×

সারাদেশ

মুকসুদপুরে ইউপি চেয়ারম্যানের বিরুদ্ধে ডিসির কাছে অভিযোগ

Icon

কাগজ প্রতিবেদক

প্রকাশ: ১৯ এপ্রিল ২০২৩, ০৩:৩৯ পিএম

মুকসুদপুরে ইউপি চেয়ারম্যানের বিরুদ্ধে ডিসির কাছে অভিযোগ

ছবি: কাজী ওহিদ, মুকসুদপুর (গোপালগঞ্জ)

গোপালগঞ্জ জেলার মুকসুদপুর উপজেলার ৮নং মহারাজপুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মো. সালাউদ্দিন মিয়ার বিরুদ্ধে অনিয়ম-দুর্নীতি, অর্থ আত্মসাৎ, স্বেচ্ছাচারিতাসহ বিধিবহির্ভূত নানা কর্মকাণ্ডের অভিযোগ উঠেছে।

ইউনিয়ন পরিষদের সাধারণ সদস্য মো. কবির মোল্লা, জাহিদুল ইসলাম, আবদুল মান্নান খান, মো. মজিবর রহমান, ইমান আলী, সাদেকুর রহমান, রেহানা আক্তার লাকী ও মোসা. হেনা বেগমসহ ৯ জন গোপালগঞ্জ জেলা প্রশাসক ও মুকসুদপুর উপজেলা নির্বাহী অফিসার বরাবর লিখিতভাবে এ অভিযোগ দায়ের করেছেন।

লিখিত অভিযোগে সূত্রে জানা গেছে, ভূমি হস্তান্তরের ১% বরাদ্দের টাকা আত্মসাৎ, টিয়ার, কাবিখা, কাবিটা, এলজিএসপি, টিসিবি, ভিজিডি, কৃষি বীজ-সারের বিষয়গুলো নিয়ে পরিষদে কোন ধরনের আলাপ-আলোচনা ছাড়াই চেয়ারম্যান নিজের খেয়াল-খুশিমত তা বণ্টন ও কাজ করিয়ে টাকা আত্মসাৎ করেন। ২০২২ সালের ১ জানুয়ারি ইউনিয়ন পরিষদের দায়িত্ব নেয়ার পর থেকে অদ্যাবধি কোন বিষয় আলাপ আলোচনা ও মতবিনিময় ছাড়াই চেয়ারম্যান, সচিব, প্যানেল চেয়ারম্যান (১) এর পরিষদ উদ্যোক্তার সমন্বয় একটি সিন্ডিকেট তৈরি করে অন্য সদস্যদের জিম্মি করে পরিষদটি পরিচালনা করে আসছে। বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের চেয়ারম্যান নমিনেশনে নৌকা প্রতিকের প্রার্থীর বিরুদ্ধে সালাউদ্দিন আহম্মেদ মিয়া স্বতন্ত্র নির্বাচন করে বিজয় হয়ে বিভিন্ন সময় দল ও দলের নেতাকর্মী ও দলীয় সভানেত্রী শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে বাজে মন্তব্য অকথ্য ভাষায় গালিগালাজ করেছেন। যা দুঃখজনক ও আপত্তিকর। ওই বাজে মন্তব্যর বিষয়ে পরিষদের কয়েকজন ইউপি সদস্য প্রতিবাদ করায় চেয়ারম্যান কর্তৃক লাঞ্ছিত শিকার হতে হয়েছে বলে সদস্যরা অভিযোগে উল্লেখ্য করেছেন।

অভিযোগে আরো উল্লেখ করা হয়েছে, মহারাজপুর ইউনিয়নের সব হাট-বাজারের ২০২১-২২ ও ২০২২-২৩ অর্থ বছরের ট্রেড লাইসেন্স বাবদ যথাক্রমে প্রায় ৪ লক্ষ ৫০ হাজার টাকা গ্রাম পুলিশের মাধ্যমে উত্তোলন করে আত্মসাৎ করেন চেয়ারম্যান সালাউদ্দিন। বয়স্ক, বিধবা ও প্রতিবন্ধী ভাতার নাম পুনঃস্থাপনে অনলাইনের কথা বলে জন প্রতি ৫০০ থেকে ১০০০ টাকা আদায় করেন চেয়ারম্যান। টিসিবি ও ভিজিডির যত নাম পরিষদে আসে, তার মধ্যে ৩৫০ থেকে ৪০০টি নাম চেয়ারম্যান নিজের জন্য বরাদ্দ রাখেন। নিজস্ব লোক দিয়ে তিনি বাকি মালামালও গোপনে নিজস্ব ব্যবসায়ীদের কাছে বিক্রি করে থাকেন।

জন্ম নিবন্ধনে সরকারি নিয়মানুযায়ী জন প্রতি ৫০ টাকা নেয়ার কথা থাকলেও পরিষদের সেবা ফ্রি নামে ১৫০ থেকে ৩০০ টাকা নেয়া হয়। সরকারি বরাদ্দকৃত গভীর নলকূপ প্রতি সদস্যকে মাত্র একটি করে দিয়ে বাকিগুলো চেয়ারম্যান যোগসাজশ করে ১৫ থেকে ২০ হাজার টাকায় বিক্রি করে দেন। তিনি সরকারি বরাদ্দকৃত স্যানিট্রেশন ল্যাট্রিন প্রকল্পের অসহায় ও দুস্থ পরিবারের কাছ থেকে ৫০০ টাকা করে আদায় করেন। ইউনিয়নের ১নং ওয়ার্ডের ছৈয়ার মোড়ের ভেতর থেকে বিশাল একটি বটগাছের ডাল বিক্রি করে ১০ হাজার টাকা স্থানীয় একটি মসজিদে দিয়ে বাকি টাকা আত্মসাৎ করেন চেয়ারম্যান।

এছাড়া নারায়নপুর কানার বাজারের রাস্তার পুরাতন ইটের সলিং উঠিয়ে তা বিক্রি করেও টাকা নিয়ে যান। ইউনিয়নের ২নং ওয়ার্ডের মাওলানা মিজানের বাড়ি থেকে ছদের মাথা নামক স্থানে একটি দুই লক্ষ টাকার কাবিখা বরাদ্দ করে উক্ত বরাদ্দ থেকে ১ লক্ষের বেশি টাকা আত্মসাৎ করেন চেয়ারম্যান সালাউদ্দিন মিয়া। ওই ওয়ার্ডেও লোহাচুড়া বাজার সংস্কারের নামে একটি গাছ ৫৫ হাজার টাকায় বিক্রি করেন তিনি। ওই টাকাসহ বরাদ্দকৃত ২ লাখ টাকার কাজে প্রায় ১ লাখ টাকাই তিনি আত্মসাৎ করেন। ইউনিয়নের ৩নং ওয়ার্ডের বেলতলা থেকে একটি পাকা রাস্তা নির্মাণের জন্য স্থানীয় এক বাসিন্দার কাছ থেকে নগদ ১০ হাজার টাকা নিয়ে আত্মসাৎ করেন চেয়ারম্যান। ওই ওয়ার্ডে এখন পর্যন্ত কোনো উন্নয়নমূলক প্রজেক্টই দেননি তিনি। ইউনিয়নের ৪নং ওয়ার্ডের বনগ্রাম ব্রীজ সংলগ্ন পূর্ব পাশে ১ লক্ষ ৬০ হাজার টাকার মাটির প্রকল্প বরাদ্দ দেন। সেখানে মাত্র ৩৬ হাজার টাকার মাটি কেটে বাকি টাকা আত্মসাৎ করেন।

ইউনিয়নের ৬ নং ওয়ার্ডের মুকসুদপুর-বরইতলা সড়কের পাকা রাস্তা থেকে দেলোয়ারের বাড়ি পর্যন্ত পুরাতন ইটের সলিং উঠিয়ে পুনরায় নির্মাণ করে উল্লেখিত প্রকল্পের অর্থ আত্মসাৎ করেন চেয়ারম্যান সালাউদ্দিন মিয়া।ইউনিয়নের ৮নং ওয়ার্ডের মজিবর মুন্সীর বাড়ি থেকে নাজু শিকদারের বাড়ি পর্যন্ত ডানিডা প্রকল্পের কাজে ভেকু ব্যবহার করে নামে-বেনামে অগ্রণী ব্যাংক লিমিটেড বনগ্রাম শাখায় অ্যাকাউন্ট করে টাকা উত্তোলন করে প্রায় ৫ থেকে ৬ লাখ টাকা আত্মসাৎ করেন তিনি। ৯নং ওয়ার্ডে ডানিডা প্রজেক্টের ১৬ লাখ টাকার কাজ হলেও ভেকু দিয়ে মাত্র ৬ থেকে ৭ লাখ টাকায় কাজ উঠিয়ে বাকি টাকা চেয়ারম্যানসহ তার সিন্ডিকেট আত্মসাৎ করে। চেয়ারম্যানের গ্রামে কাবিখা, কাবিটা ও ডানিডা প্রজেক্টের মোট ৪টি কাজ চলমান রয়েছে। ঐ ডানিডা প্রজেক্টের অগ্রণী ব্যাংক লিমিটেড বনগ্রাম শাখায় নামে-বেনামে নারীদের নামে ভুয়া অ্যাকাউন্ট করে টাকা উত্তোলন করে তিনি আত্মসাৎ করেন।

মুকসুদপুর-বরইতলা আঞ্চলিক সড়কের মহারাজপুর ইউনিয়নের হাড়ভাঙ্গা নামক স্থান থেকে ১০-১২টি সরকারি শিশু গাছ ও মহারাজপুর ইউনিয়নের মিলিক শ্রীরামপুর ব্রিজ সংলগ্ন স্থান থেকে ২০ থেকে ২৫টি বিভিন্ন প্রকারের গাছ বিক্রি করে টাকা আত্মসাৎ করেন চেয়ারম্যান সালাউদ্দিন মিয়া।

অনিয়ম-দুর্নীতির এসব বিষয়ে অভিযুক্ত মহারাজপুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মো. সালাউদ্দিন মিয়া দৈনিক ভোরের কাগজের প্রতিনিধির সাথে মোবাইল ফোনে আলাপ কালে তার বিরুদ্ধে আনীত অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন, ‘ইউ,পির সদস্যরা আমার বিরুদ্ধে যেসব অভিযোগ দিয়েছেন তা সত্য নয়। আমাকে সামাজিকভাবে হেয়প্রতিপন্ন করার জন্য তারা এ মিথ্যা অভিযোগ দিয়েছেন।

এ বিষয়ে মুকসুদপুর উপজেলা নির্বাহী অফিসার এস.এম ইমাম রাজী টুলু স্থানীয় সাংবাদিককে জানিয়েছেন, মহারাজপুর ইউপি চেয়ারম্যান সালাউদ্দিন মিয়ার বিরুদ্ধে একটি লিখিত অভিযোগ পেয়েছি। তদন্ত সাপেক্ষে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়া হবে।

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App