×

সারাদেশ

মুঘল আমলের ‘দেওয়ানের পুল’ ভাঙার প্রশ্নে গণশুনানি আজ

Icon

কাগজ প্রতিবেদক

প্রকাশ: ২২ জানুয়ারি ২০২৩, ০১:২৫ পিএম

মুঘল আমলের ‘দেওয়ানের পুল’ ভাঙার প্রশ্নে গণশুনানি আজ

ছবি: সংগৃহীত

সিলেটের গোলাপগঞ্জ উপজেলার প্রায় ২০০ বছরের পুরনো মুঘল আমলের ‘দেওয়ানের পুল’ ভাঙা বিষয়ে সিদ্ধান্ত নিতে গণশুনানির আয়োজন করা হয়েছে।

রবিবার (২২ জানুয়ারি) বেলা ১১টায় সেতুসংলগ্ন রাস্তায় স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তর (এলজিইডি) এ শুনানির আয়োজন করে।

এলজিইডি সিলেটের নির্বাহী প্রকৌশলী ইনামুল কবীর বলেন, পুরাতন সেতুটি ভেঙে আধুনিক যুগোপযোগী একটি সেতু নির্মাণের উদ্যোগ নিয়েছিল এলজিইডি। পরে এ নিয়ে গণমাধ্যমে লেখালেখি হলে ভাঙার কাজ স্থগিত রাখা হয়। পরে স্থানীয় লোকজন পুরাতন সেতুটি ভেঙে নতুন সেতু নির্মাণের দাবি জানিয়ে মানববন্ধন করেন।

নির্বাহী প্রকৌশলী আরও বলেন, স্থানীয় ব্যক্তিদের পাল্টাপাল্টি মতামতের পরিপ্রেক্ষিতে গণশুনানির আয়োজন করা হয়েছে। বেলা ১১টা থেকে দুপুর সাড়ে ১২টা পর্যন্ত গণশুনানি চলে। সেখান থেকে প্রাপ্ত সুপারিশের ভিত্তিতেই পরবর্তী ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

এর আগে গত ডিসেম্বর মাসের মাঝামাঝি গোলাপগঞ্জ উপজেলার বাউশা এলাকার দেওরভাগা খালে অবস্থিত প্রায় ২০০ বছরের পুরোনো মুঘল আমলের ‘দেওয়ানের পুল’ ভাঙার কাজ শুরু করে এলজিইডি। ৩ কোটি ৮২ লাখ টাকা ব্যয়ে এখানে নতুন একটি সেতু নির্মাণ হওয়ার কথা রয়েছে। তবে মুঘল আমলে নির্মিত সেতুটি ভাঙার খবর পেয়ে স্থানীয় মানুষ এবং বাংলাদেশ পরিবেশ আন্দোলন (বাপা) সিলেটের একটি প্রতিনিধিদল ঘটনাস্থলে পৌঁছে সেতুটি অক্ষতভাবে রক্ষার দাবি জানায়। পরে স্থানীয় সংসদ সদস্য ও সাবেক শিক্ষামন্ত্রী নুরুল ইসলাম নাহিদের নির্দেশনায় ২৮ ডিসেম্বর থেকে সেতু ভাঙার কাজ বন্ধ রাখা হয়।

প্রত্নতত্ত্ব বিভাগকে না জানিয়ে পুল ভাঙার উদ্যোগ বা গণশুনানির বিষয়টি ভালো চোখে দেখছেন না পরিবেশবাদীরা। বাংলাদেশ পরিবেশ আন্দোলনের (বাপা) সিলেট শাখার সাধারণ সম্পাদক আব্দুল করিম কিম বলেন, দেওয়ানের পুল ঐতিহাসিক স্থাপনা। এটি প্রত্নতাত্ত্বিক সম্পদ। এলজিইডি এটি ভাঙার অধিকার রাখে না। ভাঙতে হলে প্রত্নতত্ত্ব অধিদপ্তরের অনুমোদন নিতে হবে।

স্থানীয় তথ্য অনুযায়ী, মুঘল শাসনামলে সম্রাট মুহম্মদ শাহের রাজত্বকালে ১৭৪০ সালে সেতুটি নির্মাণ করা হয়। তখনকার শ্রীহট্ট (বর্তমান সিলেট) জেলার দেওয়ান (রাজস্ব কর্মকর্তা) ছিলেন গোলাব রাম বা গোলাব রায় নামে এক ব্যক্তি। বাংলার শাসনকর্তা সুজা উদ্দিন খান ও সিলেট অঞ্চলের ফৌজদার শমসের খানের সময় মুর্শিদাবাদ থেকে সিলেট আসেন দেওয়ান গোলাব রাম। বৈষ্ণব ধর্মের প্রবর্তক শ্রীচৈতন্যের পিতৃভূমি দেখতে তিনি সিলেট থেকে গোলাপগঞ্জের উদ্দেশে যাত্রা করেন। তবে বাউসী এলাকার দেওরভাগা খালে গিয়ে তিনি আটকে যান। তিনি সেখানকার মন্দির মেরামত ও যাতায়াতের জন্য খালের ওপর সেতু বা পুল নির্মাণের নির্দেশ দেন। দেওরভাগা খালের সেতুটি পরে 'দেওয়ানের পুল' নামে পরিচিতি পায়।

সেতুটির দৈর্ঘ্য ২০ ফুট ও প্রস্থ ১৬ ফুট। একই স্থানে ৯৯ ফুট দৈর্ঘ্য ও ৩২ ফুট প্রস্থের নতুন সেতু নির্মাণ করতে ৩ কোটি ৮২ লাখ টাকা বরাদ্দ দিয়েছে সরকার। এ জন্য সেতুটি ভাঙতে গত ২৬ ডিসেম্বর কার্যক্রম শুরু করে এলজিইডি। পুলের ওপরের অংশ ও পাশের অংশবিশেষ ভাঙার পর গণমাধ্যমে সংবাদ ও প্রতিবাদের মুখে ২৮ ডিসেম্বর কাজ স্থগিত করে এলজিইডি।

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App