×

সারাদেশ

তাপদাহে ক্ষতিগ্রস্ত চা বাগান, কমেছে উৎপাদনের গতি

Icon

কাগজ প্রতিবেদক

প্রকাশ: ২০ এপ্রিল ২০২৩, ০২:২৭ পিএম

তাপদাহে ক্ষতিগ্রস্ত চা বাগান, কমেছে উৎপাদনের গতি

ছবি: সংগৃহীত

প্রচণ্ড তাপদাহে বন্ধ হয়ে গেছে চা গাছের কুঁড়ি বৃদ্ধি। কোথাও কোথাও জ্বলে পুড়ে ছাই হয়ে গেছে গাছ। কমেছে উৎপাদনের গতি। এ অবস্থায় চায়ের স্বাভাবিক বৃদ্ধি ফিরিয়ে আনতে ইরিগেশনের পাশাপাশি প্রতি চার গাছের মধ্যে মাটি গর্ত করে পচা গোবরের সঙ্গে কিছু টিএসপি মিশিয়ে আবার মাটিতে মিলিয়ে দেয়ার পরামর্শ চা বিজ্ঞানীদের।

বাংলাদেশ চা গবেষণা কেন্দ্রের পরিচালক ড. ইসমাইল হোসেন জানান, চায়ের জন্য ২০ থেকে ২৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রা উত্তম। তবে সর্বোচ্চ ২৯ ডিগ্রি পর্যন্ত চা গাছ তাপ সহ্য করতে পারে। এর উপরে গেলেই খরায় পড়বে চা। চা পাতায় দেখা দেবে বাঞ্জি দশা। তবে চা বাগানে প্রতি ২০ ফিট অন্তর অন্তর সেড টি থাকলে তা ৩৫-৩৬ ডিগ্রি পর্যন্ত সহনীয়।

তিনি আরো বলেন, সূর্যালোকের উপস্থিতিতে গাছের পাতায় অবস্থিত ক্লোরফিলের মাধ্যমে গাছ যেভাবে পানি বা রস আহরণ করে, তাপমাত্রা ২৯ ডিগ্রি পাড় হলেই এই সক্ষমতা হারিয়ে ফেলে। বাতাস থেকে যে কার্বন ডাই অক্সাইডের মাধ্যমে গ্লোকজ বা শর্করা জাতীয় খাদ্য উৎপাদন করে অতিরিক্ত সূর্যালোকের কারণে সেটাও বাধাগ্রস্ত হয়।

বর্তমানে মৌলভীবাজারের তাপমাত্রা রেকর্ড হচ্ছে ৩৮ থেকে ৩৯ ডিগ্রি। যার সব মাত্রা অতিক্রম করেছে। এ অবস্থায় থেমে গেছে চায়ের পাতা বৃদ্ধি। যাকে চা বাগানের ভাষায় বলে বাঞ্জি দশা।

বুধবার (১৯ এপ্রিল) সকালে সরজমিন পরিদর্শনকালে শ্রীমঙ্গল ভুরভুরিয়া চা বাগানের কর্মরত শ্রমিক শ্রীমতি রিকিয়াশন বলেন, এ সময় সারাদিনে যেখানে ২৫ থেকে ৩০ কেজি পাতা তোলার কথা এখন পাতা পাচ্ছেন ১০ থেকে ১২ কেজি। এতে তাদের দৈনিক ১৭০ টাকা হাজরির (বেতন) জন্য যে ২৪ কেজি পাতা বাধ্যতামূলক তুলতে হয় তাও পূরণ হচ্ছে না।

চা শ্রমিক বাসন্তি জানান, প্রচণ্ড রোদে সারাদিন কাজ করেও মিলাতে পারছেন না হাজরি।

বিভিন্ন চা বাগান সরজমিন ঘুরে দেখা যায়, বিভিন্ন সেকশনে মাঝে মাঝে একটা দুটা করে গাছ মরে গেছে। নতুন আসা কুঁড়িগুলো কোথাও এক সপ্তাহ ধরে একই জায়গায় স্থির হয়ে আছে। কোথাও কোথাও কুঁড়িগুলো হলুদাভ রং ধরেছে। কোথাও আবার পাতা ঝিমিয়ে পড়েছে। সহসা চায়ের জন্য পরিমিত বৃষ্টি না পেলে দেখা দিতে পারে উৎপাদন ঘাটতি। তবে এ থেকে স্থায়ী সমাধানের জন্য সমন্বিত ব্যবস্থাপনা গ্রহণের পরামর্শও চা বিজ্ঞানীদের। এ অবস্থায় বাংলাদেশ চা গবেষণা কেন্দ্রের চা বিজ্ঞানী ও প্রকল্প উন্নয়ন ইউনিটের উনয়ন কর্মকর্তারা বাগানে বাগানে গিয়ে চা গাছকে রক্ষা করতে দিচ্ছেন নানা পরামর্শ।

তারা বলেন, এই মৌসুমের শুরুর দিকে পরিমিত বৃষ্টিপাত হওয়ায় অনেকে নতুন সেকশন শুরু করেছেন। বিশেষ করে চলমান খরায় এই ইয়াং টিগুলোর অবস্থা খুবই খারাপ। তবে এগুলোকে বাঁচানোর জন্য ৪টি গাছের মধ্যে আড়াই কেজি গোবরের সঙ্গে ৪০-৫০ গ্রাম টিএসপি একত্রে মিশিয়ে মাটি গর্ত করে মিলিয়ে দিতে হবে।

এ ব্যাপারে বাংলাদেশ চা বোর্ডের প্রকল্প উন্নয়ন ইউনিটের পরিচালক ড. রফিকুল হক ভোরের কাগজকে জানান, বৈশ্বিক জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব এটি। আমাদের এখন এরকম অবস্থা মোকাবিলা করার সক্ষমতা অর্জন করতে হবে। এর জন্য চা বাগানে যে সমন্বিত পদ্ধতি রয়েছে তা মেনে চলতে হবে। চলমান অবস্থায় ইয়াং টি-এর গোড়ায় কচুরিপানা ও লতাপাতা দিতে হবে। প্রত্যেক বাগানেই জলাধার তৈরি করতে হবে এবং ইরিগেশন সিস্টেম চালু রাখতে হবে।

তিনি আরো বলেন, এ অবস্থা থেকে উত্তোরণের জন্য বাংলাদেশ বন ও পরিবেশ মন্ত্রণালয় কর্তৃক জলবায়ু পরিবর্তনে করণীয় বিষয়ক একটি প্রকল্প অনুমোদন হয়েছে। যা বাস্তবায়িত হলে ভবিষ্যতে এ জাতীয় সংকট থেকে রক্ষা পাওয়া যাবে।

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App