×

সারাদেশ

সাগরজলের রাজ কাঁকড়া: বাণিজ্য সম্ভাবনা

Icon

কাগজ প্রতিবেদক

প্রকাশ: ০৩ ফেব্রুয়ারি ২০২৩, ০৮:৩৬ এএম

সাগরজলের রাজ কাঁকড়া: বাণিজ্য সম্ভাবনা

কক্সবাজারের রেজু খালে আহত অবস্থায় পাওয়া একটি রাজ কাঁকড়া। ছবি: ভোরের কাগজ

বংশবৃদ্ধির বিষয়ে চলছে গবেষণা

সাগরজলের রহস্যময় প্রাণী ‘হর্সসু ক্র্যাব’ বা ‘রাজ কাঁকড়া’র নীল রক্তের বিলিয়ন-বিলিয়ন ডলারের বাণিজ্য রয়েছে সারাবিশ্বে। চিকিৎসাবিজ্ঞানে ব্যাপক ব্যবহারের কারণে আন্তর্জাতিক বাজারে এই প্রাণীটির এক গ্যালন রক্ত বিক্রি হয় অন্তত ৬০ হাজার মার্কিন ডলারে। অনিয়ন্ত্রিত আহরণের ফলে বিশ্বজুড়ে বিলুপ্তির হুমকিতে থাকা এ প্রাণীটির এখনো প্রাচুর্যতা আছে বঙ্গোপসাগরে। তবে জেলে ও উপকূলের বাসিন্দাদের অসচেতনতার কারণে মারা পড়ছে প্রাণীটি।

প্রাকৃতিকভাবে সংরক্ষণের পাশাপাশি কৃত্রিম প্রতিপালনের মাধ্যমে প্রাণীটিকে কীভাবে মানুষের কল্যাণে কাজে লাগানো যায়, এ বিষয়ে গবেষণা চালাচ্ছেন সমুদ্র বিজ্ঞানীরা।

কক্সবাজারের স্থানীয় লোকজন রাজ কাঁকড়াকে চিনে ‘দিয় কিঁয়ারা’ বা দৈত্য কাঁকড়া হিসেবে। উপকূলে প্রায়ই আহত বা মৃত অবস্থায় দেখা মেলে এই নিরীহ জলজ প্রাণীর। জেলে ও উপকূলের বাসিন্দাদের অসচেতনতার কারণে উপকূলে ডিম দিতে এসে প্রায় সময় জালে আটকে মারা পড়ছে প্রাণীটি।

রাজ কাঁকড়া নিয়ে গবেষণায় নিয়োজিত সমুদ্র বিজ্ঞানী, বাংলাদেশ সমুদ্র গবেষণা ইনস্টিটিউটের মহাপরিচালক সাঈদ মাহমুদ বেলাল হায়দর বলেন, প্রকৃতিতে অবিকৃত অবস্থায় প্রায় ৪৪ কোটি ৫০ লাখ বছর ধরে টিকে থাকা ‘জীবন্ত জীবাশ্ম’ রাজ কাঁকড়ার নীল রক্তের রয়েছে অসাধারণ ক্ষমতা। এদের রক্তে রয়েছে হিমোসায়ানিন। এতে কপার ও তামার উপস্থিতি থাকায় বাতাসের সংস্পর্শে এলে নীল বর্ণ ধারণ করে। এরা যে কোনো ধরনের ব্যাকটেরিয়া এবং বিষাক্ত পদার্থ থেকে নিজেদের রক্ষা করতে পারে। মানবদেহে প্রয়োগের আগে, এ কাঁকড়ার রক্ত দিয়ে পরীক্ষা করে নেয়া যায়, টিকা বা ভ্যাকসিন, জীবাণুমুক্ত কিনা। আজ পর্যন্ত ভ্যাকসিন নিয়ে যত ধরনের গবেষণা হয়েছে এবং যত ধরনের ভ্যাকসিন উৎপাদিত হয়েছে প্রত্যেকটির জন্যই প্রয়োজন হয়েছে এদের রক্ত। করোনা মহামারিকে নিয়ন্ত্রণ করতে যেসব ভ্যাকসিন আবিষ্কার করা হয়েছে সেখানেও ব্যবহার করা হয়েছে রাজ কাঁকড়ার মূল্যবান রক্ত।

তিনি বলেন, বিশ্বের অনেক দেশেই ‘হর্সসু ক্র্যাব’ এর অস্তিত্ব নেই। তবে এখনো এই নিরীহ জলজ প্রাণীটির অবাধ বিচরণ ও প্রাচুর্যতা রয়েছে বঙ্গোপসাগরে। কিন্তু বর্তমানে দেশের বিভিন্ন উপকূলের নদী ও নদীমোহনায় অবৈধভাবে বসানো বিহিন্দি জালে প্রচুর রাজ কাঁকড়া আটকা পড়ে মারা যাচ্ছে। প্রাণীটি নিয়ে সচেতনতা নেই জেলেদের মাঝে। এমন প্রেক্ষাপটে বাংলাদেশে প্রাকৃতিকভাবে রাজ কাঁকড়া সংরক্ষণের পাশাপাশি কৃত্রিম প্রতিপালনের মাধ্যমে প্রাণীটিকে কীভাবে মানুষের কল্যাণে কাজে লাগানো যায় সে বিষয়ে সম্প্রতি গবেষণা চালাচ্ছেন সমুদ্র বিজ্ঞানীরা।

সাঈদ মাহমুদ বেলাল হায়দর আরো বলেন, এখন পর্যন্ত আমরা আসলে পরিপূর্ণভাবে জানি না এই হর্সসু ক্র্যাবের বিস্তৃতি কতটুকু আছে, এটির বাস্তুতন্ত্র কি, এখানে আরো অন্য প্রজাতির বিস্তৃতি আছে কিনা। এসব নিয়ে বাংলাদেশে ইতোপূর্বে গবেষণা হয়নি। আমরাই প্রথম গবেষণা শুরু করেছি এবং আমরা চেষ্টা করছি, প্রকৃতিতে হুমকির মুখোমুখি যে প্রাণীটুকু আছে সেখান থেকে তাকে রক্ষা করে ল্যাবরেটরিতে কৃত্রিম উপায়ে প্রজনন করা যায় কিনা, প্রজনন করা গেলে সেটিকে পরিচর্যা করে প্রকৃতিতে প্রতিস্থাপন করলে ফলাফল কি আসে, বর্তমানে যেসব এলাকায় হর্সসু ক্র্যাব প্রজনন করতে আসে সেই প্রজনন স্থানগুলোকে চিহ্নিত করে সেখানকার যেসব উপকূলীয় জেলেরা আছেন বা অধিবাসীরা আছেন তাদের কীভাবে সচেতন করা যায় এই প্রাণীটি সম্পর্কে সে বিষয়ে আমরা কাজ শুরু করেছি। আমাদের প্রাথমিক কাজ হচ্ছে, এখানে কত ধরনের বা কত প্রজাতির হর্সসু ক্র্যাব রয়েছে, এর যে রক্ত রয়েছে তা আহরণযোগ্য কিনা, সেখানে কি ধরনের বায়োকেমিক্যাল কম্পোজিশন রয়েছে, সেটির সঙ্গে উত্তর আমেরিকায় যে হর্সুস ক্র্যাব রয়েছে সেটির তুলনামূলক বিচার করে আমরা দেখতে চাই আমাদের হর্সসু ক্র্যাবের গুণাগুণ কি রয়েছে। এটি একটি রহস্যময় প্রাণী এবং জীববিজ্ঞানীদের কাছে অন্যতম একটি অধ্যয়নের বিষয় বটে। এটিকে সংক্ষরণ করা প্রয়োজন। কারণ বিশ্বের অনেক দেশেই হর্সসু ক্র্যাবের অস্তিত্ব নেই। বিশ্বের অল্প যে কয়েকটি দেশে হর্সসু ক্র্যাব রয়েছে তার মধ্যে বাংলাদেশ অন্যতম। আমাদের এখন উচিত এটির প্রজননস্থলগুলোকে চিহ্নিত ও সংরক্ষণ করে ভবিষ্যতে কিভাবে এই প্রাণীটিকে মানুষের কল্যাণে কাজে লাগানো যায় সেদিকে যত্নবান হওয়া।

গবেষণায় নিয়োজিত বাংলাদেশ সমুদ্র গবেষণা ইনস্টিটিউটের জ্যেষ্ঠ বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা মো. তরিকুল ইসলাম বলেন, ‘বঙ্গোপসাগর ও সংলগ্ন উপকূলীয় এলাকায় এ পর্যন্ত দুই প্রজাতির রাজ কাঁকড়ার অস্তিত্ব খুঁজে পেয়েছি আমরা। এর একটি পাওয়া যায় বালুকাময় অঞ্চলে। আরেকটি পাওয়া যায় ম্যানগ্রোভ বনে। যারা সাগর থেকে একটি নির্দিষ্ট সময়ে দলে দলে ম্যানগ্রোভে আসে পরে আবার সাগরে চলে যায়।

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App