×

সারাদেশ

ইশতেহার দিলেন ইকবাল বহিষ্কার বিএনপির ১৯ জন

Icon

কাগজ প্রতিবেদক

প্রকাশ: ০৫ জুন ২০২৩, ১১:০৭ এএম

ইশতেহার দিলেন ইকবাল বহিষ্কার বিএনপির ১৯ জন

আসন্ন বরিশাল সিটি করপোরেশন নির্বাচনে প্রথম ইশতেহার ঘোষণা করেছেন জাতীয় পার্টির লাঙল প্রতীকের মেয়র প্রার্থী ইঞ্জিনিয়ার ইকবাল হোসেন তাপস। বরিশাল সিটিকে মেগা সিটিতে পরিণত করা, শিক্ষা-চিকিৎসা ব্যবস্থার উন্নয়ন, বেকারত্ব দূরীকরণসহ ৩০টি নির্দিষ্ট খাতে উন্নয়নের প্রতিশ্রুতি দিয়ে গত রবিবার সকালে বরিশাল ক্লাবের অমৃত লাল দে মিলনায়তনে এ ইশতেহার ঘোষণা করেন তিনি।

এদিকে প্রতিদিনের ন্যায় রবিবার নগরীতে গণসংযোগ করেন আওয়ামী লীগের নৌকা প্রতীকের প্রার্থী আবুল খায়ের আবদুল্লাহ খোকন সেরনিয়াবাত। অপরদিকে কেন্দ্রীয় নির্দেশনা উপেক্ষা করে নির্বাচনে অংশগ্রহণ করায় স্বতন্ত্র মেয়র প্রার্থী সাবেক ছাত্রদল নেতা কামরুল আহসান রুপনসহ ১৯ নেতাকর্মীকে আজীবনের জন্য দল থেকে বহিষ্কার করেছে বিএনপি।

ইশতেহার ঘোষণা অনুষ্ঠানে ইকবাল হোসেন তাপস মাদক ও সন্ত্রাস নির্মূলসহ পর্যটন এবং শিশু ও নারীবান্ধব নগরী গড়ে তোলার ওপর গুরুত্ব দেয়া হবে জানিয়ে বলেন, বরিশাল নগরবাসীর স্বপ্ন-পূরণে নির্বাচনী অঙ্গীকারগুলো হলো- প্রশস্ত রাস্তা নির্মাণ ও জনসাধারণের হাঁটার জন্য ফুটপাথের ব্যবস্থা করা। রাস্তা-ঘাট নির্মাণের দরপত্রে ১০০% স্বচ্ছতার নিশ্চয়তা।

শহরের ঐতিহ্যবাহী খালসমূহ খনন ও সংস্কার করে পুনরুদ্ধারসহ দুই পাড়ে সৌন্দর্য্য বর্ধন ও ফুটপাত নির্মাণসহ জনসাধারণের হাঁটার রাস্তা নির্মাণ করা। শহরের ঐতিহ্যবাহী দীঘি ও পুকুর সংস্কার করে পরিবেশ বান্ধব করে গড়ে তোলা। আধুনিক ব্যবস্থাপনায় সূর্যোদয়ের আগে শহর পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন রাখা। পানি নিষ্কাশন ব্যবস্থা আধুনিকীকরণ ও বিশুদ্ধ পানি সরবরাহের ব্যবস্থা করা।

প্রত্যেক ওয়ার্ডে কম খরচে/ফ্রি চিকিৎসাসেবা কেন্দ্র স্থাপন করা। প্রতিটি মহল্লা ও সড়কে ডিজিটাল বাতি স্থাপন করা। শহরের প্রতিটি মহল্লায় রাতে পাহারার ব্যবস্থা ও নিরাপত্তা গেট নির্মাণ করা হবে। এছাড়াও তিনি আরো বলেন নির্বাচিত হলে, ধর্ম-বর্ণ নির্বিশেষে সহাবস্থান নিশ্চিত করা। ওয়ার্ডে কমিউনিটি সেন্টার প্রতিষ্ঠা ও সাংস্কৃতিক বিকাশ কেন্দ্র গড়ে তোলা। প্রতিটি ওয়ার্ডে সাংস্কৃতিক ক্লাব ও খেলাধুলার মাঠ প্রতিষ্ঠা করা। নগরের গুরুত্বপূর্ণ স্থানসমূহকে সংস্কার ও আধুনিকরণ করা। স্কুলসমূহে শিশুদের জন্য শিক্ষাবান্ধব পরিবেশ তৈরি করা।

নগরের গুরুত্বপূর্ণ স্থানে ভাষা আন্দোলন ও মুক্তিযুদ্ধের স্মৃতিস্তম্ভ নির্মাণ করা। কীর্তনখোলার তীর ঘিরে ভ্রমণ, আধুনিক ওয়াকওয়েসহ পার্ক গড়ে তোলা। বরিশালে পর্যটন হোটেল-মোটেল নির্মাণ ও পর্যটন কেন্দ্র গড়ে তোলা। ধর্মীয় স্থানসমূহ সংরক্ষণ ও সুযোগ-সুবিধা বৃদ্ধি করা। বরিশাল সিটি করপোরেশনের অন্তর্গত অনুন্নত কলোনি বা বাস্তুহারাদের সব প্রকার নাগরিক সুবিধার আওতায় আনা হবে।

ইকবাল হোসেন তাপস বলেন, আমি মনে করিনা এখনো বরিশাল সিটি নির্বাচনে লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড তৈরি হয়েছে। ক্ষমতাসীন দলের প্রার্থীরা একটু সুযোগ সুবিধা বেশি পাবেন। তারমানে এই নয়, তারা নিয়ম ভেঙে রাস্তাঘাট দখল করে নির্বাচনী কার্যালয় বসাবেন। নির্বাচন কমিশন থেকে আমাদের ৪ থানা এলাকায় ৪টি অফিস বসানোর কথা বলেছে।

সেখানে আওয়ামী লীগের নির্বাচনী কার্যালয়ের অভাব নেই। আবার তাদের লোকজন শহরে মোটরসাইকেল মহড়া দিয়ে ভীতিকর পরিস্থিতি সৃষ্টি করছে। প্রশাসনও সবার সঙ্গে সমান আচরণ করছে না।

এ সময় তার সঙ্গে সহধর্মিনী ইসমত আরা ইকবাল টুপুর, জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যানের উপদেষ্টা মহসিন উল ইসলাম হাবুলসহ দলীয় নেতাকর্মীরা উপস্থিত ছিলেন।

এদিকে বরিশাল সিটি নির্বাচনে নৌকা মার্কার সমর্থনে আওয়ামী লীগ মনোনীত মেয়র প্রার্থী আবুল খায়ের আব্দুল্লাহ ভোট চেয়ে গণসংযোগ করেছেন। রবিবার দুপুর ১২টার দিকে তিনি নগরীর বাংলাবাজার এলাকার ব্যবসায়ী ও পথচারীদের মাঝে গণসংযোগ করেন।

এ সময় তার সঙ্গে উপস্থিত ছিলেন- আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক আফজাল হোসেন, কেন্দ্রীয় আওয়ামী লীগ নেতা এডভোকেট বলরাম পোদ্দার, নৌকা মার্কার নির্বাচনী দপ্তর সেলের প্রধান এডভোকেট লস্কর নুরুল হক, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক সাজ্জাদ সাকিব বাদশা, আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় উপকমিটির সাবেক সদস্য জহিরুল ইসলাম শাহিনসহ স্থানীয় আওয়ামী লীগ ও সহযোগী সংগঠনের নেতারা।

গণসংযোগকালে নৌকার মেয়র প্রার্থী খোকন সেরনিয়াবাত ভোটারদের উদ্দেশে বলেন, দীর্ঘদিন উন্নয়ন বঞ্চিত বরিশালকে নতুনভাবে সাজানোর লক্ষ্যে নৌকা প্রতীকে ভোট দিয়ে বিজয়ী করতে হবে। তিনি ভোটারদের বলেন, বরিশাল নগরী এক সময় উন্নয়নের উদাহরণ ছিল। ছিল প্রাচ্যের ভেনিস হিসেবে পরিচিত। গত ১০ বছরে এখানে দায়িত্বরত জনপ্রতিনিধিরা উন্নয়ন করতে ব্যর্থ হয়েছেন।

অথচ সারাদেশে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার উন্নয়নের কর্মযজ্ঞ চলছে। তাই আগামী নির্বাচনের জন্য শেখ হাসিনা আমাকে বরিশালের উন্নয়ন করার দায়িত্ব দিয়ে মেয়র প্রার্থী হিসেবে মনোনীত করেছেন। আগামী ১২ জুন নৌকায় ভোট দিয়ে সেই কাক্সিক্ষত উন্নয়ন করার সুযোগ চেয়েছেন মেয়র প্রার্থী খোকন।

অপরদিকে দলীয় সিদ্ধান্ত উপেক্ষা করে বরিশাল সিটি নির্বাচনে মেয়র, সাধারণ ও সংরক্ষিত কাউন্সিলর পদে প্রার্থী হওয়া ১৯ জনকে বিএনপির প্রাথমিক সদস্যপদসহ সব পর্যায়ের পদ থেকে আজীবনের জন্য বহিষ্কার করা হয়েছে। রবিবার এ তথ্য জানিয়েছেন বরিশাল মহানগর বিএনপির দপ্তরের দায়িত্বে থাকা মো. জাহিদুর রহমান রিপন।

তিনি বলেন, বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব এডভোকেট রুহুল কবির রিজভী স্বাক্ষরিত আজীবন বহিষ্কার আদেশের কপি প্রত্যেক প্রার্থীর কাছে পৌঁছে দেয়া হয়েছে। আজীবন বহিষ্কৃতরা হলেন- টেবিল ঘড়ি প্রতীকে স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে মেয়র পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতাকারী কেন্দ্রীয় ছাত্রদল ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখার সাবেক সদস্য মো. কামরুল আহসান রুপন, বরিশাল নগরের ৬ নম্বর ওয়ার্ড থেকে লাটিম প্রতীকের কাউন্সিলর প্রার্থী হাবিবুর রহমান টিপু, ৯ নম্বর ওয়ার্ডের ঘুড়ি প্রতীকের প্রার্থী মো. হারুন অর রশিদ ও ১৯নং ওয়ার্ডের ঘুড়ি প্রতীকের প্রার্থী এডভোকেট শাহ আমিনুল ইসলাম আমিন। এরা তিনজনই বরিশাল মহানগর বিএনপির যুগ্ম আহ্বায়ক পদে ছিলেন।

এছাড়া রয়েছেন নগরের ৩নং ওয়ার্ড থেকে রেডিও প্রতীকের সাধারণ কাউন্সিলর পদের প্রার্থী ও ওই ওয়ার্ড বিএনপির সাবেক সিনিয়র সহসভাপতি সৈয়দ হাবিবুর রহমান ফারুক, মহানগর বিএনপির বর্তমান আহ্বায়ক কমিটির সদস্য ও ৯নং ওয়ার্ডের ঘুড়ি প্রতীকে সাধারণ কাউন্সিলর পদে প্রার্থী সেলিম হাওলাদার, সংরক্ষিত আসনে ২ নম্বর ওয়ার্ডের গ্লাস প্রতীকের প্রার্থী জাহানারা বেগম, ৮ নম্বর ওয়ার্ড থেকে আনারস প্রতীকের প্রার্থী সেলিনা বেগম এবং ১০ নম্বর ওয়ার্ড থেকে আনারস প্রতীকের প্রার্থী রাশিদা পারভীন।

অন্যরা হলেন- নগরের ৯ নম্বর ওয়ার্ড যুবদলের সিনিয়র সহসভাপতি ও রেডিও প্রতীকের প্রার্থী সৈয়দ হুমায়ন কবির লিংকু, ১৫ নম্বর ওয়ার্ডের লাটিম প্রতীকের প্রার্থী ও মহানগর স্বেচ্ছাসেবক দলের সাবেক সহসভাপতি সিদ্দিকুর রহমান, নগরের ১৮নং ওয়ার্ড বিএনপির সদস্য সচিব ও ঘুড়ি প্রতীকের প্রার্থী জিয়াউল হক মাসুম, একই ওয়ার্ডের টিফিন ক্যারিয়ার প্রতীকের প্রার্থী দক্ষিণ জেলা স্বেচ্ছাসেবক দলের সাংগঠনিক সম্পাদক জাবের আব্দুল্লাহ সাদি, একই ওয়ার্ডের মিষ্টি কুমড়া প্রতীকের প্রার্থী বরিশাল জেলা তাতি দলের সাবেক সভাপতি কাজী মোহাম্মদ সাহিন, ১৮ নং ওয়ার্ড বিএনপির সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক ও রেডিও প্রতীকের প্রার্থী মনিরুল ইসলাম,

২২ নম্বর ওয়ার্ড মহিলা দলের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ও লাটিম প্রতীকের প্রার্থী জেসমিন সামাদ, ২৪ নং ওয়ার্ডের টিফিন ক্যারিয়ার প্রতীকের প্রার্থী ও একই ওয়ার্ড বিএনপির সাবেক সভাপতি ও মহানগরের সাবেক সহসভাপতি ফিরোজ আহম্মেদ, ২৬নং ওয়ার্ডের ঘুড়ি প্রতীকের প্রার্থী ও ওয়ার্ড বিএনপির সাবেক সভাপতি ফরিদ উদ্দিন হাওলাদার, ২৮নং ওয়ার্ডের লাটিম প্রতীকের প্রার্থী ও একই ওয়ার্ড বিএনপির সাবেক সাধারণ সম্পাদক হুমায়ন কবির।

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App