×

সারাদেশ

ক্রেতাদের উপচে পড়া ভিড় তবু আক্ষেপ ব্যবসায়ীদের

Icon

কাগজ প্রতিবেদক

প্রকাশ: ১৪ এপ্রিল ২০২৩, ১০:৫৪ এএম

ক্রেতাদের উপচে পড়া ভিড় তবু আক্ষেপ ব্যবসায়ীদের

ঈদুল ফিতরকে সামনে রেখে রাজশাহীর মার্কেটগুলোয় জমে উঠেছে বেচাকেনা। ক্রেতাদের ভিড়ে পা ফেলার ঠাঁই নেই সড়কে। কেনাকাটা চলছে সকাল থেকে গভীর রাত পর্যন্ত। তবুও যেন সন্তুষ্ট নন ব্যবসায়ীরা। তাদের দাবি, ক্রেতারা মার্কেটে এসে শুধু পণ্য দেখে চলে যাচ্ছেন। তবে ক্রেতাদের ভাষ্য, অতিরিক্ত দামের কারণে বাধ্য হয়ে তাদের ফিরে যেতে হচ্ছে।

সরেজমিন দেখা গেছে, নগরীর বড় মার্কেটগুলোর সামনে সাজানো হয়েছে রংবেরঙের তোরণ। রঙিন আলোয় সৌন্দর্যবর্ধন করা হয়েছে নগরীর। নিরাপত্তা নিশ্চিতে মার্কেটগুলোর মূল ফটকের সামনে আনসার সদস্য ও মার্কেট কমিটির অফিস স্টাফের পাশাপাশি অবস্থান করছে পুলিশ। কেনাকাটা করতে প্রতিদিন গ্রাম থেকে শহরে ছুটে আসছে হাজার হাজার মানুষ। নগরীর আরডিএ মার্কেট, নিউমার্কেট, কোর্ট বাজার, উপশহর মার্কেটে ক্রেতাদের উপচে পড়া ভিড়। তাদের শতকরা প্রায় ৮০ ভাগই নারী। ভিড়ের মধ্যেই কেনাকাটা করছে তারা। শিশু সন্তানদের সঙ্গে এনে কিনছেন পছন্দের জিনিস। কাপড় ও কসমেটিকসের দোকানে ক্রেতা সমাগম বেশি। দোকানগুলোয় পাঞ্জাবি, গেঞ্জি, লুঙ্গি, শার্ট-প্যান্ট, সালোয়ার-কামিজ, ওড়না ও শাড়ির বাহারি ডিজাইন সবার নজর কাড়ছে। নিম্ন আয়ের মানুষ ভিড় জমাচ্ছেন ফুটপাতে। নিজেদের সামর্থ্য অনুযায়ী ফুটপাত থেকেই কেনাকাটা করছেন তারা।

ক্রেতারা বলছেন, করোনা মহামারি ও রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ- এই অজুহাতে সবকিছুর দাম বাড়িয়ে চলেছেন ব্যবসায়ীরা। সাধ্যের বাইরে হওয়ায় দাম-দর করেও খালি হাতে ফিরে যেতে হচ্ছে অনেককে। জেলার মোহনপুর থেকে আরডিএ মার্কেটে এসেছেন সেলিম রেজা।

তিনি ভোরের কাগজকে বলেন, মা-বাবার জন্য পোশাক কিনতে এসেছি। কিন্তু অতিরিক্ত দামের কারণে কিনতে পারছি না। ভালোভাবে ঈদ পার করা নিয়ে বেশ শঙ্কিত। মাহাবুল ইসলাম নামে আরেক ক্রেতা বলেন, বেশকিছু পণ্য কেনা দরকার। কিন্তু দাম চড়া হওয়ায় শুধু একটি পাঞ্জাবি কিনেছি। এটা দিয়েই এ বছর ঈদ উদযাপন করব।

ছোট শিশুকে নিয়ে শপিংয়ে আসা মাহফুজুর রহমান ভোরের কাগজকে বলেন, নিত্যপ্রয়োজনীয় সব জিনিসের দামই চড়া। ছেলের জন্য একটি পাঞ্জাবি ও একটি প্যান্ট কিনেছি। আমি পুরনো পোশাকেই ঈদ করব।

এদিকে ব্যবসায়ীদের দাবি, করোনাকালে লকডাউনের ফলে তারা বেশ ক্ষতির সম্মুখীন হয়েছেন। এ বছর ক্রেতাদের সরব উপস্থিতিতে লাভবান হওয়ার সম্ভাবনা তৈরি হলেও আশানুরূপ বিক্রি নেই। অনেক দোকানে অতিরিক্ত কর্মচারী নিয়োগ দেয়া হয়েছে। তবু লাভের সম্ভাবনা কম। রমজানের শেষ সপ্তাহে পুরোদমে বেচাবিক্রি হবে বলে তারা আশা করছেন।

আরডিএ মার্কেটের খান বাজার দোকানের মালিক মো. ওয়াসিম ভোরের কাগজকে বলেন, যে রকম বিক্রি হওয়ার কথা ছিল, সে রকম হচ্ছে না। শবেবরাত থেকে রমজানের আগ পর্যন্ত কিছুটা বিক্রি হয়েছে। তবে রোজার শুরু থেকে ব্যবসা ডাউন। ওয়ান পয়েন্ট ফ্যাশনের বিক্রেতা নয়ন বলেন, ঈদকে ঘিরে সব রকমের কালেকশন আনা হয়েছে। কিন্তু এখনো মার্কেটে বেচাকেনা তুলনামূলক কম।

রাজশাহী ব্যবসায়ী সমন্বয় পরিষদের সাধারণ সম্পাদক সেকেন্দার আলী ভোরের কাগজকে বলেন, গত কয়েক বছর করোনার প্রভাবে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ছুটি হওয়ায় ঈদে ভালো ব্যবসা জমেনি। কিন্তু এবার ভালো ব্যবসার সম্ভাবনা রয়েছে। এখনো সেভাবে বেচাকেনা না হলেও কয়েক দিনের মধ্যেই পুরোদমে বেচাবিক্রি শুরু হবে।

রাজশাহী ব্যবসায়ী ঐক্য পরিষদের সাধারণ সম্পাদক ফরিদ মামুদ হাসান ভোরের কাগজকে বলেন, ক্রেতাদের ভিড় হচ্ছে, এটা সত্য। কিন্তু একজনের পণ্য কিনতে সঙ্গে আসছেন ৪-৫ জন। তাদের মধ্যে অনেকে পোশাক দেখে না কিনেই ফিরে যচ্ছেন। সে জন্য বেচাকেনার অবস্থা ভালো বলা যাচ্ছে না। জানতে চাইলে জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তর রাজশাহী বিভাগীয় কার্যালয়ের উপপরিচালক মোহাম্মদ সেলিম ভোরের কাগজকে বলেন, আমরা বাজার তদারকি করছি। ঈদকে সামনে রেখে অতিরিক্ত দামে পণ্য বিক্রির সুযোগ নেই।

রাজশাহী জেলা প্রশাসক শামীম আহমেদ ভোরের কাগজকে বলেন, দাম নিয়ন্ত্রণে রাখতে সব দিকে নজর রাখা হচ্ছে। কোনো অভিযোগ পেলে তা খতিয়ে দেখে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়া হবে।

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App