×

সারাদেশ

ভোরের কাগজে সংবাদ প্রকাশের পর বোয়ালমারীতে নিয়োগ পরীক্ষা স্থগিত

Icon

কাগজ প্রতিবেদক

প্রকাশ: ১৯ মে ২০২৩, ০২:১৭ পিএম

ভোরের কাগজে সংবাদ প্রকাশের পর বোয়ালমারীতে নিয়োগ পরীক্ষা স্থগিত

ফাইল ছবি

ফরিদপুরের বোয়ালমারী উপজেলার চতুল ইউনিয়নের হাসামদিয়া গ্রামে অবস্থিত 'হাসামদিয়া ইউনাইটেড উচ্চ বিদ্যালয়'র প্রধান শিক্ষক নিয়োগ পরীক্ষা স্থগিত করা হয়েছে। শুক্রবার (১৯ মে) ফরিদপুর সরকারি বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ে এই নিয়োগ পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা ছিল। ওই বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক পদে ৬ জন প্রার্থী হিসেবে আবেদন করেছিলেন। কিন্তু ম্যানেজিং কমিটি ওই বিদ্যালয়ের সহকারী প্রধান শিক্ষক আয়ুবুর রহমানকে প্রধান শিক্ষক হিসেবে নিয়োগ দেয়ার জন্য উঠে পড়ে লেগেছিল বলে অভিযোগ। কিন্তু আয়ুবুর রহমানের বিরুদ্ধে একটি বিতর্কিত বেসরকারি ইউনিভার্সিটি থেকে স্নাতক ও স্নাতকোত্তর পাসের সনদ কেনার অভিযোগ উঠে। ভোরের কাগজে গত ১৫মে এ সংক্রান্ত প্রতিবেদন প্রকাশিত হলে বিষয়টি কর্তৃপক্ষের নজরে আসে। এরপর আজ শুক্রবার ওই নিয়োগ পরীক্ষা স্থগিত করা হয়।

এ ব্যাপারে ফরিদপুর সরকারি বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষিকা এবং নিয়োগ পরীক্ষার দায়িত্বপ্রাপ্ত ডিজির প্রতিনিধি নাসিমা বেগম বলেন, 'আয়ুবুর রহমান নামের একজন প্রার্থীর শিক্ষা জীবনে দুটি তৃতীয় বিভাগ থাকায় বর্তমান নিয়ম অনুযায়ী তিনি প্রধান শিক্ষক হওয়ার অযোগ্য। তার উচ্চ মাধ্যমিক এবং ডিগ্রিতে তৃতীয় বিভাগ। এজন্য নিয়োগ পরীক্ষা স্থগিত করা হয়েছে। তার কাগজপত্র ভালো করে যাচাই-বাছাই করা হবে। স্থগিতকৃত নিয়োগ পরীক্ষা পরবর্তীতে অনুষ্ঠিত হবে।'

নিয়োগ পরীক্ষা স্থগিতের বিষয়টি স্বীকার করে বোয়ালমারী উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা মুহাম্মদ আনোয়ার হোসেন শুক্রবার দুপুরে বলেন, 'আয়ুবুর রহমানসহ সকল আবেদনকারীদের কাগজপত্র ঢাকায় পাঠিয়ে যাচাই-বাছাই করে পরবর্তীতে নিয়োগ পরীক্ষা নেয়া হবে।'

জানা যায়, বোয়ালমারী উপজেলার চতুল ইউনিয়নের হাসামদিয়ায় অবস্থিত ‘হাসামদিয়া ইউনাইটেড উচ্চ বিদ্যালয়’র শূন্য পদে প্রধান শিক্ষক নিয়োগের জন্য ওই বিদ্যালয়ের সহকারী প্রধান শিক্ষক আয়ুবুর রহমান প্রধান শিক্ষক পদে আবেদন করেন। তার শিক্ষা জীবনে একাধিক তৃতীয় বিভাগ রয়েছে। তিনি এইচএসসি ও ডিগ্রিতে তৃতীয় বিভাগ পান। শিক্ষা জীবনে একাধিক তৃতীয় বিভাগ হওয়ার কারণে বিধি মোতাবেক তিনি প্রধান শিক্ষক হওয়ার অযোগ্য। এ কারণে তিনি ‘ইউনিভার্সিটি অব কুমিল্লা’ নামক একটি বিতর্কিত বেসরকারি ইউনিভার্সিটি থেকে অর্থের বিনিময়ে অনার্স এবং মাস্টার্স ডিগ্রীর জাল সনদ কিনে এনে প্রধান শিক্ষক হওয়ার জন্য আবেদন করেছেন।

২০২০ সালে উপজেলাভিত্তিক বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের তথ্য বোয়ালমারী উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিস জমা নেয়। উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসে জমা দেয়া হাসামদিয়া ইউনাইটেড উচ্চ বিদ্যালয়ের তথ্যসম্বলিত সেই কাগজে আয়ুবুর রহমানের শিক্ষাগত যোগ্যতা এইচএসসি ও ডিগ্রিতে তৃতীয় বিভাগ উল্লেখ করা হয়েছে। ২০২০ সালের ২৫ অক্টোবর ওই কাগজ মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসে জমা দেয়া হয়। এখন প্রধান শিক্ষক পদে আবেদনের সময় আয়ুবুর রহমান বিএ ডিগ্রির কথা গোপন করে একটি বিতর্কিত বেসরকারি ইউনিভার্সিটি কর্তৃক ইস্যুকৃত অনার্স-মাস্টার্স পাসের সনদ দাখিল করেছেন। বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় ‘ইউনিভার্সিটি অব কুমিল্লা’ থেকে তিনি এই সনদ সংগ্রহ করেছেন। এদিকে চাকরি বিধি অনুযায়ী চাকরিতে থাকাকালীন কেউ কোন ডিগ্রি অর্জন করতে চাইলে তাকে যথাযথ কর্তৃপক্ষের অনুমতি নিতে হয়। আর কর্তৃপক্ষের অনুমতি ছাড়াই তিনি বোয়ালমারীতে বসে কুমিল্লার একটি বেসরকারি ইউনিভার্সিটি থেকে পাঁচ বছর মেয়াদি অনার্স-মাস্টার্স কোর্স সম্পন্ন করলেন কখন এবং কীভাবে- এ প্রশ্ন ঘুরপাক খাচ্ছে।

ইউজিসি সূত্রে জানা গেছে, বিশ্ববিদ্যালয়ের আইনানুযায়ী বৈধ সিন্ডিকেট ও একাডেমিক কাইন্সিল না থাকায় ‘ইউনিভার্সিটি অব কুমিল্লা’র একাডেমিক, প্রশাসনিক, আর্থিক ও বিশ্ববিদ্যালয়ের ভর্তি, পরীক্ষা, ফলাফল এবং একাডেমিক সনদের আইনগত কোন বৈধতা নেই।

জানতে চাইলে প্রধান শিক্ষক পদে আবেদনকারী ওই বিদ্যালয়ের সহকারী প্রধান শিক্ষক আয়ুবুর রহমান বলেন, ‘যথাযথ নিয়ম মেনেই আমি আবেদন করেছি। আমি ‘ইউনিভার্সিটি অফ কুমিল্লা’ থেকে অনার্স-মাস্টার্স করেছি।’ এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘চাকরিবিধি মেনে কর্তৃপক্ষের অনুমতি নিয়েই আমি চাকরিরত অবস্থায় অনার্স-মাস্টার্স করেছি।’ এ সময় এ প্রতিনিধি সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের অনুমতি পত্র দেখতে চাইলে তিনি দেখাতে পারেননি।

এ ব্যাপারে প্রার্থী আয়ুবুর রহমান প্রসঙ্গে ওই বিদ্যালয়ের ম্যানেজিং কমিটির সভাপতি একেএম আব্দুস ছত্তার বলেন, ‘কাগজপত্র সঠিক না থাকলে কি তিনি আবেদন করেছেন? কাগজপত্র যাদের যাচাই-বাছাই করার কথা তারা যদি যাচাই-বাছাই করে মনে করেন কোন প্রার্থীর কাগজপত্র ঠিক নেই তাহলে তাকে অযোগ্য ঘোষণা করবেন। এ ব্যাপারে আমাদের কিছু করার নেই।’

প্রধান শিক্ষক পদে আবেদনকারী ওই বিদ্যালয়ের সহকারী প্রধান শিক্ষক আয়ুবুর রহমানের জাল সনদ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা মুহাম্মদ আনোয়ার হোসেন গত ১৫ মে বলেন, ‘আমাকে কয়েকজন ফোনে বিষয়টি বলেছে। কিন্তু কেউ কোন লিখিত অভিযোগ করেনি। তবে নিয়োগ পরীক্ষার দিন সনদ যাচাই-বাছাই করে সিদ্ধান্ত নেয়া হবে।’

এ বিষয়ে জানতে চাইলে জেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা বিষ্ণু পদ ঘোষাল গত ১৬ মে দুপুরে এই প্রতিনিধিকে ফোনে বলেন, ‘নিয়োগে আমার হস্তক্ষেপের কোন সুযোগ নেই। এটা ম্যানেজিং কমিটির সভাপতি, আবেদন পত্র বাছাই কমিটিতে যারা থাকবেন তারা এবং নিয়োগ বোর্ডের সদস্যরা বিচার করবেন। কিন্তু নিয়োগে কোন অনিয়ম হলে নিয়োগের পরে যদি কেউ কোন অভিযোগ করে তবে সে ব্যাপারে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের মাধ্যমে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়া হবে।’

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App