×

সারাদেশ

অবহেলায় নষ্ট হচ্ছে ৬০ কোটি টাকার সরকারি যন্ত্রপাতি

Icon

কাগজ প্রতিবেদক

প্রকাশ: ২৪ ডিসেম্বর ২০২২, ০৮:৩৬ এএম

অবহেলায় নষ্ট হচ্ছে ৬০ কোটি টাকার সরকারি যন্ত্রপাতি

ছবি: ভোরের কাগজ

সুনামগঞ্জের তাহিরপুর উপজেলার উত্তর শ্রীপুর ইউনিয়নের টেকেরঘাট চুনাপাথর খনিজ প্রকল্পটি প্রায় দুই যুগেরও বেশি সময় ধরে বন্ধ রয়েছে। দীর্ঘদিন ধরে অবহেলায় নষ্ট হচ্ছে প্রকল্পের কাজে ব্যবহৃত প্রায় ৬০ কোটি টাকার সরকারি যন্ত্রপাতি। এসব যন্ত্রাংশের বেশির ভাগই অকেজো। ইতোমধ্যে চুরি হয়েছে প্রায় ২০ কোটি টাকার মূল্যবান যন্ত্রপাতি।

জানা গেছে, ওই চুনাপাথর খনিজ প্রকল্পটি বাংলাদেশ কেমিক্যাল ইন্ডাস্ট্রিজ করপোরেশনের (বিসিআইসি) নিয়ন্ত্রণাধীন। দীর্ঘদিন ধরে রক্ষণাবেক্ষণ না করায় প্রতিনিয়ত চুরি হচ্ছে যন্ত্রাংশ। বর্তমানে প্রকল্পের পার্শ্ববর্তী এলাকা বড়ছড়ার জিরোপয়েন্ট সংলগ্ন প্রকল্প ম্যানেজারের বাংলোর দরজা, জানালা এমনকি বাংলোর সীমানা প্রাচীরের ইট খুলে নিয়ে যাচ্ছে স্থানীয় একটি চক্র। এমনকি বাংলোর পেছনের দিক থেকে গর্ত করে মাটিও নিচ্ছে চক্রটি। এ যেন দেখার কেউ নেই।

স্থানীয়দের অভিযোগ, কর্তৃপক্ষের উদাসীনতার কারণে স্থানীয় একটি প্রভাবশালী চক্র ও প্রকল্পের নিরাপত্তার দায়িত্বে থাকা আনসার সদস্যদের যোগসাজশেই এসব চুরির ঘটনা ঘটছে।

অনুসন্ধানে জানা যায়, প্রকল্প বন্ধ হওয়ার পর প্রকল্প এলাকায় কর্মকর্তা-কর্মচারীদের কোয়ার্টারও দখল করে বসবাস শুরু করে স্থানীয় একটি চক্র। কিছু কিছু লোক কোয়ার্টার দখলে নিয়ে অন্য লোকদের কাছে ভাড়াও দিয়েছে। এছাড়া প্রকল্প এলাকার কিছু জমি দখল করে নিয়েছে তারা। দখলকৃত জায়গায় গড়ে উঠেছে দোকানসহ বিভিন্ন স্থাপনা।

সরজমিন বন্ধ থাকা চুনাপাথর খনিজ প্রকল্প এলাকা ঘুরে দেখা গেছে, অরক্ষিত অবস্থায় খোলা আকাশের নিচে অযত্ন-অবহেলায় পড়ে আছে প্রায় কোটি টাকা মূল্যের তিনটি ক্রেন, তিন কিলোমিটার ন্যারোগ্যাজ রেললাইন, ২০ লাখ টাকার স্লিপার, ৫ কোটি টাকার মূল্যের দুটি জেনারেটর, ২ কোটি টাকা মূল্যের লোকাল ট্রলি ইঞ্জিন ও পাঁচটি টিপিং টাব, বেকুহেলি, লোডার, ওয়ার্কশপ, ওয়েটব্রিজসহ চুনাপাথর উত্তোলনের কাঁচামাল ও মূল্যবান যন্ত্রাংশ।

এসব দেখভাল ও রক্ষণাবেক্ষণের জন্য ২০০৭ সালের পর একজন কর্মকর্তা, একজন এপিসি, একজন পিসি ও ১৮ জন আনসার সদস্যকে টেকেরঘাটে পদায়ন করা হয়। এরপরেও খনিজ প্রকল্পে এ পর্যন্ত ২০টিরও বেশি চুরির ঘটনা ঘটে। বর্তমানে এসব মূল্যবান যন্ত্রপাতি একেবারেই অরক্ষিত অবস্থায় থাকায় চুরি বৃদ্ধি পেয়েছে।

বিসিআইসির ছাতক সিমেন্ট ফ্যাক্টরি সূত্রে জানা গেছে, দেশের সিমেন্টের চাহিদা পূরণ করতে ১৯৪০ সালে সুরমা নদীর তীরে আসাম বেঙ্গল সিমেন্ট ফ্যাক্টরি (বর্তমানে যা ছাতক সিমেন্ট ফ্যাক্টরি) প্রতিষ্ঠা করা হয়। সে সময় ভারত থেকে চুনাপাথর আমদানি করা হতো। নিজস্ব ব্যবস্থায় চুনাপাথর উত্তোলনের জন্য ১৯৬১ সালে সুনামগঞ্জের তাহিরপুর উপজেলার উত্তর শ্রীপুর ইউনিয়নের ভাঙ্গারঘাট ও সীমান্তবর্তী টেকেরঘাটে পাঁচটি কূপ খনিতে প্রায় ১৩ কোটি ২৫ লাখ ৫৬ হাজার ৫৩৪ টন চুনাপাথর মজুত থাকার বিষয়টি নিশ্চিত হয় কর্তৃপক্ষ।

এরপর ১৯৬৫ সালে এখানে চুনাপাথর খনিজ প্রকল্প প্রতিষ্ঠা করা হয়। যা লাভের মুখ দেখে। এরপর একাধারে ১৯৮০ সাল পর্যন্ত মাত্র ১৬ লাখ ৬৩ হাজার ৭৮৩ টন চুনাপাথর উত্তোলন করা হয়। তবে বিসিআইসির কিছু অসাধু কর্মকর্তার কারণে এক সময় লোকসানে পড়ে প্রকল্পটি এবং বন্ধ হয়ে যায়।

স্থানীয় বাসিন্দা শুক্কুর আলী, ফরহাদ মিয়াসহ বেশ কয়েকজন বলেন, ‘বাংলাদেশের একমাত্র রাষ্ট্রায়ত্ত চুনাপাথর খনিজ প্রকল্পের বর্তমান সরকারি কোয়ার্টার দখল করে অন্যদের কাছে ভাড়া দিয়েছে স্থানীয় প্রভাবশালীরা। দখল হয়েছে প্রকল্প এলাকার বেশির ভাগ সরকারি জমি। দিন দিন এ দখলের পরিমাণ বাড়ছে। কিন্তু সরকারি সম্পত্তি রক্ষায় সংশ্লিষ্টদের কোনো উদ্যোগ নেই।’

তাহিরপুর কয়লা আমদানিকারক গ্রুপের আন্তর্জাতিকবিষয়ক সম্পাদক ও সুনামগঞ্জ জেলা স্বেচ্ছাসেবক লীগের সহসভাপতি আবুল খায়ের বলেন, ‘প্রকল্প এলাকায় চুরি বৃদ্ধি পেয়েছে। মূল্যবান তামার তার ও যন্ত্রাংশ রাতের আঁধারে চুরি করে বিক্রি করছে একটি সিন্ডিকেট। সরকারি সম্পদ রক্ষা করে এখানে আগত পর্যটকদের জন্য আবাসনের ব্যবস্থা করলে বেকার যুবকদের কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি হবে। সেই সঙ্গে রাজস্বও পাবে সরকার।’

এ বিষয়ে বক্তব্য জানতে ছাতক সিমেন্ট ফ্যাক্টরির (ভারপ্রাপ্ত) ব্যবস্থাপনা পরিচালক অমল কৃষ্ণ বিশ্বাসের মুঠোফোনে একাধিকবার কল করা হলেও তা রিসিভ করেননি তিনি।

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App