×

সারাদেশ

ভুল চিকিৎসায় ভোগান্তি, অনিশ্চিত শিক্ষা জীবন

Icon

কাগজ প্রতিবেদক

প্রকাশ: ২৮ মার্চ ২০২৩, ০৩:২৩ পিএম

ভুল চিকিৎসায় ভোগান্তি, অনিশ্চিত শিক্ষা জীবন

ছবি: কুলাউড়া (মৌলভীবাজার) প্রতিনিধি

মৌলভীবাজারের কুলাউড়ায় ভুল চিকিৎসার কারণে প্রায় ৬ মাস যাবৎ যন্ত্রণায় কাতরাচ্ছেন এসএসসি উত্তীর্ণ এক শিক্ষার্থী। বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকরা বলছেন, ভুল চিকিৎসার কারণেই তার এই ভোগান্তি। ক্ষত স্থানে এখন দ্রুত সার্জারি করতে হবে। এদিকে ভোগান্তির কারণে কলেজে পড়ার স্বপ্ন পূরণ হচ্ছে না ওই শিক্ষার্থীর। ফলে তার লেখাপড়া অনেকটাই অনিশ্চিত বলে জানিয়েছেন পরিবারের সদস্যরা।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, কমলগঞ্জ উপজেলার আদমপুর ইউনিয়নের তেতইগাঁও গ্রামের মাসুক মিয়ার ছেলে এসএসসি উত্তীর্ণ জাহিদুর রহমানের (১৮) ডান হাতের কনুইয়ে টিউমার সদৃশ্য সমস্যা দেখা দিলে ২০২২ সালের ৮ অক্টোবর কুলাউড়ায় ডাক্তার এম এ ইসলামের শরণাপন্ন হন। এম এ ইসলাম একজন আয়ুর্বেদিক চিকিৎসক। কিন্তু তিনি নিজেকে সিনিয়র মেডিকেল সার্জারি বিশেষজ্ঞ হিসেবে পরিচয় দেন। পাশাপাশি কম খরচে হাতে অপারেশন করে দিবেন, যা অন্য কোন এমবিবিএস ডাক্তার পারবে না বলেও তাদেরকে জানান।

জাহিদের পরিবারের সদস্যদের অভিযোগ, নির্ধারিত তারিখে একটি ব্লেড দিয়ে তার ডান হাতের কনুইয়ে অপারেশন করেন। ওইদিন রাতেই জাহিদ তার হাতের প্রচণ্ড ব্যাথায় অজ্ঞান হয়ে পড়ে।

জানা গেছে, এম এ ইসলাম এই রোগের কোন চিকিৎসক নন কিংবা অপারেশন করার কোন ডিগ্রিও তার নেই। এর আগেও তিনি এই রকম ভুল চিকিৎসার কারণে একটি মামলার শিকার হয়ে জেল পর্যন্ত কেটেছেন। আইন ও মেডিকেল বহির্ভূত তার এই চিকিৎসা বলে জানান বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকরা। তবে এখনও তিনি বহাল তবিয়তে কুলাউড়ায় বিভিন্ন চেম্বারে বসে এ রকম চিকিৎসা চালিয়ে যাচ্ছেন বলে অভিযোগ রয়েছে।

এদিকে, জাহিদের পরিবার সূত্রে জানা যায়, তার কলেজে ভর্তি হওয়ার স্বপ্ন ভেঙ্গে পড়েছে। উন্নত চিকিৎসার জন্য জাহিদকে নিয়ে সর্বশেষ গত ২২ মার্চ সিলেট নর্থইস্ট মেডিকেলের চিকিৎসক ডা. মো. জসিম উদ্দীনের কাছে যান।

ওই চিকিৎসকের বরাত দিয়ে জাহিদের মা রত্না বেগম জানান, জাহিদের ডান হাতের ক্ষত স্থানে পুঁজ দেয়ায় এখন হাত অপারেশনের বিকল্প নেই। প্রথম অবস্থায় ক্ষত স্থানের মাংসের টুকরো কেটে ঢাকায় বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের কাছে পাঠাতে হবে। কিন্তু এ চিকিৎসায় যে টাকার প্রয়োজন তা জোগাড় করা তার পক্ষে সম্ভব হচ্ছে না।

জাহিদের মা রত্না বেগম আরো জানান, পুরো বিষয়ে আইনি সহায়তার জন্য মৌলভীবাজার জজ কোর্টের আইনজীবী আব্দুল্লাহ আলমগীরের শরণাপন্ন হলে তিনি গত ৬ ফেব্রুয়ারি ডাক্তার এম এ ইসলামকে একটি লিগ্যাল নোটিশ প্রদান করেন। এরপর আইনি পদক্ষেপের বিষয়ে জানতে ওই আইনজীবীর সাথে বারবার যোগাযোগ করি। কয়েকদিন মৌলভীবাজার কোর্টে গিয়ে তার সাথে দেখা করি। কিন্তু তিনি আমাদেরকে কোন পাত্তাই দেননি। পাল্টা আমাদেরকে হয়রানি করছেন। যা ভয়েজ রেকর্ড আমাদের কাছে রয়েছে।

আনীত অভিযোগ সম্পর্কে জানতে চাইলে ডা. এম এ ইসলাম বলেন, আমার চিকিৎসা ভুল নয়। চিকিৎসার নিয়ম না মানায় হয় তো এমন সমস্যা হয়েছে। তাছাড়া বিজ্ঞ আইনজীবীর লিগ্যাল নোটিশ পাওয়ার পরপরই বিষয়টি নিস্পত্তির লক্ষ্যে আমি স্বশরীরে উপস্থিত হয়ে আইনজীবীর কথা মতো তার হাতে নগদ ৩৬ হাজার টাকা দিয়েছি। যার ভিডিও ফুটেজ আমার কাছে রয়েছে।

মৌলভীবাজার জজ কোর্টের আইনজীবী আব্দুল্লাহ আলমগীরের সাথে মুঠোফোনে যোগাযোগ করলে তিনি জানান, ডা. এম এ ইসলামের দেয়া ৩৬ হাজার টাকা আমার কাছে রয়েছে। জাহিদের পরিবারের লোকজন আমার সাথে যোগাযোগ করলে বিষয়টা দেখব।

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App