×

সারাদেশ

গোমস্তাপুরে ভূমিহীন ৭৩৩ পরিবারের দিনবদল

Icon

কাগজ প্রতিবেদক

প্রকাশ: ২৫ এপ্রিল ২০২৩, ১২:০০ পিএম

https://www.youtube.com/watch?v=IJLSLpkRaX4

চাঁপাইনবাবগঞ্জের গোমস্তাপুর উপজেলায় আশ্রয়ণ প্রকল্পের বাসিন্দাদের ঈদ আনন্দ যেন দ্বিগুণ বেড়েছে। ঈদের আগে শেষ ধাপে ৭৫টি নতুন বাড়ি পাওয়া পরিবারগুলো পেয়েছে বাড়তি আনন্দ। উপজেলার রাধানগর ইউনিয়নের পান্টাপুর আশ্রয়ণ প্রকল্পের একই সঙ্গে ২৪টি সারি সারি বাড়ি দৃষ্টি কেড়েছিলো দর্শনার্থীদের। কেউ ছবি ও সেলফি তুলতে, কেউবা এসেছিল ঈদের আনন্দ ভাগাভাগি করে নিতে। ঈদে শত শত দর্শনার্থী ভির জমিয়েছিলো এই আশ্রয়ণ প্রকল্পে। তাতে আশ্রয়ণ প্রকল্পের বাসিন্দাদের মাঝে যোগ হয়েছিল বাড়তি এক ঈদ আনন্দ।

আশ্রয়ণ প্রকল্পের বাসিন্দা মোসা. ফেন্সী খাতুন বলেন, নতুন ঘরে ঈদ কাটাতে অনেক ভালো লেগেছে। অন্যান্য ঈদের চেয়ে এবারের ঈদে খুব আনন্দ পেয়েছি। নতুন ঘরে যেন নতুন ঈদ আমাদের। ঈদের দিন সকাল থেকেই আমার বাসায় সব আত্মীয়-স্বজন এসেছিলো আমার স্বপ্নের বাড়ি ও আমাকে দেখতে। এছাড়াও বাইরে থেকে অনেক চেনা-অচেনা মানুষ এসেছিলো আমাদের দৃষ্টি নন্দন বাড়ির ছবি তুলতে।

তিনি আরো বলেন, আমার বিয়ে হওয়া ১০ বছর হলো আমার এক মেয়ে সন্তান ও এক ছেলে নিয়ে অন্যের স্থলে বেড়া-টাটি দিয়ে বসবাস করতাম। ঈদের আগে নতুন এই বাড়ি মানে আমার জীবনে সব চেয়ে বড় ঈদ উপহার। আমি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার প্রতি কৃতজ্ঞতা ও তার দীর্ঘায়ু কামনা করি।

দিনবদল হয়েছে উপজেলার ভূমিহীন ৭৩৩ পরিবারের সদস্যদের। সারা জীবনের চেষ্টায় যারা মাথা গোঁজার মতো এক টুকরো ভূমি সংগ্রহ করতে পারেনি, আজ তারা সম্পদশালী হতে স্বপ্ন দেখছে। আর স্বপ্ন দেখাচ্ছেন স্বয়ং দেশের প্রধানমন্ত্রী। যখন আশ্রয়হীনদের মত ভূমিহীনরা গাছ তলায়, ফুটপাথে বা অন্যের ছাদের নিচে পশু-পাখির মত বসবাস করতো তখন প্রধানমন্ত্রীর উপহারের বাড়ি পাওয়ার পর তারা আজ স্বাবলম্বী। ঘরের পাশে গড়ে তুলেছেন সবজির মাচা । গরু-ছাগল পালনের জন্য করেছে ঘোয়াল ঘর। খালি জমিতে বেগুন, মরিচ, পেঁপেসহ বিভিন্ন ধরনের শাক-সবজি। এই সবুজের সমাহার জানান দিচ্ছে যে, তারা বাড়ি ও ভূমি পেয়ে আজ স্বাবলম্বী হতে শিখেছে। আজ তাদের পরিবারের সদস্যদের মাঝে অনেক পাওয়ার হাসি যেন ঝিলিক দিচ্ছে। প্রধানমন্ত্রীর বিশেষ উপহারের এই বাড়ি হাসি ফুটিয়েছে তাদের মুখে। নিজের একটি আধা-পাকা পরিচ্ছন্ন ঘরে থাকার স্বপ্ন পূরণ হয়েছে তাদের নিরাপদ ও মজবুত স্থায়ী ঘর পেয়ে। এই মানুষগুলোর এক সময় ছিলো না নিজেস্ব কোন স্থায়ী ঠিকানা। খাস জমি কিংবা অন্যের জমিতে আশ্রয় নিয়ে ভাঙ্গা ঘরে থেকে পরিবার-পরিজন নিয়ে দিনতিপাত করতো তারা। কিন্তু বর্তমান সরকারের এই বিশেষ উদ্যোগ গ্রহন করে বাসস্থানসহ নানাবিধ সুবিধার ছোঁয়ায় বদলে যাচ্ছে তাদের জীবনমান।

গোমস্তাপুর উপজেলায় মৌজায় মৌজায় শোভা পাচ্ছে দৃষ্টিনন্দন লাল- সবুজের মোট ৭৩৩টি বাড়ি। আশে পাশে গেলেই সারি সারি ঘর যা দেখলেই মন জুরিয়ে যায়। এখানে গড়ে উঠছে ভূমিহীনদের বসতি। আর পুকুর ধারে গড়ে উঠছে সবুজের সমারাহ। রয়েছে হাঁস-মুরগি আর গরু-ছাগল পালনের সুব্যবস্থা। এদিক ওদিক ছোটাছুটি করে খেলছে শিশু-কিশোরের দল। পুরুষরা ছুটছেন দৈনন্দিন কাজে। নারীদের কেউ কেউ ব্যস্ত হাঁস-মুরগি ও গরু-ছাগল নিয়ে কেউবা নকশীকাঁথা বুননে ব্যস্ত। ছিন্নমূল মানুষের যেন এক খণ্ড শান্তির নীড়। তাদের জীবনের শুরুটা ভূমিহীন হলেও এখন তারা আর ভূমিহীন নয়।

মুজিববর্ষে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ভূমিহীনদের বসবাসের জন্য শুধু ঘর নয় সরকারি দুটি শতক জমিও প্রদান করেছেন। এতে তারা হাঁস-মুরগি, গবাদি পালন ও সবজির বাগানসহ নানা উপায়ে স্বাবলম্বী হচ্ছে। শিক্ষার ছোঁয়াও লেগেছে তাদের মধ্যে। আশ্রয়ণের বসবাসরত প্রায় শতার্ধিক ছেলেমেয়ে পড়াশোনা করে প্রাথমিক ও মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে। আশ্রয়ণের সবগুলোই প্রকল্পের ৫ মিটারের মধ্যে প্রাথমিক বিদ্যালয় রয়েছে। ফলে আশ্রয়ণে শিক্ষার প্রভাবও পড়েছে। এতে আশ্রয়ণ প্রকল্পের ছেলেমেয়েরা শিক্ষার সু্যোগ পাচ্ছে। সরেজমিনে পাল্টাপুর আশ্রয়ণে গিয়ে দেখা যায়, ছোট ছোট পরিসরে আদর্শ ছিমছাম সারি সারি ঘর। এসব ঘরে বাস করা মানুষদের সাথে সাক্ষাতে দেখা যায়, মানবেতর জীবনমান থেকে মুক্তি পেয়ে এখন তারা সুখ-স্বাচ্ছন্দ্যে পরিবার-পরিজন নিয়ে জীবনযাপন করছেন।

উপজেলার পান্টাপুর আশ্রয়ণের বাসিন্দা মো. শাহিন বলেন, আগে আমরা অন্যের জায়গায় ছোট ভাঙ্গা ঘরে থেকে শিশু সন্তান নিয়ে শীত-বৃষ্টি মৌসুমে লড়াই করে অনেক কষ্টে জীবনযাপন করতাম। সরকার আমাদের জায়গাসহ নতুন ঘর দেয়ায় এখন আমরা পরিবার-পরিজন নিয়ে নিশ্চিন্তে ঘুমাতে পারছি। আগের মত আর কষ্ট করতে হয় না। শুধু স্থায়ী ঠিকানা নয়, একটি বাড়ি, একটি আশ্রয় বদলে দিয়েছে তাদের জীবন। নতুন অর্থ খুঁজে পেয়েছে যাপিত জীবন। বদলে গেছে প্রকল্পের আশপাশের দৃশ্যপট। বাড়ির চারপাশে বেড়ে উঠেছে সবুজবেষ্টনী, পালা হচ্ছে হাঁস-মুরগি, গরু-ছাগল। খোলা হয়েছে নিত্যপণ্যের দোকান। দুই বছরে সবুজের সমারোহে ভরিয়ে দিয়েছে তাদের বাড়ির আঙিনা। পেঁপে মৌসুমী সবজি ও দেশি ফলের গাছ বেড়ে উঠেছে তাদের বাড়ির আশপাশ।

উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা কৃষিবিদ তানভীর আহমেদ সরকার জানান, আশ্রয়ণ প্রকল্পগুলোতে পারিবারিক পুষ্টির চাহিদা মেটাতে মাঝে মধ্যে কৃষি অফিস থেকে বিভিন্ন প্রকার শাক-সব্জির বীজ ও ফলমূলের চারা বিতরণ করে থাকি। আগামীতেও এই বিতরণ কার্যক্রম অব্যহত থাকবে।

উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) আসমা খাতুন বলেন, এরই মধ্যে যারা ঘর পেয়েছেন তারা স্বাচ্ছন্দ্যে পরিবার-পরিজন নিয়ে জীবনযাপন করছেন। এছাড়া, করোনাকালে এসব দরিদ্র মানুষের জন্য প্রধানমন্ত্রীর উপহার খাদ্যসামগ্রী দেয়া হয়েছিল। একই সঙ্গে কোনো ভূমিহীন, গৃহহীন যেন প্রধানমন্ত্রীর উপহার থেকে বঞ্চিত না হয় সে বিষয়ে লক্ষ্য রাখা হচ্ছে। বর্তমান সরকারের মাননীয় প্রধানমন্ত্রী ঘোষণা দিয়েছেন বাংলাদেশের একজন মানুষও ভূমিহীন ও গৃহহীন থাকবে না। এ নির্দেশনা বাস্তবায়নে উপজেলা প্রশাসন অত্যন্ত আন্তরিকভাবে আশ্রয়ণ-২ প্রকল্পের মাধ্যমে এই উপজেলায় প্রকৃত ভূমিহীন ও গৃহহীনদের যাচাই-বাছাই করে মজিববর্ষে মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর উপহার হিসাবে গৃহনির্মাণ করে দিয়েছি। ফলে ঠিকানাবিহীন মানুষগুলো রঙিন ঘরে নতুন স্বপ্ন দেখতে শুরু করেছে।

তিনি আরো বলেন, তাদেরকে স্বাবলম্বী করার জন্য উপজেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে বিভিন্ন পদক্ষেপ নেয়া হচ্ছে। এতে তাদের জীবনযাত্রায় পরিবর্তন আসছে। দিনবদল হচ্ছে।

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App