×

সারাদেশ

কয়রার লবণাক্ত মাটিতে কেনাফ চাষে সাফল্য

Icon

কাগজ প্রতিবেদক

প্রকাশ: ১৭ জুন ২০২৩, ০৬:২২ পিএম

কয়রার লবণাক্ত মাটিতে কেনাফ চাষে সাফল্য

ছবি: সংগৃহীত

খুলনার কয়রা উপজেলার লবণাক্ত জমিতে প্রথমবারের মতো পরীক্ষামূলকভাবে পাটের বিকল্প আঁশ হিসেবে পরিচিত কেনাফ চাষে সফলতা পাওয়া গেছে। প্রথমবারের মতো কয়রার আমাদী ইউনিয়নের হাতিয়ারডাংগা এলাকার লবণাক্ত জমিতে অপ্রচলিত এই ফসলের আবাদে সাফল্য পেয়েছেন কৃষক প্রবীর সরকার (৩৫)। ফলে এই অঞ্চলের কৃষিতে নতুন সম্ভাবনা দেখছেন সংশ্লিষ্টরা।

কৃষক প্রবীর সরকার বলেন, ‘এবারই প্রথম আমার এক বিঘা জমিতে কেনাফ চাষ করেছি। জায়গাটি লবণাক্ত। এই সমস্যার কারণে আমন ধান ও তরমুজের বাইরে কখনো কোনো ফসলের চাষ করিনি। এবার কয়রা কৃষি সম্প্রসারণ বিভাগের পরামর্শে কেনাফ চাষ করেছি। তারা আমাকে বিনা মূল্যে বীজ, সার, প্রশিক্ষণ দিয়েছে। প্রথম দিকে অনিশ্চয়তা থাকলেও এখন ফলন ভালো দেখে আনন্দ লাগছে। আমার দেখাদেখি অনেকে এই নতুন ফসল চাষে আগ্রহী হচ্ছেন।’

তিনি যোগ করেন, কেনাফ পাট গাছের মতো লম্বা, পাতাগুলো ঢ্যাঁড়সের পাতার মতো। কেনাফ গাছের উচ্চতা পাট গাছের মতো হলেও এর কাণ্ডগুলো তুলনামূলক মোটা। কেনাফ চাষে নিড়ানি দেওয়া লাগে না। একবার সার দিলেই হয়। উৎপাদন খরচ কম। ফলন ভালো হয়, আঁশের মানও ভালো পাওয়া যায়। পাতা পচে জমিতে সার হয়। এতে পরে সেই জমিতে আবাদে সার কম লাগে।

কেনাফ চাষের সম্ভাবনা সম্পর্কে কয়রা উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা অসীম কুমার দাশ বলেন, ‘জলবায়ু পরিবর্তনের সঙ্গে আমাদের উপকূলের কৃষিকে খাপ খাইয়ে নিতে প্রচলিত কৃষি থেকে কৃষকদের নির্ভরতা কমিয়ে আনার চেষ্টা করা হচ্ছে। পাটের বিকল্প হিসেবে কেনাফ চাষে কৃষকদের সম্পৃক্ত করা গেলে তা এ অঞ্চলের কৃষিতে নতুন মাত্রা যোগ করবে। অনবাদী, অনুর্বর জমিতে অল্প পরিচর্যা ও স্বল্প খরচে ১১০ দিন থেকে ১২০ দিনে কর্তন করে কেনাফের ভালো ফলন পাওয়া যায়। কেনাফের খড়ি জ্বালানি হিসেবে ব্যবহার, বীজ থেকে ৭ থেকে ১৩ শতাংশ ঔষধি গুণসম্পন্ন তেল পাওয়া যায়। কয়রায় পাট চাষ করলে প্রতিবছর বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত হয়। কেনাফ বন্যার পানিতেও বেঁচে থাকে। এটি সহজে পোকামাকড়ে আক্রান্ত হয় না। এ অঞ্চলে লবণাক্ততার কারণে যেখানে অন্য ফসলের আবাদ ঝুঁকিপূর্ণ, সেখানে কেনাফের আবাদ বিস্তার করা যেতে পারে। এটি যথেষ্ট লবণাক্ততা সহনশীল ফসল। পরীক্ষামূলকভাবে এবার কেনাফ চাষে আমরা সফল হয়েছি।’

বাংলাদেশ পাট গবেষণা ইনস্টিটিউটের পরিচালক (কৃষি) নার্গীস আক্তার বলেন, উপকূলীয় অঞ্চলে বপণ উপযোগী কেনাফ ফসলে পাটের চেয়ে নিড়ানি ও পরিচর্যা কম লাগে এবং এর রোগবালাই প্রতিরোধ ক্ষমতাও বেশি। কেনাফ ফসলের মূল মাটির ১০ থেকে ১২ ইঞ্চি বা তার বেশি গভীরে প্রবেশ করে মাটির শক্ত অংশ ভেঙে দিয়ে এর নিচে তলিয়ে যাওয়া অজৈব খাদ্য উপাদান সংগ্রহ করে মাটির ওপরের স্তরে মিশিয়ে দেয়। ফলে অন্যান্য অগভীরমূলী ফসলের পুষ্টি উপাদান গ্রহণ সহজ হয় এবং মাটির ভৌত অবস্থার উন্নয়ন ঘটে। মাটিতে পানি চলাচল সহজ ও স্বাভাবিক থাকে।

বাংলাদেশ পাট গবেষণা ইনস্টিটিউটের মহাপরিচালক মো. আবদুল আউয়াল বলেন, সুন্দরবনসংলগ্ন কয়রা উপজেলায় পাটের বিকল্প হিসেবে কেনাফ চাষের বিপুল সম্ভাবনা দেখা গেছে। উপকূলীয় লবণাক্ততা, খরা ও এক ফসলি আমন–পরবর্তী পতিত জমিতে অল্প পরিচর্যায় কেনাফ চাষ করে ভালো ফলন পাওয়া যায়। কয়রার কৃষকেরা কেনাফ চাষ করতে চাইলে বিনা মূল্যে বীজ দেওয়া হবে।

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App