×

সারাদেশ

নানির জীর্ণ কুটির আলোকিত করা বৃষ্টি খাতুন

Icon

কাগজ প্রতিবেদক

প্রকাশ: ১০ ফেব্রুয়ারি ২০২৩, ০৬:৪৭ পিএম

নানির জীর্ণ কুটির আলোকিত করা বৃষ্টি খাতুন

ছবি: ভোরের কাগজ

নানির জীর্ণ কুটির আলোকিত করা বৃষ্টি খাতুন

বৃষ্টি খাতুন

এইচএসসিতে সাফল্য পেলেও ভর্তি নিয়ে আছে দুশ্চিন্তা

বাংলায় একটি বাগধারা আছে, গোবরে পদ্মফুল। যার অর্থ অস্থানে ভালো জিনিস। এমন একজন মেয়েই বৃষ্টি খাতুন। নানির জীর্ণ কুটিরে ভালো খাবার কিংবা সুযোগ-সুবিধা না পেয়েও নিজেকে আলোকিত করেছে বৃষ্টি। এইচএসসিতেও চমক দেখিয়েছে সে। মানবিক বিভাগ থেকে পেয়েছে জিপিএ-৫। এর আগে পিইসি, জেএসসি ও এসএসসি পরীক্ষাতেও জিপিএ-৫ পায় বৃষ্টি।

[caption id="attachment_405983" align="alignnone" width="1600"] বৃষ্টি খাতুন[/caption]

দস্তুল ও কুসুমা দম্পতির মেয়ে বৃষ্টি খাতুন রাজশাহী শিক্ষা বোর্ডের অধীনে বাঘা উপজেলার শাহদৌলা সরকারি কলেজ থেকে মানবিক বিভাগে পরীক্ষা দিয়েছিলেন। নিজের টিউশনি করা টাকা আর খালার সহযোগিতায় চলেছে বৃষ্টি খাতুনের লেখাপড়া। বাবার অবর্তমানে সংসার চালিয়েছে মা। বাঘা পৌরসভার কলিগ্রামের বাসিন্দা জাহেরা বেওয়ার (বৃষ্টি খাতুনের নানি) আড়াই কাঠা জমির উপর টিনের ছাউনি দেয়া ছাপড়া ঘরে বসবাস তাদের। একঘরে থাকতে হয় পাঁচজনকে। ঘরের মধ্যে দুইটি চৌকির একটিতে থাকেন বৃষ্টি খাতুন ও তার বোন, আরেকটি থাকেন মা-খালা। বারান্দায় থাকেন নানি জাহেরা বেওয়া। টানাপোড়েনের সংসারে বিদুৎ সংযোগ নেয়া হয়েছে পাশের বাড়ি থেকে।

জানা গেছে, বৃষ্টি খাতুনের মা কুসুমা খাতুনের বিয়ে হয়েছিল বাঘা উপজেলার পানিকুমড়া গ্রাামের দস্তুল আলীর সঙ্গে। মতবিরোধ দেখা দেয়ায় ২ মেয়েকে নিয়ে চলে আসেন কলিগ্রামে মায়ের জীর্ণ কুটিরে। পাঁচ বছর আগে দুই মেয়েকে মায়ের কাছে রেখে ঢাকায় গিয়ে গার্মেন্টসে কাজ করেছিলেন। পরে ফিরে এসে থাকছেন মায়ের কাছে। তার দুই মেয়ের মধ্যে বৃষ্টি বড়। ছোটবেলা থেকেই মেধাবী ছিলো বৃষ্টি। ছোট মেয়ে শ্রাবণী আগামীতে এসএসসি পরীক্ষা দেবে।

বৃষ্টি খাতুনের লেখা পড়ার খরচ সম্পর্কে জানতে চাইলে তার মা কুসুমা খাতুন বলেন, আমি আর পারব নাকো বাবা,বিয়ে দিতে চেয়েও বিয়া করল না। এখন কিভাবে শহরের ইসকুলে (কলেজে) পড়াব? তোমরা দেখে শুনে একটা বিয়া দিয়া দেও। অভাব অনটনের সংসারে লেখাপড়ার খরচতো দূরের কথা, ভালো খাবার কিংবা পোষাকও দিতে পারিনি। নিজের প্রচেষ্টা আর তার বোনের সহযোগিতায় সাফল্য বয়ে এনেছে বৃষ্টি।

কুসুমা খাতুনের বোন মাবিয়া খাতুন বলেন, তার বিয়ে হলেও এখন মায়ের কাছে থাকেন। তার নিজের কোনো সন্তান নাই। হাতের কাজ করে আর একবেলা পাশের বাড়ির মানুষের কাজ করে সংসার চালানোর পাশাপাশি বৃষ্টির লেখাপড়ায় সহযোগিতা করেছেন। তিনি জানান, বৃষ্টি খাতুন নিজেও টিউশনি করে লেখা পড়ার খরচ যুগিয়েছে। সরকারিভাবে বয়স্ক ভাতা পান তার মা জাহেরা বেওয়া। সেই টাকায় সংসার চলে না বলে মানুষের সাহায্য সহযোগিতা নিতে হয়। বৃষ্টি খাতুন জানান, সে অন্ধকার থেকে আলোতে এসেছে নানা রকমের বাধা পেরিয়ে। বিয়ের ব্যাপারে কোনো চিন্তা করছে না। জীবনের লক্ষ্য অর্জনে ভালো কোনো বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির প্রস্তুতি নিচ্ছেন। সুযোগ পেলে দেশ ও মানুষের কল্যাণে গবেষণায় আত্মনিয়োগই হবে তার জীবনের ব্রত। যদিও পরিবারের আর্থিক অনটন সেই স্বপ্নযাত্রায় বাধা হবে কিনা তা নিয়ে অনিশ্চয়তা রয়ে গেছে বৃষ্টি খাতুনের। তবে স্বপ্নকে বাঁচিয়ে রাখতে আপ্রাণ চেষ্টা রয়েছে তার মা ও খালার।

শাহদৌলা সরকারি কলেজের অধ্যক্ষ আবু বকর সিদ্দিক জানান, বৃষ্টি খাতুন আমার কলেজের শিক্ষার্থী। প্রতিবন্ধকতা জয় করে সে সমাজকে দেখিয়ে দিয়েছে। আমি আশা করি সে ভবিষ্যতে ভালো কিছু করবে। আমার কলেজে ভর্তি হলে তার জন্য সাধ্য মোতাবেক কিছু করার চেষ্টা করবো।

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App