×

সারাদেশ

মণিপুরিদের নববর্ষ ‘চৈরাউবা কুম্মৈ’ শুরু

Icon

কাগজ প্রতিবেদক

প্রকাশ: ২৩ মার্চ ২০২৩, ০৭:৩১ পিএম

মণিপুরিদের নববর্ষ ‘চৈরাউবা কুম্মৈ’ শুরু

ছবি: ভোরের কাগজ

মণিপুরিদের নববর্ষ ‘চৈরাউবা কুম্মৈ’ শুরু

ছবি: ভোরের কাগজ

নতুন ফসলের ভোগ দিয়ে অপদেবতাকে তাড়িয়ে শুরু হলো মৈতৈ মণিপুরিদের নববর্ষ ‘চৈরাউবা কুম্মৈ’ ৩৪২১। শুধু অপদেবতাকে তাড়ানো নয় এই নববর্ষকে বরণ করতে দিনব্যাপী নানা আয়োজনের ডালা সাজায় মৌলভীবাজারের কমলগঞ্জের মৈতৈ মনিপুরি অধিবাসীরা।

শুধু মনিপুরি অধিবাসীরাই নয় তাদের সাথে সামিল হন জেলা ও উপজেলার প্রশাসনিক কর্মকতার্, কবি, সাহিত্যিক, জনপ্রতিনিধি ও সংস্কৃতিজনেরাও। এই উৎসব উদযাপনে পূর্বেই গঠন করা হয় প্রস্তুতি কমিটি। যাদের আয়োজন দিনতেকে রাতওবদি ছিল উৎসবমূখর।

উৎসব উদযাপন কমিটির আহ্বায়ক থৌওনাজম নিরঞ্জন সিংহ জানান, মণিপুরিদের নিজস্ব একটি বর্ষগণনারীতি রয়েছে। ‘মালিয়াকুম’ নামের এই চান্দ্রবর্ষের হিসেবে ৩৪২১ তম বর্ষ বুধবার (২২ মার্চ) শুরু হলো। সময়ের আবর্তে তা আজ অনেকটা হারিয়ে যেতে বসেছে। নতুন প্রজন্মের অনেকই তা জানেন না।

তিনি আরো বলেন, নতুন প্রজন্মকে তা জানাতে এবং মুনিপুরিদের এই ঐতিহ্যগত সংস্কৃতি ধরে রাখতে কমলগঞ্জে প্রতিবছরই ‘চৈরাউবা কুম্মৈ ৩৪২১’ উৎসবের আয়োজন করেন।

বুধবার (২২ মার্চ) সকালে কমলগঞ্জের আদমপুর ইউনিয়নের কোনাগাঁও গ্রামের খেলার মাঠে জাতীয় পতাকা, সংগঠনের পতাকা উত্তোলন এবং সাথে জাতীয় সংগীতের মাধ্যমে ‘চেরাউবা কুম্মৈ’ এর উদ্বোধন করেন বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্টের এডভোকেট এস সি সিনহা।

[caption id="attachment_417007" align="alignnone" width="1275"] ছবি: ভোরের কাগজ[/caption] পরে মণিপুরিদের ঐতিহ্যবাহী পোশাক ও উপকরণ নিয়ে একটি বর্ণাঢ্য র‌্যালি গ্রামের বিভিন্ন পাড়া মহল্লা প্রদিক্ষণ করে উৎসবস্থলে এসে শেষ হয়। দুপুরে দেয়া হয় নতুন ফসল দিয়ে অপ দেবতার ভোগ ও পূজার্চনা। এর পর আয়োজন করা হয় তাদের ঐতিহ্যবাহিী পাশাখেলা। বুধবার রাতে আয়োজন করা হয় গুণীজন সংবর্ধনা, মণিপুরিদের গবেষণামুলক প্রবন্ধ উপস্থাপন, বিভিন্ন ভাষার কবিদের অংশগ্রহণে কবিতা পাঠ, খেলাধুলা, মনোজ্ঞ সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান ও মণিপুরিদের ঐতিহ্যবাহী থাবল চংবা। এ অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত হন বাংলাদেশ ট্যুরিজম বোর্ডের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা আবু তাহের মুহাম্মদ জাবের।

এ সময় উপস্থিত ছিলেন কমলগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা সিফাত উদ্দিন, কমলগঞ্জ থানার অফিসার ইনচার্জ সঞ্জয় চক্রবর্তী, আদমপুর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান মো. আবদাল হোসেন, মণিপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের সহকারী অধ্যাপক ড. নাওরেম সনাতম্বা সিংহ, মণিপুর ওয়াইখোম মণি গালর্স কলেজের সহকারী অধ্যাপক সাপম হেমন্ত সিংহ, সানাসম সেঙ্গোই সিংহ, মণিপুর সি আই কলেজের সহকারী অধ্যাপক ড. কোন্থৌজম বিমলা দেবী।

মনিপুরি মৈতৈ সম্প্রসায়ের নেতা সনাতন হামোম বলেন, মণিপুরীদেরও নিজস্ব একটি বর্ষগণনারীতি রয়েছে। মৈতৈ মণিপুরিদের এই বর্ষগণনা রীতি ‘মলিয়াফম পালচা কুম’ বা সংক্ষেপে ‘মলিয়াকুম’ নামে পরিচিত। মণিপুরী ভাষায় ‘কুম’ অর্থ বর্ষ বা সন।

তিনি আরো বলেন, আজ থেকে ৩৪২১ বর্ষ আগে মণিপুরের রাজা কাংবার জ্যেষ্ঠ পুত্র ‘কোইকোই’ চান্দ্র পদ্ধতি অনুসরণে এই বর্ষ গণনারীতি শুরু করেন।

‘মালিয়াকুম’ নামের এই চান্দ্রবর্ষের হিসেবে ৩৪২১ তম বর্ষ এবার পালন করা হয়। এটি মণিপুরী মৈতৈ সমাজে নববর্ষ হিসেবে প্রচলিত। তবে এটা এখন আর খুব একটা ঢাকঢোল পিটিয়ে ঘরে ঘরে পালন হয় না। শুধু ধমীর্য় অনুভুতি থেকে পৃথিবীর মঙ্গলের জন্য নতুন ফসল দিয়ে ভোগ দিয়ে অপদেবতাকে সরিয়ে দেয়া হয়। আর মনিপুরি প্রজন্ম এর পাশাপাশি বাংলা নববর্ষকেই সারম্বরে পালন করে। বিগত কয়েক বছর ধরে অতিত এই ঐতিহ্য ধরে রাখতে সম্মিলিতভাবে আদমপুরে উৎসবমূখর পরিবেশে তা পালন করা হয়।

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App