×

সারাদেশ

উপকূলবাসীর মনে ভাসছে ৯১’র ভয়াল স্মৃতি

Icon

কাগজ প্রতিবেদক

প্রকাশ: ১৪ মে ২০২৩, ০৩:৪১ পিএম

উপকূলবাসীর মনে ভাসছে ৯১’র ভয়াল স্মৃতি

ফাইল ছবি

৯১’র সেই প্রলয়ঙ্কারী ঘূর্ণিঝড়ের সেই বিভীষিকাময় ভয়াল স্মৃতি এখনো তাড়িয়ে বেড়ায় ৭২ বছরের বৃদ্ধ কবির আহমদকে। সেই ঘূর্ণিঝড়ে হারিয়েছিলেন দুই ছেলেকে। ঘরবাড়ি সহায় সম্বল, সব কিছু হারিয়ে সর্বস্বান্ত হাওয়া কবির আহমদ এবারের অতি প্রবল ঘূর্ণিঝড় মোকায় আর কিছু হারাতে চান না।

কক্সবাজার উপকূলের কুতুবদিয়া পাড়ার বাসিন্দা কবির আহমদ ঘূর্ণিঝড় মোকার প্রভাবে কক্সবাজারের ১০ নম্বর মহাবিপদসংকেত দেখাতে বলার সঙ্গে সঙ্গে আশ্রয় কেন্দ্রে এসে অবস্থান নিয়েছেন।

কক্সবাজার পৌর প্রিপারাটরি উচ্চ বিদ্যালয় আশ্রয়কেন্দ্রে কথা হয় তার সাথে। ৯১’র প্রলয়ঙ্কারী ঘূর্ণিঝড়ের স্মৃতি মনে করিয়ে তিনি বলেন, ৯১’র ঘূর্ণিঝড়ে আমি আমার সবকিছু হারিয়েছি। ভিটেমাটি, ঘরবাড়ি, আসবাবপত্র, গরু-ছাগল সব হারিয়ে আমি সর্বস্বান্ত হয়েছিলাম। আমার আদরের দুই ছেলেকে হারিয়েছিলাম। এবারের ঘূর্ণিঝড় সেই ভয়াল স্মৃতি মনে করিয়ে দিচ্ছে।

একই আশ্রয় কেন্দ্রে অবস্থান নেওয়া ৭০ বছরের আরেক বৃদ্ধা জাফর আলমের মনেও আতঙ্ক। ৯১’র ঘূর্ণিঝড়ের স্মৃতি মনে করে তিনি বলেন, মহেশখালীতে থাকাকালীন সময় ১৯৯১ সালে তার জীবনের ওপর দিয়ে বসে গেছে এক ঝড়। প্রলয়ংকারী সেই ঝড়ের স্মৃতি এখানো মনে দাগ কেটে আছে তার। তবে এবারের ঘূর্ণিঝড় মোখা নিয়ে তার ভয় ছিল ওই সময়ের চেয়েও বেশি। কারণ এবার আবহাওয়া অধিদফতরের পক্ষ থেকে ঘোষণা দেয়া হয়েছিলো ১০ নম্বর মহাবিপদসংকেত। ১৯৯১ সালের ঘূর্ণিঝড় নিয়ে স্মৃতিচারণ করে তিনি বলেন, তখন মহেশখালীতে থাকতাম। আত্মীয় স্বজনও মারা গেছে। ঘরবাড়ি ভাসিয়ে নিয়ে গেছে। যা ছিল সব হারিয়েছিলাম।

অতি প্রবল ঘূর্ণিঝড় মোকা থেকে রক্ষা পেতে কক্সবাজারের উপকূলীয় এলাকার অন্তত আড়াই লাখ মানুষ বিভিন্ন আশ্রয়কেন্দ্রে এসেছে। এর মধ্যে বেশির ভাগই সেন্টমার্টিন, টেকনাফের সাবরাং, বাহারছড়া, কক্সবাজার শহরের ১ নং ওয়ার্ড, কুতুবদিয়া, মহেশখালীর ধলঘাটা, মাতারবাড়ি বাসিন্দা। জানানো হয়েছে, প্রশাসন, জনপ্রতিনিধি ও স্বেচ্ছাসেবী সংস্থা এসব আশ্রিত লোকজনকে দেখভাল করছেন।

আশ্রয়কেন্দ্র যেসব মানুষ আশ্রয় নিয়েছেন তাদের সঙ্গে গবাদি পশু আছেন বলে জানানো হয়েছে।

কক্সবাজারের অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (সার্বিক) বিভীষণ কান্তি দাশ বলেন, প্রশাসনের পক্ষে সর্বোচ্চ প্রস্তুতি নিয়ে মোখা মোকাবিলায় তৎপরতা চালানো হচ্ছে। ইতোমধ্যে অধিক ঝুঁকিপূর্ণ এলাকার মানুষ আশ্রয় কেন্দ্রে অবস্থান নিয়েছে। যারা সঙ্গে গবাদি পশুসহ অন্যান্য মালামালও নিয়ে এসেছে। সাত শতাধিক আশ্রয়কেন্দ্রে এ পর্যন্ত আড়াই লাখের বেশি মানুষ আশ্রয় গ্রহণ করেছে।

তিনি আরো বলেন, সেন্টমার্টিন দ্বীপে ইতোমধ্যে প্রায় সকল মানুষ আশ্রয় কেন্দ্রে অবস্থান নেয়ার খবর এসেছে। যেখানে বর্তমানে চার হাজার ৩০৩ জন মানুষ রয়েছে। দ্বীপের ৩৭টি আশ্রয় কেন্দ্রে তারা অবস্থান নিয়েছে। আশ্রয় কেন্দ্রে অবস্থান নেয়া মানুষকে রান্না করা খাবার দেয়া হচ্ছে। প্রস্তুত রয়েছে জরুরি মেডিকেল টিম। প্রয়োজনীয় চিকিৎসা প্রদানও অব্যাহত রেখেছে।

প্রসঙ্গত, ১৯৯১ সালের ঘূর্ণিঝড় নিহতের সংখ্যা বিচারে স্মরণকালের ভয়াবহতম ঘূর্ণিঝড়গুলোর মধ্যে একটি। ওই বছরের ২৯ এপ্রিল বাংলাদেশে দক্ষিণপূর্ব চট্টগ্রাম বিভাগের উপকূলীয় অঞ্চলে ঘণ্টায় প্রায় ২৫০ কিলোমিটার বেগে আঘাত করে। এই ঘূর্ণিঝড়ের ফলে ৬ মিটার (২০ ফুট) উচ্চতার জলোচ্ছ্বাস উপকূলীয় এলাকা প্লাবিত করে এবং এর ফলে প্রায় ১ লাখ ৩৮ হাজার মানুষ নিহত হয়। পাশাপাশি, প্রায় ১ কোটি মানুষ তাদের সর্বস্ব হারায়।

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App