×

সারাদেশ

শঙ্কা নেই তবুও শঙ্কা

Icon

কাগজ প্রতিবেদক

প্রকাশ: ২০ জুন ২০২৩, ১০:২৭ এএম

শঙ্কা নেই তবুও শঙ্কা

রাত পোহালেই সিলেট সিটি করপোরেশন (সিসিক) নির্বাচন। গতকাল সোমবার মধ্যরাতে শেষ হয়েছে নির্বাচনী প্রচার। তবে এই নির্বাচনে এখন ভোটের চেয়ে রাজনীতির খেলা বেশি হচ্ছে। গতকাল প্রচারের শেষ দিনে স্লোগান আর মাইকের আওয়াজে কানে তালা লাগার মতো অবস্থা ছিল সুরমা নদীর তীরে। কিন্তু আনাচকানাচে কান পাতলেই পাওয়া যাচ্ছিল পরপর দুইবার (২০১৩ এবং ২০১৮ সালে) কামরান ট্র্যাজেডির শব্দ।

২০১৩ সালের নির্বাচনে বিএনপির আরিফুল হক চৌধুরীর কাছে হেরেছিলেন তখনকার জনপ্রিয় মেয়র আওয়ামী লীগের বদর উদ্দিন আহমদ কামরান। ভোটের পর তিনি ও তার সমর্থকরা সেই পরাজয়ের পেছনে ‘নৌকার ব্যাজ পরে ধানের শীষে ভোট দেয়ার’ অভিযোগ তুলেছিলেন। বিএনপিবিহীন এবারের নির্বাচনেও সেই শঙ্কা কাটছে না। কারণ ভোটে বিএনপি না থাকলেও চূড়ায় উঠেছে উত্তেজনার পারদ। বিএনপি কর্মী-সমর্থকদের ভোট কোন দিকে যাচ্ছে আর ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের ভোট আদতে নৌকায় পড়ছে কিনা- এর ওপর নির্ভর করছে ভোটের অঙ্কের শেষ ফল। নির্বাচনী হিসেবে লাঙ্গল, হাতপাখার প্রার্থীসহ অন্তত তিনজনের ভরসা বিএনপির ‘নীরব ভোট’। আওয়ামী লীগের আশা, সরকারের উন্নয়ন, দলীয় প্রার্থীর ইমেজ, বিএনপির ভোট ভাগাভাগিতে অতি সহজেই বিজয় গন্তব্যে পৌঁছাবে নৌকা।

এদিকে নির্বাচনী প্রচারণার শেষের দিকে ব্যস্ত সময় পার করছেন মেয়র ও কাউন্সিলর পদপ্রার্থীরা। ভোটারদের কাছে ছুটছেন তারা, দিচ্ছেন নানা প্রতিশ্রুতি। নির্বাচন সুষ্ঠু ও শান্তিপূর্ণ হবে বলে আশাব্যক্ত করেছেন নৌকার প্রার্থী আনোয়ারুজ্জামান চৌধুরী। জানতে চাইলে তিনি ভোরের কাগজকে বলেন, মানুষ উন্নয়নের পক্ষে। আমরা আমাদের সাধ্যমতো সবার কাছে পৌঁছানোর চেষ্টা করেছি। ভোট শান্তিপূর্ণ হবে। আমার বিশ্বাস, শেখ হাসিনার প্রতি আস্থা রেখে নৌকায় ভোট দেবেন সিলেটের মানুষ।

ঝুঁকিপূর্ণ ১৩২ কেন্দ্র : সিলেটে মেয়র পদে কার্যকর প্রতিদ্বন্দ্বিতা নেই। জনমত ও প্রচারণা একচেটিয়াভাবে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ প্রার্থী আনোয়ারুজ্জামান চৌধুরীর পক্ষে। তাই মেয়র পদ নিয়ে তেমন উত্তাপও নেই। তবে আশঙ্কা কাউন্সিলর প্রার্থীদের নিয়ে। প্রতিটি ওয়ার্ডেই একাধিক শক্তিশালী প্রার্থী থাকায় ভোটের দিন উত্তেজনা সৃষ্টির আশঙ্কা উড়িয়ে দিচ্ছেন না সংশ্লিষ্টরা। আইনশৃঙ্খলাবাহিনী তালিকা অনুযায়ী, নগরীর ১৯০টি ভোটকেন্দ্রের মধ্যে ১৩২টি কেন্দ্রই ঝুঁকিপূর্ণ। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর তালিকায় নগরের ১৮টি ওয়ার্ডের সব কটি কেন্দ্রই ঝুঁকিপূর্ণ বলে চিহ্নিত করা হয়েছে।

বাকি ৫৮টি কেন্দ্র সাধারণ (ঝুঁকিমুক্ত) বলে চিহ্নিত করা হয়েছে। তালিকা অনুযায়ী ৪, ৫, ৬, ৭, ৮, ১৫, ২২, ২৪, ২৫, ২৬, ২৮, ২৯, ৩০, ৩১, ৩৬, ৩৮, ৩৯ ও ৪২ নম্বর ওয়ার্ডের সব ভোটকেন্দ্রকে ঝুঁকিপূর্ণ হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে। আর ৪১ নম্বর ওয়ার্ডের সবকটি কেন্দ্র ঝুঁকিমুক্ত। ১৯০টি কেন্দ্রে মোট ভোটকক্ষ রয়েছে ১ হাজার ৩৬৪টি। এসব কক্ষ ও কেন্দ্রে সিসিক্যামেরা থাকবে এক হাজার ৬৪৭টি। প্রতি কেন্দ্রে নিরাপত্তার দায়িত্বে থাকবেন ৭ জন আনসার, ৫ জন পুলিশ।

এছাড়া ভোটের পরিবেশ সুষ্ঠু করতে ১৪ জন জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট, ৪২ জন নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট কাজ করবেন। এমনকি প্রতি ১০ জন বিজিবি টহলের সঙ্গে থাকবেনে একজন করে ম্যাজিস্ট্রেট।

মহানগর পুলিশ জানায়, আইনশৃঙ্খলা বাহিনী ঝুঁকিপূর্ণ কেন্দ্রগুলোকে ‘গুরুত্বপূর্ণ’ ও ঝুঁকিমুক্ত কেন্দ্রকে ‘সাধারণ’ কেন্দ্র হিসেবে চিহ্নিত করেছে। ওই গুরুত্বপূর্ণ ও সাধারণ কেন্দ্র অনুযায়ী ভোটের দিন আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ করা হবে। প্রাকৃতিক দুর্যোগ, কেন্দ্রে নিরাপত্তা ব্যবস্থা না থাকা, কাউন্সিলর প্রার্থীদের মধ্যে সহিংসতার শঙ্কা, যোগাযোগ বিড়ম্বিত কেন্দ্র, অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটার আশঙ্কাসহ নানা দিক বিবেচনা করে ‘গুরুত্বপূর্ণ’ কেন্দ্র চিহ্নিত করা হয়ে থাকে। নির্বাচন কমিশন সূত্রে জানা গেছে, ঢাকা থেকে সবগুলো কেন্দ্র সিসিটিভির মাধ্যমে পর্যবেক্ষণ করবে নির্বাচন কমিশন (ইসি)।

এদিকে টানা বৃষ্টিতে কয়েকটি কেন্দ্রের মাঠে পানি জমেছে। গতকাল সিটি করপোরেশনের উদ্যোগে এসব মাঠে পানি অপসারণ করে বালির বস্তা ফেলা হয়েছে। রিটার্নিং কর্মকর্তা ফয়সাল কাদের ভোরের কাগজকে বলেন, আমাদের কাছে ঝুঁকিপূর্ণ কেন্দ্র বলে কিছু নেই। সাধারণ ও গুরুত্বপূর্ণ কেন্দ্র। তবে সব কেন্দ্র?কেই সমান গুরুত্ব দেয়া হয়। ৫-৬টি কেন্দ্রের মাঠে পানি জমেছিল, তা অপসারণ করে প্রস্তুত করা হয়েছে। ভোট শান্তিপূর্ণ হবে বলে আশাবাদ ব্যক্ত করেছেন তিনি।

কাউন্সিলরাই জমাবেন ভোট : কাউন্সিলর পদে ৩৬০ জন প্রার্থী প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন। যাদের মধ্যে ২৭৩ জন সাধারণ ওয়ার্ডে এবং সংরক্ষিত ওয়ার্ডে (নারী কাউন্সিলর) ৮৭ জন নারী প্রার্থী প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন। আওয়ামী লীগের একাধিক প্রার্থী যেসব ওয়ার্ডে : ১নং ওয়ার্ডে ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সহসভাপতি মুফতি কমর উদ্দিন ও সিনিয়র সদস্য আনোয়ারুস সাদত। ৩নং ওয়ার্ডে মহানগর আওয়ামী লীগের সদস্য আমজাদ হোসেন আবজাদ ও আওয়ামী লীগ নেতা বর্তমান কাউন্সিলর লায়েক আহমদ। ৪নং ওয়ার্ডে মহানগর যুবলীগের সভাপতি আলম খান মুক্তি ও শ্রমিক লীগ নেতা শেখ তোফায়েল আহমেদ সেফুল। ৮নং ওয়ার্ডে সিলেট মহানগর আওয়ামী লীগের সহসভাপতি জগদীশ দাশ ও নগর আওয়ামী লীগের সদস্য বর্তমান কাউন্সিলর ইলিয়াসুর রহমান ইলিয়াস। ২০নং ওয়ার্ডে মহানগর আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক বর্তমান কাউন্সিলর আজাদুর রহমান আজাদ ও মহানগর স্বেচ্ছাসেবক লীগ নেতা মিটু তালুকদার। ৩২নং ওয়ার্ডে জেলা আওয়ামী লীগের সদস্য এডভোকেট আফসর আহমদ ও ছাত্রলীগ নেতা রুয়েল আহমদ।

এদিকে মেয়র পদে প্রার্থী না দিলেও মাঠে আছে বিএনপি। কাউন্সিলর পদে? প্রতিদ্বন্দ্বিতায় বিএনপির প্রার্থীর ছড়াছড়ি। ১নং ওয়ার্ডে মহানগর বিএনপির সদস্য বর্তমান কাউন্সিলর সৈয়দ তৌফিকুল হাদী। ৫নং ওয়ার্ডে বিএনপি নেতা বর্তমান কাউন্সিলর রেজোয়ান আহমদ। ৬নং ওয়ার্ডে স্বেচ্ছাসেবক দলের কেন্দ্রীয় সহসভাপতি বর্তমান কাউন্সিলর ফরহাদ চৌধুরী শামিম। ১২নং ওয়ার্ডে মহানগর বিএনপির সদস্য বর্তমান কাউন্সিলর সিকন্দর আলী। ১৪নং ওয়ার্ডে মহানগর বিএনপির সদস্য বর্তমান কাউন্সিলর নজরুল ইসলাম মুনিম। ১৮নং ওয়ার্ডে বিএনপি নেতা বর্তমান কাউন্সিলর এবিএম জিল্লুর রহমান উজ্জ্বল। ২৫নং ওয়ার্ডে মহিলা দলের জেলা সভাপতি এডভোকেট রোকসানা বেগম শাহনাজ। ৩৮নং ওয়ার্ডে জেলা ছাত্রদলের সভাপতি আলতাফ হোসেন সুমন। অবশ্য বিএনপি দলীয় নির্দেশ উপেক্ষা করে প্রার্থী হওয়া নেতাদের বহিষ্কার করেছে।

এদিকে বিএনপির মতো তাদের জোটসঙ্গী জামায়াতে ইসলামীও এ নির্বাচন বর্জনের ঘোষণা দিয়েছে। তবু দলটির অন্তত ৬ জন নেতা কাউন্সিলর পদে প্রার্থী হয়েছেন। এদের মধ্যে একজন বর্তমান ও একজন সাবেক কাউন্সিলর রয়েছেন। ২৪নং ওয়ার্ডের বর্তমান কাউন্সিলর সুহেল আহমদ রিপন ও ২৭নং ওয়ার্ডের সাবেক কাউন্সিলর আব্দুল জলিল নজরুল এবারো প্রার্থী হয়েছেন। এছাড়া জামায়াত নেতাদের মধ্যে ১০নং ওয়ার্ডে আব্দুল হাকিম, ২৮নং ওয়ার্ডে সুহেল রানা, ৩৩নং ওয়ার্ডে মঞ্জুরুল ইসলাম ও ৪১নং ওয়ার্ডে মঞ্জুরুল ইসলাম প্রার্থী হয়েছেন। বিশ্লেষকরা বলছেন, বিভিন্ন ওয়ার্ডে পরস্পরের প্রতিদ্বন্দ্বী আওয়ামী লীগ নেতারা ভোটের দিন উত্তেজনা ছড়াতে পারেন। তাছাড়া বিএনপি ও জামায়াতের যেসব নেতা প্রার্থী হয়েছেন- নিজ নিজ এলাকায় তারাও প্রভাবশালী। এদের কারণে বাড়তে উত্তেজনা সৃষ্টি আশঙ্কা উড়িয়ে দিচ্ছেন না সাধারণ ভোটার থেকে রাজনীতি সংশ্লিষ্ট কেউই।

প্রসঙ্গত, সিলেট সিটি নির্বাচনে এবার ভোটার সংখ্যা চার লাখ ৮৭ হাজার ৭৫৩ জন। গতবারের চেয়ে এবার ভোটার বেড়েছে এক লাখ ৬৪ হাজার ৮৭৩ জন।

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App