নাগরিকবান্ধব, শিল্পবান্ধব, যানজটমুক্ত, পরিবেশবান্ধব, জলাবদ্ধতামুক্ত, সুপরিকল্পিত আধুনিক সিলেট গড়ার অঙ্গীকার করেছেন সিলেট সিটি করপোরেশন (সিসিক) নির্বাচনে জাতীয় পার্টি মনোনীত মেয়র প্রার্থী নজরুল ইসলাম বাবুল। গতকাল রবিবার বিকালে নগরের কুমারপাড়ায় নিজের প্রধান নির্বাচনী কার্যালয়ে ঘোষিত ইশতেহারে তিনি এই অঙ্গীকার করেন। এ সময় জাপার নেতাকর্মীরা উপস্থিত ছিলেন।

নির্বাচিত হলে সিলেটকে নাগরিকবান্ধব, শিল্পবান্ধব, যানজটমুক্ত, পরিবেশবান্ধব, জলাবদ্ধতামুক্ত, সুপরিকল্পিত আবাসনের নগর হিসেবে গড়ে তোলার উদ্যোগ নেয়ার কথা জানিয়ে ইশতেহারে বাবুল উল্লেখ করেন, সিলেট সিটি করপোরেশনকে সর্বজনীন এবং দায়িত্বশীল একটি প্রতিষ্ঠান হিসেবে গড়ে তুলব। নগরের উন্নয়নে সিটি করপোরেশনের সঙ্গে নাগরিকদের অংশগ্রহণ নিশ্চিত করা হবে। নগর উন্নয়নে স্থায়ী কমিটিগুলোর সঙ্গে স্ব স্ব ক্ষেত্রে অভিজ্ঞ নাগরিকদের সম্পৃক্ত করা হবে।

মেয়র নির্বাচিত হলে নগর ভবনকে আধুনিক ও ঐতিহ্যের মিশেলে একটি দৃষ্টিনন্দন ভবনে রূপান্তর করার অঙ্গীকার করেন নজরুল ইসলাম বাবুল। এছাড়া নির্বাচিত হলে ওয়ার্ড কাউন্সিলর এবং ওয়ার্ডের বিশিষ্ট নাগরিকদের সমন্বয়ে ওয়ার্ডভিত্তিক উন্নয়ন ও সন্ত্রাসবিরোধী নাগরিক কমিটি গঠন করা হবে। যে কমিটি এলাকার উন্নয়ন ও শান্তি-শৃঙ্খলা নিশ্চিতে কাজ করবে বলে জানান তিনি।

নগরের সেবামূলক খাতগুলোকে আরো শক্তিশালী করা হবে জানিয়ে তিনি বলেন, একজন মেয়র ৫ বছরের জন্য নির্বাচিত হলেও তাকে অন্তত সামনের ১০০ বছর মাথায় রেখে পরিকল্পনা নিতে হয়। যাতে নগরবাসী কাক্সিক্ষত সুফল পেতে পারেন। আমি সেটাই করতে চাই। সিলেট একটি ভূমিকম্পপ্রবণ এলাকা। ভূমিকম্পের মতো দুর্যোগ থেকে রক্ষা পেতে সচেতনতা বাড়ানোর পাশাপাশি ভবন নির্মাণের অনুমতি যথাযথভাবে দেয়া হচ্ছে কিনা- তা নিশ্চিত করা হবে।

প্রথমেই নতুন ১৫টি ওয়ার্ডের পরিকল্পিত উন্নয়ন প্রকল্প নেয়া হবে জানিয়ে তিনি বলেন, নগরের বর্ধিত এলাকায় পানি ও বিদ্যুতের সমস্যা অগ্রাধিকার ভিত্তিতে সমাধান এবং বিদ্যমান রাস্তাঘাটের সংস্কার ও নতুন রাস্তা নির্মাণ করা হবে। নগরের পানীয়জলের সমস্যা সমাধানে সিলেট ওয়াসা গঠনের উদ্যোগ নেব। এছাড়া একাধিক কারিগরী শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান স্থাপন করে গরিব ও মেধাবী শিক্ষার্থীদের বৃত্তির ব্যবস্থা করা, বন্ধ থাকা পৌর পাঠাগার চালু ও নগরের বিভিন্ন ওয়ার্ডে পাঠাগার স্থাপনের উদ্যোগ নেয়া, কর্মজীবী নারীদের সন্তানদের দেখাশুনার জন্য ডে-কেয়ার সেন্টার চালু, নগরের গুরুত্বপূর্ণ স্থানে নারীদের জন্য ব্রেস্ট ফিডিং সেন্টারের ব্যবস্থা করা ও নারীদের জন্য স্বল্প খরচে থাকার সুবিধার্থে হোস্টেলের ব্যবস্থা করা হবে।

তিনি বলেন, মহান মুক্তিযুদ্ধের স্মৃতি সংরক্ষণ এবং ভবিষ্যৎ প্রজন্মের কাছে তা তুলে ধরার জন্য জাদুঘর ও আর্ট গ্যালারি স্থাপনের উদ্যোগ নেয়া হবে। একটি সুপরিকল্পিত সাংস্কৃতিক কমপ্লেক্স গড়ে তুলব, যেখানে নাট্যমঞ্চ, সিনেপ্লেক্সসহ সাংস্কৃতিক চর্চার সব ধরনের সুবিধা থাকবে। পাশাপাশি পর্যটনের সুযোগ-সুবিধা বাড়িয়ে পর্যটকদের নিরাপত্তা নিশ্চিতে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেব।

সিলেটে খেলার মাঠের স্বল্পতার কথা উল্লেখ করে তিনি বলেন, নির্বাচিত হলে করপোরেশনের উদ্যোগে খেলার মাঠ তৈরি এবং ওয়ার্ডে ওয়ার্ডে খেলাধুলার প্রসার ঘটাতে ব্যবস্থা নেয়া এবং বৃক্ষরোপণের মাধ্যমে নগরকে সবুজে আচ্ছাদিত করা হবে।

তিনি বলেন, ‘উড়ে এসে জুড়ে বসা’ কেউ এই নগরের সমস্যার সমাধান করতে পারবে না। যে নগরের অলিগলিই চেনে না তার পক্ষে নগরবাসীর প্রত্যাশা পূরণ কতটুকু সম্ভব এই বিচারের ভার নগরবাসীর ওপর ছেড়ে দিলাম। আমি এই শহরেরই সন্তান। সুরমার এপার-ওপার দুপারই আমার চেনা। এই নগরের প্রতিটি ওয়ার্ডে আমার পদচারণা রয়েছে। তাই নগরবাসীর কাছে আমার আহ্বান আপনারা যেন সবকিছু বিবেচনায় রেখে লাঙ্গল মার্কায় ভোট দিয়ে আমাকে নির্বাচিত করেন। আমি কথা দিচ্ছি, নির্বাচিত হলে সিলেটকে একটি আধুনিক মহানগর হিসেবে গড়ে তুলব। নগরবাসীর নিরাপত্তা, যোগাযোগের উপযোগী নতুন নতুন রাস্তা, ফুটপাত নির্মাণসহ যানজট নিরসনের কার্যকর পদক্ষেপ নেব।

ইশতেহার বাস্তবায়নের আশ্বাস আনোয়ারুজ্জামানের : এদিকে সিসিক নির্বাচনে আওয়ামী লীগ মনোনীত মেয়র পদপ্রাথী আনোয়ারুজ্জামান চৌধুরী বলেছেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে দেশ আজ উন্নয়নের শিখরে পৌঁছানোর লক্ষ্যে এগিয়ে যাচ্ছে। তিনি যেমন পরিকল্পিতভাবে বাংলাদেশকে নিয়ে এগিয়ে যাচ্ছেন, তেমনি পরিকল্পিত উন্নয়নের মাধ্যমে সিলেটকেও এগিয়ে নিতে চান। একটি পরিচ্ছন্ন শান্তির নগরী হিসাবে সিলেটকে প্রতিষ্ঠিত করতে যা যা প্রয়োজন নৌকা নির্বাচিত হলে তার সবকিছুই করা হবে। ঘোষিত ইশতেহারের প্রতিটি বিষয় বাস্তবায়নের মাধ্যমে সিলেটবাসীর আশা আকাক্সক্ষার প্রতিফলন ঘটানো হবে। গতকাল রবিবার সিলেট মহানগরীর শিবগঞ্জের ফরহাদ খাঁর পুলসংলগ্ন এলাকায় গণসংযোগকালে তিনি এসব কথা বলেন।

এ সময় আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক আহমদ হোসেন, মহানগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক অধ্যাপক জাকির হোসেন, আব্দুর রহিম সিআইপি, জেলা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক এডভোকেট রঞ্জিত সরকার, ডা. আরমান আহমদ শিপলু প্রমুখ তার সঙ্গে ছিলেন।

আনোয়ারুজ্জামান বলেন, আপনাদের সেবা করতে প্রধানমন্ত্রী আমাকে মনোনয়ন দিয়ে এখানে পাঠিয়েছেন। ইনশাল্লাহ, নৌকায় ভোট দিলে আপনাদের কাক্সিক্ষত উন্নয়ন হবে। কারণ, জনসেবার মানসিকতা নিয়েই আমি ছাত্রজীবন থেকে রাজনীতির সঙ্গে জড়িত হয়েছি।