×

সারাদেশ

দিরাইয়ের সাবেক চেয়ারম্যান রহস্যজনক মৃত্যু

Icon

কাগজ প্রতিবেদক

প্রকাশ: ১৮ জুন ২০২৩, ০৬:৩৩ পিএম

দিরাইয়ের সাবেক চেয়ারম্যান রহস্যজনক মৃত্যু

ছবি: সংগৃহীত

ঘটনার ১৪ দিন পর থানায় মামলা দায়ের

সুনামগঞ্জের দিরাই উপজেলার রাজানগর ইউনিয়ন পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান সৌম্য চৌধুরী (৬০) এর রহস্যজনক মৃত্যুর ঘটনার ১৪ দিন পর ৫ জনকে আসামি করে দিরাই থানায় মামলা দায়ের করা হয়েছে। সৌম্য চৌধুরীর স্ত্রী ইলা চৌধুরী বাদী হয়ে শনিবার রাতে মামলা দায়ের করেন।

অভিযোগে সৌম্য চৌধুরীর মৃত্যুর জন্য দিরাই পৌর সদরের আনোয়ারপুর গ্রামের মৃত আকবুল মিয়ার ছেলে হাবিবুর রহমান হবু (৪৬), দোওজ গ্রামের মৃত আলা উদ্দিনের ছেলে জসিম উদ্দিন (৪০), রাজানগর ইউনিয়নের রাজানগর গ্রামের মৃত সুরেন্দ্র দাসের ছেলে স্বজল দাস (৫৫), একই গ্রামের মৃত রাম কুমার দাসের ছেলে পুতুল দাস (৫২) এবং মৃত কালিচরন দেবনাথের ছেলে অসিত দেব নাথ (৫০) কে আসামি করা হয়েছে।

লিখিত অভিযোগে ইলা চৌধুরী উল্লেখ করেন, আসামিরা সংঘবদ্ধ, সুদখোর ও প্রতারক চক্রের লোক। আমার স্বামী একজন সহজ সরল লোক ছিলেন। চেয়ারম্যান নির্বাচিত হওয়ার পর আসামিরা আমার স্বামীর সঙ্গে সম্পর্ক গড়ে তোলে এবং সেই সুবাধে বিভিন্ন সময় আমাদের বাড়িতে আসা যাওয়া করত। আমার স্বামীর আর্থিক সমস্যা দেখা দিলে হাবিবুর রহমান হাবিব ও জসিম উদ্দিনের কাছ থেকে কিছু টাকা কর্জ বা হাওলাত নেন।

পরবর্তীতে আসামিরা একে অপরের সহযোগীতায় প্রতারণার মাধ্যমে আমার স্বামীর কাছ থেকে ব্যাংকের চেকের খালি পাতায় স্বাক্ষর নেয়। আসামিরা কর্জের টাকাকে সুদের টাকা বলে প্রচার করে এবং আমার স্বামীর স্বাক্ষর করা খালি চেকে ইচ্ছামত টাকার অংক বসিয়ে আদালতে চেক ডিসঅনার মামলা করে। মামলা চলা অবস্থায় দিরাই পৌরসভার তৎকালীন মেয়র মোশাররফ মিয়ার মধ্যস্থতায় বিষয়টি নিষ্পত্তি হয় এবং সিদ্ধান্ত হয় আসামিরা আদালত থেকে মামলা উঠিয়ে আনবে। কিন্তু হাবিবুর রহমান ও জসিম উদ্দিন সুকৌশলে মামলা না উঠিয়ে আমার স্বামীর বিরুদ্ধে স্বাক্ষী দেওয়ায়, আদালত আমার স্বামীকে সাজা প্রদান করেন।

এরপর থেকে আমাদের বাড়িঘরসহ যাবতীয় সম্পত্তি তাদের নামে রেজিস্ট্রি করে দেয়ার জন্য চাপ দিতে থাকে। না দিলে পুলিশে ধরিয়ে দিয়ে আমার স্বামীর মান সম্মান নষ্ট ও হত্যার হুমকি দেয়। আসামিদের এরূপ কর্মকান্ডে আমার স্বামী মানসিকভাবে ভেঙে পড়েন। ঘটনার আগের দিন আমার স্বামীকে পুলিশে ধরিয়ে দেয়ার চেষ্টা করা হলে, বিষয়টি টের পেয়ে আমার স্বামী সিলেটে যাবেন বলে বাড়ি থেকে বের হন। রাতে সংবাদ পাই মৌলভীবাজারের কমলগঞ্জ থানা পুলিশ কমলগঞ্জ উপজেলার একটি সড়কের পাশ থেকে আমার স্বামীকে অসুস্থ অবস্থায় উদ্ধার করেছে। এরপর হাসপাতালে নিয়ে গেলে ডাক্তার আমার স্বামীকে মৃত ঘোষণা করেন। আমার স্বামী হাবিবুর রহমান ও জসিম উদ্দিনসহ উল্লেখিত আসামিদের মানসিক অত্যাচার ও নির্যাতনে মৃত্যুবরণ করেছেন বলে জানতে পারি। তিনি মৃত্যুর আগে ফেইসবুকে নিজের এই পরিণতির জন্য হবিবুর রহমান (হবু), জসিম উদ্দিনসহ উল্লেখিত আসামিদের দায়ী করে স্ট্যাটাস দিয়ে গেছেন।

দিরাই থানার ওসি কাজী মুক্তাদীর হোসেন বললেন, এব্যাপারে নিয়মিত মামলা হয়েছে। আসামিদের গ্রেপ্তারে পুলিশ অভিযান চালাচ্ছে।

উল্লেখ্য গত ২ জুন নিজের ফেইসবুকে স্থানীয় দাদন (সুদখোর) ব্যবসায়ী হবিবুর (হবু), জসিম উদ্দিনসহ ৫ জনের নাম উল্লেখ করে লিখেন আমার এ পরিণতির জন্য এরা দায়ি, এদেও বিচার দাবি করে লিখেন “আমি হয়তো দেখে যেতে পারবোনা, বিদায়”। এরপর ৩ জুন দিবাগত রাতে সৌম্য চৌধুরী কে অচেতন অবস্থায় মৌলভীবাজার জেলার কমলগঞ্জ-শ্রীমঙ্গল রোডের ফুলবাড়িয়া এলাকা থেকে উদ্ধার করে কমলগঞ্জ থানা পুলিশ। রাতেই মৌলভীবাজার হাসপাতালে মারা যান তিনি। তার মৃত্যুর পর সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমসহ দিরাইয়ে দাদন ব্যবসায়ীদের বিরুদ্ধে প্রতিবাদের ঝড় উঠে। বিভিন্ন সংগঠন দিরাইয়ে মানববন্ধন কর্মসুচি পালন করে।

এলাকাবাসী বলছেন, সৗম্য চৌধুরী চেয়ারম্যান থাকাকালীন সময়ে বিভিন্ন সরকারি সহযোগিতার সুষ্ঠু বণ্টন ও মানুষের পাশে থেকে কাজ করেছেন। সুদখোর সিন্ডিকেট চক্রের শিকার হয়ে তিনি বাড়ি জমি বিক্রি করে দেনা পরিশোধ করেও রেহাই পান নি। সুদখোররা স্টাম্প পেপার ও খালি চেকের পাতায় স্বাক্ষর নিয়ে মনগড়া টাকা বসিয়ে মানসিক নির্যাতন করেছে তাকে।

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App