×

সারাদেশ

বড়ই চাষে ভাগ্য ফিরলো মুরাদনগরের ইউনুছের

Icon

কাগজ প্রতিবেদক

প্রকাশ: ০৮ ফেব্রুয়ারি ২০২৩, ০৮:৪৬ পিএম

বড়ই চাষে ভাগ্য ফিরলো মুরাদনগরের ইউনুছের

ছবি: ভোরের কাগজ

কুমিল্লার সবচেয়ে বড় বড়ই বাগান মুরাদনগর উপজেলার কাজিয়াতল। বিদেশ ফেরত ইউনুছ ভূঁইয়া গড়েছেন এই বাগান। তিন বছরে বিক্রি করেছেন অর্ধ কোটি টাকার বড়ই। ইউনুছ ভূঁইয়া চৌদ্দ বছর সৌদি প্রবাস জীবন শেষে দেশে আসেন ২০২০ সালে। করোনার বেকার সময়কে কাজে লাগিয়ে হয়ে উঠেন সফল উদ্যোক্তা।

নিজের ১০ বিঘা জমির সঙ্গে আরো ৫০ বিঘা পতিত জমি লিজ নেন তিনি। পুরো জায়গা জুড়ে মাছের প্রজেক্ট করে মাছ চাষ করেন। নানা প্রতিকূলতায় মাছের ব্যবসায় লোকসান হয়। তাতে ভেঙে যাননি তিনি। সফল হওয়ার দৃঢ় প্রতিজ্ঞা নিয়ে মাছের প্রজেক্টকে ফলের বাগান বানানো কাজ শুরু করেন। তার এই কাজ দেখে মানুষ উপহাস ও ঠাট্টা-বিদ্রুপ করতে থাকেন। কারণ মাছের প্রজেক্টের ভেতর কিভাবে ফলবাগান হয়? পানিতে সব গাছ ডুবে মরে যাবে। কেউ কেউ তাকে পাগলও বলেন। লোকের কথায় কান না দিয়ে তিনি তার কাজ করতে থাকেন। বিশ্বাস ছিলো সফল হবেন।

ইউটিউব ও উপজেলা কৃষি অফিসের সহায়তায় মাছের প্রজেক্টের ভেতর ৩ হাজার বড়ই, ৭ হাজার লেবু, ৮শ কলা গাছ, মাল্টাসহ নানা জাতের সাথী ফসল ফলিয়ে এলাকায় ব্যাপক সাড়া ফেলেন। এই মুহূর্তে তার বাগানে বড়ইয়ের চমৎকার ফলন রয়েছে। গাছের পাতায় পাতায় বড়ই দুলছে। বল সুন্দরী জাতের বড়ই দেখতে খুবই সুন্দর। খেতে মিষ্টি-অধিক রসালো ও পুষ্টিগুণে ভরপুর। তিন হাজার বড়ই গাছ থেকে ৩ বছরে বিক্রি করেছেন প্রায় অর্ধ কোটি টাকার বেশি বড়ই।

কৃষক ইউনুছ ভূঁইয়া বলেন, আমি বিদেশে ছিলাম। সেখানে কৃষি খামারের তত্ত্বাবধানে কাজ করেছি। দেশে এসে কোভিডের কারণে আর বিদেশ যেতে পারি নাই। বেকার হয়ে পড়ছিলাম। অনেক ভাবনা চিন্তা করে সিদ্ধান্ত নেই যে আর অন্যের অধীনে চাকরি করবো না। এবার উদ্যোক্তা হয়ে নিজেই কিছু একটা করব। যেই ভাবা সেই কাজ। তাই আমার পরিত্যক্ত ১০ বিঘা জমির সঙ্গে আরো ৫০ বিঘা জমি লিজ নিয়ে একটি মাছের প্রজেক্ট তৈরি করি। দুই বছর পর আরো ৫ বিঘা জমি কিনেছি।

তিনি বলেন, মাছের ব্যবসা ভালো না হওয়ায় প্রজেক্টের ভেতর বড়ই ও লেবুর বাগান করার সিদ্ধান্ত নেই। মাছের প্রজেক্টের মত নীচু জায়গায় ফলবাগান করছি দেখে এলাকার মানুষ আমাকে পাগল বলছে। সমালোচকদের কথায় কান না দিয়ে নাটোর থেকে আড়াই মাস বয়সী বড়ই ও লেবুর চারা এনে রোপণ করি । চারা রোপণের ৩ মাস পর বাগানের প্রতিটা গাছে বড়ই আসে। প্রথম বছর প্রায় দেড় লাখ টাকার বড়ই বিক্রি করেছি। পরের বছর ৩০ লাখ, এবছর ঘূর্ণিঝড় সিত্রাংয়ের কারণে কম হলেও আশা করছি ২৫ লাখ টাকার বড়ই বিক্রি হবে।

এ উদ্যোক্তা বলেন, একটি গাছে ৩০ থেকে ৪০ কেজি বড়ই আসে। পাইকারদের কাছে ৮৫ টাকা কেজি দরে বিক্রি করছি। বাগানে প্রতিদিন ১০ জন শ্রমিক কাজ করে। এছাড়াও বাগান নিরাপত্তার জন্য সার্বক্ষণিক দুইজন লোক নিয়োজিত আছে। আমার বিশ্বাস ছিল সফল হবো এবং হয়েছি।

মুরাদনগর উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা পাভেল খান পাপ্পু বলেন, কুমিল্লার সবচেয়ে বড়-বড়ই বাগান কাজিয়াতল। আমি ও উপসহকারী কর্মকর্তারা রীতিমত এই কৃষি প্রজেক্টটি দেখাশোনা করছি। কৃষক ইউনুছ ভূঁইয়ার মত যারা উদ্যোক্তা হয়ে পরিত্যক্ত জমিতে বাগান ও কৃষি কাজ করতে চায় আমরা তাদের সর্বাত্তক সহযোগিতা দিয়ে পাশে থাকবো।

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App