকটি পুকুর স্বাভাবিক অবস্থান অতিক্রম করে পরিবেশ দূষণ করে মাটি ভরাট করা হচ্ছে।

সহকারী কমিশনার (ভূমি) ও নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট উমর ফারুক জানান, জেলা প্রশাসকের নির্দেশনায় কালীবাড়ির শতবর্ষী পুকুর রক্ষার্থে তাদেরকে তৎক্ষনাৎ পুকুর ভরাট বন্ধ করে পরবর্তী ৩দিনের মধ্যে পুকুরের পূর্বের অবস্থায় ফিরিয়ে আনার নির্দেশ দেয়া হয়। এর পর মঙ্গলবার (২০ জুন) থেকে পুকুর খননের কাজ শুরু হওয়ায় কাট্টলী সুরক্ষা পরিষদ ও এলাকাবাসী জেলা প্রশাসকের প্রতি কৃতজ্ঞতা জানিয়েছেন। তবে এরই পাশাপাশি যারা আইন অমান্য করে পুকুর ভরাটের সাথে জড়িত তাদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নেয়ার প্রক্রিয়া চলছে।

এ ব্যাপারে জেলা প্রশাসক আবুল বাসার মোহাম্মদ ফখরুজ্জামান বলেন, বিনা অনুমতিতে কেউ পুকুর ভরাট করে ভিটি বা অন্য কোন শ্রেণিতে রূপান্তর করতে পারেনা। কেউ এমন কর্মকাণ্ডে জড়িত থাকলে তার বিরুদ্ধে পরিবেশ বিনষ্টকারী হিসেবে আইনানুগ ব্যবস্থা নেয়া হবে। ইতিমধ্যেই উত্তর কাট্টলী এলাকার এই ঐতিহ্যবাহী শতবর্ষী পুকুর রক্ষায় পুনঃখনন করে পূর্বাবস্থায় আনার জন্যে নির্দেশনা দিয়েছি।যার ফলে ইতিমধ্যেই পুকুর খননের কাজ শুরু হয়েছে। এভাবে নগরী ও জেলার কোথাও যদি পরিবেশ বিনষ্ট, প্রাণ-প্রকৃতি ধ্বংস করে সার্বিকভাবে পরিবেশের ও জনগণের ক্ষতি করে কোন কাজ করলে তা জেলা প্রশাসনকে দ্রুত অবহিত করার জন্য অনুরোধ জানিয়েছেন। পাশাপাশি স্থানীয় সচেতন নাগরিকদেরকেও এসব ব্যাপারে প্রতিবাদী- প্রতিরোধী ভূমিকা পালনেরও আহ্বান জানিয়েছেন তিনি।

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App