×

সারাদেশ

ভোরের পাখি

Icon

কাগজ প্রতিবেদক

প্রকাশ: ১৬ এপ্রিল ২০২৩, ০১:৩৮ পিএম

ভোরের পাখি

ছবি: জুটন বনিক, আখাউড়া (ব্রাহ্মণবাড়িয়া)

ভোরের আকাশে তখনও সূর্য উঁকি দেয়নি। না জানি দেরী হয়ে গেছে এ ভেবে ঘর থেকে তড়িঘড়ি সাইকেল বের করে চেপে রেলস্টেশনের দিকে ছুটে চলেন। ৩৩ বছর ধরেই তার এভাবে ছুটে চলা। নিত্যদিনের ক্লান্তিহীন ও বিরামহীন ছুটে চলার কারণেই এলাকার সবাই তাকে ভোরের পাখি বলে ডাকে। আমি যার কথা বলছি তিনি হলেন ব্রাহ্মণবাড়িয়ার বিজয়নগর উপজেলার মেরাশানী গ্রামের পত্রিকা হকার শাহআলম। বড় পরিবারের সদস্য হওয়ার কারণে ছোটবেলা থেকেই তাকে সংসারের হাল ধরতে হয়।

শাহ আলম প্রতিদিন ভোরে সাইকেলে চেপে আখাউড়া রেলস্টেশনে আসেন। তারপর ট্রেনে পত্রিকা আসার অপেক্ষা করতে থাকেন। স্টেশনে ট্রেন আসলে পত্রিকা নামিয়ে প্লাটফরমে বসেই সেই পত্রিকা স্তরে স্তরে সাজান। তারপর বিক্রির জন্য সাইকেল চেপেই আবার ছুটে চলেন শহরের অলিগলি থেকে শুরু করে অফিসপাড়ায়।

কথা হলে পত্রিকা হকার শাহআলম জানায়, আগে পত্রিকা বিক্রি করে মাসে ১৮ থেকে ২০ হাজার টাকা আয় হতো। তা দিয়ে খুব সুন্দর ভাবে চলেতো সংসার। সেই আয় এখন নেমে এসেছে ১০ থেকে ১২ হাজারে। ছেলেমেয়ের লেখাপড়ার খরচ তার উপর আয় কমে যাওয়ায় জীবিকা নির্বাহ করতে গিয়ে এখন হিমশিম খেতে হয়। তবে প্রতিমাসেই স্থানীয় কয়েকজন সংবাদকর্মী আর্থিকভাবে সহযোগিতা করায় কোনরকমে দিন কেটে যাচ্ছে।

শাহআলম আরো জানায়- আগে উৎসব পার্বনে অফিসগুলো থেকে উপহার সামগ্রিসহ আর্থিক সহযোগিতা পেতাম এখন তা দেয় না বললেই চলে।

উপজেলার আজমপুরের শোয়েব আকতার নামের এক ব্যবসায়ী বলেন, মানুষের বাসাবাড়ি, সরকারি-বেসরকারি অফিসসহ ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে খবরের কাগজ পৌঁছে দেন পত্রিকা হকার শাহআলম। বছরের নিদিষ্ট কয়েকটা দিন ছাড়া ছুটি নেই তার। রোদ, বৃষ্টিসহ সব পরিবেশেই সে পরিশ্রম করে এ কাজটি সে করে। ইন্টারনেট দুনিয়ার প্রভাব পড়েছে তার কর্মব্যস্ত জীবনেও। বর্তমানে পত্রিকা বিক্রি কমে যাওয়ায় শাহআলমও ভালো নেই।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক গণমাধ্যমকর্মী বলেন, সবখানেই এখন পত্রিকা কম বিক্রি হয়। মোবাইল ইন্টারনেটের মাধ্যমে বেশির ভাগ পাঠক এখন পত্রিকা পড়ে থাকে। এখন শহর অঞ্চলে অল্প কিছু পত্রিকা বিক্রি হয়। এখানকার অনেকেই পত্রিকা বিক্রি ছেড়ে দিয়ে অন্য পেশায় চলে গেছে। শাহআলমের মতো দুই একজন যারা এখনও পত্রিকা বিক্রি করছেন তারা নিদারুণ অর্থে কষ্টে ভোগছে।

আখাউড়া রিপোর্টার্স ইউনিটির সভাপতি ও ৭১’ বুক স্টলের মালিক আব্দুল মমিন বাবুল জানান, আগে গড়ে প্রতিদিন ১২০০ পত্রিকা বিক্রি হতো। এখন তা ৫০০ থেকে সাড়ে ৪০০ তে নেমে এসেছে। তাছাড়া আগে এ অঞ্চলে পত্রিকা বিক্রি করতেন সাতজন হকার। এখন বিক্রি করেন মাত্র দুইজন হকার। সময়ের সাথে তাল মেলাতে না পারার কারণেই তারা অন্য পেশায় চলে গেছে।

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App