×

সারাদেশ

সুনামগঞ্জের হাওড়ের মাছ রপ্তানি হচ্ছে ৫০টি দেশে

Icon

কাগজ প্রতিবেদক

প্রকাশ: ২৬ মার্চ ২০২৩, ১১:২৩ এএম

সুনামগঞ্জের হাওড়ের মাছ রপ্তানি হচ্ছে ৫০টি দেশে

ছবি: ভোরের কাগজ

মাছ, পাথর আর ধান সুনামগঞ্জের প্রাণ। হাওড়ের রাজধানী কিংবা মাছের রাজধানী যে নামেই বলা হোক দেশের মিঠা পানির সর্ববৃহৎ জলাধার সুনামগঞ্জ। দেশের সব অঞ্চলে মাছ কমবেশি থাকলেও হাওড়ের মৎস্য সম্পদের জন্য এখনো বিখ্যাত সুনামগঞ্জ। আদিকাল থেকেই এ জেলার মাছের সুনাম ছড়িয়ে আছে দেশজুড়ে। তবে মাছের এ সুখ্যাতি এখন দেশের গণ্ডি পার করে ছড়িয়েছে বিশ্বের বিভিন্ন দেশেও। সুনামগঞ্জের হাওড়ের মাছ দেশের চাহিদা মিটিয়ে রপ্তানি হচ্ছে ৫০টিরও বেশি দেশে।

জানা গেছে- দেশের ২৬০ প্রজাতির মাছের মধ্যে শুধু সুনামগঞ্জের হাওড়-নদীতেই প্রায় ২০০ প্রজাতির অধিক মাছ পাওয়া যায়। হাওড় অধ্যুষিত এ জেলায় কলকারখানা না থাকায় বৃষ্টির পানিতে প্রাকৃতিক জলজ খাবার খেয়েই এসব মাছ বেড়ে ওঠে। আর পানি দূষণমুক্ত হওয়ায় এ মাছ খেতেও অনেক সুস্বাদু। তাই ঢাকাসহ সারাদেশেই সুনামগঞ্জের হাওড়ের মাছের প্রচুর চাহিদা রয়েছে। দেশের আমিষের চাহিদা পূরণ করে বিশ্বের ৫০-৬০ দেশে রপ্তানি হচ্ছে সুনামগঞ্জের হাওড় ও নদীর মাছ।

সুনামগঞ্জ সদর উপজেলার বড়দৈই বিল। প্রায় ২৫০ জেলে এ বিলে মাছ ধরা ও বাছাইয়ের কাজে ব্যস্ত সময় পার করছেন। জেলেরা সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত জাল দিয়ে মাছ ধরেন। পরে নৌকায় সেই মাছ বিলের খলায় (বিলে মাছ রাখার জায়গা) নিয়ে আসেন। জেলেরা প্রায় ২০০ প্রজাতির ভিন্ন ভিন্ন সাইজের মাছ ধরে সাজিয়ে রাখেন সেখানে। এসব মাছের মধ্যে ১০-১৫ কেজি ওজনের রুই, বোয়াল, কাতল, গ্লাসকার্প ও কার্পজাতীয় মাছ রয়েছে।

একইভাবে চিতল, কালিবাউশ, শোল, গজার, পাবদা, টেংরা, কই, শিং, মাগুরসহ প্রচুর ছোট মাছ ধরে খলায় থরে থরে সাজিয়ে রাখা হয়। প্রতিদিন সকাল থেকে পরদিন ভোর পর্যন্ত বিলে এই কর্মযজ্ঞ চলে। বছরে এ বিল থেকে ছোট-বড় মিলিয়ে প্রায় ৫০০ টন মাছ উৎপাদন হয়। যার বাজারমূল্য প্রায় ২৫ কোটি টাকা।

সুনামগঞ্জ জেলা মৎস্য অধিদপ্তর সূত্রে জানা গেছে- জেলার বিভিন্ন হাওড়ে দুইভাবে মাছের উৎপাদন হয়। মুক্ত জলাশয়ে এবং ইজারাদারদের তত্ত্বাবধানে। সুনামগঞ্জে নদী-খাল ছাড়াও এক হাজারের মতো জলাশয় বা বিল রয়েছে। মৎস্যজীবী সমবায় সমিতির মাধ্যমে স্থানীয়রা মুক্ত জলাশয় ইজারা নেন সরকারের কাছ থেকে। এসব জলাশয়গুলোকে স্থানীয়ভাবে বিল বলা হয়।

ইজারাদার প্রতি দুই বা তিন বছর পর পর বিলে মাছ ধরেন। এ দু-তিন বছর হাওড়-বিলে পোনা ছাড়া ও গাছের ডাল দিয়ে অভয়াশ্রম বানানোসহ প্রাকৃতিকভাবে মাছের রক্ষণাবেক্ষণ করেন ইজারাদাররা। ২-৩ বছর পরপর মাছ ধরার কারণে মাছের সাইজ অনেক বড় এবং এর গুণগত মানও ভালো হয়। সুনামগঞ্জে ছোটবড় প্রায় এক হাজার জলাশয় রয়েছে।

এসব জলাশয় থেকে ৯০ হাজার টন বিভিন্ন প্রজাতির মাছ উৎপাদন হয়। যার বাজারমূল্য প্রায় ৫ হাজার কোটি টাকা। সুনামগঞ্জের হাওড়ে এ মাছ প্রতিদিন ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে সরবরাহ করা হয়।

জেলেরা জানান, সুনামগঞ্জে অনেক প্রজাতির মাছ পাওয়া যায়, যা অন্য কোনো জেলায় পাওয়া যায় না। এ ব্যাপারে স্থানীয় জেলে সুবেল মিয়া ভোরের কাগজকে বলেন, জেলার প্রায় এক হাজার হাওড়-বাঁওড়, নদী-নালা ও খাল বিলের বিস্তীর্ণ জলাশয়ে ঝাঁকে ঝাঁকে দেশীয় প্রজাতির মাছ পাওয়া যায়। বড়দৈই বিলের ইজারাদার মনোয়ার পীর জানান, আমাদের এ বিলের মাছ দেশের চাহিদা পূরণ করে বিদেশেও রপ্তানি হচ্ছে।

এ ব্যাপারে জানতে চাইলে জেলা মৎস্য কর্মকর্তা সুনিল মণ্ডল ভোরের কাগজকে জানান, সুনামগঞ্জের হাওড়গুলোতে দেশীয় ছোট মাছের বৈচিত্র্যে ভরপুর। পানি দূষণমুক্ত এবং প্রাকৃতিক জলজ উদ্ভিদ খাওয়ায় এসব মাছ খেতে অনেক সুস্বাদু। সুনামগঞ্জের হাওড় ও নদীর মাছ এখন বিশ্বেও ৫০-৬০টি দেশে রপ্তানি হচ্ছে।

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App