×

সারাদেশ

জামায়াত-শিবির নিয়ন্ত্রিত ইসকপকে উচ্ছেদ

Icon

কাগজ প্রতিবেদক

প্রকাশ: ৩১ মে ২০২৩, ০১:১৫ এএম

জামায়াত-শিবির নিয়ন্ত্রিত ইসকপকে উচ্ছেদ

চট্টগ্রামে ইসলামী সমাজ কল্যান পরিষদ (ইসকপ) কার্যালয় সীলগালা করে দিয়েছে জেলা প্রশাসন। ছবি: ভোরের কাগজ

জামায়াত-শিবির নিয়ন্ত্রিত ইসকপকে উচ্ছেদ
জামায়াত-শিবির নিয়ন্ত্রিত ইসকপকে উচ্ছেদ

জামায়াত-শিবিরের বিভিন্ন কাগজপত্র ও বইও উদ্ধার করা হয়। ছবি: ভোরের কাগজ

জামায়াত-শিবির নিয়ন্ত্রিত ইসকপকে উচ্ছেদ

বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধ ও স্বাধীনতা বিরোধী দল হিসেবে আদালত ঘোষিত জামায়াতে ইসলামী বিভিন্ন নামে, বিভিন্ন সংগঠনের ব্যানারে তাদের কার্যক্রম পরিচালনা করে আসছে। বর্তমান রাজনীতিতে বেকায়দায় থাকলেও তাদের কার্যক্রম বিভিন্ন নামে পরিচালিত হচ্ছে। চট্টগ্রামে সিরাতুন্নবী মাহফিলের নামে জামায়াতে ইসলামী তাদের প্রতিষ্ঠান ইসলামী সমাজ কল্যাণ পরিষদের (ইসকপ) মাধ্যমে সুকৌশলে তাদের প্রচারনা চালিয়ে আসছিল। বিতর্কিত ইসলামী বক্তা জামায়াত নেতা যুদ্ধাপরাধী হিসেবে দণ্ডপ্রাপ্ত আসামি দেলোয়ার হোসেন সাঈদীকে এই ইসকপের মাধ্যমেই জনগণকে ইসলাম সম্পর্কে বিভিন্ন প্রকার অপব্যাখ্যা দিয়ে বিভ্রান্তি ছড়িয়েছে তারা। বিশেষ করে চট্টগ্রামে আশির দশক থেকে নির্বিঘ্নে এই ইসকপের মাধ্যমেই সহজেই সাধারণ ধর্মপ্রাণ মুসলিমদের মধ্যে বিভ্রান্তি ছড়ানোর কাজটি বেশ সুকৌশলেই করেছে তারা। তবে শেষ রক্ষা হলো না ইসকপ এর। চট্টগ্রাম নগরীর চট্টগ্রাম কলেজ রোড এলাকা থেকে ওই ইসলামী সমাজ কল্যাণ পরিষদের কার্যালয় উচ্ছেদ করেছে চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসনের একটি ভ্রাম্যমান আদালতের টিম।

জেলা প্রশাসন, স্থানীয় রাজনীতিবিদসহ চট্টগ্রামের সচেতন রাজনীতিবিদ সূত্র জানিয়েছে, সরকারি জমি দখলে রেখে সংগঠনটি দীর্ঘসময় ধরে অবৈধভাবে তাদের কার্যক্রম চালিয়ে আসছিল। সামাজিক সংগঠনের আড়ালে জামায়াত-শিবির এই কার্যালয়কে তাদের ঘাঁটি হিসেবে ব্যবহার করে আসছিল।

মঙ্গলবার (৩০ মে) নগরীর চকবাজারে চট্টগ্রাম সরকারি কলেজ ছাত্রাবাস সংলগ্ন ইসলামী সমাজকল্যাণ পরিষদের কার্যালয় উচ্ছেদে অভিযান চালানো হয়। জেলা প্রশাসক আবুল বাসার মোহাম্মদ ফখরুজ্জামানের নির্দেশে এই আভিযানে নেতৃত্ব দেন জেলা প্রশাসনের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট প্রতীক দত্ত।

[caption id="attachment_435273" align="aligncenter" width="1200"] জামায়াত-শিবিরের বিভিন্ন কাগজপত্র ও বইও উদ্ধার করা হয়। ছবি: ভোরের কাগজ[/caption]

উচ্ছেদ অভিযানসহ এই সম্পত্তির ব্যাপারে জেলা প্রশাসনের নেজারত ডেপুটি কালেক্টর (এনডিসি) মো. তৌহিদুল ইসলাম জানান, পাকিস্তান আমলে ১৯৬৭ সালে ইসলামী সমাজকল্যাণ পরিষদ নামে সংগঠনটি শহরের চকবাজারে কাসিমপুর মৌজায় অর্পিত সম্পত্তি হিসেবে তালিকাভুক্ত ৫ দশমিক ৪০ শতক জমি ইজারা পায়। পরবর্তী সময়ে তারা আশপাশের আরো সরকারি জমি দখলে নিয়ে দোতলা ভবন গড়ে তোলে। সেখানে সংগঠনের কার্যক্রমের পাশাপাশি একই ধারার বিভিন্ন বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠানকেও ভাড়া দেয়া হয়েছিল। তবে ইতোমধ্যে গত ৫০ বছর ধরে তারা নিয়মিত খাজনা পরিশোধের মাধ্যমে ইজারা দেয়া জমি দখলে রেখেছিল। একই সঙ্গে অবৈধভাবে দখল করা জমিতেও তারা কার্যক্রম চালিয়ে আসছিল। কিন্তু ২০১৮ সালের পর থেকে তারা আর ইজারা নবায়ন করেনি। ফলে তাদের এই দখলদারিত্বটি পুরো অবৈধ হয়ে পড়ে ইজারা না দেয়ার কারনে। কিন্তু তারা অবৈধভাবে পুরো জায়গাটি দখলে রেখে তাদের কার্যক্রম পরিচালনা করে আসছিল বলে জানান এনডিসি।

নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট প্রতীক দত্ত বলেন, দোতলা ভবনে ইসলামী সমাজকল্যাণ পরিষদের কার্যালয়ের পাশাপাশি দারুশ শেফা, হজ কাফেলাসহ আরও কয়েকটি প্রতিষ্ঠান পাওয়া যায়। তবে সেগুলো তালাবদ্ধ দেখা যায়। সেগুলোকে সিলগালা করা হয়েছে। তিনি জানান, অভিযানে ইসলামী সমাজকল্যাণ পরিষদের কার্যালয় থেকে মতিউর রহমান নিজামীসহ যুদ্ধাপরাধীদের পক্ষে লেখা বিভিন্ন বিতর্কিত বই, জামায়াত-শিবিরের সাংগঠনিক নথিপত্র, প্রকাশনা, সংগঠনের ব্যানার উদ্ধার করা হয়েছে।

সংশ্লিষ্ট সূত্র অনুযায়ী পাকিস্তান আমলে ইসলামী সমাজকল্যাণ পরিষদের শুরু হওয়া কার্যক্রম দেশ স্বাধীনের পর স্থিমিত হয়ে যায়। পঁচাত্তরে বঙ্গবন্ধুকে হত্যার পর জামায়াত ইসলামী প্রকাশ্য রাজনীতির অনুমতি পেলে সংগঠনটিও পুনরুজ্জীবীত হয়। ১৯৭৭ সালে জামায়াত ঘরানার কয়েকজন ব্যক্তি চট্টগ্রামে ইসলামী সমাজকল্যাণ পরিষদকে (ইসকপ) আবার চাঙ্গা করার উদ্যোগ নেন। তারই অংশ হিসেবে ১৯৭৭ সালে ইসলামী সমাজকল্যাণ পরিষদ নগরীর মিউনিসিপ্যাল মডেল হাইস্কুলে প্রথম তাফসিরুল কোরআন মাহফিলের আয়োজন করে। পরের বছর কলেজিয়েট স্কুলের ‍মাঠে মাহফিলের আয়োজন করা হয়। এরপর লালদিঘী মাঠে ও পরবর্তী সময়ে জামায়াত-শিবিরের ঘাঁটি হিসেবে পরিচিত চকবাজারের প্যারেড কর্নারে পাঁচদিনব্যাপী তাফসিরুল কোরআন মাহফিল আয়োজন করা হতো। টানা ৩০ বছর ধরে তাফসিরুল কোরআন মাহফিলে বয়ান দেন দেলোয়ার হোসাইন সাঈদী। একাত্তরে মানবতাবিরোধী অপরাধের অভিযোগে গ্রেপ্তারের আগ পর্যন্ত সাঈদীর বয়ান অব্যাহত ছিল। এই মাহফিলের মাধ্যমে দেশে-বিদেশে ছড়িয়ে পড়েছিল সাঈদীর নাম, ছড়িয়ে পড়েছিল ইসলামী সমাজকল্যাণ পরিষদের পরিচিতিও। আশির দশকের শুরুতেই ছাত্রলীগ ও ছাত্র ইউনিয়নের কয়েকজন নেতাকে খুনের মধ্য দিয়ে চকবাজারে চট্টগ্রাম কলেজ ও হাজী মুহাম্মদ মহসীন কলেজ দখলে নিয়েছিল ছাত্রশিবির। তিন দশক পর ২০১৭ সালে ছাত্রলীগ ক্যাম্পাস থেকে শিবিরকে হটিয়ে দুই কলেজে তাদের নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠা করে। সেদিন ছাত্রলীগের সঙ্গে ছাত্রশিবিরের রক্তক্ষয়ী সংঘাত হয়। ওই সময় বিক্ষুব্ধ ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা অদূরে ইসলামী সমাজকল্যাণ পরিষদের কার্যালয় ভাংচুর করেছিল। তখন থেকেই জামায়াতে ইসলামীর অন্যতম বুদ্ধিবৃত্তিক ও কথিত ধর্মভিত্তিক প্রতিষ্ঠান ইসকপকে বন্ধ ও উচ্ছেদ করার দাবি জানিয়ে আসছিলেন তৎকালীন ছাত্রনেতা নুরুল আজিম রনিসহ বিভিন্ন সংগঠনের নেতৃবৃন্দ।

রনি বলেন, সাঈদীর বয়ানের অধিকাংশ জুড়ে থাকত মুক্তিযুদ্ধ, মুক্তিযুদ্ধের চেতনার বিরুদ্ধে বিভিন্ন বিদ্বেষপূর্ণ কথাবার্তা। জাতির পিতা, জননেত্রী শেখ হাসিনা, শহীদ জননী জাহানারা ইমামকে নিয়ে উসকানিমূলক নানা বক্তব্য দিতেন। ধর্মান্ধতা, উগ্র মৌলবাদ ছড়াতেন। আমরা এই সংগঠনের কার্যক্রম নিষিদ্ধের দাবি জানাচ্ছি।

ফেসবুক ভিডিও: জামায়াত-শিবির নিয়ন্ত্রিত ইসকপকে উচ্ছেদ

চট্টগ্রাম সরকারি কলেজ ছাত্রলীগের সভাপতি মাহমুদুল করিম বলেন, ২০১৭ সালের ২১ আগস্ট আমরা দুই কলেজের ছাত্রলীগের পক্ষ থেকে জেলা প্রশাসকের কাছে স্মারকলিপি দিয়ে ইসলামী সমাজকল্যাণ পরিষদের কার্যালয় উচ্ছেদের দাবি জানিয়ে আসছিলাম। তবে এবার সরকারি প্রশাসন কার্যকর পদক্ষেপ নেয়ায় কিছুটা স্বস্তিবোধ করছি।

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App