×

সারাদেশ

ক্যান্সারে আক্রান্ত হয়েও টিউশনি!

Icon

কাগজ প্রতিবেদক

প্রকাশ: ২০ ফেব্রুয়ারি ২০২৩, ০৪:২৩ পিএম

ক্যান্সারে আক্রান্ত হয়েও টিউশনি!

ছবি: ভোরের কাগজ

নাম নাদিয়া আখতার নদী। নদীর মতোই প্রবাহমান ছিলো তার জীবন। নদীতে জৌলুশ ও খরস্রোতের থাকলেও স্রোতের প্রতিকুলেই হাটতে হচ্ছে তাকে অনবরত। ক্যান্সারে আক্রান্ত হয়েও বাসা বাড়িতে টিউশনি করে চালাচ্ছেন অভাবের সংসার ও লেখা পড়ার খরচ। বাবা আখতার হোসেনও আট মাস যাবৎ লিভার সিরোসিস রোগে ভুগছেন। এযেন মরার ওপর খারার ঘাঁ। ছোট মেয়ে নদী এখন কিংকর্তব্য বিমুর। জিজ্ঞাসা করলেই শুধু ফ্যালফ্যাল দৃষ্টিতে তাকিয়ে থাকে। যেন নিস্তব্ধ পাথরের মূর্তি।

নদী স্থানীয় বিলচলন শহীদ সামসুজ্জোহা সরকারী কলেজের উচ্চ মাধ্যমিক প্রথম বর্ষের মেধাবী ছাত্রী। এসএসসিতে জিপিএ ৫ পাওয়া নাদিয়া আখতার নদীর স্বপ্ন ছিলো আকাশ ছোঁয়া। চিকিৎসক হয়ে সেবা করবে অসহায় মানুষের। তাই নদী তার নদীর গতিতেই ছুটে চলছিলো কাঙ্ক্ষিত সেই স্বপ্নটার পেছনে। বাবার ক্ষুদ্র ব্যবসা এবং তিন শতাংশ জমির ওপর তৈরি দোচালা ঘরে বসেই স্বপ্ন দেখছিলেন অভাবের সংসারের দৈন্যতা দূর করারও। কিন্তু দরিদ্র বাবা আখতার হোসেন (৫০) ব্যবসায় লোকসান করে ঋণগ্রস্ত হয়ে পরেন। তার লিভারে ধরা পরে জটিল রোগ। নাক, কান আর গলা দিয়ে পরতে থাকে রক্ত অনবরত। দিশেহারা হয়ে পরে ছোট মেয়ে নদী। সংসারে রয়েছে মা গৃহিনী নারগিস আক্তার (৪৫) আর ছোট বোন আফিয়া তাবাসসুম রোযা (৬)। সে স্থানীয় কেজি স্কুলে নার্সারিতে পড়ে।

নদী স্বপ্ন দেখছিলেন বাবা মায়ের মুখে হাসি ফোটানোর। তাই সে নিজের সুখ শান্তি আর আরাম আয়েশের কথা না ভেবে নেমে পরেন বাসা বাড়িতে ঘুরে ঘুরে টিউশনি করতে। সেই স্বল্প টাকায়ই চলতো চার সদস্যের অভাবের সংসার আর নিজের লেখা পড়ার খরচ। শত কষ্টেও সে কারো কাছে হাত পাতেনি। অন্যের গলগ্রহ না হয়ে নিজের পরিশ্রমের টাকায় চলতেই সে স্বাচ্ছন্দ্য বোধ করত একারনেই দিনরাত পরিশ্রম করলেও ক্লান্তি যেন হার মানে তার কাছে। সেই নদীও আজ মরন ব্যাধি(ব্রেষ্ট) ক্যান্সারে আক্রান্ত।

এখন বেঁচে থাকতে পারাটাই যেন দুঃস্বপ্ন হয়ে দাঁড়িয়েছে তার! দিন দিন তার শারীরিক অবস্থার অবনতি হচ্ছে। কিন্তু অর্থাভাবে আটকে আছে তার চিকিৎসা। নদীর বাসা নাটোরের গুরুদাসপুর পৌর সদরের খামারনাচকৈড় মহল্লায়।

গাইনি ও প্রসুতি বিশেষজ্ঞ ডাক্তার তারান্না ইসলাম ইতি জানান , নদী ব্রেষ্ট ক্যান্সারসহ রক্তেও রয়েছে সমস্যা। দ্রুত চিকিৎসা করালে সুস্থ জীবনে ফেরার সম্ভাবনা রয়েছে। অপর দিকে রাজশাহী মেডিকেলের সহকারী অধ্যাপক ডা. মো. শফিকুল ইসলাম জানান, নদীর বাবা আখতার হোসেন আট মাস ধরে লিভারে মারাত্বক রোগে ভুগছেন। ঠিকমতো চিকিৎসা না হলে যে কোনো সময় দুর্ঘটনা ঘটতে পারে।

২ নং ওয়ার্ড কমিশনার শ্রী বিদ্যুত কুমার বলেন, ঘটনাটি দুঃখজনক। ব্যাক্তিগতভাবে ও পৌর মেয়র শাহনেওয়াজকে বলে একটা ব্যবস্থা নিবো। তাছাড়া, চিকিৎসকরা বলেছেন দুজনের চিকিৎসায় প্রায় ১৫-২০ লাখ টাকা প্রয়োজন। ব্যয়বহুল এই চিকিৎসা করার সক্ষমতা তার পরিবারের নেই । তাই বাবা ও মেয়েকে বাঁচাতে সরকারসহ বিত্তবানদের কাছে সহযোগিতার হাত বাড়ানোর অনুরোধ জানিয়েছেন তিনি।

নদীর মা নারগিস আক্তার বলেন, তার মেয়ে নদী ও স্বামী আখতার হোসেনর প্রতিদিন এক-দুই হাজার টাকার ঔষধ লাগছে। তাছাড়া, থেরাপি তো আছেই। শেষসম্বল এই দুজনের জীবন বাঁচাতে প্রধানমন্ত্রীসহ দেশ বিদেশের বিত্তবানদের সহযোগিতা চেয়েছেন।

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App