×

সারাদেশ

নবীনগরে চুক্তির মাধ্যমে দাখিল পরীক্ষা কেন্দ্র বাতিল!

Icon

কাগজ প্রতিবেদক

প্রকাশ: ২৯ মার্চ ২০২৩, ০১:২১ পিএম

নবীনগরে চুক্তির মাধ্যমে দাখিল পরীক্ষা কেন্দ্র বাতিল!

ছবি: সাইফুল ইসলাম রবিন, নবীনগর (ব্রাহ্মণবাড়িয়া)

ব্রাহ্মণবাড়িয়ার নবীনগর উপজেলা সদরে অবস্থিত নারায়ণপুর ডিএস কামিল মাদ্রাসার দাখিল পরীক্ষা কেন্দ্র পরিবর্তন করে উপজেলা সদর থেকে প্রায় ১০ কিলোমিটার দূরে অবস্থিত ইব্রাহিমপুর মাদ্রাসায় নেয়ার প্রতিবাদে বিক্ষুব্ধ হয়ে উঠছে শিক্ষার্থী, অভিভাবক ও এলাকাবাসী।

জনস্বার্থে কেন্দ্রটি বহাল রাখার জন্য বাংলাদেশ মাদ্রাসা শিক্ষা বোর্ডে লিখিত আবেদন করেছেন স্থানীয় এমপি মোহাম্মদ এবাদুল করিম বুলবুল। আর্থিক লেন-দেন ও গোপন চুক্তির মাধ্যমে কেন্দ্রটি বাতিল করা হয়েছে, এমন অভিযোগ এলাকাবাসীর।

জানা যায়, ১৯৯৫ সাল থেকে নবীনগর-১ কেন্দ্র নারায়ণপুর ডিএস কামিল মাদ্রাসায় দাখিল পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হয়ে আসছে। আগামী ৩০ এপ্রিল অনুষ্ঠিত হতে যাওয়া দাখিল পরীক্ষায় এই মাদ্রাসা থেকে ৯২ জনসহ নবীনগর উপজেলার দৌলতপুর কাসেমূল উলুম আলিম মাদ্রাসা, বার আউলিয়া ইসলামী মাদ্রাসা, গোপালপুর দাখিল মাদ্রাসা, সলিমগঞ্জ আব্দুল ওয়াহাব দাখিল মাদ্রাসা, রছুল্লাবাদ দাখিল মাদ্রাসা, শিবপুর ইউনিয়ন ইসলামীয়া দাখিল মাদ্রাসা, বাইশমৌজা দাখিল মাদ্রাসা,চরগোসাইপুর ইসলামীয়া দাখিল মাদ্রাসার মোট ৩৯৪ জন পরীক্ষার্থী এই কেন্দ্রে পরীক্ষা দেয়ার কথা রয়েছে। দূর দূরান্ত থেকে আসা পরিক্ষার্থীরা থাকার জন্য বাসা ভাড়াও অনেকে করে রেখেছেন, এরই মধ্যে গত ৬ মার্চ খবর আসে, নারায়ণপুর ডিএস কামিল মাদ্রাসার দাখিল পরীক্ষা কেন্দ্র পরিবর্তন করে উপজেলা সদর থেকে প্রায় ১০ কিলোমিটার দূরে অবস্থিত ইব্রাহিমপুর মাদ্রাসায় নেয়া হয়েছে, এই সংবাদ পেয়ে হতাশ হয়ে যায় শিক্ষার্থী, অভিভাবক, এলাকাবাসী ও স্থানীয় জনপ্রতিনিধিরা।

এর আগে ১৯৫৬ সালে নারায়ণপুর মাদ্রাসাটি প্রতিষ্ঠিত হয়েছে এবং নবীনগর উপজেলার একমাত্র কামিল মাদ্রাসা এটি। বর্তমানে এই মাদ্রাসার শিক্ষার্থীর সংখ্যা প্রায় ২ হাজার চারশত জন। কেন্দ্রটি বহাল রাখতে বাংলাদেশ মাদ্রাসা শিক্ষা বোর্ডের চেয়ারম্যান বরাবরে ১৫ মার্চ লিখিত আবেদন জানিয়ে স্থানীয় এমপি মোহাম্মদ এবাদুল করিম বুলবুল বলেন, নবীনগর ০১ দাখিল পরীক্ষা কেন্দ্রটি (নারায়ণপুর ডিএস কামিল মাদ্রাসা) বাতিল করে নবীনগর-২ (ইব্রাহিমপুর) কেন্দ্রে একত্রিভুত করা হয়েছে, যা অনাকাংখিত ও জনস্বার্থ পরিপন্থী। যদি এ আদেশ কার্যকর করা হয় তবে ১৫ থেকে ১৬ কিলোমিটার দূর হতে এসে পরীক্ষার্থীরা পরীক্ষায় অংশ গ্রহণ করতে হবে। ফলে গরীব পরীক্ষার্থীরা আর্থিক ও মানসিকভাবে ক্ষতিগ্রস্থ হবে। যা কারোরই কাম্য নহে। এমতাবস্থায় জন-স্বার্থে উক্ত আদেশটি বাতিল করে, নবীনগর-১ নারায়ণপুর ডিএস কামিল মাদ্রাসার দাখিল পরীক্ষা কেন্দ্রটি বহাল রাখার জন্য জোর সুপারিশ ও অনুরোধ করছি।

কেন্দ্রটি বহাল রাখার জন্য বাংলাদেশ মাদ্রাসা শিক্ষা বোর্ডের চেয়ারম্যান,সিনিয়র সচিব,পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক বরাবরে লিখিত আবেদন জানিয়েছেন নারায়ণপুর ডিএস কামিল মাদ্রাসা কর্তৃপক্ষ।

এলাকাবাসী ও অভিভাবকরা জানান, সলিমগঞ্জ, বাইশমৌজা, বার আউলিয়া, দৌলতপুর, চরগোসাইপুর ও শিবপুর মাদ্রাসা থেকে ইব্রাহিমপুরের দূরত্ব হবে কমপক্ষে ৩০ কিলোমিটার, এত দূরে গিয়ে আমাদের ছেলে মেয়েদের পরীক্ষা দেয়া কষ্টকর হবে, আমরা হবো আর্থিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত। উপজেলা সদর থেকে পরীক্ষা কেন্দ্রটি একটি অজপাড়া গ্রামে নিয়ে যাওয়ার ঘটনায় আমরা হতাশ, কেন্দ্রটি বাতিল করার বিষয়ে কেউ কোন কিছুই জানতে পারলো না? আমরা মনে করি গোপন চুক্তির মাধ্যমে কেন্দ্রটি বাতিল করা হয়েছে, এর পেছনে আর্থিক লেনদেন হয়ে থাকতে পারে। কেন্দ্রটি বহাল রাখার দাবি জানাচ্ছি, নতুবা শিক্ষার্থীদের স্বার্থ রক্ষায় আন্দোলনে যেতে বাধ্য হবো।

শিক্ষার্থীরা জানান, আমরা অনেক দূর থেকে এবং অনেকের নৌ-পথেও আসতে হয়, বাড়ি থেকে এসে পরীক্ষা দেয়া সম্ভব হবে না, সে কারণে নারায়ণপুর মাদ্রাসার আশপাশে বাসা ভাড়া করে রেখেছি আগ থেকেই। ইব্রাহিমপুর একটি মফস্বল গ্রাম, আশপাশে ভাড়া নেয়ার মতো কোনো বাসাবাড়ি নেই, এই পরিস্থিতিতে স্বাচ্ছন্দে পরীক্ষা দিতে পারবো না। আমরা স্বাচ্ছন্দে নিরাপদে পরীক্ষা দিতে চাই, সে কারণে নারায়ণপুর ডিএস কামিল মাদ্রাসার দাখিল পরীক্ষা কেন্দ্রটি বহাল রাখার জন্য দাবি করছি। দাবি মানা না হলে ঈদের পর মাদ্রাসা খোলার সাথে সাথে ক্লাস বর্জনসহ কঠোর আন্দোলনে যাবো।

এ বিষয়ে নবীনগর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা একরামুল ছিদ্দিক বলেন, নবীনগর-১ নারায়ণপুর ডিএস কামিল মাদ্রাসার দাখিল পরিক্ষার কেন্দ্রটি বহাল রাখার জন্য জন্য এমপি মহোদয় ডিও লেটার দিয়েছেন, আমরাও কাজ করছি, সদরে কেন্দ্রটি থাকলে সবার জন্য সুবিধা হবে।

নারায়ণপুর ডিএস কামিল মাদ্রাসার অধ্যক্ষ মুফতি রফিকুল ইসলাম বলেন, আমাদের কেন্দ্রে দাখিল পরীক্ষার সকল প্রস্তুতি নেয়া আছে, কেন্দ্র বাতিলের বিষয়ে উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তা রহস্যজনক কারণে আমাদেরকে আগ থেকে অবগত করেন নাই। কেন্দ্র পরিবর্তন হলে দুর-দুরান্ত থেকে আসা শিক্ষার্থীরা আর্থিক ও মানসিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হবে।

উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা মোকাররম হোসেন আর্থিক লেন-দেনের কথা অস্বীকার করে বলেন, কেন্দ্র বাতিলের বিষয়ে প্রতিষ্ঠানের প্রধানের সাথে আলোচনা করতে হবে এমন কথা চিঠিতে উল্লেখ ছিলো না।

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App