×

সারাদেশ

আমেরিকান হাসপাতালকে ঘিরে বিশাল সিন্ডিকেট

Icon

কাগজ প্রতিবেদক

প্রকাশ: ১৯ জুন ২০২৩, ০৭:০৩ পিএম

আমেরিকান হাসপাতালকে ঘিরে বিশাল সিন্ডিকেট

চট্টগ্রামের আগ্রাবাদে আমেরিকান হাসপাতাল। ছবি: ভোরের কাগজ

আমেরিকান হাসপাতালকে ঘিরে বিশাল সিন্ডিকেট

চট্টগ্রামের আগ্রাবাদে অবস্থিত কেন্দ্রীয় চর্ম ও সামাজিক স্বাস্থ্যকেন্দ্রে যা আমেরিকান হাসপাতাল নামে সমধিক পরিচিত সেই হাসপাতালের চিকিৎসকগণই রোগিদেরকে বাংলাদেশে অনিবন্ধিত ওষুধ প্রেসক্রাইব করছেন বলে অভিযোগ উঠেছে। শুধু তাই নয় রোগিদেরকে নানা পরীক্ষা-নিরীক্ষার জন্য একটি নির্দিষ্ট ডায়াগনস্টিক সেন্টারেই পাঠিয়ে থাকেন তারা।

এসব বিদেশী ওষুধ প্রেসক্রাইব ও নির্দিষ্ট ডায়াগনস্টিক সেন্টারে নানা টেস্টের জন্য পাঠিয়ে এই সরকারি হাসপাতালের চিকিৎসকগণ বেশ মোটা অংকের কমিশন বাণিজ্য করেন বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। তবে শুধু অভিযোগই নয়, এসবের সত্যতা পেয়েছেন চট্টগ্রামে ওষুধ প্রশাসন ও জেলা প্রশাসনের যৌথ উদ্যোগে পরিচালিত ভ্রাম্যমাণ আদালত।

এই অভিযানে নেতৃত্ব দেয়া জেলা প্রশাসনের নির্বাহী ম্যাজিষ্ট্রেট প্রতীক দত্ত নিজেই অভিযানকালে চিকিৎসকদের এরকম অনৈতিক কর্মকাণ্ডের প্রমাণ পেয়ে বিব্রত হয়ে পড়েন বলে জানান ভোরের কাগজকে।

তিনি বলেন, এই সরকারি হাসপাতালের চিকিৎসক. হাসপাতালের সামনে গড়ে ওঠা কয়েকটি ফার্মেসি ও ‘মেডিলিভ’ নামে ওই ডায়াগনষ্টিক সেন্টার মিলে একটি শক্তিশালী অসাধু সিন্ডিকেট রমরমা অবৈধ ব্যবসা করে যাচ্ছে। ডাক্তারদের প্রেসক্রিপশনে যেসব বিদেশি ক্রীমের নাম লেখা থাকে সেগুলো থেকে ডাক্তাররা ২০০ থেকে ৫০০ টাকা কমিশনও নেন বলে ফার্মেসি মালিক ও রোগিরা অভিযোগ করেছেন ভ্রাম্যমাণ আদালতের কাছে।

তবে সোমবার চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসনের একটি ভ্রাম্যমাণ আদালতের কাছে এই সিন্ডিকেটের জারিজুড়ি ফাঁস হয়ে যায়। ওষুধ প্রশাসন অধিদপ্তরের কর্মকর্তাদের সমন্বয়ে এক অভিযান পরিচালনা করা হয়।

এসময় হাসপাতালের গেটের সামনে অবস্থিত মা ফার্মেসি, মা মেডিকেয়ার এবং স্বাগতা ফার্মেসি থেকে চীন, ভারত সহ বিভিন্ন দেশের প্রায় ৬ লাখ টাকার অনিবন্ধিত ওষুধ জব্দ করা হয় এবং প্রত্যেক ফার্মেসিকে ২০ হাজার করে মোট ৬০ হাজার টাকা জরিমানা করা হয়।

এসময় ফার্মেসি মালিকরা ভ্রাম্যমাণ আদালতের কাছে অভিযোগ করে বলেন, সরকারি হাসপাতালের চিকিৎসকরাই এসকল অনিবন্ধিত ওষুধ প্রেসক্রিপশন করছেন।

এসময় বেশ কিছু রোগির সাথে কথা বলে জানা যায়, চিকিৎসকরা এমন ওষুধ লেখেন, যা এখানে অবস্থিত ৩/৪ টি ফার্মেসি ব্যাতীত অন্য কোথাও পাওয়া যায় না এবং রোগিদের প্রেসক্রিপশন চেক করে দেখা যায় সরকারি হাসপাতালের স্লিপে বিভিন্ন অনিবন্ধিত ওষুধ প্রেসক্রিপশন করা হয়েছে।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক ফার্মেসি মালিক জানান, প্রতিটি বিদেশী ক্রীমের দাম এক থেকে তিন হাজার টাকা পর্যন্ত। প্রতি ক্রীমে চিকিৎসক ২০০ থেকে ৫০০ টাকা পর্যন্ত কমিশন পান। এছাড়া এই হাসপাতালের সকল রোগীদের মেডিলিভ নামক একটি ল্যাবে টেস্ট করানোর জন্য বলে দেয়া হয়। হাসপাতালের সামনেই দালালরা দাড়িয়ে থাকে।

এসময় সেখানে উপস্থিত ওষুধ প্রশাসন অধিদপ্তর, চট্টগ্রাম এর সহকারী পরিচালক এস এম সুলতানুল আরেফীন বলেন, ‘এ ওষুধগুলো ড্রাগ এডমিনিস্ট্রেশন এর নিবন্ধিত নয়। এগুলো কোনো ফার্মেসিতে বিক্রি করা যাবে না এবং কোনো চিকিৎসক এগুলো প্রেসক্রিপশন করতে পারবে না। কিন্তু এই সরকারি হাসপাতালের চিকিৎসকরা কেন এটি প্রেসক্রিপশন করছেন সেটি আমি বলতে পারব না।’ৎ

এ ব্যাপারে ওই হাসপাতালের ভারপ্রাপ্ত সিনিয়র কনসালটেন্ট ডা. লুৎফর রহমান রাহাত ভোরের কাগজের কাছে বিভিন্ন অভিযোগ সম্পর্কে বলেন, ‘ ভ্রাম্যমাণ আদালতের টিমতো হাসপাতালের ভেতরে প্রবেশ করেনি। ওনারা বাইরে ফার্মেসিগুলোতে অভিযান করেছেন। হাসপাতালের চিকিৎসার মান যদি খারাপ হতো তাহলে প্রতিনিয়ত এত রোগি সংখ্যা বাড়তো না। প্রতিদিন গড়ে আমরা ৫০০ জনের মত রোগিকে চিকিৎসা দিচ্ছি। হাসপাতালের ভেতরটি আমরা দালালমুক্ত করতে পেরেছি। কিন্তু হাসপাতালেল গেইটের বাইরের বিষয়গুলোতো আমরা চেক দিতে পারবো না।’

তিনি উল্টো অভিযোগ করে বলেন, ‘এখানে হাসপাতালের বাইরে অবস্থিত ফার্মেসি ও একটি দালালচক্র মিলে একটি বিশ্রী পরিস্থিতি সৃষ্টি করেছে এবং তাদের কাছে আমরাও অনেকটা জিম্মি। কারণ তাদের স্থানীয় রাজনৈতিক হোমরা-চোমরা রয়েছে।’

আমেরিকান হাসপাতালকে ঘিরে বিশাল সিন্ডিকেট

ডা, লুৎফর রহমান রাহাত আরও বলেন, ‘যদি চিকিৎসকগন তাদের প্রেসক্রিপশনে অনিবন্ধিত ওষুধ লিখে থাকেন সে ব্যাপারে তদন্ত করে ব্যবস্থা নেয়ার জন্য ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে বলা হবে।

পাশাপাশি তিনি বলেন, ইতিমধ্যেই আমি আমাদের ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের সঙ্গে এ ব্যাপারে আলাপ করেছি, ওনারা একটি নির্দেশনা দেবেন আমাদেরকে। আমরা সেই নির্দেশনা মোতাবেক ব্যবস্থাপত্র দেবো।’

চট্টগ্রামে স্বাস্থ্য বিভাগের পরিচালক (ভারপ্রাপ্ত) ডা, সুমন বড়ুয়ার সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি ভোরের কাগজকে বলেন, কোন চিকিৎসকেরই অনিবন্ধিত ওষুধ লেখা উচিত নয়। তারপরও যদি কেউ লিখে থাকেন সে ব্যাপারে আমরা নির্দেশনা দেবো তাদেরকে।

চিকিৎকদের কমিশন বাণিজ্য সম্পর্কে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘অভিযোগটিতো একপক্ষীয়, তাই সবার বক্তব্য না জেনে তো কাউকে দোষী বলা যাবে না এবং এটি তদন্তসাপেক্ষ বিষয়।’

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App