×

সারাদেশ

নৌকা কর্মীদের ওপর হামলার ঘটনায় গ্রেপ্তার ১৩

Icon

কাগজ প্রতিবেদক

প্রকাশ: ১৬ মে ২০২৩, ১১:৪৯ এএম

নৌকা কর্মীদের ওপর হামলার ঘটনায় গ্রেপ্তার ১৩

ছবি: সংগৃহীত

আসন্ন বরিশাল সিটি নির্বাচনকে সামনে রেখে হঠাৎই উত্তপ্ত হয়ে উঠেছে নির্বাচনী মাঠ। নৌকার প্রার্থীর সমর্থকদের পিস্তল ঠেকিয়ে অতর্কিত হামলার অভিযোগে বরিশাল মহানগর ছাত্রলীগের আহ্বায়ক রইস আহম্মেদ মান্না ও তার ১২ সহযোগীকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ ও র‌্যাব।

রবিবার সন্ধ্যার পর নগরীর কাউনিয়া এলাকায় হামলার এ ঘটনায় ছাত্রলীগ নেতা মনা আহম্মেদ বাদী হয়ে কাউনিয়া থানায় মামলা দায়ের করেন।

এদিকে মান্নাকে গ্রেপ্তারের ঘটনায় সংবাদ সম্মেলন করে মহানগর আওয়ামী লীগ সভাপতি এডভোকেট একেএম জাহাঙ্গীর দাবি করেন, আসন্ন নির্বাচনকে একটি মহল প্রশ্নবিদ্ধ করতেই এমন ঘটনা ঘটাচ্ছে। অপরদিকে মহানগর আওয়ামী লীগের সিনিয়র সহসভাপতি ও আওয়ামী লীগের প্রার্থীর প্রধান নির্বাচনী এজেন্ট এডভোকেট আফজালুল করিম হামলার বিষয়ে পুলিশ তদন্ত চলমান অবস্থায় তার (মান্নার) পক্ষে কিভাবে সংবাদ সম্মেলন করেন এমন প্রশ্ন রাখেন।

অপরদিকে মেয়র সাদিকের অনুসারী মান্না গ্রেপ্তারের পরপরই সাদিক অনুসারী অন্য নেতাকর্মীরা আত্মগোপনে চলে যান। এদিকে সোমবার জাতীয় পার্টির মনোনীত প্রার্থী ইঞ্জিনিয়ার ইকবাল হোসেন তাপস ও স্বতন্ত্র প্রার্থী আলী হোসেন মেয়র পদে মনোনয়পত্র দাখিল করেছেন।

সূত্রমতে, গত রবিবার সন্ধ্যায় আওয়ামী লীগের মনোনীত প্রার্থীর সমর্থকদের ওপর পিস্তল ঠেকিয়ে অতর্কিত হামলার অভিযোগ উঠে বরিশাল মহানগর ছাত্রলীগের আহ্বায়ক রইস আহম্মেদ মান্না ও তার সহযোগীদের বিরুদ্ধে। এ সময় চারজন আহত হয়েছেন।

আহতরা হলেন- মনা আহম্মেদ, আব্দুল হালিম, মো. জাহিদ ও সুজন। যাদের মধ্যে তিনজনকে বরিশাল শেরেবাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। তবে হামলা ও পিস্তল ঠেকানোর বিষয়টি অস্বীকার করেছেন বরিশাল মহানগর ছাত্রলীগের আহ্বায়ক রইস আহম্মেদ মান্না। তার দাবি, গত ৫ দিন ধরে তিনি সিসি ক্যামেরার আওতায় রয়েছেন, আর সেখান থেকে অন্যত্র গেলে তার প্রমাণ সিসি ক্যামেরার ফুটেজ চেক করলেই পাওয়া যাবে।

হামলায় আহত মনা আহম্মেদ জানান, কাউনিয়া শ্মশান ঘাটের ওই এলাকায় আমরা ৮-১০ জন আ.লীগের মনোনীত প্রার্থী খোকন সেরনিয়াবাত ভাইয়ের নির্বাচনী ওয়ার্ক করছিলাম। তখন আকস্মিক এক থেকে দেড়শত যুবক এসে আমাদের ওপর অতর্কিতে হামলা চালায়।

তিনি আরো জানান, হামলার সময় রইস আহম্মেদ মান্না আমার কলার ধরে গালিগালাজ শুরু করেন। আর ওই সময় মান্না আমার পেটে পিস্তল ঠেকালে আমি আর নড়াচড়া করতে পারিনি। এরপর মান্নার ড্রাইভারসহ সহযোগীরা দা দিয়ে কোপ দেয়ার পাশাপাশি আমাকে রড দিয়ে পিটিয়েছে। আমার সঙ্গের লোকজনকেও অতর্কিতে মারধর করছে।

এদিকে হামলা ও আহতের খবর পেয়ে নৌকার প্রার্থী খোকন সেরনিয়াবাত তাৎক্ষণিক আহতদের দেখতে বরিশাল শেরেবাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে যান এবং তাদের চিকিৎসার খোঁজখবর নেন। অপরদিকে আহত মনা আহম্মেদ বাদী হয়ে রাতেই বরিশাল মেট্রোপলিটন কাউনিয়া থানায় মহানগর ছাত্রলীগের আহ্বায়ক রইস আহম্মেদ মান্নাসহ ২১ জন নামধারী ও অজ্ঞাত ৪০-৫০ জনের বিরুদ্ধে মামলা করেন।

মান্না বর্তমান মেয়র সেরনিয়াবাত সাদিক আবদুল্লাহর অনুসারী হিসেবে পরিচিত। এরপর রাত ২টার দিকে মহানগর ছাত্রলীগের আহ্বায়ক রইস আহম্মেদ মান্নাসহ ১০ জনকে আটক করে কাউনিয়া থানার পুলিশ।

আটককৃতরা হচ্ছেন- বরিশাল নগরের ২ নম্বর ওয়ার্ডের বাসিন্দা ও মহানগর ছাত্রলীগের আহ্বায়ক রইস আহম্মেদ মান্না ও তার ভাই নাদিম, মান্নার সহযোগী কাশিপুর এলাকার পারভেজ হাওলাদার, বঙ্গবন্ধু কলোনি এলাকার শান্ত ইসলাম, কাউনিয়া এলাকার মেহেদী হাসান, মিজানুর রহমান শাওন, মামুন হাওলাদার, রাসেদ হাওলাদার, আল আমিন হাওলাদার, মো. নান্টু স্বন্যামতসহ ১০ জন।

এছাড়া একই মামলায় সোমবার অপর তিনজনকে আটক করে র‌্যাব। এ নিয়ে মোট ১৩জনকে আটক করা হয়েছে। আটককৃতদের সোমবার দুপুরে আদালতে সোপর্দ করা হয়েছে বলে নিশ্চিত করেছেন কাউনিয়া থানার ওসি আব্দুর রহমান মুকুল।

এদিকে মহানগর ছাত্রলীগ আহ্বায়ক রইস আহম্মেদ মান্নাসহ ১৩ জনকে গ্রেপ্তারের ঘটনায় সংবাদ সম্মেলন করেছে মহানগর আওয়ামী লীগ। সোমবার দুপুর ১২টায় বরিশাল নগরীর সোহেল চত্বরের দলীয় কার্যালয়ে সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্য পাঠ করেন মহানগর আওয়ামী লীগের সভাপতি এডভোকেট কে এম জাহাঙ্গীর।

তবে নৌকা বা প্রার্থীর বিরুদ্ধে এ সংবাদ সম্মেলন নয় জানিয়ে লিখিত বক্তব্যে তিনি বলেন, গত রাত (রবিবার) ১২টার দিকে বরিশাল নগরের হাসপাতাল রোড থেকে বরিশাল মহানগর ছাত্রলীগের আহ্বায়ক রইজ আহম্মেদ মান্নাকে তার সাতজন কর্মীসহ কাউনিয়া থানা পুলিশ গ্রেপ্তার করে।

পুলিশ প্রশাসনের পক্ষ থেকে রইজ আহম্মেদ মান্নাকে গ্রেপ্তার করার যে কারণ দেখিয়েছে, যেখানে ঘটনাস্থলের দুই কিলোমিটারের মধ্যেই রইজ আহম্মেদ মান্না ছিল না, এমনকি এ ঘটনা সম্পর্কিত কোনো ভিডিও ফুটেজও কেউ উপস্থাপন করতে পারেনি, আমরা বরিশাল মহানগর আওয়ামী লীগ ঘটনাটির সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ তদন্ত দাবি করছি এবং আওয়ামী লীগের সভানেত্রী ও প্রধানমন্ত্রীর কাছে আকুল আবেদন জানাচ্ছি যে, উল্লেখিত ঘটনাটির নিরপেক্ষ তদন্ত করে প্রকৃত ঘটনা উদঘাটন করার।

এ সময় মৌখিক বক্তব্যে তিনি বলেন, বরিশাল মহানগর আওয়ামী লীগ আমরা ঐক্যবদ্ধ, আওয়ামী লীগের প্রার্থী খোকন সেরনিয়াবাতের পক্ষে আমরা বিভিন্নভাবে কাজ করছি, আনুষ্ঠানিকভাবে প্রতীক বরাদ্দের পর আমাদের অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠন নিয়ে ৩০টি ওয়ার্ডে নির্বাচন কার্যক্রম পরিচালনা করব। এ সময় তিনি সাংবাদিকদের প্রশ্নের উত্তরে বলেন, একটা বিশেষ গোষ্ঠীর ইন্ধন রয়েছে এখানে।

এদিকে এই সংবাদ সম্মেলন নৌকার প্রার্থীর বিপক্ষে মহানগর আওয়ামী লীগের একাংশের অবস্থানের বহিঃপ্রকাশ কিনা জানতে চাইলে মহানগর আওয়ামী লীগের সিনিয়র সহসভাপতি ও আওয়ামী লীগের প্রার্থীর প্রধান নির্বাচনী এজেন্ট এডভোকেট আফজালুল করিম বলেন, আওয়ামী লীগের প্রার্থীর তিনজন কর্মী হামলায় আহত হয়ে হাসপাতালে রয়েছে। যারা হামলা করেছে তাদের বিরুদ্ধে আহতদের পরিবার মামলা করেছে। যে মামলার বিষয়টি পুলিশ তদন্ত করেছে। পুলিশ যেটির তদন্ত করে সেটির বিষয়ে ওনারা সংবাদ সম্মেলন করে কিভাবে আমরা তা বুঝতে পারছি না। ওনারা কি এজেন্ডা দিতে চায়, কি বার্তা দিতে সেটা তাদের প্রশ্ন করুন।

এদিকে বরিশাল সিটি নির্বাচনে নৌকার প্রার্থী খোকন সেরনিয়াবাতের তিন কর্মীকে পিস্তল ঠেকিয়ে কুপিয়ে জখম করার মামলায় গ্রেপ্তার মহানগর ছাত্রলীগের আহ্বায়ক রইস আহমেদ মান্না ও তার অনুসারীদের থানা হাজতে শুয়ে থাকার একটি ছবি ফেসবুকে ভাইরাল হয়েছে। তবে ছবিটি কে তুলেছেন আর কিভাবে বাইরে এলো তা নিয়ে প্রশ্ন দেখা দিয়েছে। সোমবার সকাল থেকে ছবিটি ফেসবুকের নিউজ ফিডে ভাসছে। ছবিটিতে দেখা যায়, মহানগর ছাত্রলীগের আহ্বায়ক রইচ আহমেদ মান্না ও অনুসারীরা থানা হাজতে শুয়ে ও বসে আছেন। এর আগে মান্নাকে গ্রেপ্তার করে থানায় নিয়ে যাওয়ার সময় আরো একটি ছবি ফেসবুকে ভাইরাল হয়।

ওই ছবিতে দেখা যায়, অভিযান পরিচালনাকারী কাউনিয়া থানার উপপরিদর্শক (এসআই) সাইদুল হক মান্নাকে গাড়িতে বসিয়ে হাসি দিয়ে সেলফি তুলেছেন। এ ছবি দুটি এখন বরিশাল নগরীর টক অব দ্য টাউনে পরিণত হয়েছে।

এ বিষয়ে কাউনিয়া থানার ওসি আব্দুর রহমান মুকুল বলেন, রাতে কাজের চাপের মধ্যে ছিলাম আমি। তবে এখন যেহেতু খতিয়ে দেখা হচ্ছে তাই কারো দুর্বলতা থাকলে সে অনুযায়ী ব্যবস্থা নেয়া হবে।

অপরদিকে পুলিশের গাড়িতে হাসি দিয়ে আসামির সঙ্গে সেলফি তোলার ঘটনায় নড়েচড়ে বসেছে বরিশাল মেট্রোপলিটন পুলিশের উর্ধ্বতন কর্মকর্তারা। গারদখানার সিসি ক্যামেরার ছবি ভাইরাল হওয়ার বিষয়টি তদন্ত করে দেখছেন তারা। সেইসঙ্গে সেলফি তোলার ঘটনায় কাউনিয়া থানা পুলিশের ওই উপপরিদর্শক (এসআই) সাইদুল হককে ক্লোজড করা হয়েছে।

বিষয়টি নিশ্চিত করে কাউনিয়া থানার ওসি আব্দুর রহমান মুকুল বলেন, আসামির সঙ্গে সেলফি তোলার ছবির বিষয়টি ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের নজরে আসলে এসআই সাইদুলকে ক্লোজড করা হয়েছে। এছাড়া সিসি ক্যামেরার ছবির বিষয়টি তদন্ত করে দেখছেন কাউনিয়া থানার সহকারী পুলিশ কমিশনার। তদন্ত সাপেক্ষে যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণ করবেন কর্তৃপক্ষ।

বরিশাল মেট্রোপলিটন পুলিশের কমিশনার সাইফুল ইসলাম বলেন, থানা হাজতের ছবি কোনোভাবেই বাইরে যাওয়ার সুযোগ নেই। তারপরও যদি এমনটি হয়ে থাকে তাহলে বিষয়টি তদন্ত করে ব্যবস্থা নেয়া হবে।

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App