×

সারাদেশ

খুলনায় প্রচারণা তুঙ্গে সেবাদানের প্রতিশ্রুতি

Icon

কাগজ প্রতিবেদক

প্রকাশ: ০৫ জুন ২০২৩, ১১:২১ এএম

খুলনায় প্রচারণা তুঙ্গে সেবাদানের প্রতিশ্রুতি

তীব্র রোদ মাথায় নিয়ে প্রতিদিনের মতো গতকাল রবিবারও গণসংযোগ, পথসভা ও প্রচার- প্রচারণায় ব্যাস্ত ছিলেন খুলনা সিটি করপোরেশন নির্বাচনে প্রতিদ্ব›দ্বী প্রার্থীরা। প্রার্থীসহ দলীয় নেতাকর্মীদের গণসংযোগ ও মাইকিংয়ে মুখরিত ছিল খুলনা নগরী।

এ নির্বাচনে ৫ জন মেয়র, ১৩৬ জন কাউন্সিলর ও ৩৯ জন সংরক্ষিত ওয়ার্ডের কাউন্সিলর প্রার্থীরা সকাল থেকে রাত পর্যন্ত বিরামহীন পরিশ্রমেও পিছু হটছেন না। ভোটারদের কাছে গিয়ে একদিকে যেমন উন্নয়নসহ নাগরিক সেবাদানের প্রতিশ্রুতি দিচ্ছেন, অন্যদিকে নিজেদের প্রতীকের লিফলেট দিয়ে করে ভোটারদের মন জয় করার চেষ্টা করছেন।

গতকাল রবিবার নগরীর বিভিন্ন এলাকায় গণসংযোগে মাঠে নামেন নৌকা প্রতীকের আওয়ামী লীগ মনোনীত তালুকদার আব্দুল খালেক, জাতীয় পার্টির লাঙ্গল প্রতীকের শফিকুল ইসলাম মধু , ইসলামী আন্দোলনের মাওলনা আব্দুল আউয়াল, জাকের পার্টির এস এম সাব্বির হোসেন ও স্বতন্ত্র মেয়র প্রার্থী এস এম শফিকুর রহমান মুশফিক। এ ছাড়া ৩১টি ওয়ার্ডের সাধারণ ও ১০ সংরক্ষিত ওয়ার্ডের কাউন্সিলর প্রার্থীরা সকাল থেকেই তাদের নির্বাচনী প্রচার-প্রচারণা চালিয়ে যান।

খুলনা মহানগর আওয়ামী লীগ সভাপতি ও দলীয় মেয়র প্রার্থী আলহাজ তালুকদার আব্দুল খালেক সকাল ৯টায় নির্বাচনী প্রচারণা শুরু করেন। তিনি দৌলতপুরের মহাসিন মোড় এলাকার সাধারণ মানুষের সঙ্গে কুশল বিনিময় করেন। পরে তিনি ১.২.৩ নং ওয়ার্ডসহ আশপাশের এলাকায় গণসংযোগ করেন। এ সময় তিনি লিফলেট বিতরণ করে নৌকা প্রতীকে ভোট চান। তালুকদার আব্দুল খালেক রিকশা, ভ্যান, ঠেলাগাড়ি, ইজিবাইক ও মাহেন্দ্র চালকদের সঙ্গে শুভেচ্ছা বিনিময় করেন। গণসংযোগ চলাকালে বিভিন্ন স্থানে পথসভায় বক্তৃতা করেন তালুকদার আব্দুল খালেক। বিগত ৫ বছর খুলনায় ব্যাপক উন্নয়ন হয়েছে দাবি করে, তিনি আবারো নৌকা প্রতীকে ভোট চান।

আওয়ামী লীগের মেয়র প্রার্থী খালেক বলেন, নাগরিক সুবিধা ও নগরবাসীর ভাগ্যের পরিবর্তনসহ সার্বিক উন্নয়নে নৌকাকে বিজয়ী করুন। নৌকা মার্কায় ভোট দিলেই দেশের উন্নতি হয়, সেটি আজ প্রমাণিত। স্বাধীনতার পর থেকে আওয়ামী লীগই এদেশের মানুষের ভাগ্যের পরিবর্তনে কাজ করে এসেছে। আওয়ামী লীগের বিজয় হলে স্বাস্থ্য, শিক্ষা, বিদ্যুৎ, যোগাযোগ ও দরিদ্র, অসহায়, অসচ্ছল মানুষের ভাগ্যের উন্নয়নসহ সর্বক্ষেত্রে উন্নয়ন হবে। তিনি আরো বলেন, নৌকা মার্কায় ভোট দিয়ে আমাকে আপনারা সেবা করার সুযোগ দিয়েছিলেন। আমি আপনাদের পাশে সব সময় ছিলাম। নির্বাচিত হলে আবারো আপনাদের পাশে থাকব। খুলনা উন্নয়নে যে সার্বিক কর্মসূচি নিয়েছি সেগুলো বাস্তবায়িত হবে। তাই নিশ্চিত উন্নয়নের স্বার্থে নৌকায় ভোট দিন।

গণসংযোগ ও পথসভায় উপস্থিত ছিলেন- খুলনা মহানগর আওয়ামী লীগ সহসভাপতি বেগ লিয়াকত আলী, বীর মুক্তিযোদ্ধা নুর ইসলাম বন্দ, বীর মুক্তিযোদ্ধা মাকসুদ আলম খাজা, মোজাম্মেল হক হাওলাদার, দৌলতপুর থানা আওয়ামী লীগের সভাপতি শেখ সৈয়দ আলী, খানজাহান আলী থানা আওয়ামী লীগের সভাপতি শেখ আবিদ হোসেন, দৌলতপুর থানা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক শহিদুল ইসলাম বন্দ, খানজাহান আলী থানা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এস এম আনিছুর রহমান, শেখ দাউদ হায়দার, মো. শাহাবুদ্দিন, মহানগর স্বেচ্ছাসেবক লীগের সাধারণ সম্পাদক এস এম আসাদুজ্জামান রাসেল, মনিরুরল ইসলাম, জাকারিয়া রিপন, সেলিম আহমেদ, আজিজুল হাসান, এডভোকেট সাহারা ইরানী পিয়া, জব্বার আলী হীরা, মাহমুদুল ইসলাম সুজন, সোহান হাসান শাওন, মাহমুদুল হাসান রাজেস, নিশাত ফেরদৌস অনি, রাহুল শাহরিয়ার প্রমুখ।

জাতীয় পার্টির ভাইস চেয়ারম্যান ও দলীয় প্রার্থী শফিকুল ইসলাম মধু লাঙ্গল প্রতীক নিয়ে সকাল ১০টায় নির্বাচনী প্রচারণা শুরু করেন। নগরীর নতুন বাজার এলাকাবাসীর সঙ্গে গণসংযোগে অংশ নেন তিনি। এ সময় মধু ওই এলাকার সব শ্রেণি-পেশার মানুষের সঙ্গে কুশল বিনিময় করেন। পরে ১৪, ১৫ ও ২২ নং ওয়ার্ডের বিভিন্ন এলাকায় গণসংযোগ শেষে দফায় দফায় পথসভা অনুষ্ঠিত হয়। পথসভায় বক্তৃতায় শফিকুল ইসলাম মধু বলেন, জাতীয় পার্টির সরকার ১০ বছর ক্ষমতায় ছিল। এ দলের নেতারা কেউ কোনো দুর্নীতি করেনি। দেশের সম্পদ লুটপাট করেনি, দেশের টাকা বিদেশে পাচার করিনি। তাই দুর্নীতিবাজদের ভোট দিবেন না।

তিনি আরো বলেন, শুধু রাস্তাঘাট আর ড্রেন সংস্কার করলেই খুলনা শহরের উন্নয়ন হবে না। খুলনাকে আধুনিক শহর গড়তে হলে নতুন নতুন শিল্প কলকারখানা গড়ে উঠতে হবে। সেখানে মানুষের কর্মস্থান হলে ঘুরে দাঁড়াতে পারবে চিরচেনা খুলনা। এই শিল্পের কারণেই খুলনাকে শিল্পনগরী বলা হতো। তাই লাঙ্গল প্রতীকে ভোট দিয়ে খুলনার হারানো ঐতিহ্য ফিরিয়ে আনুন।

এ সময় উপস্থিত ছিলেন- জাতীয় পার্টির কেন্দ্রীয় ধর্মবিষয়ক সম্পাদক মাওলানা আল জুবায়ের, নগর জাতীয় পার্টির সভাপতি এডভোকেট মহানন্দ সরকার,নগর জাতীয় পার্টির সাধারণ সম্পাদক আব্দুল্লাহ আল মামুন ও জেলার সাধারণ সম্পাদক এম হাদিউজ্জামান, শেখ মো. নাজমুল কবির সাদী, গাউছুল আজম, আশফাকুল ইসলাম সেলিম, তৌমুর হোসেন শাহিন, প্রিন্স হোসেন কালু, মোস্তফা কামাল রিপন প্রমুখ।

ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ মনোনীত হাতপাখার মেয়র পদপ্রার্থী হাফেজ মাওলানা আব্দুল আউয়াল ভোর সাড়ে ৬টায় শিপইয়ার্ড এলাকা থেকে নির্বাচনী প্রচারণা শুরু করেন। নগরীর ৩০ ও ৩১ নং ওয়ার্ডের শিপইয়ার্ড বান্দা সিমেন্ট ফ্যাক্টরি, মোখতার হোসেন বাজার বান্দা বাজার জিন্নাহ পাড়া বাজার চানমারি বাজারে সকাল থেকে দুপুর পর্যন্ত সাধারণ মানুষের সঙ্গে শুভেচ্ছা বিনিময় করেন। বিকাল ৪টা থেকে রাত পর্যন্ত ইস্টার্ন রোড, কমিউনিটি সেন্টার, চানমারি খালপাড় মদিনা বাজার, জিন্নাহপাড়া বান্দার মোড় এলাকায় গণসংযোগ করেন।

নির্বাচনী প্রচারণা চলাকালে দফায় দফায় পথসভায়ও বক্তৃতা করেন মাওলনা আব্দুল আউয়াল। এ সময় তিনি বলেন,আমি নির্বাচিত হলে মানবিক কারণে পায়ে চালিত রিকশা, ভ্যান ও ঠেলাগাড়ির লাইসেন্স ফি মওকুফ করা হবে। ব্যাটারিচালিত রিকশা, ইজি-অটোবাইক এবং জ্বালানি তেল চালিত মাহেন্দ্রাসহ অন্যান্য হালকা যানসমূহের লাইসেন্স ফি অর্ধেক করা হবে। উক্ত লাইসেন্স শুধুমাত্র প্রকৃত ড্রাইভারগণকেই দেয়া হবে। খুলনা সিটির বিভিন্ন গাড়ির স্ট্যান্ড ও মালামাল উঠানামার ঘাটসমূহে সব ধরনের চাঁদাবাজি বন্ধ করা হবে। ৩০% হোল্ডিং ট্যাক্স মওকুফ করা হবে।

ট্রেড লাইসেন্স ফি অর্ধেক করা হবে। আব্দুল আউয়াল আরো বলেন, কেসিসি’র বর্ধিতকরণ প্রকল্পে যে সব নতুন এলাকাসমুহ যুক্ত করা হয়েছে, সে সব এলাকার হোল্ডিং ট্যাক্স ৫ (পাঁচ) বছরের জন্য মওকুফ করা হবে। তাদের পানির লাইন বিনা খরচে দেয়া হবে। অগ্রাধিকার ভিত্তিতে নতুন এলাকার রাস্তাঘাট ও স্যুয়ারেজ লাইন মানসম্মতভাবে স্বল্প সময়ের মধ্যে স¤পন্ন করা হবে।

গণসংযোগে উপস্থিত ছিলেন- ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ খুলনা মহানগর কেসিসি নির্বাচন পরিচালনা কমিটির প্রধান পরিচালক মো. নাসির উদ্দিন, সহকারী পরিচালক মুফতী আমানুল্লাহ, সমন্বয়নকারী মুফতি ইমরান হুসাইন,সহ-সমন্বয়কারী হাফেজ আসাদুল্লাহ গালীব, নির্বাচনী প্রধান এজেন্ট শেখ হাসান ওবায়দুল করিম, অর্থ সমন্বয়নকারী আবু গালিব, সহসমম্বয়নকারী রবিউল ইসলাম তুষার, মিডিয়া সমন্বয়কারী আব্দুল্লাহ আল নোমান, ফেরদৌস গাজী সুমন, গণসংযোগ সমন্বয়কারী মো. সাইফুল ইসলাম প্রমুখ।

এদিকে সকালা ৯টা থেকে নগরীর বিভিন্ন এলাকায় নির্বাচনী প্রচারণা শুরু করেন টেবিল ঘড়ি প্রতীক নিয়ে স্বতন্ত্র প্রার্থী এস এম শফিকুর রহমান মুসফিক। নগরীর খালিশপুরের বিভিন্ন ওয়ার্ডে শ্রমিকদের সঙ্গে গণসংযোগ করেন তিনি। এ সময় মুশফিক টেবিলঘড়ি প্রতীকে ভোট দিয়ে তাকে নির্বাচিত করার জন্য ভোটারদের প্রতি জোর আহ্বান জানান।

অন্যদিকে গতকাল সকাল থেকেই নগরীর বিভিন্ন এলাকায় গণসংযোগ ও পথসভা করেছেন জাকের পার্টির প্রার্থী এস এম সাব্বির হোসেন। প্রচারণাকালে ভোটারদের কাছে গোলাপফুল মার্কায় ভোট চান এই মেয়র প্রার্থী।

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App