×

সারাদেশ

সুনামগঞ্জের টাঙ্গুয়ার হাওরে নিয়ন্ত্রণহীন হাউসবোট

Icon

কাগজ প্রতিবেদক

প্রকাশ: ০১ মে ২০২৩, ১১:০৭ এএম

সুনামগঞ্জের টাঙ্গুয়ার হাওরে নিয়ন্ত্রণহীন হাউসবোট

ছবি: ভোরের কাগজ

তরুণ-তরুণীদের চলে অবৈধ মেলামেশা

দেশের দ্বিতীয় বৃহত্তম মিঠা পানির জলাভূমি ওয়ার্ল্ড রামসার হেরিটেজ মাদার ফিসারিজ ও গাছ মাছ এবং পাখিদের অভয়ারণ্য হিসেবে খ্যাত সুনামগঞ্জের তাহিরপুর ও মধ্যনগর উপজেলার আংশিক নিয়ে গঠিত জেলার অন্যতম পর্যটন স্পট টাঙ্গুয়ার হাওরে নিয়ন্ত্রণহীনভাবে চলছে হাউসবোট।

এক শ্রেণির উঠতি বয়সের তরুণ-তরুণীরাই এ হাউজবোট গুলোর প্রধান পর্যটক। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একজন পর্যটক বলেন, তরুণীদের নিয়ে হোটেল-মোটেলে রাত্রিযাপন করলে সম্পর্ক যাচাই বাছাই ও এনআইডির প্রয়োজন হয়। কিন্তু হাউসবোটে রাত্রি যাপন করলে কোনো এনআইডির প্রয়োজন হয় না। যে কারণে ভ্রমণের নামে প্রতি রাতেই হাউজবোটগুলোতে চলে মাদকের ছড়াছড়ি। এ মাদক কখনো পর্যটকরা সঙ্গে করে নিয়ে আসেন। আবার যারা না নিয়ে আসেন তাদের মাদক ম্যানেজ করে দিচ্ছে খোদ মাঝিরাই।

স্থানীয় গণমান্য ব্যক্তিরা হাওড় পাড়ের পরিবেশ প্রতিবেশ রক্ষায় প্রতিটি নৌকা ও হাউসবোটকে (ক্যাবিন যুক্ত) উন্মূক্ত করে দেয়ার এবং হাওড়ে নৌকা ও হাউজবোটে রাত যাপন নিষিদ্ধ করার দাবি জানিয়েছেন। তারা বলেন, না হয় এলাকার যুব সমাজ ধ্বংসের দিকে ধাবিত হবে। নিয়ন্ত্রণহীন হয়ে যাবে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি। সেই সঙ্গে হাওড় এলাকায় বাড়তে পারে যৌন অপরাধ।

টাঙ্গুয়ার হাওড়ে নৌচলাচলে স্টিল বডির নৌকার ভাড়া নির্ধারণে প্রশাসনের নীতিমালা থাকলেও হাউসবোটে কোনো নীতিমালা না থাকায় দিন দিন নিয়ন্ত্রণহীনভাবে বেড়ে উঠছে হাউসবোট। বিগত বছরগুলোতে টাঙ্গুয়ার হাওরে নৌ চলাচলে স্টিল বডির নৌকায় ভাড়া নির্ধারণ করা ছিল দিনের মধ্যে ঘুরে এলে ৮ হাজার টাকা, রাত্রিযাপনে তার দ্বিগুন। কিন্তু হাউজবোটে কোনো ভাড়া নির্ধারণ করা হয়নি। এ জন্য টাঙ্গুয়ার হাওরে আগত পর্যটকরা ভোক্তা অধিকার থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন।

বিগত বছর টাঙ্গুয়ার হাওরে প্রায় ৬০টির মতো হাউসবোট ছিল। সরেজমিন গিয়ে এ বছর হাওড় এলাকা ঘুরে দেখা গেছে প্রায় ২০০ হাউজবোট নতুন করে নির্মাণ করা হচ্ছে।

টাঙ্গুয়ার হাওরের জীববৈচিত্র্য ও পরিবেশ রক্ষায় এখনই হাউসবোটগুলো নিয়ন্ত্রণে নেয়ার জন্য প্রশাসনের কাছে জোর দাবি জানিয়েছেন হাওড়পাড়ের সচেতন মহল।

টাঙ্গুয়ার হাওরপাড়ের আনন্দনগর গ্রামের বাসিন্দা নজির হোসেন বলেন, একটি হাউসবোট প্রতি প্যাকেজে অন্তত ২০ জন পর্যটক নিয়ে হাওরে ভ্রমণে আসে। এতে তারা জনপ্রতি সাড়ে ৬ হাজার টাকা করে খরচ নেয়। এর মধ্যে তাদের ৫ বেলা

খাওয়াতে খরচ হয় জনপ্রতি এক হাজার টাকা। তারা ২০ জনের কাছ থেকে টাকা আদায় করে ১ লাখ ৩০ হাজার। নৌকা ভাড়াসহ খরচ হয় ৩০ হাজার টাকা। কিন্তু সরকারিভাবে কোনো নিয়ন্ত্রণ না থাকায় তারা প্রতি ট্রিপে লাভ করে ৯০ হাজার টাকা।

এছাড়াও হাউসবোটগুলো পূজা, ঈদ, ফুলমুন ও টানা দুদিন সরকারি ছুটি থাকলে তারা ট্রিপ নিতে চায় না। পর্যটকদের বলে তাদের বুকিং হয়ে গেছে। এ সময় আরো অতিরিক্ত ভাড়া দেয়ার কথা বললে তারা বুকিং নেয়।

টাঙ্গুয়ার হাওড়ের ট্যুরিষ্ট গাইড সোহানুর রহমান সোহাগ বলেন, টাঙ্গুয়ার হাওড়ে পর্যটকবাহী স্থানীয় নৌকাগুলো ভাড়া ও চলাচলের বিষয়ে যেভাবে প্রশাসন নিয়ন্ত্রণে এনেছে সেভাবে হাউসবোটগুলোও প্রশাসনের নিয়ন্ত্রণে আনা জরুরি হয়ে পড়েছে। হাউসবোটগুলো প্রশাসনের নিয়ন্ত্রণে না থাকার কারণে পর্যটকদের কাছ থেকে তারা ইচ্ছেমতো প্যাকেজের ভাড়া আদায় করছে। হাউসবোটগুলোর মাঝিও যেন টাঙ্গুয়ার হাওরপাড় থেকে নেয়া হয় সে বিষয়েও তিনি প্রশাসনের কাছে দাবি জানান।

নৌকার মাঝি ফয়সল আহমদ বলেন, টাঙ্গুয়ার হাওরে আগত পর্যটকদের মধ্যে বেশিরভাগই থাকেন উঠতি বয়সের তরুণ- তরুণী। তারা নৌকা ভাড়া নেয়ার আগেই নৌকার ভেতরে গিয়ে দেখতে চান লক করা কেবিন আছে কিনা। যে নৌকায় কেবিন নেই সেটি তারা নিতে চায় না।

রতনশ্রী গ্রামের শওকত হাসান বলেন, টাঙ্গুয়ার হাওরে হাউসবোট আসার আগে একসঙ্গে স্বামী-স্ত্রী এবং পরিবার পরিজন ছাড়া কাউকে আসতে দেখা যেতো না। সরকারি কোনো নিয়ন্ত্রণ না থাকায় এখন অবাধে ছেলে মেয়ে হাউসবোটে রাত্রি যাপন করে। এমন কোনো হাউসবোট নেই যেগুলো চেক করলে মাদক মিলবে না। সেই সঙ্গে মাঝরাতে হাওরের মধ্যখানে চলে অবৈধ মেলামেশা।

সুনামগঞ্জ জেলা ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ কার্যালয়ের সহকারী উপপরিচালক আল আমিন বলেন, পর্যটকদের টাঙ্গুয়ার হাওর ভ্রমণে নৌকা অথবা হাউজবোটের ভাড়া নির্ধারণ করবে স্থানীয় প্রশাসন। সেক্ষেত্রে স্থানীয় প্রশাসনের নির্ধারিত ভাড়ার অতিরিক্ত নিয়ে থাকলে তা ভোক্তা অধিকারের আওতায় এনে ব্যবস্থা নেয়া হবে।

তাহিরপুর উপজেলা নির্বাহী অফিসার সুপ্রভাত চাকমা বলেন, স্থানীয় অনেকেই বিষয়টি নিয়ে অভিযোগ করেছেন। হাউসবোটগুলোর ভাড়া নির্ধারণ ও চলাচল নিয়ন্ত্রণে আনার জন্য শিগগিরই উদ্যোগ নেয়া হবে।

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App