×

সারাদেশ

৫০ হাজার কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করব

Icon

কাগজ প্রতিবেদক

প্রকাশ: ২০ এপ্রিল ২০২৩, ০৮:৫৮ এএম

৫০ হাজার কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করব

ছবি: সংগৃহীত

২০০৮ সালে রাজশাহী সিটি করপোরেশন (রাসিক) নির্বাচনপূর্ব সমাবেশে কর্মসংস্থান তৈরির ওপর বিশেষ নজর দেয়ার কথা জানিয়েছিলেন আওয়ামী লীগ মনোনীত তৎকালীন মেয়রপ্রার্থী এ এইচ এম খায়রুজ্জামান লিটন। নগরীর ভুবনমোহন পার্কে অনুষ্ঠিত ওই সমাবেশে তিনি ঘোষণা দিয়েছিলেন, নির্বাচিত হলে ৬০ হাজার মানুষের কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করবেন। ঢাকার গার্মেন্টস মালিকদের সঙ্গে কথা বলে, এ ব্যাপারে যা যা করা লাগে করা হবে। এরপর তিনি মেয়র হন। পরবর্তী ২০১৩ সালের নির্বাচনে বিএনপির মোসাদ্দেক হোসেন বুলবুল মেয়র হলেও সবশেষ ২০১৮ সালের নির্বাচনে আবারো মেয়র নির্বাচিত হন লিটন। আগামী ২১ জুন ফের রাসিক নির্বাচন। এবারোও ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগের মনোনয়ন পেয়েছেন তিনি।

এবার পূর্বের প্রতিশ্রæতি রক্ষায় বিশেষ মনযোগ দিচ্ছেন আওয়ামী লীগ মনোনীত এ মেয়রপ্রার্থী। ভোরের কাগজকে তিনি বলেন, নির্বাচনী ইশতেহার তৈরির কাজ শুরু করেছি। ২০১৮ সাল থেকে রাজশাহীতে ব্যাপক উন্নয়ন ও জনকল্যাণমূলক কাজ করেছি। আমাদের প্রয়োজন কর্মসংস্থান। এটিতে জোর দিতে চাই।

খায়রুজ্জামান লিটন বলেন, কর্মসংস্থানের লক্ষ্যে প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশে এরই মধ্যে বিসিক শিল্পনগরী-২ এর কাজ বাস্তবায়িত হয়েছে। সেখানে যেন উদ্যোক্তারা কাজ শুরু করতে পারেন, সে ব্যাপারে সহযোগিতা করা হবে। নারী উদ্যোক্তাদের এসএমই ফাউন্ডেশনের মাধ্যমে বিনাসুদে ঋণ দেয়া হবে।

আওয়ামী লীগের এ প্রেসিডিয়াম সদস্য বলেন, আগামী ৫ বছরে অন্ততপক্ষে ৫০ হাজার তরুণ-তরুণীর জন্য কাজের ব্যবস্থা করে দিতে চাই। সেক্ষেত্রে আইটি সেক্টর, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব হাইটেক পার্ক বড় ভূমিকা পালন করবে। আগামীতে রাজশাহী সুন্দর, পরিচ্ছন্ন, স্বাস্থ্যকর ও বাসযোগ্য শহর তো বটেই, একইসঙ্গে কর্মসংস্থানসহ সব কিছু মিলে শুধু বাংলাদেশের মধ্যে নয়, এশিয়ার মধ্যে অন্যতম মডেল নগরী হবে।

তিনি বলেন, তিলে তিলে তিলোত্তমা নগরীতে পরিণত হয়েছে রাজশাহী। আগামী ৫টি বছর যদি আবারো সুযোগ পাওয়া যায়, তাহলে রাজশাহী শহরে উন্নয়ন করার মতো হয়ত আর জায়গা থাকবে না। সেক্ষেত্রে সিটি এরিয়াকে স¤প্রসারিত করা হবে। সম্প্রসারিত এলাকাগুলোর মানুষের ভাগ্যের পরিবর্তনে কাজ করবে।

দলীয় মনোনয়ন পাওয়ায় লিটনকে শুভেচ্ছা জানানোর পাশাপাশি মাঠে একযোগে কাজ করার ঘোষণা দিয়েছেন আওয়ামী লীগ নেতাকর্মী। মিছিল-মিটিং শুরু হয়েছে নগরীতে। যদিও মহানগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ডাবলু সরকারের নেতৃত্বাধীন বড় একটি অংশ এখনো রয়েছে নীরব। তবে মহানগর আওয়ামী লীগের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি বীর মুক্তিযোদ্ধা মোহাম্মদ আলী কামাল বলেছেন, এএইচএম খায়রুজ্জামান লিটনের নেতৃত্বে আমরা সবাই ঐক্যবদ্ধ। ঈদের পর পুরো নির্বাচনী আমেজে আমরা মাঠে থাকব। আগামী নির্বাচনে আমাদের বিজয় হবে ইনশাআল্লাহ।

খোঁজখবর নিয়ে জানা গেছে, নগরীর উদ্বেগজনক নানা তথ্য। নগরীতে রাস্তাঘাট প্রশস্ত ও উঁচু উঁচু দালান নির্মাণের বিপরীতে দখল ও ভরাট হয়েছে বহু জলাশয়। রাস্তাঘাট বড় হলেও ফুটপাত প্রভাবশালীদের দখলে থাকায় সুফল পাচ্ছেন না অনেকেই। উজাড় হয়েছে সবুজ আচ্ছাদন। ফলে বর্তমানে নগরীতে পরিবেশের চরম বিপর্যয় ঘটছে।

একটি সূত্র জানিয়েছে, গত ৩০ বছরে নগর স¤প্রসারণে ১৭ শতাংশ সবুজ আচ্ছাদন হারিয়েছে রাজশাহী। ২০১৯ সালের জুলাই থেকে ২০২২ সালের নভেম্বর পর্যন্ত কাটা পড়েছে রাজশাহী নগরীর প্রায় ৪ হাজার গাছ। এর মধ্যে ২ হাজার ২৭৮টি বড় গাছ উজাড় হয়েছে সমন্বিত নগর অবকাঠামো উন্নয়ন প্রকল্পে। এ মেগা প্রকল্প বাস্তবায়ন করছে রাজশাহী সিটি করপোরেশন। কোনো ধরনের পরিবেশগত সমীক্ষা ছাড়াই নগর কর্তৃপক্ষ বহু বছরের পুরনো গাছ কেটে সাবাড় করেছে বলে অভিযোগও উঠেছে।

সূত্র জানায়, নগরীর ঐতিহ্যবাহী ভবনগুলো সংরক্ষণ না করে ধ্বংস করে ফেলা হয়েছে। এগুলোর মধ্যে পাবলিক লাইব্রেরি, প্রমথনাথ টাউন হল (অলোকা), পদ্মা রঙমঞ্চ, রাজশাহী পৌরসভা ভবন অন্যতম। নগরীর ওয়ার্ডে ওয়ার্ডে খেলার মাঠেরও বেশ সংকট। ২০১৪ সালে নগরীতে পুকুর ছিল ১ হাজারের বেশি। বর্তমানে জলাশয়ের সংখ্যা মাত্র ১২০! বিষয়টি দুশ্চিন্তার কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে রাজধানীর বঙ্গবাজার ও নিউমার্কেটে অগ্নিকাণ্ডের ঘটনার পর। সম্প্রতি ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্স নগরীর ৪টি মার্কেটকে ঝুকিপূর্ণ ঘোষণা করেছে। অগ্নিনির্বাপনের কোনো ব্যবস্থা নেই এসব মার্কেটে।

নগরীর উদ্ভুত সার্বিক পরিস্থিতিতে সচেতন মহলের অনেকেই অসন্তুষ্ট। খোদ আওয়ামী লীগেরই একটি অংশ ক্ষুব্ধ। তাদের ভাষ্য, রাজশাহী আলোকায়নে সড়কে সড়কে অতিরিক্ত আলোকবাতি বসানোর ফলে বিদ্যুতের ঘাটতি চরমে। তীব্র গরমে কাহিল নগরবাসীর জীবন। এছাড়া কর্মসংস্থানের অভাবের কারণে রিকশা-অটোরিকশা সংখ্যা বেড়েছে। পরিবেশ বিপর্যয়ে মারাত্মক হুমকির মুখে পড়তে যাচ্ছে রাজশাহী। সংকট থেকে উত্তরণে সুপরিকল্পিত অবকাঠামো উন্নয়নমূলক কার্যক্রমে জোর দেয়া দরকার বলে মনে করছেন বিশিষ্টজনরা।

রাজশাহী প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (রুয়েট) নগর ও আঞ্চলিক পরিকল্পনা বিভাগের প্রভাষক মুহাইমিনুল ইসলাম বলেন, নগরীতে অতিরিক্ত তাপমাত্রা- অপরিকল্পিত ও বাণিজ্যিক নগরায়ণের ফল। এ থেকে রক্ষা পেতে গাছপালা, কৃষিজমি ও জলাশয় রক্ষা করে সিটি করপোরেশন এলাকায় টেকসই নগরায়ন ও প্রাকৃতিক সম্পদ ব্যবস্থাপনা নিশ্চিত করতে হবে।

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App