×

সারাদেশ

ভবদহে জলাবদ্ধতা নিরসনে প্রয়োজন টিআরএম

Icon

কাগজ প্রতিবেদক

প্রকাশ: ১৭ ফেব্রুয়ারি ২০২৩, ০৮:৪১ এএম

ভবদহে জলাবদ্ধতা নিরসনে প্রয়োজন টিআরএম

ছবি: ভোরের কাগজ

পাউবোর আস্থা সেচ প্রকল্পে

যশোরের ভবদহ অঞ্চলের জলাবদ্ধতা সমস্যা সমাধানের পথ জোয়ারাধার (টিআরএম-টাইডাল রিভার ম্যানেজমেন্ট) চালু। ভবদহের জলাবদ্ধতা নিরসনের পথ হিসেবে নদীগুলো দিয়ে পরিকল্পিত উপায়ে জোয়ারভাটা চালু হলে জোয়ারের সঙ্গে আসা পলি নির্দিষ্ট বিলে অবক্ষেপণের ফলে বিল উঁচু হয়ে উঠবে। পাশাপাশি ভাটায় স্বচ্ছ পানির স্রোতে নাব্য ফিরে পাবে নদীগুলো। এতে নিরসন হবে জলাবদ্ধতার।

এই জোয়ারাধারকে কার্যকর পন্থা হিসেবে স্থানীয় ভুক্তভোগী মানুষ, ভবদহ জলাবদ্ধতার নিরসনে আন্দোলনরত সংগঠনগুলোর নেতা, পানি উন্নয়ন বোর্ডের বিশেষজ্ঞ কমিটি এবং দেশের শীর্ষস্থানীয় পানি বিশেষজ্ঞরা উল্লেখ করেছেন।

কিন্তু পানি উন্নয়ন বোর্ড (পাউবো) জোয়ারাধার না করে সেচযন্ত্র বসিয়ে পানি সেচে বের করে জলাবদ্ধতার সমাধান খুঁজছে। বর্তমানে প্রায় দুই কোটি টাকা ব্যয়ে একটি সেচ প্রকল্প চলমান রয়েছে। এছাড়া, তিন কোটি ৮০ লাখ টাকা ব্যয়ে আরো চারটি সেচযন্ত্র বসানো হচ্ছে। এরপরও ভবদহের জলাবদ্ধতা দূর করতে পাউবো ৪৪ কোটি ৬৬ লাখ টাকার একটি সেচ প্রকল্প নিয়েছে।

এলাকাবাসী জানান, ভবদহ অঞ্চলের ৫২টি বিলের পানি ওঠানামা করে মুক্তেশ্বরী, টেকা, শ্রী ও হরি নদী দিয়ে। পলি পড়ে নদীগুলো নাব্য হারিয়েছে। ফলে নদী দিয়ে পানি নিষ্কাশিত হচ্ছে না। এই অবস্থায় বৃষ্টির পানিতে এলাকার বিলগুলো প্লাবিত হয়।

পানি উন্নয়ন বোর্ড, যশোরের কার্যালয় সূত্র জানায়, জলাবদ্ধতা দূর করতে ২০২১ সাল থেকে বৈদ্যুতিক সেচযন্ত্র দিয়ে পানি সেচের কাজ চলছে। এ পর্যন্ত এ প্রকল্পে ব্যয় হয়েছে প্রায় দুই কোটি টাকা।

সরেজমিনে দেখা গেছে, ভবদহ ২১ ভেন্ট (কপাট) স্লুইসগেটের ওপর ছোট বড় ২১টি সেচযন্ত্র দিয়ে একপাশের নদী থেকে পানি সেচে পাইপের মাধ্যমে অপর পাশে নদীতে ফেলা হচ্ছে। এছাড়া ৯ ভেন্ট স্লুইসগেটের ওপর ৬টি বৈদ্যুতিক সেচযন্ত্র বসানো আছে। স্লুইসগেটের সামনে শাখা নদীতে স্ক্যাভেটর দিয়ে আড়াআড়িভাবে মাটির বাঁধ দেয়া হচ্ছে।

যশোরের অভয়নগরের কোটা গ্রামের কৃষক মীরণ আহমেদ তরফদার বলেন, টিআরএম থাকলে নদী গভীর হয়। পানি নেমে যায়। এলাকায় পানি ওঠে না। টিআরএম না থাকায় এলাকা জলাবদ্ধ হয়ে আছে। সেচযন্ত্রে কোনো কাজ হচ্ছে না।

ভবদহ পানি নিষ্কাশন সংগ্রাম কমিটির সদস্য সচিব চৈতন্য কুমার পাল বলেন, ভবদহ এলাকায় জলাবদ্ধতা দূর করার একমাত্র পথ হচ্ছে টিআরএম, কিন্তু ২০১৩ সালের পর টিআরএম বন্ধ হওয়ার পর সেই টিআরএম আর পাউবো চালু করতে পারেনি। এই টিআরএম চালু না করার ফলে বিগত বছরগুলোতে এলাকায় জলাবদ্ধতা প্রকট আকার ধারণ করে। ফলে দেখা দেয় গো-খাদ্যের অভাব, মানুষের ঘরে এখন খাবার থাকে না। সব মিলিয়ে এলাকা বসবাসের অনুপযোগী হয়ে পড়েছে। আমাদের দাবি বিল কপালিয়ায় টিআরএম চালু করা।

ভবদহ পানি নিষ্কাশন সংগ্রাম কমিটির উপদেষ্টা ইকবাল কবির জাহিদ বলেন, ভবদহ অঞ্চলের জলাবদ্ধতা দূর করার সবচেয়ে কার্যকর উপায় হিসেবে টিআরএম বহুভাবে পরীক্ষিত। এর আগে যতবারই টিআরএম বন্ধ করা হয়েছে, জলাবদ্ধতা ততবারই বেড়েছে।

তিনি বলেন, সেচযন্ত্র দিয়ে পানি সেচে ভবদহের জলাবদ্ধতা দূরীকরণ প্রকল্প সম্পূর্ণ ব্যর্থ হয়েছে। এতে অর্থ অপচয় ছাড়া আর কিছুই হয়নি। নতুন করে সেচ প্রকল্প নেয়া হচ্ছে। এতে অর্থ অপচয় আরো বাড়বে। ভবদহ সমস্যার কোনো সমাধান হবে না।

পানি উন্নয়ন বোর্ড, যশোর কার্যালয়ের নির্বাহী প্রকৌশলী মো. তাওহীদুল ইসলাম বলেন, গতবছরের জানুয়ারি মাস থেকে পরীক্ষামূলকভাবে ভবদহে ২১টি পাম্পসেট (সেচযন্ত্র) দিয়ে সেচ চলছে। প্রতিটি সেচযন্ত্রের ক্ষমতা ৫ কিউসেক। সেচযন্ত্র দিয়ে পানি সেচ সফল হয়েছে। হরি নদীতে দুই থেকে আড়াই মিটার পর্যন্ত নাব্য বেড়েছে। বড় পরিসরে সেচের কার্যক্রম গ্রহণ করা হচ্ছে। এজন্য প্রায় ৪৫ কোটি টাকার একটি উন্নয়ন প্রকল্প প্রস্তাবনা (ডিপিপি) পরিকল্পনা কমিশনে পাসের অপেক্ষায় রয়েছে। প্রকল্পে ৩৫ থেকে ৪০ কিউসেক ক্ষমতাসম্পন্ন ১০টি সেচযন্ত্র বসানো হবে। আপতকালীন ব্যবস্থা হিসাবে প্রতিটি ৩৫ কিউসেক ক্ষমতাসম্পন্ন চারটি পাম্পসেট বসানো হচ্ছে। এজন্য মন্ত্রণালয় থেকে তিন কোটি ৮০ লাখ টাকা বরাদ্দ পাওয়া গেছে। পাম্পগুলো বসানো শেষ হলে নদীতে পানির প্রবাহ সৃষ্টি হবে। এলাকার জলাবদ্ধতা দূর হবে।

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App