×

সারাদেশ

সমাগত তিন দিবসকে ঘিরে প্রস্তুত গদখালীর ফুল চাষিরা

Icon

কাগজ প্রতিবেদক

প্রকাশ: ১১ ফেব্রুয়ারি ২০২৩, ১২:০৫ পিএম

সমাগত তিন দিবসকে ঘিরে প্রস্তুত গদখালীর ফুল চাষিরা

ছবি: ভোরের কাগজ

বিক্রির টার্গেট ৭০ কোটি টাকা

‘আসে বসন্ত ফুল বনে, সাজে বনভূমি সুন্দরী/চরণে পায়লা রুমুঝুমু, মধুপ উঠিছে গুঞ্জরী’ পুষ্পিত সৌরভে এভাবেই বসস্তের আগমনি বার্তা দেখা দেয় প্রকৃতিতে। ঋতুরাজ বসন্ত, বিশ্ব ভালোবাসা দিবস ও ২১ ফেব্রুয়ারি আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস আগমনের বার্তা নিয়ে আমাদের দোরে কড়া নাড়ছে। আর এ তিন দিবসকে সামনে রেখে ফুলের বাজার ধরতে ব্যস্ত সময় পার করছেন ফুলের রাজ্য হিসেবে খ্যাত যশোরের গদখালীর ফুল চাষিরা। ডজ্জন খানেক ধরনের ফুল নিয়ে ৭০ কোটি টাকা বিক্রির লক্ষ্য নিয়ে কাজ করছেন তারা।

যশোরের ঝিকরগাছা উপজেলার গদখালী, পানিসারা ইউনিয়নসহ বেশ কয়েকটি ইউনিয়নের ৬৩০ হেক্টর জমিতে বাণিজ্যিকভাবে উৎপাদিত হচ্ছে রজনীগন্ধা, গোলাপ, জারবেরা, গাঁদা, গ্লাডিউলাস, টিউলিপ, লিলিয়াম, জিপসি, রডস্টিক, কেলেনডোলা, চন্দ্রমল্লিকাসহ ডজনখানেক রকমের ফুল।

সারাবছর বাজারে ফুল সরবরাহ করলেও এখানকার চাষিদের মূল টার্গেট পহেলা ফাল্গুন বসন্তবরণ, বিশ্ব ভালোবাসা দিবস এবং ২১ ফেব্রুয়ারি আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস। এ তিন দিবসকে ঘিরে ফুল বিক্রি করেই মূলত সারা বছরের লাভ-লোকসানের হিসাব মেলান তারা।

এরই মধ্যে গোলাপ, জারবেরা, রজনীগন্ধা, গøাডিওলাস, টিউলিপ ও লিলিয়াম ফুলের বাড়তি পরিচর্যা করছেন চাষিরা। তাদের আশা, এই মাসের দিবসগুলো ঘিরে ফুলের চাহিদা বাড়বে এবং ভালো দাম পাবেন।

এখানকার ফুল চাষিরা বলছেন, এবার এই তিনটি দিবস ঘিরে সারাদেশে দেড় থেকে ২০০ কোটি টাকার ফুল বিক্রি হবে। এর মধ্যে পানিসারা ও গদখালীর ফুল চাষিরা ৬০-৭০ কোটি টাকার ফুল বিক্রি করবেন। তবে কৃষি কর্মকর্তরা বলছেন, এই অঞ্চলের চাষিরা চলতি মাসের দিবসগুলোতে ১০০ কোটি টাকার ফুল বিক্রি করতে পারবেন।

ইতোমধ্যে বাড়তি দামে বিক্রি শুরু হয়েছে ফুল। কয়েকজন ফুলচাষি জানিয়েছেন, এবার ফুলের ফলন ভালো হয়েছে। তারা বলেন, বসন্ত দিবস ও বিশ্ব ভালোবাসা দিবসে গোলাপ, জারবেরার দাম বাড়বে। সেক্ষেত্রে গোলাপের পিস ১৫-২০ টাকা এবং জারবেরা ২০-২২ টাকা হতে পারে। সমাগত দিবস ঘিরে এখনই ফুলের দামে প্রভাব পড়তে শুরু করেছে। তারা আশা করছেন গোলাপ, গøাডিওলাস, জারবেরা ও রজনীগন্ধা মোটামুটি ভালো দামে বিক্রি হবে। এতে করে চাষিদের ভালো লাভ হবে। তবে চাষাবাদের খরচ, সার, কীটনাশক, সেচ আর ফুল পরিবহনের ব্যয় বেড়েছে। এগুলোর দাম স্থিতিশীল থাকলে আরো বেশি লাভ হতো চাষি ও ব্যবসায়ীদের।

স্থানীয় ফুলচাষি আবুল হোসেন বলেন, এখন যে দামে বিক্রি হচ্ছে তাতে কৃষকের আয়-ব্যয় প্রায় সমান। বলা যায়, বেঁচে থাকার মতো। ফুল উৎপাদনের জন্য যেসব উপাদান লাগে, সেগুলোর দাম অনেক বেড়েছে। সেই অনুযায়ী ফুলের দাম বাড়েনি। তারপরও আমরা ফেব্রুয়ারি মাসের তিনটি দিবস সামনে রেখে আশায় আছি, বেচাকেনা ভালো হবে। ফুল বেচাকেনা বেশি হলে লাভও তখন বেশি হয়।

স্থানীয় সূত্র জানায়, ঝিকরগাছা উপজেলার গদখালী ও পানিসারা ইউনিয়নের চাষিরা সারা বছরই ফুল চাষ করেন। তাদের উৎপাদিত রজনীগন্ধা, গোলাপ, জারবেরা, গাঁদা, গ্লাডিওলাস, জিপসি, রডস্টিক, কেলেনডোলা, চন্দ্রমল্লিকাসহ ডজনখানেক ধরনের ফুল সারাদেশের বিভিন্ন আয়োজনের অনুষঙ্গ হয়।

বিশেষ করে শহীদ বুদ্ধিজীবী দিবস, বিজয় দিবস, খ্রিস্টিয় নববর্ষ, বসন্ত দিবস, ভালোবাসা দিবস, স্বাধীনতা দিবস, পহেলা বৈশাখ অনুষ্ঠানে এসব ফুলের বিকল্প নেই। ২১ ফেব্রুয়ারিতে ভাষা শহীদদের প্রতি শ্রদ্ধা জানাতেও রয়েছে এই ফুলের ব্যাপক কদর। তাই এসব দিবসে ফুল বেচাকেনা বেশি হয়।

২০২২ সালের আগের দুই বছর ফুলের বাজার একটু খারাপ গেছে জানিয়ে পানিসারা গ্রামের ফুলচাষি ও ব্যবসায়ী রফিকুল ইসলাম বলেন, ‘গত বছরের শহীদ বুদ্ধিজীবী ও বিজয় দিবস উপলক্ষে বেচাকেনা মোটামুটি ভালো হয়েছে। বছরের শুরু থেকে এখন পর্যন্ত ফুলের বাজার মন্দ যাচ্ছে না বলা যায়। চাহিদা রয়েছে বেশ। চলতি মাসের তিনটি উৎসব ঘিরেই মূলত আমাদের ফুলের বাজার। মাঠে লিলিয়াম রয়েছে, বসন্ত-ভালোবাসা দিবসের আগেই ফুল বাজারজাত করতে পারবেন তারা। প্রতি পিস লিলিয়াম ফুল ৮০ টাকা ও টিউলিপ ১২০ টাকা দরে বিক্রি করা যাবে আশা করছেন স্থানীয় ফুল চাষিরা।

টিউলিপ ফুলচাষি পানিাসারা গ্রামের ইসমাইল হোসেন বলেন, ‘মূলত শীতপ্রধান দেশের ফুল টিউলিপ। নেদারল্যান্ডস থেকে বীজ এনে চাষ করছেন। তিনি বলেন, গত বছর প্রতি পিস টিউলিপফুল ১২০ টাকা দরে বিক্রি করেছিলাম, এবারো তাই বিক্রি করছি। তিনি বলেন, ‘টিউলিপ ফুলের চাষ বেশ সহজ। রোপণের ২০-২২ দিনের মধ্যে ফুল ফুটে বিক্রির উপযোগী হয়। দামও ভালো পাওয়া যায়।’

বাংলাদেশ ফ্লাওয়ার সোসাইটির সভাপতি আব্দুর রহিম বলেন, ফুল পরিচর্যা ও বিক্রির জন্য প্রতিবারের মতো এবারো গদখালী-পানিসারাসহ সারাদেশের চাষিরা প্রস্তুত রয়েছে। মূলত ফেব্রুয়ারির তিনটি দিবস ঘিরে ফুল উৎপাদন ও পরিচর্যা করেন চাষিরা। তিন দিবসে গদখালী ও পানিসারার চাষিরা ৬০-৭০ কোটি টাকার ফুল বিক্রি করতে পারবেন বলে আশা করছি। সেই সঙ্গে সারাদেশে এসব দিবসে এবার দেড় থেকে ২০০ কোটি টাকার ফুল বিক্রি হবে।

সার, ডিজেল ও বিদ্যুতের দাম বাড়ায় চাষিরা ফুলের দাম নির্ধারণে হিমশিম খাচ্ছেন জানিয়ে আব্দুর রহিম বলেন, উৎপাদন সামগ্রীর দাম কমিয়ে যদি ফুলের দাম সমন্বয় করা যেত, তাহলে আরো বেশি লাভবান হতেন চাষিরা।

ঝিকরগাছা উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মাসুদ হোসেন পলাশ বলেন, এ বছর ৬৩০ হেক্টর জমিতে ফুল চাষ হয়েছে। আবহাওয়া অনুকূলে থাকায় ফুলের উৎপাদন বেড়েছে। আমাদের আশা, এ বছর এই অঞ্চলে ফুল বিক্রি ৫০০ কোটি টাকা ছাড়িয়ে যাবে।

এ বছর গদখালীতে ফুলের মেলা করার ফলে বিক্রি আরো বেড়েছে দাবি করে তিনি বলেন, ‘বসন্ত, ভালোবাসা আর আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা এই তিন দিবসকে সামনে রেখে এই অঞ্চলের চাষিরা এবার ১০০ কোটি টাকা ফুল বিক্রি করতে পারবেন। কেননা এবারো টিউলিপ আর লিলিয়ামের মতো দামি ফুল ওই সময়ে বাজারে উঠবে। সেই সঙ্গে দাম ভালো পাবেন চাষিরা।

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App