নৌকায় ভোট চেয়ে আরেকবার সেবা করার সুযোগ চেয়েছেন রাজশাহী সিটি করপোরেশন (রাসিক) নির্বাচনে আওয়ামী লীগ মনোনীত মেয়র প্রার্থী এএইচএম খায়রুজ্জামান লিটন। গতকাল রবিবার গণসংযোগ শেষে নির্বাচনী পথসভায় বক্তৃতাকালে এ সুযোগ চান তিনি। এদিন তিনি মহানগরীর ২৩, ২৪ ও ২৫নং ওয়ার্ডের বিভিন্ন এলাকায় গণসংযোগ ও পথসভা করেন। এরপর নদীর ধার দিয়ে পঞ্চবটি হয়ে হাদির মোড় এলাকায় গণসংযোগ করেন এবং ২৪নং ওয়ার্ডের হাদির মোড়ে ও ২৫নং ওয়ার্ডের মোন্নাফের মোড়ে পথসভায় বক্তব্য রাখেন।

নৌকা প্রতীকের প্রার্থীর গণসংযোগ ও পথসভায় সর্বস্তরের জনসাধারণের ঢল নামে। এ সময় এএইচএম খায়রুজ্জামান লিটন বলেন, ২০১৯ সালে রাজশাহীর উন্নয়নে ২৭০০ কোটি টাকার উন্নয়ন প্রকল্প অনুমোদন দেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। প্রকল্প অনুমোদন পাওয়ার পরপরই সারাবিশ্বের ন্যায় রাজশাহীতে করোনা মহামারি সংক্রমণ দেখা দেয়। তখন আমরা মানুষের জীবন বাঁচাতে ব্যস্ত হয়ে পড়ি। করোনার কারণে প্রায় দেড় বছর উন্নয়ন কাজ ব্যাহত হয়। পরবর্তী সময়ে রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ, ডলারের সংকট ইত্যাদি কারণে প্রায় ১ বছর নষ্ট হয়ে যায়। মাত্র আড়াই বছরে যে উন্নয়ন করেছি, সেটা আপনাদের সামনে দৃশ্যমান। ২৭০০ কোটি টাকার মধ্যে মাত্র ১২০০ কোটি টাকার উন্নয়ন হয়েছে। আরো ১৫০০ কোটি টাকা বরাদ্দ রয়েছে। অল্প সময়ে যে উন্নয়ন করেছি, ঢাকা থেকে, চট্টগ্রাম থেকে, খুলনাসহ দেশের বিভিন্ন জায়গা থেকে যারা রাজশাহীতে বেড়াতে আসেন, তারা এই শহরের ভূয়সী প্রশংসা করেন। তারা বলেন, এমন ঝকঝকে তকতকে, সুন্দর আলোকিত সড়ক দেশের আর দ্বিতীয়টি নেই। শুধু দেশ নয়, দেশের বাইরেও রাজশাহীর সুনাম ছড়িয়ে পড়েছে।

সাবেক মেয়র খায়রুজ্জামান লিটন আরো বলেন, আমরা উন্নয়নের একটা পর্যায়ে পৌঁছে গেছি। এবার আমাদের সন্তানদের ভবিষ্যৎ গড়তে হবে। সেজন্য প্রয়োজন কর্মসংস্থান। যদিও কর্মসংস্থান দেয়া মেয়রের কাজ নয়, তারপরও আপনাদের সন্তানদের জন্য এই দায়িত্ব আমি নিজ কাঁধে নিয়েছি। রাজশাহীতে শিল্প-কারখানা তেমন নেই। সরকারি যে কারখানাগুলো ছিল, সেগুলোও বন্ধ হয়ে গেছে। এখন বেসরকারি বিনিয়োগকারীদের নিয়ে এসে রাজশাহীতে শিল্পায়ন করতে হবে। নওদাপাড়া এলাকায় বিসিক শিল্পনগরী-২ এর কাজ শেষ হয়েছে। সেখানে শিল্পপতি ও বিনিয়োগকারীদের এনে শিল্পকারখানা গড়তে হবে। আপনারা আমাকে নির্বাচিত করলে আমি প্রধানমন্ত্রীকে অনুরোধ জানাবো যে, তিনি যেন শিল্পপতিদের বলে দেন, রাজশাহীতে ছোট করে হলেও কিছু শিল্পকারখানা গড়তে। এটি করতে পারলে আগামী ৫ বছরে প্রায় ৪০ থেকে ৫০ হাজার মানুষের কর্মসংস্থান হবে। এটি অনেক বড় কাজ, অনেক বড় দায়িত্ব, এই কাজটি আমি করতে চাই। আপনাদের সন্তানদের কর্মের ব্যবস্থা করতে চাই।

তিনি বলেন, শহরের পাশ দিয়ে বয়ে যাওয়া পদ্মা নদীকে বাণিজ্যিক কাজে ব্যবহার করতে চাই। নদীপথে ভারতের সঙ্গে আমদানি-রপ্তানি কার্যক্রম চালাতে চাই। সেজন্য ভারতের মুর্শিদাবাদের ধুলিয়ান থেকে গোদাগাড়ীর সুলতানগঞ্জ ও রাজশাহী হয়ে ঢাকা পর্যন্ত নৌরুট চালু ও রাজশাহীতে নৌবন্দর স্থাপন করতে চাই। এটি চালু হলে ব্যবসা-বাণিজ্য স¤প্রসারিত হবে, অনেক মানুষের কর্মসংস্থান হবে।

লিটন বলেন, তরুণ-তরুণীদের বিনামূল্যে কম্পিউটার প্রশিক্ষণের জন্য শহরে ১০টি কম্পিউটার প্রশিক্ষণ কেন্দ্র গড়তে চাই। যেখান থেকে প্রশিক্ষণ নিয়ে অনলাইনে তারা আয় করতে পারবে। তাদের আমরা কাজের ক্ষেত্রও দেখিয়ে দেব। লিটন আরো বলেন, রাজশাহীকে আরো অনেক দূর নিয়ে যেতে চাই। রাজশাহীর উন্নয়নে অনেক কাজ বাকি আছে। অসমাপ্ত কাজগুলো সমাপ্ত করতে আমাকে নৌকা মার্কায় ভোট দিয়ে আরেকবার সুযোগ দিন।

পথসভায় রাজশাহী মহানগর আওয়ামী লীগের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি বীর মুক্তিযোদ্ধা মোহাম্মদ আলী কামাল, সহসভাপতি নাইমুল হুদা রানা, ডা. তবিবুর রহমান শেখ, সাংগঠনিক সম্পাদক এডভোকেট আসলাম সরকার, প্রচার সম্পাদক দিলীপ কুমার ঘোষ, কৃষি বিষয়ক সম্পাদক মীর তৌফিক আলী ভাদু, মহানগর যুবলীগ সভাপতি রমজান আলী, জাসদ রাজশাহী মহানগর সভাপতি আব্দুল্লাহ আল মাসুদ শিবলী, বোয়ালিয়া থানা (পূর্ব) আওয়ামী লীগের সভাপতি আতিকুর রহমান কালু, সাধারণ সম্পাদক শ্যামল কুমার ঘোষ, ২৩নং ওয়ার্ড সভাপতি জসির উদ্দিন জসির, সাধারণ সম্পাদক মেহেদি হাসান রনিসহ স্থানীয় আওয়ামী ও সহযোগী সংগঠনের নেতা ও সর্বস্তরের জনসাধারণ উপস্থিত ছিলেন।