×

সারাদেশ

ভেঙে যাচ্ছে জয়পুর গ্রাম, ৭ কোটি টাকার ক্ষয়ক্ষতির আশঙ্কা

Icon

কাগজ প্রতিবেদক

প্রকাশ: ২২ মে ২০২৩, ০৭:১৪ পিএম

ভেঙে যাচ্ছে জয়পুর গ্রাম, ৭ কোটি টাকার ক্ষয়ক্ষতির আশঙ্কা

ছবি: ভোরের কাগজ

সুনামগঞ্জের দিরাই-শাল্লার মধ্যবর্তী সীমানায় অবস্থিত জয়পুর গ্রাম। গ্রামের পূর্বদিকে রয়েছে অতি সুপরিচিত হাতনি বিল নামক একটি বৃহৎ জলমহাল। যে বিলটিতে রয়েছে হাওরের সবচেয়ে আকর্ষণীয় বড় বড় দেশী মাছ। এই বিল থেকেই প্রতি বছর কোটি কোটি টাকার মাছ দেশের বিভিন্ন এলাকায় রপ্তানি করা হয়। এই জলমহালটি থেকে প্রতি বছর সরকারের রাজস্ব খাতেও আয় হয় প্রায় কোটি টাকা। সেই গ্রামেই রয়েছে দিরাই উপজেলা আ'লীগের সাবেক সভাপতি, চরনারচর ইউনিয়ন পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান ও প্রয়াত জাতীয় নেতা সুরঞ্জিত সেনগুপ্তের একান্ত রাজনৈতিক সহকর্মী প্রয়াত প্রভাকর চৌধুরীর পূর্বপুরুষের ঐতিহাসিক বাড়ি।

সোমবার (২২মে) সরেজমিনে জয়পুর গ্রামে গিয়ে দেখা যায় গ্রামটি হাওরের ফসলরক্ষা বাঁধের ক্লোজারের কারণে বিলীন হয়ে যাচ্ছে। নিরুপায় হয়ে নতুন জায়গায় বাড়ি নির্মাণ করতে হচ্ছে চৌধুরী বাড়ির লোকজনসহ অন্যান্য প্রতিবেশীদেরও। গ্রামটিতে রয়েছে ২৫টি পরিবার। বৃষ্টি হলেই ধসে পড়ে মাটি। বাড়তে থাকে আতঙ্ক। গ্রামের উত্তর পাড়াটি প্রায় অর্ধেকের বেশি অংশই এরমধ্যে উদগল বিল হাওরের ক্লোজারের মধ্যে বিলীন হয়ে গেছে। বাকি অংশটুকুও বিলীন হওয়ার পথে।

অন্যদিকে দক্ষিণ ও মধ্যপাড়া নামে আরও দু'টি পাড়ায়ও ভাঙন দেখা দিয়েছে। জানা যায়, গ্রামের অনেক পরিবারেই দরিদ্র্য সীমার নিচে বসবাস করেন। তাদের নতুন বাড়িঘর করার মত সামর্থ্যও নেই। এমন পরিস্থিতিতে গ্রামটি ধ্বংস হয়ে গেলে ৭ কোটি টাকারও বেশি ক্ষতি হবে বলে জানান গ্রামবাসী।

গ্রামটি রক্ষা করার জন্য ১৯১৩ সালে তৎকালীন মন্ত্রী সুরঞ্জিত সেনগুপ্ত সিবিআর এমপি নামক প্রকল্পের মাধ্যমে প্রায় অর্ধকোটি টাকা ব্যয়ে একটি প্রতিরক্ষা দেয়াল নির্মাণ করা হয়। কিন্তু ২০১৭-২০১৮ অর্থ বছরে গ্রামের পূর্বদিকে হাওরের ফসলরক্ষা বাঁধ নির্মাণ প্রকল্প দেয়া হয়। বর্ষায় এই বাঁধ ভেঙে যায়। ফলে ধীরেধীরে গভীর সমতল জায়গায়ও ক্লোজারে রূপ নেয়। যেকারণে গ্রামের প্রতিরক্ষা দেয়ালও কাজে লাগেনি। প্রতি বছর এভাবেই ভাঙতে থাকে দেয়াল। পরে ভেঙে পড়তে থাকে গ্রামটিও। এভাবেই বিলীন হতে চলেছে জয়পুর গ্রাম।

এবিষয়ে প্রভাকর চৌধুরীর ভাতিজা সঞ্জিব চৌধুরী বলেন জয়পুর গ্রামটি অতি প্রাচীন একটি গ্রাম। এই গ্রামের তিনটি পাড়ায় ৮০টি পরিবার বসবাস করে আসছিল। কিন্তু ভাঙনের ফলে এখন আমরা মাত্র ২৫টি পরিবার ঠিকে আছি। এরমধ্যে মৎস্যজীবী অসহায় পরিবারও আছেন। আগামী বছর আমরা এ গ্রামে আর বসবাস করতে পারব না। আমি ২০১৫ সালে ১৮লাখ টাকা ব্যয় করে একটি নতুন ঘর করেছিলাম। কিন্তু কোনো কাজে লাগেনি। নতুন বাড়ির মাটির কাজ করতেই আমার এক কোটি টাকা খরচ হবে।

হাওরের বাঁধ নির্মাণ প্রকল্প পিআইসি দেয়ার কারণেই গ্রামটি বিলীন হতে যাচ্ছে বলে অভিযোগ তার। তিনি আরও বাঁধের এই অংশটুকু স্থায়ী করলেই গ্রামটি রক্ষা করা যেত। কম খরচে দিরাই-শাল্লা রাস্তাও তৈরি হত। দক্ষিণ দিকে বেলা নদীর মাথায় একটি ব্রিজ দিলেই সহজে সড়ক হয়ে যেত। দিরাই-শাল্লায় যাতায়াত সুবিধা হতে পারতো। পরিকল্পনার অভাবেই এমনি হয়েছে বলে জানান তিনি।

এনিয়ে দিরাই উপজেলার নির্বাহী কর্মকর্তার মুঠোফোনে যোগাযোগ করলে তিনি ফোন রিসিভ করেননি। এব্যাপারে শাল্লা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা আবু তালেব বলেন দিরাই-শাল্লা রাস্তা তো আমাদের এদিকে নয়। জয়পুর গ্রামের নিকটে দিরাই এবং শাল্লা উপজেলার ৫টি প্রকল্পে প্রায় কোটি টাকা বরাদ্দ দেয়া হয়েছে। উদগল বিলে আামাদের শাল্লার জমিও কম। বিকল্প বাঁধ দেয়াও ব্যয়বহুল। বর্ষা আসার পূর্বেই আবার ওই বাঁধগুলো ছোট করে কেটে দিতে হয় নৌকা চলাচলের জন্য। তখন ভাঙা তেমন একটা বড় হয় না। অন্যথায় স্থানীয়রা মাছ ধরার জন্য নিজেরাই বাঁধ কেটে দেন। তখন ভাঙা আরও বড় হয়। তাছাড়া বেলা নদীর সঙ্গে নামকরা হাতনি বিলের একটি যোগ আছে। ওই বিল থেকে সরকার প্রতি বছর ৮২লাখ টাকার মত রাজস্ব পায়। কোটি কোটি টাকার মাছও উৎপাদন হয় হাতনি বিলে। তবে জয়পুর গ্রামটি প্রায় ধ্বংস হয়ে যাওয়ায় দুঃখ প্রকাশ করেন তিনি।

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App