×

সারাদেশ

ক্ষেতলালে বসেছে গ্রামীণ ঐতিহ্যবাহী ঘুড়ির মেলা

Icon

কাগজ প্রতিবেদক

প্রকাশ: ১৭ জুন ২০২৩, ০১:০৬ এএম

ক্ষেতলালে বসেছে গ্রামীণ ঐতিহ্যবাহী ঘুড়ির মেলা

জয়পুরহাটের ক্ষেতলাল উপজেলায় দুইদিনব্যাপী (শুক্রবার-শনিবার) ঐতিহ্যবাহী ঘুড়ির মেলা বসেছে। দুই’শ বছর পূর্ব থেকে মেলাটি হয়ে আসছে। প্রতি বাংলা বছরের জৈষ্ঠ্য মাসের শেষ শুক্রবার বিকেল বেলা উপজেলার তুলশীগঙ্গা নদীর তীরবর্তী সন্ন্যাসীতলা মন্দিরের পাশে বসে গ্রামীণ ঐতিহ্যবাহী ঘুড়ির মেলা। জনশ্রুতি আছে সন্ন্যাসী পূজাকে ঘিরে দুইশ’ বছর আগেই মেলাটি শুরু হয়। মেলাটিতে আশপাশের গ্রাম ছাড়াও দূরদুরান্ত থেকে হাজার হাজার মানুষের সমাগম ঘটে। মেলায় জিলাপি, মিষ্টি, বাঁশের তৈরি আসবাবপত্র, খেলনা, কাঠ, লোহার তৈরি জিনিসের দোকানসহ বিভিন্ন রকমের দোকান বসলেও মেলার মূল আকর্ষণ ঘুড়ি। এ কারণে এটি সন্যাসতলী ঘুড়ির মেলা নামে পরিচিত।

ক্ষেতলাল উপজেলার সন্যাসতলীতে সনাতন ধর্মের লোকজন মন্দিরে সন্যাসীকে পূজা দিয়ে দিনটি শুরু করলেও মুলত সেটি হিন্দু মুসলমান সকলের একটি মিলন মেলা। শুক্রবার (১৬ জুন) বিকেলে মেলা শুরুর পর থেকে সময় গড়ানোর সঙ্গে সঙ্গে মেলায় মানুষের ঢল নামে। প্রচন্ড গরমের কারণে মেলায় মানুষের ঢল কিছুটা কম হলেও ঘুরি কিনতে ও ঘুড়াতে মানুষের ঢল চোখে পড়ার মতো ছিল। মেলাকে ঘিরে ওই এলাকার আশপাশের কয়েক গ্রামে জামাই ও আত্বীয়-স্বজনদের আপ্যায়ন চলে ধুমছে।

মেলার মুল আকর্ষণ রং বেরঙের ঘুড়ি। তবে বর্তমানে মেলায় বাহারি রকমের মিষ্টি, কাঠ ও বাঁশের তৈরি আসাবপত্রসহ বিভিন্ন রকমের দোকান বসে। বিভিন্ন ধরনের মিষ্টি ও চিনির তৈরি শাহী জিলাপি মেলায় আসা দর্শকদের আকৃষ্ট করে। এছাড়া মেলায় বাঁশ, কাঠ ও লোহার তৈরি সংসারের বিভিন্ন সামগ্রী ও মাছ ধরা যন্ত্র কিনতে এই মেলায় মানুষের আগমন নজর কাড়ার মতো। দুইদিনব্যাপী ওই মেলায় শিশুদের খেলাধুলার জিনিসপত্র ও কসমেটিক্সের দোকানও বসে।

সরেজমিনে দেখা গেছে, মেলায় হরক রকমের দোকান বসেছে। ফাঁকা মাঠে ঘুরি দোকানীরা উড়াচ্ছে ঘুড়ি, চলছে ধুমছে ঢ়ুড়ি বিক্রি। প্রতিটি ঘুড়ি রকম ভেদে ১০০-৪০০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। মেলায় প্রবেশেরর প্রধান পাকারাস্তাসহ ভিতরের রাস্তায় নারী-পুরুষসহ শিশুদের প্রচুর ভিড়। রাস্তায় গাড়ি ও লোকের ভীড়ে যাওয়াই যেন ভাড়। গরম যেন কোনো বাঁধাই মনে করছেন কেউ। দুপুর গড়িয়ে যত বেলা যাচ্ছে, মেলায় দর্শনার্থীদর সংখ্যা আরো বাড়ছে। এটি একদিনের মেলা হলেও চলে দুইদিনব্যাপী।

ওই মেলাকে ঘিরে জামাই-মেয়ের পাশাপাশি স্বজনদেরও আপ্যায়নের রীতি চলে আসছে বহু আগে থেকেই। মেলায় আসা স্থানীয় কয়েকজনের সাথে কথা হলে তারা বলেন, আমাদের বাবা ও দাদারা এই মেলা করতে এসেছিল তাই আমরাও প্রতিবছর এ সময় মেলায় ঘুরতে ও কেনাকাটা করতে আসি।

মেলাটিতে আশেপাশের জেলা ও উপজেলা থেকেও অনেক মানুষের সমাগম ঘটে। মেলাতে আসা বগুড়ার জেলার শেরপুর উপজলার আরমান,দুপচাঁচিয়া উপজেলার সাওন হোসেনের সঙ্গে কথা হলে তারা বলেন, প্রতি বছর আমরা শুধু ঘুড়ি কিনতে এই সন্যাসতলী মেলাতে আসি। ঘুড়ি ছাড়াও এখানে সব ধরনের জিনিসপত্র পাওয়া যায়।

মেলা কমিটির সভাপতি মন্টু চন্দ্র বলেন, প্রায় দু’শ বছরের পুরনো ঐতিহ্যবাহী এই মেলা পূর্বপুরুষের স্মৃতি ধরে রাখতে চলতি বছরও আয়োজন করেছি। হিন্দু-মুসলিম সবাই মিলেমিশে আমরা এই মেলা পরিচালনা করে থাকি। এ মেলায় দেশের বিভিন্ন অঞ্চলের ব্যবসায়ীরা আসেন ও অনেক লোকের সমাগম ঘটে এই মেলায়।

উপজেলার স্থানীয় মামুদপুর ইউপি চেয়ারম্যান মশিউর রহমান শামীম বলেন, সনাতন ধর্মাবলম্বীদের ঐতিহ্যবাহী সন্ন্যাসতলী মেলা আমাদের এলাকার ঐতিহ্য। মেলার মূল আর্কষণ ঘুড়ি। এ মেলাকে ঘিরে নিজ উপজেলাসহ আশপাশের জেলা ও উপজেলার অনেক মানুষের সমাগম ঘটে। এ কারণে মেলাটি মানুষের এক মিলন মেলায় পরিণত হয়।

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App