×

সারাদেশ

আকস্মিক বন্যার আশঙ্কা সিলেট ও সুনামগঞ্জে

Icon

কাগজ প্রতিবেদক

প্রকাশ: ১৯ জুন ২০২৩, ১২:৩৫ পিএম

আকস্মিক বন্যার আশঙ্কা সিলেট ও সুনামগঞ্জে

ছবি: ভোরের কাগজ

বাসা-বাড়ি ও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ঢুকছে পানি

গত বছরের ভয়াবহ বন্যার ধকল যেতে না যেতেই বর্ষা মৌসুমের শুরুতেই সিলেটে আকস্মিক বন্যার আশঙ্কা দেখা দিয়েছে। গত তিন দিন ধরে সিলেটে টানা বৃষ্টি হচ্ছে। এই বৃষ্টি আরো ১৫ দিন অব্যাহত থাকবে বলে জানা গেছে। কয়েক দিনের টানা বর্ষণ ও উজান থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢলে সুনামগঞ্জের নদ-নদী ও হাওড়ে পানি বেড়েছে। পাহাড়ি ঢল ও টানা বর্ষণে সুনামগঞ্জের ৬টি উপজেলার নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হওয়ার আশঙ্কা দেখা দিয়েছে। আমাদের প্রতিনিধি খালেদ আহমদ (সিলেট অফিস), মো. সাজ্জাদ হোসেন শাহ্র (সুনামগঞ্জ) তথ্য নিয়ে প্রতিবেদন।

ভারতের উজানে ভারি বৃষ্টিপাতের প্রভাবে সিলেটের নদ-নদীর পানি বাড়তে শুরু করেছে। এতে আগামী ৭২ ঘণ্টার মধ্যে সিলেট অঞ্চলে আকস্মিক বন্যার শঙ্কা রয়েছে। এরই মধ্যে জেলার গোয়াইনঘাট উপজেলার পাঁচ ইউনিয়নরে সড়ক যোগাযোগ ব্যবস্থা বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছে।

গতকাল রবিবার সকালে সিলেটের নদ-নদীগুলোর পানি ছিল বিপদসীমা ছুঁই ছুঁই। তবে বিকালে সিলেটের প্রধান নদী সুরমায় সেই সীমা ছাড়িয়ে পানি উঠল আরো উপরে। এছাড়া কুশিয়ারা, মনু, খোয়াই, সারিগোয়াইন, ঝালুখালি, ভোগাই-কংশ, সোমেশ্বরী, যদুকাটাসহ সিলেট অঞ্চলের নদ-নদীগুলোর পানি সমতলে দ্রুত বাড়ছে। এতে বিপদসীমা অতিক্রম করে সিলেট ও সুনামগঞ্জ জেলার কিছু নি¤œাঞ্চলে স্বল্পমেয়াদি আকস্মিক বন্যা পরিস্থিতির সৃষ্টি হতে পারে বলে বন্যা তথ্যকেন্দ্রের বুলেটিনে বলা হয়েছে।

এদিকে সিলেটে গত ২৪ ঘণ্টায় ১২৫ দশমিক ৫ মিলিমিটার বৃষ্টি হয়েছে। বৃষ্টির পানিতে ডুবেছে নগরীর নিচু এলাকাগুলো। টানা বৃষ্টিতে সিলেট নগরের উপর দিয়ে বয়ে চলা খালের পানির উচ্চতা বাড়ছে। নগরের বিভিন্ন স্থানে ছড়া, খাল উপচে বাসা-বাড়ি ও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে পানি ঢুকছে। উজানের বৃষ্টি আর নগরের জলাবদ্ধতার কারণে বেড়েছে সুরমা নদীর পানির উচ্চতা। পাশাপাশি বিভিন্ন হাওড়েও পানি বাড়ছে।

সিলেট পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী আশিফ আহমেদ জানান, সুরমা নদীর কানাইঘাট পয়েন্টে পানি বিপদসীমা ছাড়িয়ে গেছে। এ পয়েন্টে রেকর্ড করা হয় ১২ দশমিক ৯৫ পয়েন্ট। বিপদসীমা ছিল ১২ দশমিক ২৬ পয়েন্ট। সহকারী আবহাওয়াবিদ শাহ মো. সজীব হোসাইন বলেন, আগামী ৪৮ ঘণ্টা সিলেটে ভারি বৃষ্টির সম্ভাবনা রয়েছে। এজন্য সবাইকে সতর্ক থাকতে হবে। বিশেষ করে সীমান্তবর্তী এলাকাগুলোতে পাহাড়ি ঢল নামার আশঙ্কা রয়েছে।

প্লাবিত হতে পারে সুনামগঞ্জের নিম্নাঞ্চল : গত কয়েকদিনের টানা বর্ষণ ও উজান থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢলে সুনামগঞ্জের নদ-নদী ও হাওড়ে পানি বেড়েছে। টানা বর্ষণের ফলে জেলার জামালগঞ্জ, মধ্যনগর, ধর্মপাশা ও তাহিরপুর, শাল্লাসহ ৬ উপজেলার সঙ্গে জেলা সদরের এবং আন্তঃউপজেলার সড়ক যোগাযোগ ব্যবস্থা প্রায় বন্ধ হয়ে গিয়েছে। পানি

উন্নয়ন বোর্ড (পাউবো) সূত্রমতে, গত ২৪ ঘণ্টায় জেলায় ১০০ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়েছে। এদিকে ভারতের চেরাপুঞ্জিতে বৃষ্টিপাত অব্যাহত থাকায় সুনামগঞ্জে বন্যা ও নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হওয়ার আশঙ্কা দেখা দিয়েছে। এতে করে উদ্বেগ উৎকণ্ঠায় দিন কাটাচ্ছেন হাওড়াঞ্চলের মানুষ।

এদিকে ভারি বর্ষণ ও পাহাড়ি ঢলে তাহিরপুর-সুনামগঞ্জ সড়কের বিশ্বম্ভরপুর উপজেলার শক্তিয়ারখলা ১০০ মিটার ব্রিজের পর থেকে প্রায় দেড়শ ফুট সড়ক পানির নিচে তলিয়ে গিয়ে যানবাহন ও পথচারী চলাচলে চরম ভোগান্তিতে পড়েছেন তাহিরপুর, বিশ্বম্ভরপুর দুই উপজেলার মানুষ। এ সড়ক দিয়ে জেলা সদরে যাতায়াত করতে ছোট ছোট ইঞ্জিনচালিত নৌকা দিয়ে মোটরসাইকেল ও পথচারীরা পারাপার হয়ে জেলা সদরে যাতায়াত করছেন।

তাহিরপুর উপজেলার মাটিয়াইন হাওড়পাড়ের বাসিন্দা নুর আহাম্মদ বলেন, যেভাবে বৃষ্টি ও উজান থেকে ঢল আসছে তাতে আবারো বন্যার আতঙ্কে রয়েছি আমরা। জামালগঞ্জের ফেকুল মাহমুদপুর গ্রামের বাসিন্দা আনফর আলী বলেন, হাওড়ে পানি বেড়ে এখন রাস্তাঘাট ছুঁই ছুঁই করছে। এতে করে আমরা আবারো বন্যার অশঙ্কায় দিন কাটাচ্ছি।

তাহিরপুর উপজেলার উজানতাহিরপুর গ্রামের বাসিন্দা মঈনুল ইসলাম বলেন, তাহিরপুর-সুনামগঞ্জ সড়কের বিশ্বম্ভরপুর উপজেলার ১০০ মিটার ব্রিজের পর থেকে প্রায় দেড়শ ফুট সড়ক পানির নিচে তলিয়ে গেছে। ইঞ্জিনচালিত ছোট ছোট নৌকা দিয়ে ও মোটরসাইকেলে যাত্রীরা পারাপার হয়ে জেলা সদরে যাতায়াত করছেন। বিশ্বম্ভরপুর উপজেলার পিয়ারীনগর গ্রামের জেলে সুসেন দাস বলেন, দিন দিন বৃষ্টি ও পানি বাড়ার কারণে আমরা বন্যার আতঙ্কে রয়েছি। গত বছরের ভয়াবহ বন্যার ক্ষত এখনো শুকায়নি। এরই মধ্যে আবার বন্যা হলে হাওড়বাসীর কষ্টের শেষ থাকবে না।

জামালগঞ্জ উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান ইকবাল আল আজাদ বলেন, ভারি বৃষ্টি ও উজানের ঢলে উপজেলার বেশ কয়েকটি সড়কে পানি ছুঁই ছুঁই করছে। এতে করে হাওড়াঞ্চলে ঈদের আগেই বন্যার আশঙ্কা দেখা দিয়েছে।

বিশ্বম্ভরপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা সাদিউর রহিম জাদিদ জানিয়েছেন, বিশ্বম্ভরপুর-সুনামগঞ্জ সড়কের ১০০ মিটার ব্রিজ এলাকা থেকে প্রায় দেড়শ ফুট সড়ক পানির নিচে তলিয়ে গেছে। এতে করে বিশ্বম্ভরপুর, তাহিরপুর দুই উপজেলাবাসীর জেলা সদরের সঙ্গে সড়ক যোগাযোগ ব্যবস্থার কিছুটা বিঘ্ন সৃষ্টি হয়েছে। বৃষ্টি কমলে তা স্বাভাবিক হবে। শাল্লা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা আবু তালেব জানিয়েছেন, ভারি বৃষ্টিপাতের কারণে উপজেলার প্রত্যন্ত অঞ্চলের সাবমার্সিবল সড়কগুলো পানিতে তলিয়ে গেছে। হাওড় ও নদ-নদীর পানি বাড়ছে।

পানি উন্নয়ন বোর্ড সুনামগঞ্জের নির্বাহী প্রকৌশলী মো. মামুন হাওলাদার জানিয়েছেন, ভারতের চেরাপুঞ্জিতে বৃষ্টিপাত অব্যাহত থাকায় সুনামগঞ্জের হাওড় ও সীমান্তবর্তী এলাকায় স্বল্পমেয়াদি বন্যা হয়ে নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হতে পারে। গতকাল বিকালে সুনামগঞ্জের প্রধান নদী সুরমার পানি বিপদসীমার ৭৬ সেন্টিমিটার নিচ দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছিল।

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App