×

সারাদেশ

কলাপাড়ায় মসজিদের অর্থ আত্মসাতের অভিযোগে মামলা

Icon

কাগজ প্রতিবেদক

প্রকাশ: ০৬ মার্চ ২০২৩, ০৪:২০ পিএম

কলাপাড়ায় মসজিদের অর্থ আত্মসাতের অভিযোগে মামলা

ছবি: ভোরের কাগজ

পটুয়াখালীর কলাপাড়া উপজেলার খেপুপাড়া কেন্দ্রীয় বড় জামে মসজিদের অর্থ ও সরকারি অনুদান আত্মসাতের অভিযোগ আমলে নিয়ে সাবেক প্রতিমন্ত্রী ও উপজেলা চেয়ারম্যানসহ ৫ জনের বিরুদ্ধে তদন্তের নির্দেশ দিয়েছে আদালত।

মসজিদের কার্যকরী পরিষদের সদস্য মো. আব্দুল হান্নান বেপারী বাদী হয়ে মামলা করলে গত বুধবার দুদক মহাপরিচালককে তদন্তের নির্দেশ দেয় পটুয়াখালী জেলা ও দায়রা জজ আদালত। আদালতের বেঞ্চ সহকারী মো. শাহআলম ও প্রশাসনিক কর্মকর্তা মো. নুরুল ইসলাম এ তথ্যের সত্যতা নিশ্চিত করেছেন।

জানা যায়, গত ২৬ ফ্রেব্রুয়ারিরী খেপুপাড়া কেন্দ্রীয় বড় জামে মসজিদের কার্যকরী পরিষদের সদস্য, পৌরশহরের লঞ্চঘাট সড়কের মো. আব্দুল হান্নান বেপারী বাদী হয়ে সাবেক পানি সম্পদ প্রতিমন্ত্রী ও বর্তমান উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি আলহাজ্ব মাহবুবুর রহমান তালুকদার, সাবেক মেয়র ও বর্তমান উপজেলা চেয়ারম্যান এসএম রাকিবুল আহসান, তার স্ত্রী সুরাইয়া নাসরিন, সাবেক উপজেলা ভাইস চেয়ারম্যান সুলতান মাহমুদ ও সাব-রেজিষ্ট্রারসহ অজ্ঞাত নামা ৪/৫ জনের বিরুদ্ধে ১৯৪৭ সালের দুর্নীতি প্রতিরোধ আইনের ৫(২) এবং ২০০৪ সালের দুর্নীতি দমন কমিশন আইন এর ২৭ ধারায় এ মামলা দায়ের করেন।

মামলার বিবরণে বলা হয়, ২ নং আসামি কলাপাড়া পৌরসভার মেয়র থাকাকালীন এবং ১ নং আসামি পানি সম্পদ মন্ত্রনালয়ের প্রতিমন্ত্রী থাকাকালীন তারা পরস্পর যোগসাজশে এবং একে অপরের প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষ সহযোগিতায় উপজেলা প্রশাসনের সরকারি বরাদ্দ, ২০১৫-২০১৬ অর্থবছরে ৫০,০০০/- টাকা এবং ২০১৬-২০১৭ অর্থ বছরে ৩০,০০০/- টাকা মসজিদের উন্নয়নকল্পে গ্রহণ করেন। কিন্তু উক্ত টাকা মসজিদের অনুকূলে জমা না করে এবং কোনরূপ উন্নয়নমূলক কাজ না করে আত্মসাৎ করেছেন।

২০১৩-২০১৪ অর্থ বছরে দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা অধিদপ্তরের গ্রামীণ অবকাঠামো সংস্কার (কাবিখা/নগদ টাকা) কর্মসূচির আওতায় ২য় পর্যায়ে এলাকাভিত্তিক প্রকল্প বাস্তবায়নের নিমিত্তে ১ নং আসামির নির্বাচনী এলাকা পটুয়াখালী-৪ সংসদ সদস্যের অনুকূলে বরাদ্দকৃত ৫০,৬২,৫০০/- টাকা, কেন্দ্রীয় বড় জামে মসজিদের ঈদগাহ মাঠের অসমাপ্ত অংশ সমাপ্তকরণ ও মাঠ ফন্টাট সলিং প্রকল্পের নামে ১ ও ২ নং আসামি ৫,০০,০০০/- টাকা বরাদ্ধ নিয়ে কোনরূপ কাজ না করে এবং মসজিদ ফান্ডে জমা না দিয়ে সমুদয় অর্থ আত্মসাৎ করেন।

২০১৪-২০১৫ অর্থ বছরে গ্রামীণ অবকাঠামো সংস্কার (কাবিখা) কর্মসূচির আওতায় সংসদ সদস্যের অনুকূলে দুইশত মেট্রিক টন খাদ্যশস্য এর মধ্য থেকে কলাপাড়া কেন্দ্রীয় বড়জামে মসজিদের ঈদগাহ’র অসমাপ্ত কাজ সমাপ্তকরণ ও সোলার প্যানেল স্থাপনের জন্য ৫০ মেট্রিক টন খাদ্য শস্য ত্রাণ ও দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা মন্ত্রানালয় থেকে বরাদ্দ দেয়া হয় যার তৎকালীন বাজারমূল্য প্রায় ১৫,০০,০০০/- টাকা ছিল। বরাদ্ধকৃত ৫০ মেট্রিকটন খাদ্যশস্য ১ নং ও ২ নং আসামি অন্যান্য আসামির সহায়তায় মসজিদ অনুকূলে বিক্রিত অর্থ বা খাদ্য শস্য জমা না দিয়ে এবং কোনরূপ উন্নয়ন কাজ না করে আত্মসাৎ করেন।

ধর্ম মন্ত্রনালয় থেকে খেপুপাড়া কেন্দ্রীয় বড়জামে মসজিদের ঈদগাহ মাঠের উন্নয়ন কল্পে বরাদ্দকৃত ২,৫০,০০০/- টাকা, ১ ও ২ নং আসামি গ্রহণ করে অন্যান্য আসামিদের সহায়তায় উক্ত টাকার কোনরূপ উন্নয়নমূলক কাজ না করে আত্মসাৎ করেন। জেলা পরিষদ, পটুয়াখালী থেকে ২০১৩-২০১৪ অর্থ বছরে মসজিদের ঈমাম, মুয়াজ্জিন, খাদেমের আবাসস্থল ও ঈদগাহ মাঠ উন্নয়নের জন্য ৪,০০,০০০/- টাকা বরাদ্দ পাওয়া যায়, যা মসজিদ কমিটির সদস্য (বর্তমানে প্রয়াত) মীর আবদুল বারেককে উত্তোলন করার ক্ষমতা দেয়া হয়, কিন্তু উক্ত ৪ লক্ষ টাকা উত্তোলন করে কোনরূপ কাজ না করে ১ ও ২ নং আসামি অন্যান্য আসামির সহায়তায় আত্মসাৎ করেন। এ সকল সরকারি অনুদানের স্মারক নম্বর, চেক নম্বর ও গ্রহণের তারিখ মামলায় উল্লেখ করা হয়েছে।

এছাড়া ওয়াকফ্ অর্ডিন্যান্স ১৯৬২ এর ৫৬ (১) ধারা মোতাবেক মসজিদের কোন স্থাবর বা অস্থাবর সম্পত্তি বিক্রিতে ওয়াকফ এর অনুমতি নেয়ার বিধান থাকলেও তা উপেক্ষা করে ১১টি ছাপকবলা দলিলের মাধ্যমে ১ থেকে ৫ নং আসামি পরস্পর যোগসাজসে প্রায় ১০ কোটি টাকা আত্মসাৎ করেছেন বলে মামলায় উল্লেখ করা হয়েছে।

এ বিষয়ে সাবেক মেয়র ও উপজেলা চেয়ারম্যান এসএম রাকিবুল আহসান বলেন, ‘মসজিদ নির্মাণ ও সম্পত্তি ক্রয়, বিক্রয়ে কোন ধরনের অনিয়ম-দুর্নীতি হয়নি। উপজেলা নির্বাহী অফিসার কমিটির সভাপতি। মিটিং করে তার অনুমোদন নিয়ে সবকিছু করা হয়েছে।’

পটুয়াখালী-৪ আসনের সাবেক এমপি ও সাবেক পানি সম্পদ প্রতিমন্ত্রী আলহাজ্ব মাহবুবুর রহমান তালুকদার বলেন, মসজিদের এসব বিষয়ে আমার কোন সংশ্লিষ্টতা নেই। মসজিদের কাজে কোন রকম দুর্নীতির প্রশ্নই ওঠে না। আমি আইনগতভাবে এর মোকাবেলা করবো।

মসজিদের জমি নিজের মালিকানায় নেয়ার বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি কোনো মন্তব্য করেননি।

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App