×

সারাদেশ

ফুলপুরে স্লুইস গেট এখন কৃষকের গলার কাঁটা

Icon

কাগজ প্রতিবেদক

প্রকাশ: ১৪ ফেব্রুয়ারি ২০২৩, ০৩:০১ পিএম

ফুলপুরে স্লুইস গেট এখন কৃষকের গলার কাঁটা

ময়মনসিংহের ফুলপুরে খড়িয়া নদীতে নির্মিত সংযোগ বাঁধবিহীন স্লুইস গেট। ছবি: ভোরের কাগজ

ময়মনসিংহের ফুলপুর উপজেলার খড়িয়া নদীর মাঝখানে স্লুইসগেট নির্মাণ করে দু’পাশে মাটি ভরাটের কাজ না করে ফেলে রাখা হয়েছে ১০ বছর ধরে। উপজেলার ভাইটকান্দি ইউনিয়নের ছোটশুনই গ্রামের খড়িয়া নদীতে ২০১০-১১ অর্থবছরে প্রায় ২৬ লাখ টাকা ব্যয়ে নির্মাণ করা হয় এ স্লুইসগেট।

জানা যায়, উপজেলার ছোটশুনই, বড়শুনই, ভাইটকান্দি, গুপ্তেরগাঁও, রামভদ্রপুর ও শ্যামপুরসহ নিচু এলাকার বেশির ভাগ গ্রামই সামান্য বর্ষায় তলিয়ে যায়। ভরা বর্ষায় পানিতে তলিয়ে এলাকার বাড়িঘর ও ক্ষেতের ফসলের ব্যাপক ক্ষতি হয়। এ সমস্যা সমাধানের লক্ষ্যে এ স্লুইসগেটটি নির্মিত হলেও দু’পাশ ভরাট না করায় এর কোনো সুফল পাচ্ছে না এলাকাবাসী।

ফুলপুর প্রকৌশল অফিস সূত্রে জানা যায়, ২০১০-১১ অর্থবছরে স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তরের বৃহত্তর ময়মনসিংহ, সিলেট, ফরিদপুরে ক্ষুদ্রাকার পানি সম্পদ উন্নয়ন প্রকল্পের সুপারিশে জাইকার অর্থায়নে ২০১৩ সালে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান মেসার্স হোসেন আলী ২৫ লাখ ৫৫ হাজার ৫২১ টাকায় এ স্লুইসগেট নির্মাণ করে।

সরেজমিনে দেখা যায়, নদীর মধ্যস্থলে নির্মিত স্লুইস গেটটি অর্থহীনভাবে দাঁড়িয়ে আছে। দু’পাশে সংযোগবাঁধ না থাকায় বর্ষায় কোনো কাজেই আসছে না এটি। বারবার দাবি করা সত্ত্বেও সংযোগবাঁধ নির্মাণ করা হয়নি বলে অভিযোগ এলাকাবাসীর।

স্থানীয় কৃষকরা জানিয়েছেন, এই স্লুইস গেটটি নির্মাণ করার পর তাদের কোনো কাজে আসেনি। এ ছাড়া এই স্লুইস গেট কে নির্মাণ করেছে কিংবা এর দেখভালের দায়িত্ব কার সেটাও জানেন না তারা।

স্লুইস গেটের পাশেই দেখা হয় কৃষক শুনুই গ্রামের শরফত আলীর ছেলে হোসেন আলীর সঙ্গে। এই নদীর চরে ২ একর জমি করেছেন তিনি। তিনি জানান, আট-দশ বছর আগে নির্মাণের পর এটিকে কেউ দেখতেও আসেননি। তাই এর কোনো সংস্কারও হয়নি। এটা নামে স্লুইস গেট, কোনো কামের না।

রগুরামপুর গ্রামের আরেক কৃষক আবুল কালাম আজাদের ছেলে উমর ফারুক বলেন, ‘এই স্লুইচ গেট নির্মাণের সময় আমরা ভেবেছিলাম এদিক দিয়ে নদীর পানি ঢোকার আর সুযোগ নেই। কিন্তু এখন দেখছি তার উল্টোটা। এর গেট নষ্ট হয়ে পড়ে আছে কেউ কোনো খোঁজখবরও নেয় না। সংস্কারও করে না।

এই গ্রামের আরেক কৃষক ইসমাইল স্লুইস গেটটিকে বেওয়ারিশ আখ্যা দিয়ে বলেন, ‘এই স্লুইস গেটের কোনো মা-বাপ নেই।’

স্লুইসগেটটি অকেজো থাকায় বিপুল পরিমাণ কচুরিপানা আটকে যায়। এতে দুই পাশের বিস্তীর্ণ ফসলি জমি কচুরিপানায় ঢাকা পড়ে, যা শ্রমিক দিয়ে পরিষ্কার করতে প্রতি কাঠায় ১ হাজার থেকে ১ হাজার ৫০০ টাকা খরচ হয়। দু’পাশে মাটি ভরাট না হওয়ায় কৃষকদের দুর্ভোগ রয়েই গেছে। মাটি ভরাট করা হলে স্লুইসগেটটি এভাবে অকেজো হয়ে পড়ে থাকত না। এটা এখন কৃষকের গলার কাঁটা।

এ বিষয়ে ইউপি চেয়ারম্যান আলাল উদ্দিন আহমেদের কাছে জানতে চাইলে তিনি বলেন, এই অপরিকল্পিত স্লুইস গেটটি জনসাধারণের জন্য কোনো কাজেই আসছে না। শুধু শুধু সরকারি অর্থের অপচয় হয়েছে।

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App