×

সারাদেশ

হারিয়ে যাচ্ছে গাঁও গেরামের ঐতিহ্য ‘জাঁতাকল’

Icon

কাগজ প্রতিবেদক

প্রকাশ: ১৭ মে ২০২৩, ০৫:৪৬ পিএম

হারিয়ে যাচ্ছে গাঁও গেরামের ঐতিহ্য ‘জাঁতাকল’

ছবি: ভোরের কাগজ

মাগুরার মহম্মদপুর উপজেলা থেকে দিন দিন হারিয়ে যাচ্ছে গাঁও গেরামের মহিলাদের ডাল তৈরি করার ঐতিহ্য জাঁতাকল। কালের পরিক্রমায় আর আধুনিক যন্ত্রপাতির আদলে বদলে যাচ্ছে মানুষের জীবনযাত্রা। সেই সঙ্গে বিলিনের পথে গ্রাম-বাংলার ঐতিহ্যবাহী জাঁতাকল।

এক সময় উপজেলার প্রতিটি গ্রামের বাড়িতে দেখা যেত এই জাঁতাকল। কিন্তু এখন গ্রামাঞ্চলের কোথাও জাতার ব্যবহার তেমন একটা চোখে পড়েনা। শোনাও যায়না ডাল ভাঙ্গার সেই কড় কড় শব্দ।

এক যুগ আগেও গ্রামাঞ্চালের মহিলাদের কাছে জাঁতা একটি প্রয়োজনীয় গৃহস্থলি উপকরণ ছিল। গ্রামের মধ্যে এক বাড়িতে জাঁতা থাকলে আশপাশের বাড়ির মহিলারা মসুর, খেসারি, মটর কলাই ও মাশ কলাইসহ নানা ধরণের ডাল ভাঙানোর জন্য সকাল বিকেল লাইন দিয়ে বসে থাকতে হত। এমনকি বিয়ের পর নববধু উপহার হিসেবে বাবার বাড়ি থেকে জাঁতা নিয়ে শ্বশুর বাড়িতে আসত।

কিন্তু কালের বিবর্তনে আধুনিক যন্ত্রপাতির কাছে হার মেনে সেই গৃহসামগ্রী জাঁতাকল এখন বিলুপ্তির পথে।

খুবই মসৃণ দুই খন্ড পাথর গোল করে কেটে তৈরি করা হতো এই জাঁতাকল। সেই খন্ড দুটির ভিতরের ভাগ লোহার তৈরি যন্ত্র (বাটাল) দ্বারা ছোট্র ছোট্র গর্ত করে ধার করা হয় ডাল ভাঙানোর জন্য। এই দুটি পাটের (উপরের এবং নিচের অংশ) মাঝে একটি ছিদ্র করা হয়। আর সেই ছিদ্রের ভেতরে কাঁঠ বা বাঁশ দিয়ে হাতল তৈরি করে লাগানো হয়। যাতে দুইটি পাট আলাদা না হয় বা দুইটি পাটকে এক জায়গায় রাখতে সাহায্য করে। উপরের পাটের মাঝে আরো একটি ছিদ্র থাকে যা দিয়ে কলাই ভিতরে দেয়া হয় পিষার জন্য এবং পাশে ক্ষুদ্র একটি ছিদ্র করা হয় যার মধ্যে কাঁঠের হাতল দিয়ে শুধু উপরের পাটকে ঘুরানো হয়। নিচের পাটের উপর ঘুরতে থাকে উপরের পাট।

এই দুই পাটের ঘর্ষণের ফলে ভিতরে দেয়া কলাই ভেঙে ডাল তৈরি হয়ে জাঁতাকলের চারপাশ দিয়ে পড়তে থাকে।

এক যুগ আগেও গ্রামাঞ্চলের মা-চাচি বা নববধুরা ঘণ্টার পর ঘণ্টা বসে বসে এই জাঁতা কলের সাহায্যে কলাই থেকে ডাল বের করতে দেখা যেত। জাঁতাকল পাথরের তৈরি হওয়ায় চলাকালীন সময়ে মিষ্টি এক ধরণের কড় কড় শব্দ শোনা যেত। কিন্তু এখন আর মহম্মদপুরে দেখা যায় না এই জাঁতাকলের ব্যবহার। উন্নত প্রযুক্তি মেশিন তৈরীর ফলে সুখ প্রিয় বাঙালী পরিবার আর কষ্ট করে জাঁতা চালাতে চায় না।

বর্তমান এই আধুনিক প্রযুক্তির যুগে সেই স্থান দখল করে নিয়েছে উন্নত প্রযুক্তির মেশিন। যে মেশিন বিদ্যুতে চলে। আর এ প্রযুক্তিতে অল্প সময়ে অনেক কাজ করা যায়। উন্নত এই প্রযুক্তির যুগে বিলুপ্তির পথে প্রায় পাথরের তৈরি সেই জাঁতাকল। তারপরও উপজেলার কিছু পরিবার এখনও এই জাঁতাকে গাঁও গেরামের ঐতিহ্য হিসেবে ধরে রেখেছেন। তবে তার ব্যবহার খুব কম। শুধু মাত্র গ্রাম-বাংলার ঐতিহ্য হিসেবেই ধরে রেখেছেন অনেক পরিবার।

সরেজমিনে উপজেলা সদরের ধোয়াইল গ্রামে মাওলানা মো. মোশারেফ হোসেনের বাড়িতে গিয়ে চোখে পড়ে এমন দৃশ্য। দেখা যায় ঘরের বারান্দায় বসে এক গৃহবধূ জাঁতাকলে কলাই দিয়ে ডাল তৈরি করছেন। তারা জানান, এক সময় এই জাঁতা দিয়ে নানা প্রকার ডাল তৈরি করা হতো। এখন আর এ সবের ব্যবহার দেখা যায় না।

সাপ্তাহিক মহম্মদপুর বার্তা’র সম্পাদক, বিশিষ্ট নাট্যকার ও গবেষক কবি সালাহ্উদদীন আহমেদ লিটন বলেন, আধুনিকতার ছোঁয়ায় আজ বিলুপ্তির পথে জাঁতা শিল্প। তাছাড়া সময়ের সঙ্গে সঙ্গে মানুষের মনেরও অনেক পরিবর্তন। মানুষ অল্প সময়ের মধ্যে অনেক কাজ করতে চায়। আবার পুষ্টির দিকে বিবেচনা করলে জাঁতায় ভাঙা দ্রব্য স্বাস্থ্যসম্মত।

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App