×

সারাদেশ

বরিশাল সিটি করপোরেশন নির্বাচন: আ.লীগের দ্বন্দ্ব প্রকাশ্যে

Icon

কাগজ প্রতিবেদক

প্রকাশ: ০৩ মে ২০২৩, ১০:৫৩ এএম

বরিশাল সিটি করপোরেশন নির্বাচন: আ.লীগের দ্বন্দ্ব প্রকাশ্যে

ছবি: সংগৃহীত

বরিশাল সিটি করপোরেশন নির্বাচন সামনে রেখে আওয়ামী লীগের অভ্যন্তরীণ দ্বন্দ্ব প্রকাশ্য রূপ নিয়েছে। দলীয় মনোনয়ন দেয়ার পর দ্বন্দ্বের গুঞ্জন শুরু হলেও আওয়ামী লীগ প্রার্থীর নির্বাচন পরিচালনা কমিটি ঘোষণার পর সেই গুঞ্জন আরো জোরালো হয়। সবশেষ গত মে দিবসে নৌকার প্রার্থী খোকন সেরনিয়াবাত এবং বর্তমান মেয়র সেরনিয়াবাত সাদিক আবদুল্লাহর অনুসারীদের পৃথক কর্মসূচি পালনের মধ্যদিয়ে দ্বন্দ্ব প্রকাশ্য রূপ নেয়।

এ কারণে ১২ জুন অনুষ্ঠিতব্য সিটি নির্বাচনে নৌকার জন্য অশনিসংকেত দেখছেন মাঠপর্যায়ের কর্মী-সমর্থকরা। এমনকি নৌকার পরাজয় হলেও তা অমূলক হবে না বলে মনে করেন তারা। দুপক্ষের নেতাকর্মীরা ঐক্যবদ্ধ হয়ে নৌকার বিজয়ে কাজ করার ঘোষণা দিলেও বাস্তব চিত্র সম্পূর্ণ উল্টো। মঙ্গলবার নৌকার প্রার্থী খোকন সেরনিয়াবাত আনুষ্ঠানিক গণসংযোগ শুরু করলে সেখানে দেখা যায়নি সাদিক অনুসারীদের।

গত ১৫ এপ্রিল আওয়ামী লীগের স্থানীয় সরকার মনোনয়ন বোর্ডের সভায় আসন্ন বরিশাল সিটি করপোরেশন নির্বাচনে দলীয় মনোনয়ন পান বর্তমান মেয়র সেরনিয়াবাত সাদিক আবদুল্লাহর আপন চাচা বঙ্গবন্ধুর ভাগ্নে আবুল খায়ের আবদুল্লাহ (খোকন সেরনিয়াবাত)। তার মনোনয়ন পাওয়ার খবরে হঠাৎ করেই রাজনীতির মাঠে প্রকাশ্যে আসেন দীর্ঘদিন বরিশালের রাজনীতিতে অনুপস্থিত প্রয়াত মেয়র শওকত হোসেন হিরন অনুসারীরা।

সাদিককে বাদ দিয়ে তার চাচা খোকন সেরনিয়াবাতকে মনোনয়ন দেয়ায় সাদিক বিরোধী নেতাকর্মীরা মিষ্টি বিতরণ করে উল্লাস করেন। এরপর খোকন সেরনিয়াবাত বরিশালে এলে তাকে দেয়া সংবর্ধনা অনুষ্ঠানেও অনুপস্থিত ছিলেন সাদিক অনুসারী নেতাকর্মীরা। বর্তমান মহানগর আওয়ামী লীগের সভাপতি একেএম জাহাঙ্গীর সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে না থেকে দলীয় কার্যালয়ে অবস্থান করেন।

অনুষ্ঠানের এক পর্যায়ে সভাপতি হিসেবে তার নাম ঘোষণার পর কেন্দ্রীয় নেতাদের চাপের মুখে সংবর্ধনা মঞ্চে উপস্থিত হন তিনি। সেখানে একেএম জাহাঙ্গীর তার বক্তব্যে নেতাকর্মীদের ঐক্যবদ্ধ হয়ে কাজ করার আহ্বান জানান। এমনকি সাদিক আবদুল্লাহও মনোনয়ন বঞ্চিত হওয়ার কয়েকদিন পর ভার্চুয়াল সভায় তার অনুসারী নেতাকর্মীদের ঐক্যবদ্ধ হয়ে নৌকার পক্ষে কাজ করার ঘোষণা দেন। তবে বাস্তবে এর প্রমাণ পাওয়া যায়নি।

গত রবিবার আওয়ামী লীগের মেয়র প্রার্থী তার নির্বাচন পরিচালনা কমিটি ঘোষণা করেন। নৌকার প্রার্থী হিসাবে ছাপানো প্যাডে নিজের স্বাক্ষরে ১৬ সদস্যের ওই কমিটি ঘোষণা করেন খোকন সেরনিয়াবাত। সাদিক আবদুল্লাহর অনুসারীদের কাউকে রাখা হয়নি। এমনকি আওয়ামী লীগের জেলা ও মহানগরের শীর্ষ নেতাদেরও রাখা হয়নি। এতে জেলা ও মহানগর আওয়ামী লীগের পদধারী কয়েকজন থাকলেও রাজনীতিতে সবাই সাদিকবিরোধী হিসেবেই পরিচিত। ঘোষিত কমিটির এই মাধ্যমে প্রকাশ্যে এলো আওয়ামী লীগের বিভক্তি। সেই বিভক্তি আরো প্রকাশ্য হয় মে দিবসে আলাদা কর্মসূচি পালনের মধ্য দিয়ে। খোকন সেরনিয়াবাত এবং সাদিক আবদুল্লাহর অনুসারীরা মে দিবস উপলক্ষে পাল্টাপাল্টি সমাবেশ করেন। গত সোমবার দুপুরে প্রথমে জেলা ও মহানগর আওয়ামী লীগের কার্যালয়ের সামনে খোকন সেরনিয়াবাতের অনুসারীরা সমাবেশ করেন।

বিকালে একই স্থানে আলাদা মঞ্চে সমাবেশ করেন সাদিক অনুসারীরা। নির্বাচন পরিচালনা কমিটির ব্যাপারে খোকন অনুসারীরা বলছেন, এটা পানির মতো পরিষ্কার যে মেয়র সাদিক কিংবা তার পরিবারের কেউ মন দিয়ে কাজ করবে না খোকন সেরনিয়াবাতের পক্ষে। এ কারণেই ওই ঘরানার কাউকে রাখা হয়নি কমিটিতে। তবে কমিটি ঘোষণার বিষয়টিকে খোকন সেরনিয়াবাতের একান্ত নিজস্ব সিদ্ধান্ত বলে অভিহিত করেছেন সাদিক অনুসারী হিসাবে পরিচিত জেলা ও মহানগর আওয়ামী লীগের দুই সভাপতি-সাধারণ সম্পাদক। তাদের মতে, নির্বাচন পরিচালনার বিষয়ে আনুষ্ঠানিক সভা করে সিদ্ধান্ত নেবে দল। সেই সভার মাধ্যমেই নির্ধারণ করা হবে নির্বাচনী কৌশল।

পরিচয় গোপন রাখার শর্তে জেলা ও মহানগর আওয়ামী লীগের একাধিক নেতাকর্মী বলেন, কমিটিতে যাদের রাখা হয়েছে তাদের বড় একটি অংশ প্রয়াত মেয়র শওকত হোসেন হিরনের অনুসারী হিসাবে পরিচিত। ৯ বছর আগে হিরনের মৃত্যুর পর দলে এরা ছিলেন অনেকটাই অবহেলিত। ২-১ জন সাদিক শিবিরে ভিড়ে কিছুটা ভালো অবস্থানে থাকলেও বাকিরা ছিলেন কোণঠাসা। অনেকে টিকতে না পেরে চলে যান বরিশাল ছেড়ে। খোকন সেরনিয়াবাত মনোনয়ন পাওয়ার পর তাকে ঘিরে এখন আবার সক্রিয় তারা। ভোটের মাঠে নৌকার পক্ষে কাজও করছেন। এর বিপরীতে বর্তমানে জেলা ও মহানগর আওয়ামী লীগ এবং সহযোগী সংগঠনগুলোর নেতৃত্বে থাকা প্রায় সবাই সাদিক অনুসারী। তাদের কাউকেই রাখা হয়নি কমিটিতে। ফলে সাদিক অনুসারীরা নির্বাচনের মাঠে নীরব থাকলে নৌকার বিজয় কঠিন হয়ে পড়বে বলে মনে করেন তারা।

জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক সাবেক এমপি এড. তালুকদার মো. ইউনুস সাংবাদিকদের বলেন, এটা প্রার্থীর নিজস্ব সিদ্ধান্ত। ব্যক্তিগতভাবে নির্বাচন পরিচালনা প্রশ্নে এরকম কমিটি তিনি করতেই পারেন। সেখানে তিনি কাকে রাখলেন বা রাখলেন না সেটা একান্তই তার ব্যক্তিগত বিষয়। তবে আমরা নির্বাচন পরিচালনার বিষয়ে ভিন্ন কিছু ভাবছি। দলীয় সভাপতি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা যার হাতে নৌকা দিয়েছেন তার বিরুদ্ধে যাওয়ার তো প্রশ্নই ওঠে না। আমরা জেলা ও মহানগর আওয়ামী লীগ আনুষ্ঠানিকভাবে সভা করে নির্বাচনী কর্মকৌশল নির্ধারণ করব। আমাদের রাজনৈতিক অভিভাবক জেলা আওয়ামী লীগ সভাপতি মন্ত্রী আবুল হাসানাত আবদুল্লাহ এমপি শিগগিরই বরিশালে আসবেন। সবাইকে সঙ্গে নিয়েই নৌকার বিজয় নিশ্চিত করার কাজে ঝাঁপিয়ে পড়ব আমরা।

মে দিবসের কর্মসূচি প্রসঙ্গে মহানগর শ্রমিক লীগের সাধারণ সম্পাদক পরিমল দাস বলেন, গত পাঁচ বছরের ধারাবাহিকতায় কর্মসূচির আয়োজন করা হয়েছে। যারা ভিন্নভাবে আয়োজন করেছেন তাদের তো বিগত দিনের কোনো কর্মসূচিতে দেখা যায়নি। তারা অতি উৎসাহী হয়ে করেছেন। তারা আওয়ামী লীগের প্রার্থীকে ভুল বুঝিয়ে বিভেদ সৃষ্টি করার চেষ্টা করছেন।

একই কমিটির সভাপতি আফতাব হোসেন বলেন, এবার অনুষ্ঠান উন্মুক্ত ছিল। তাই জেলা ও মহানগর নেতা এবং শ্রমিকদের নিয়ে কর্মসূচি করা হয়েছে। এতে মহানগরের সাধারণ সম্পাদক পরিমল দাসকেও আমন্ত্রণ জানানো হয়েছিল। কিন্তু সাদিক আবদুল্লাহ নির্দেশ না দিলে আসতে পারবেন না বলে জানিয়েছেন।

তিনি বলেন, আগে সবকিছু সাদিক আবদুল্লাহ তার নিজের মতো করে পরিচালনা করতেন। শ্রমিক লীগের কর্মসূচি শ্রমিক লীগ করবে, সেখানে সাদিক আবদুল্লাহ অতিথি হিসেবে থাকতে পারেন। কিন্তু তিনি সব কিছু তার নিয়ন্ত্রণে নিয়ে করায় অনেকে কর্মসূচিতে যায়নি।

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App