×

সারাদেশ

লাল মাটিতে মসলা চাষের অপার সম্ভাবনা

Icon

কাগজ প্রতিবেদক

প্রকাশ: ১০ এপ্রিল ২০২৩, ১১:১৩ এএম

লাল মাটিতে মসলা চাষের অপার সম্ভাবনা

ছবি: সংগৃহীত

ময়মনসিংহের ফুলবাড়ীয়া উপজেলার পাহাড়ি অঞ্চলের লাল মাটিতে মসলা চাষের অপার সম্ভাবনা রয়েছে। এ উপজেলাকে উন্নত মসলা চাষের প্রকল্পের আওতায় আনা গেলে এ অঞ্চলে উৎপাদিত মসলা আমদানি নির্ভরতা কমাতে বিশেষ ভূমিকা রাখতে পারবে- এমনটাই মনে করছে উপজেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর।

দেশের মাটিতে সম্ভাবনা থাকার পরও আশানুরূপ মসলার চাষ না হওয়ায় চাহিদার প্রায় ৮০ ভাগ মসলাই বিদেশ থেকে আমদানি করা হয়। খাবারের স্বাদ বৃদ্ধি, খাবারকে মুখরোচক করে তুলতে মসলার জুড়ি নেই। মসলা ছাড়া কোনো রান্নাই স্বাদ হয় না। দেশে পরিমানের তুলনায় সামান্যই মসলা উৎপাদন হয়। যে কারণে বিপুল পরিমাণের মসলা প্রতি বছর আমদানি করতে হয়। এক কথায় বলা যায় মসলা হলো আমদানি নির্ভর ফসল।

মসলা চাষাবাদের প্রযুক্তি না থাকায় এ খাতে চাষিদের তেমন আগ্রহ ছিল না। তবে এবার মসলার আমদানি কমাতে এবং দেশে মসলা উৎপাদন বাড়াতে মসলা গবেষণার ওপর জোর দিয়েছে সরকার ।

দেশে মসলার চাষাবাদ বাড়ানোর জন্য ইতোমধ্যেই সরকার থেকে নানামুখী প্রকল্প নেয়া হয়েছে। দেশের নানা প্রান্তে মসলা চাষের অপার সম্ভাবনা থাকলেও নানা কারণে তার প্রসার হয়নি। এবার সরকারের সহযোগিতায় আরো উন্মুক্ত হচ্ছে মসলার উৎপাদন বৃদ্ধির সম্ভাবনার দুয়ার। সংশ্লিষ্টরা মনে করছেন উৎপাদন বাড়ানো হলে অভ্যন্তরীণ চাহিদা মেটানোর পাশাপাশি আমদানিও কমে যাবে এবং অর্থও সাশ্রয় হবে।

জানা গেছে, ময়মনসিংহের ফুলবাড়ীয়া উপজেলার কালাদহ, রাঙ্গামাটিয়া, নাওগাঁও বাক্তা, এনায়েতপুর ইউনিয়নের লাল মাটি এবং কুশমাইল, পুটিজানা ইউনিয়নে কিছু অংশে মসলা চাষের অপার সম্ভাবনা রয়েছে।

উপজেলা কৃষি অফিস সূত্রে জানা গেছে ইতোমধ্যে ফুলবাড়ীয়া উপজেলায় ১৭৮৩ হেক্টর জমিতে মসলা জাতীয় ফসল আবাদ করা হচ্ছে। এ অঞ্চলে উৎপাদিত মসলার মধ্যে রয়েছে পেয়াজ, রসুন, আদা, ধনিয়া, তেজপাতা, কালোজিরা, মরিচ ইত্যাদি। এছাড়া উৎপাদন উপযোগী ৪ হাজার হেক্টর জমি রয়েছে যেখানে গোল মরিচ, দারুচিনি, এলাচ, রাধূনিসহ বিভিন্ন মসলা আবাদ করা সম্ভব।

এ বছর উপজেলায় ৯ হাজার ২২২ টন মসলা জাতীয় ফসল উৎপাদন হয়েছে। যার মধ্যে ৪ হাজার ৫০০ টন হলুদ, ১ হাজার ৯০০ টন আদা, ৭৭৩ টন মরিচ (শুকনো), ১ হাজার ২০০ টন রসুন আবাদ হয়েছে ।

কৃষি সম্প্রসারণ সূত্রে জানা গেছে- বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউট (বিএআর আই) এর অধীনে ৩টি আঞ্চলিক কেন্দ্র, ৫টি উপ-কেন্দ্রের মাধ্যমে বগুড়া মসলা গবেষণা কেন্দ্রের অধীনে ৬৪ জেলার ১৯৪টি উপজেলায় মসলা চাষের প্রকল্প হাতে নেয়া হয়েছে। বিশ্বে মোট ১০৯ প্রকার মসলা আবাদ হয়। বাংলাদেশের মানুষ রান্নায় ব্যবহার হয় ৪৪ প্রকার মসলা ব্যবহার করা হয়। এর মধ্যে ৩৪ প্রকার মসলা দেশেই আবাদ হয়ে থাকে। তবে তা প্রয়োজনের তুলনায় ৬০ ভাগ। বাকী ৪০ ভাগ মসলা বিদেশ থেকে আমদানি করা হয়।

ফুলবাড়ীয়া উপজেলার পাহাড়ি অঞ্চলের কৃষকরা মসলা চাষ প্রকল্পের আওতায় সরকারি প্রযুক্তি সহযোগিতা পেলে মসলা চাষে আগ্রহী হবে এবং তা আমদানি নির্ভরতা কমাতে কিছুটা হলেও ভূমিকা রাখতে পারবে।

এ ব্যাপারে নাওগাও ইউনিয়নের পলাশীহাটা গ্রামের হলুদ চাষি মঞ্জুরুল হক মঞ্জু ভোরের কাগজকে বলেন, আমি অনেক বছর ধরে হলুদ চাষ করছি। এক বছর ভাল দাম পাইছিলাম। হলুদ চাষের বদলে যদি মসলা জাতীয় ফসল আবাদ করতে পারি তাহলে বেশি লাভবান হতে পারতাম। আমাদেরে এলাকার মাটি মসলা চাষের জন্য উপযোগী ।

রাঙ্গামাটিয়া কুয়ারবাইদ এলাকার আনারস চাষি আনোয়ার হোসেন বলেন- আনারস চাষ করে এখন আর পোষায় না। সার, কীটনাশকের দাম বেশি তাই মসলা জাতীয় ফসল আবাদ করতে পারলে কিছুটা লাভের মুখ দেখতে পারত।

এ ব্যাপারে উপজেলা কৃষি অফিসার রাকিব আল রানা ভোরের কাগজকে বলেন, ফুলবাড়ীয়ার মাটি মসলা চাষের উপযোগী, তাই উন্নত মসলা চাষের প্রকল্পের আওতায় কৃষকদের মসলা চাষের আগ্রহ করে তুলতে পারলে কৃষকরা লাভবান হবে। পাশাপশি মসলা আমদানি নির্ভরতাও কমাতে ভূমিকা রাখবে বলে আশা করি।

মসলা চাষ প্রকল্পের ফোকাল পারসন ও কৃষি স¤প্রসারণ অধিদপ্তরের কমকর্তা রাসেল আহমেদ বলেন, মন্ত্রণালয়ের অনুমোদন পেলে ফুলবাড়ীয়া উপজেলাকে উন্নত মসলা চাষ প্রকল্পের আওতায় আনার চিন্তা ভাবনা করা হবে। আমি জেনেছি ফুলবাড়ীয়া উপজেলার মাটি মসলা চাষের উপযোগী।

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App