×

সারাদেশ

গাইবান্ধায় ৩ বছর প্রতিবন্ধী নারীর নামে বিধবা ভাতা

Icon

কাগজ প্রতিবেদক

প্রকাশ: ০৯ জুন ২০২৩, ০৮:০২ পিএম

গাইবান্ধায় ৩ বছর প্রতিবন্ধী নারীর নামে বিধবা ভাতা

গীতা রানী প্রামানিক। পাশে স্বামী গৌতম চন্দ্র প্রামানিক। গীতা রানীর দুই হাতে শাখা, কপালে লাল টিপ ও সিথিতে সিদুর। তার বাম পা ও বাম হাত অনেকটাই বিকলাঙ্গ। এক কথায় প্রতিবন্ধি। গৌতম চন্দ্র প্রামানিক জীবিত হলেও জেলা সমাজ সেবা অফিসের তালিকায় তিনি মৃত। তাকে মৃত দেখিয়ে একটি চক্র তিন বছর ধরে গীতা রানী প্রামানিকের নামে বিধবা ভাতা উত্তোলন করে আসছে। এমন তথ্য প্রকাশ পাওয়ায় বিষয়টি এলাকায় তোলপাড় সৃষ্টি হয়েছে।

অনুসন্ধানে জানা গেছে, গাইবান্ধা সদর উপজেলার খোলাহাটী ইউনিয়নের বোর্ডঘর গ্রামের বাসিন্দা গৌতম চন্দ্র প্রামানিক। তিনি দিন মজুরের কাজ করেন। তার স্ত্রী গীতা রানী শারীরিক প্রতিবন্ধি। তার তিন মেয়ে রয়েছে। এক মেয়ের বিয়ে হয়েছে। দুই মেয়ে লেখাপড়া করে। আবেদনের প্রেক্ষিতে সমাজসেবা অধিদপ্তর থেকে গীতা রানীর শারীরিক প্রতিবন্ধিতা, মাঝারি কার্ড ইস্যু করা হয় ২০২১ সালে মার্চ মাসের ২১ তারিখে। যার নম্বর ১৯৭৮৬৮৯৪৩৪১৪০০-০২। দীর্ঘদিন অপেক্ষার পর চলতি বছর অন্যান্য প্রতিবন্ধিদের মত এ বছর গীতা রানীর নামেও প্রতিবন্ধী ভাতা হিসেবে সরকারিভাবে অর্থ ছাড় করে মন্ত্রনালয়। অনেকেই ভাতার টাকা উত্তোলনও করেন। কিন্তু প্রতিবন্ধি ভাতা তালিকায় নাম থাকলেও মোবাইলের বিকাশ অ্যাকাউন্টে টাকা পায় না গীতা রানী। সরকারের দেয়া প্রতিবন্ধি ভাতা মোবাইল অ্যাকাউন্টে টাকা না আসায় খোলাহাটী ইউনিয়ন তথ্য সেবা কেন্দ্রের মাধ্যমে উপজেলা সমাজ সেবা ও জেলা সমাজসেবা অফিসে যোগাযোগ করেন গীতা রানী ও তার স্বামী গৌতম চন্দ্র। সেখানে গিয়ে জানতে পান, তার আইডি কার্ড ব্যবহার করে স্বামী জীবিত থাকার পরও তার নামে তিন বছর আগে থেকে বিধবা ভাতা দিয়ে আসছে সমাজসেবা অধিদপ্তর। ওই টাকাও অন্য কারো মোবাইল একাউন্টে জমা হচ্ছে। যে কারণে প্রতিবন্ধির ভাতার টাকা তার মোবাইল হিসেবে জমা হয়নি। জীবিত স্বামীর মৃত্যুর কথা শুনে হতবাক হয়ে যান গীতা রানীসহ গ্রামবাসি।

সরকারি নিয়ম অনুযায়ী যে কোনো ব্যক্তি (প্রতিবন্ধী, বিধবা, গর্ভবতী, বয়স্ক ইত্যাদি) সরকারি একটি প্রকল্পের অধীনে ভাতা পাবেন। একাধিক ভাতা ইস্যু হলেও তিনি একটির বেশী ভাতা পাবেন না। যেহেতু গীতা রানীর স্বামী জীবিত। তারপরও তাকে মৃত দেখিয়ে বিধবা ভাতা ইস্যু করা করা হয়েছে। তাই গীতা রানী প্রতিবন্ধি হয়েও ভাতা পাচ্ছেন না।

সরেজমিন সদর উপজেলার খোলাহাটী ইউনিয়নের বোর্ডঘর গ্রামে গীতা রানীর সঙ্গে দেখা হয়। ‘বউদি’ বলে ডাকার পর টিনসেড কাঁচা ঘর থেকে খুড়িয়ে খুড়িয়ে বেরিয়ে আসেন তিনি। বাড়িতে তার স্বামী ছিলো না। পাশেই কোন এক বাড়িতে দিন মজুরের কাজ করছিলেন। খবর দিয়ে তাকে ডেকে আনা হয়। স্বামীর পাশে দাড়িয়ে গীতা রানী বলেন, ‘এইযে দেখেন আমার স্বামী জীবিত। আমার হাতে শাখা, সিথিতে সিদুর। আমি একজন প্রতিবন্ধী মানুষ। স্বামী দিনমজুর। আমরা খুব গরীব। আমার স্বামী অন্যের বাড়িতে কাজ করে সংসার চালায়। আমার প্রতিবন্ধি ভাতা চালু করেছে প্রধানমন্ত্রী শেষ হাসিনা সরকার। কিন্তু আমি প্রতিবন্ধী ভাতার টাকা এখনো পাই নাই। আমার স্বামীকে যারা মৃত দেখিয়ে আমার নামে যারা তিন বছর ধরে বিধবা ভাতার টাকা তুলে খাচ্ছে আমি তাদের শাস্তি চাই। সেইসাথে আমার প্রতিবন্ধী ভাতার টাকা যাতে পাই সেই দাবি জানাই সরকারের কাছে।

গীতা রানীর স্বামী গৌতম চন্দ্র প্রামানিক বলেন, ‘আমাকে মৃত দেখিয়ে আমার স্ত্রীর নামে বিধবা ভাতা করলো কে? আমি তার বিচার চাই।’ গীতা রানীর জা (দেবরের স্ত্রী) বলেন, আমার ভাসুর জীবিত। তাকে মরা দেখালো কে?

তিনি আরো বলেন, আমার জা প্রতিবন্ধী তাকে বিধবা বানালো কে? আমরা তার বিচার চাই। অপর এক জা ও তার দেবর নয়ন চন্দ্র প্রামানিক একই কথা বলেন। গীতা রানী যাতে প্রতিবন্ধী ভাতা পায়, সে জন্য তারা সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের সহযোগিতা চান।

খোলাহাটী ইউনিয়ন পূজা উদযাপন কমিটির সাধারণ সম্পাদক ইতিশ চন্দ্র সরকার বলেন, একজন গরীব প্রতিবন্ধী নারীর স্বামীকে মৃত দেখিয়ে যারা ৩ বছর ধরে বিধবা ভাতা তুলেছেন তাদের শাস্তি হওয়া দরকার।

গাইবান্ধা সদর উপজেলা সমাজ সেবা কর্মকর্তা মো. নাসির উদ্দিন শাহ্ বলেন, বিষয়টি জানার পর গীতা রানীর নামে বিধবা ভাতা বাতিল করে সেখানে অন্য একজন বিধবাকে প্রতিস্থাপন করা হয়েছে। এছাড়া, গীতা রানীর নামে প্রতিবন্ধি ভাতার টাকা ছাড় করার জন্য অধিদপ্তরে পে-রাল পাঠানো হয়েছে। তিনি আরও বলেন, ৩ বছর ধরে বিধবা ভাতার টাকা যারা উত্তোলন করেছে তাকে শনাক্ত করা হয়েছে।

এ বিষয়ে জেলা সমাজ সেবা অধিদপ্তরের উপপরিচালক মো. ফজলুল হকের দৃষ্টি আকর্ষণ করা হলে তিনি বলেন, বিষয়টি জানার পর উপজেলা সমাজ সেবা কর্মকর্তাকে তদন্তের নির্দেশ দেই। তদন্ত প্রতিবেদন এখনো জমা হয়নি। প্রতিবেদনে সমাজ সেবা অধিদপ্তরের কেউ জড়িত থাকলে তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হবে। এছাড়া গত ৩ বছর ধরে বিধবা ভাতার টাকা যার অ্যাকাউন্টে জমা হয়েছে খুব শীঘ্রই সেই টাকা উদ্ধার করে সরকারি কোষাগারে জমা করা হবে।

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App