×

সারাদেশ

সাতক্ষীরায় কৃষকের মুখে তৃপ্তির হাসি

Icon

কাগজ প্রতিবেদক

প্রকাশ: ০৭ মে ২০২৩, ০৪:৪৩ পিএম

সাতক্ষীরায় কৃষকের মুখে তৃপ্তির হাসি
সাতক্ষীরায় কৃষকের মুখে তৃপ্তির হাসি
সাতক্ষীরায় কৃষকের মুখে তৃপ্তির হাসি
সাতক্ষীরায় কৃষকের মুখে তৃপ্তির হাসি
সাতক্ষীরায় কৃষকের মুখে তৃপ্তির হাসি

ছবি: ভোরের কাগজ

কৃষি প্রধান বাংলাদেশের কৃষকদের বোরো ধানের চারা রোপণের গুরুত্বপূর্ণ সময় শীতকাল। তাই শীতের বৈরিতা উপেক্ষা করে বোরো ধানের চারা রোপণ করেছে সাতক্ষীরার কৃষকরা। প্রচন্ড শীত ও শীতের কুঁয়াশা ভেদ করে বোরো ধানের চারা রোপণে কঠোর পরিশ্রম ও ব্যস্ত সময় পারও করেছেন তারা। এরপর ফসলের মাঠে নিবিড় পরিচর্যা, সময়মতো সেচ, সার ও কিটনাশক প্রয়োগ করায় মাঠে বোরো ধানের ভাল ফলনে তৃপ্তির হাসি ফুটে উঠেছে কৃষকের মুখে।

সরজমিনে পরিদর্শন শেষে জানা যায়, জেলায় প্রায় ৪ লাখ কৃষক সরাসরি কৃষি কাজের সঙ্গে জড়িত। কৃষি কাজ করেই তারা জীবিকা নির্বাহ করে থাকেন। বোরো ধান চাষের জন্য কার্ত্তিক অগ্রহায়ণ মাসে বীজতলা তৈরির কাজ শুরু করেন কৃষকরা। কাল বৈশাখীর ঝড়ের কবল থেকে নিরাপদে ধান ঘরে তোলার জন্য আগাম ধানের চারা রোপন শুরু করেন তারা। চলতি বোরো মৌসুমে কৃষকরা বিভিন্ন জাতের ধানের চারা রোপণ করেছেন। এরমধ্যে উফশি জাতের ৬৩,৬৭,৭৪,৮১,৮৮,৮৯ ও ৯২এবং হাইব্রিড,এসএল ৮, হিরা-২,তেজগোল্ড,ইস্পাহানি ৮ ও শক্তিসহ দেশি হাইব্রিড ২৮ জাতের ধান উল্লেখযোগ্য। মাত্র সাড়ে তিন মাসের ব্যবধানে অক্লান্ত পরিশ্রম সেচ, সার ও কিটনাশক প্রয়োগ করে বোরো ধান উৎপাদন করে থাকেন।

আরো জানা যায়, চলতি মৌসুমে আবহাওয়া ভাল থাকায় মাঠজুড়ে কৃষকের ফলানো সোনালী ধানের ছড়াছড়ি। দিগন্তজোড়া মাঠ সেজেছে সবুজ আর পাকা ধানের হলুদ রঙে। ধানের মৌ মৌ গন্ধে ভরে উঠেছে গ্রামিন জনপদ। বাতাসে দুলছে পাকা ধানের শীষের সাথে কৃষকের তৃপ্তির হসি। ধান কেটে বেঁধে মাথায় বোঝা বহন করে, আবার কেউ ভ্যান ঘোড়া গাড়ি করে খামারে নিতে দেখা গেছে। আবার অনেকে ধান ঝেড়ে ঘরে তোলার কাজে ব্যাস্ত সময় পার করছেন।

কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর সাতক্ষীরা’র তথ্য সূত্রে, চলতি বোরো মৌসুমে হেক্টর প্রতি হাইব্রীড ও উফশী ৪.০৫ মে. টন ফলনের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করে জেলায় ৭৭ হাজার ২৫০ হে. জমিতে বোরো আবাদের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করে বিঘা প্রতি ১০ থেকে ১২ হাজার টাকা খরচে ২২ থেকে ২৪ মন ধান পাবে বলে আশা করা হয়েছে। কিন্তু বাস্তবে আবাদ ও ফলনের লক্ষ্যমাত্রা অনেক বেশি অতিক্রম করেছে বলে দাবি অধিদপ্তরটির। সূত্রে আরো জানা যায়, এ মৌসুমে সরকারের প্রণোদনার দুটি প্যাকেজে জেলার প্রায় ৪ লাখ কৃষকের মধ্যে উফশিতে ১৫ হাজার ও হাইব্রিডে ১০ হাজার কৃষকের বিনা মুল্যে বীজ ও সার বিতরণ করা হয়েছে। এর মধ্যে কৃষক প্রতি উফশিতে ৫ কেজি করে বীজ ও সার এবং হাইব্রিডে ২ কেজি করে বীজ বিতরণ করা হয়েছে। জেলার বিভিন্ন এলাকার ধানচাষী আয়ুব হোসেন,জুলফিকার,আজিজুল ইসলাম,নাজমুল হুদা,জামাল আহমেদ,হাফিজুল ইসলাম ও মিন্টু মিয়া বলেন, এবছর বৃষ্টি বাদলা কম। আবহাওয়া ভাল ছিল। প্রাকৃতিক দুর্যোগ হয়নি। ধানের রোগ বালাই কম। যার ফলে ফলনও ভাল হয়েছে। ধানের অধিক ফলনে মনটা ভরে গেছে। বিঘা প্রতি ১০ থেকে ১২ হাজার খরচ করে ২২ থেকে ২৪ মন ধান পেয়েছি। আমাদের এলাকা লবণাক্ত নাহলে আরো বেশি ফলন পেতাম। এখন ধানের বাজার মুল্যটা যদি ঠিক থাকে, তাহলে আমরা অনেক ক্ষতি কাটিয়ে উঠতে পারবো বলে আশা করি।

অনাবাদি জমি আবাদ সম্পর্কে তারা আরো বলেন, এবছর বৃষ্টির কম হওয়ায় জলাবদ্ধতার সৃষ্টি হয়নি। যার ফলে কৃষি কাজে ব্যবহৃত কোনো জমি অনাবাদি নেই। তাবাদে সরকারও বিনা মূল্যে আমাদের সার বীজ দিয়েছেন। সবমিলিয়ে সাতক্ষীরায় বোরো ধানের বাম্পার ফলন হয়েছে তাতে কোনো সন্দেহ নেই।

সাতক্ষীরার কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর (খামারবাড়ি) উপ-পরিচালক কৃষিবিদ মো. সাইফুল ইসলাম বলেন, চলতি বোরো মৌসুমে সরকারের পক্ষ থেকে দুইটি প্রণোদনায় জেলার ২৫ হাজার কৃষকদের বিনামূল্যে বীজ সার ও বীজ সরবরাহ করা হয়েছে। এবছর অতিবৃষ্টিতে জলাবদ্ধতা সৃষ্টি হয়নি। তাছাড়া দুর্যোগ প্রবন এলাকায়, নীচু আবাদী জমি পানিতে তলিয়ে না থাকার কারণে বোরো ধান চাষ করা সম্ভব হয়েছে। বিগত কয়েক বছরে বোরো চাষের ভরা মৌসুমেও নিচু জমি পানিতে তলিয়ে থাকে। যার ফলে অনেক আবাদি জমি অনাবাদি থেকে যায়। কৃষকরা ক্ষতিগ্রস্থ হয়।

তিনি আরো বলেন, এ মৌসুমে প্রাকৃতিক দুর্যোগে জলাবদ্ধতা না থাকায় কৃষকরা ক্ষতি কাটিয়ে উঠতে বোরো ধান চাষের উপর জোর দিয়েছে। জেলায় প্রায় ৭৯ হাজার ৫২৬ হে. জমিতে বোরো আবাদ হয়েছে। এজন্য বিগত কয়েক বছরের লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে অধিক ফলন হয়েছে। প্রাকৃতিক দুর্যোগের আগে কৃষকরা ধান কেটে ঘরে তুলতে পারে তাহলে গত কয়েক বছরের চেয়ে এবছর কৃষকরা অধিক লাভবান হবে এবং উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা অতিক্রম করবে বলে আশা করছেন এই কর্মকর্তা।

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App