×

সারাদেশ

বাঁশখালীতে পকেট ভারি হচ্ছে জনপ্রতিনিধির

Icon

কাগজ প্রতিবেদক

প্রকাশ: ০৩ জুন ২০২৩, ১১:৩৫ এএম

বাঁশখালীতে পকেট ভারি হচ্ছে জনপ্রতিনিধির

ছবি: বাঁশখালী (চট্টগ্রাম) প্রতিনিধি

বাঁশখালীতে পকেট ভারি হচ্ছে জনপ্রতিনিধির

ছবি:

বাঁশখালীতে পকেট ভারি হচ্ছে জনপ্রতিনিধির

ছবি: বাঁশখালী (চট্টগ্রাম) প্রতিনিধি

চট্টগ্রামের বাঁশখালীতে অতি দরিদ্রদের জন্য ৭৬ দিনের ইজিপিপি প্লাস কর্মসূচীর কাজে জনপ্রতিনিধির পকেট ভারি করছেন বলে অভিযোগ উঠেছে। ১৮০ জন সুবিধাভোগী বিভিন্ন পেশার নারী-পুরুষদের ভোটার আইডি কার্ড সংগ্রহ করে সিম কার্ড জনপ্রতিনিধির পকেটে রেখেছে। এ সমস্ত কার্ডের বিপরীতে ভুয়া স্বাক্ষর দিয়ে শ্রমিকদের টাকা উত্তোলন করা হয়। কাজে শ্রমিকের পরিবর্তে স্কেভেটর (ভেকু) ব্যবহার করা হয়েছে। কোন রাস্তার ইট খুলে নতুনভাবে মাটি ফেলা হচ্ছে। প্রকল্পের সাইনবোর্ড ব্যবহার নেই। জনপ্রতিনিধির ২টি প্রকল্পের সভাপতি দায়িত্ব পালন করা। এক ওয়ার্ডের জনপ্রতিনিধি অন্য ওয়ার্ডের জনপ্রতিনিধি দিয়ে কর্মসৃজন কাজ করা হচ্ছে। আর এ সমস্ত কাজে অনিয়মের সহযোগিতা করছে ট্যাগ অফিসার পল্লী সঞ্চয় ব্যাংকের ম্যানেজার।

জানা গেছে, খানখানাবাদ ইউনিয়নের অতি দরিদ্রদের কর্মসূচী ইজিপিপি প্রকল্পের আওতায় ৩নং ওয়ার্ড, ৭নং ওয়ার্ড, ৮নং ওয়ার্ড ও ৯নং ওয়ার্ডে কাজ হয়েছে। গত নভেম্বর মাসে ১ম পর্যায়ে প্রকল্পের ৪০ দিনের কাজে শ্রমিকদের বেতন ৪০০ টাকা হিসেবে ১৮০ জন শ্রমিকের টাকা উত্তোলন করা হয়। কাজের মধ্যে আবদুল হামিদ সড়ক, নয়নতারা সড়ক, বশরজ্জামান সড়ক (পূর্ব অংশ), তফাজ্জল আলী সড়ক, নুরুজ্জমা সড়ক। ২য় পর্যায়ে ইজিপিপি প্রকল্প কাজে শুরু হয় রায়ছটা কোস্টাল কমিউনিটি সেন্টার মাঠ ভরাট, বঙ্গবন্ধু সড়ক মাটি দ্বারা সাইট ভরাট সুন্দপী পাড়া হতে মৌলভী পাড়া পর্যন্ত, আশরাফ আলী সড়ক হতে মোশারফ আলী বাড়ী পর্যন্ত। ঈশ্বর বাবুর হাট থেকে (বেড়িবাঁধের কাজ) আশরফ আলী সড়ক, তফাজ্জল আহমদ সড়ক (পশ্চিম অংশ) মাটি দ্বারা ভরাট।

[caption id="attachment_436287" align="aligncenter" width="1383"] ছবি: বাঁশখালী (চট্টগ্রাম) প্রতিনিধি[/caption]

সরেজমিনে পরিদর্শক গিয়ে দেখা যায়, প্রকল্পগুলোতে ধানী জমি হতে গর্ত করে মাটি উত্তোলন জমিতে স্কেভেটরের আঁচড় রয়ে গেছে। নুরুজ্জমা সড়কের ইট উত্তোলন করে নতুনভাবে স্কেভেটর দিয়ে মাটি ফেলা হয়েছে। তফাজ্জল আলী সড়কে ধানী জমিতে এখনো বিরাট বিরাট গর্ত রয়েছে। আবদুল হামিদ সড়কেও একই অবস্থা। পানি উন্নয়ন বোর্ডের বেড়িবাঁধের কাজ ৩৬ দিনের কর্মসূচির ৬০ জন শ্রমিকের পরিবর্তে স্কেভেটর দিয়ে বাঁধ নির্মাণের কাজ দেখানো হয়েছে। ইউনিয়ন পরিষদের পিছনে রায়ছটা কোস্টাল কমিউনিটি সেন্টারের পিছনের মাঠ থেকে স্কেভেটর দিয়ে মাটি কেটে ২৫ জন শ্রমিক দেখিয়ে পার্শ্ববতীর্ স্থানে ট্রাকযোগে ভরাট করানো হয়েছে। ইউনিয়নের ৪নং ওয়ার্ডের ইউপি সদস্য দিদারুল আলমকে ৯নং ওয়ার্ডের বেড়িবাঁধ নির্মাণ কাজে ৬০ জন শ্রমিক দেখানো হয়েছে। এই কাজ হয়েছে স্কেভেটর দিয়ে। একইভাবে ৭নং ওয়ার্ডের নুরুল হককে সভাপতি করে ৮নং ওয়ার্ডের কোস্টাল কমিউনিটি সেন্টারের মাঠ ভরাট প্রকল্পে সভাপতি করা হয়েছে।

স্থানীয়দের সাথে আলাপ করে জানা যায়, শ্রমিকের পরিবর্তে বেশি কাজ করানোর অযুহাতে সরকারি নিয়ম ভঙ্গ করে শ্রমিকদের ভোটার আইডি কার্ড জনপ্রতিনিধিরা (প্রকল্প সভাপতি) নিজেরাই হাতে রেখে মাস্টাররোল তৈরি করে সিম কার্ড থেকে শ্রমিকদের টাকা উত্তোলন করছে।

এ ব্যাপারে ট্যাগ অফিসার পল্লী সঞ্চয় ব্যাংকের ম্যানেজার জসিম উদ্দিন বলেন, জনপ্রতিনিধিরা তাদের সভাপতি। উনারা শ্রমিক দিয়ে কাজ করে মাস্টাররোলে আমাদের কাছ থেকে স্বাক্ষর নেয়। তাদের কাজে তদারকি করার সুযোগ কম থাকে। মহিলা শ্রমিক অগ্রাধিকার ভিত্তিতে সহ পুরুষ শ্রমিক দিয়ে কাজ করার নিয়ম থাকলেও কেন স্কেভেটর কাজে ব্যবহার হয়েছে জানতে চাইলে তিনি কোন উত্তর দিতে পারেন নাই। শ্রমিকদের সিম কার্ড জনপ্রতিনিধির হাতে এবং ভুয়া মাস্টাররোল সম্পর্কে জানতে চাইলেও তিনি নিরব ভূমিকা পালন করেন।

[caption id="attachment_436288" align="aligncenter" width="1416"] ছবি: বাঁশখালী (চট্টগ্রাম) প্রতিনিধি[/caption]

তবে তিনি দাবি করেন, সড়কগুলি কাজ হয়েছে। প্রকল্প এলাকায় সাইনবোর্ড থাকা না থাকা জানা নেই বলে জানান। ইজিপিপি প্রকল্পের কাজ তদারকির দায়িত্বে ছিলেন সহকারী প্রকৌশলী লিপটন ওম। তিনি বলেন, কাজের মান জনপ্রতিনিধিদের কাছ থেকে আদায় করে নেয়া হয়েছে।

ইটের রাস্তা খুলে মাটির রাস্তা করা প্রসঙ্গে তিনি বলেন, মাটির রাস্তায় হচ্ছে। আমরা সব সময় তদারকি করেছি। শ্রমিকদের আইডি কার্ডগুলো অভিযোগ পেলে যাচাই করা হবে বলে জানান।

বাঁশখালী উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা (অতিরিক্ত দায়িত্ব) রিয়াদ হোসেন বলেন, বাঁশখালীতে দীর্ঘদিন থেকে দায়িত্ব পালন করে আসছি। ইজিপিপি’র প্রকল্পগুলো কাজের মান ভালো।

একজন জনপ্রতিনিধি দুইটি প্রকল্পের দায়িত্ব পালন বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, তদারকি করে দেখতে হবে। স্কেভেটর দিয়ে কাজ হওয়ার কথা নয়। আমাদেরকে জনপ্রতিনিধিরা শ্রমিকের তালিকা দিয়েছে। মাঠে তো শ্রমিক দিয়ে কাজ করছে দেখিয়ে ছবিও দিয়েছে। এরপরও আমি তদারকি করব। ভুয়া মাস্টার বিষয়টি তিনি এড়িয়ে যান।

সাইনবোর্ড প্রসঙ্গে তিনি বলেন, সাইনবোর্ডগুলো লাগানোর পর মানুষে নিয়ে যায়।

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App