×

সারাদেশ

দুর্গ ভাঙার চেষ্টা আ.লীগের জয়ী হতে মরিয়া জাপা

Icon

কাগজ প্রতিবেদক

প্রকাশ: ২২ ডিসেম্বর ২০২২, ০৯:২৬ এএম

দুর্গ ভাঙার চেষ্টা আ.লীগের জয়ী হতে মরিয়া জাপা

ছবি: ভোরের কাগজ

রংপুর সিটি কর্পোরেশন (রসিক) নির্বাচনের প্রচার-প্রচারণা এখন তুঙ্গে। নির্বাচনের আর পাঁচ দিন বাকি থাকলেও প্রচারের জন্য প্রার্থীদের হাতে সময় মাত্র তিন দিন। আগামী ২৫ ডিসেম্বর মধ্য রাতে শেষ হয়ে যাবে প্রচারণা। তাই প্রার্থীদের চোখে ঘুম নেই। দিনে বাড়ি বাড়ি গিয়ে আর রাতে মোবাইল ফোনে তারা ভোট প্রার্থনা করে যাচ্ছেন।

গতকাল বুধবার ১৯নং ওয়ার্ডসহ বিভিন্ন এলাকা ঘুরে ভোটারদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, প্রার্থীরা এখন দিনরাত প্রচারের জন্য ছোটাছুটি করছেন। স্থান-কাল-পাত্রভেদে কখনো দলীয় পরিচয়ে, কখনো নিজের পরিচয়ে, কখনো আত্মীয়স্বজনের পরিচয়ে ভোট চাইছেন তারা। সারাদিন গণসংযোগ শেষে রাতে আবার চলছে পরদিনের প্রস্তুতির বৈঠক।

রংপুর সিটি করপোরেশন নির্বাচনে মেয়র পদে নৌকা ও লাঙ্গল প্রতীকের দুই প্রার্থীর মধ্যে চলছে হিসেব-নিকেশ। আওয়ামী লীগের প্রার্থী ও সমর্থকরা সরকারের বিভিন্ন উন্নয়ন কর্মকাণ্ড নিয়ে প্রচার চালিয়ে জাতীয় পার্টির দুর্গ ভেঙে ফেলার চেষ্টা করছেন। আর জাতীয় পার্টির লাঙ্গল প্রতীকের প্রার্থী ও সমর্থকরা নিজেদের ঘাঁটিতে জয়ী হওয়ার জন্য মরিয়া হয়ে মাঠে নেমেছেন। এবারের নির্বাচনে ব্যক্তি ইমেজের চেয়ে প্রতীকই প্রাধান্য পাচ্ছে বেশি।

জাতীয় পার্টির প্রার্থী মোস্তাফিজার রহমান মোস্তফা গত পাঁচ বছর মেয়র ছিলেন। তার আমলে সিটিতে যেসব উন্নয়ন কাজ হয়েছে, সেসব তুলে ধরে ভোট চাইছেন তিনি। জাতীয় পার্টি মনে করে, উন্নয়নের ধারাবাহিকতা বজায় রাখতে হলে লাঙ্গল প্রতীকের বিজয়ের বিকল্প নেই। ১৯৯০ সাল থেকে জাতীয় পার্টির ঘাঁটি হিসেবে রংপুর পরিচিত।

আওয়ামী লীগের প্রার্থী হোসনে আরা লুৎফা ডালিয়া বলেন, সারাদেশে উন্নয়নের ধারাবাহিকতায় রংপুর বিভাগে সিটি করপোরেশন, বিশ্বঝবিদ্যালয়, ছয়লেন সড়ক, শিক্ষা-স্বাস্থ্যসহ নানা খাতে উন্নয়ন হয়েছে। তবে যোগ্য প্রতিনিধি না থাকায় কাঙ্ক্ষিত  উন্নয়ন হয়নি রংপুর সিটি এলাকায়।

গতকাল নগরীর মেডিকেল মোড় এলাকায় আওয়ামী লীগের মনোনীত নৌকা মার্কার মেয়র প্রার্থী হোসনে আরা লুৎফা ডালিয়া বলেন, রংপুরের মানুষ নৌকা মার্কায় ভোট দিতে উদগ্রীব হয়ে আছেন। কেননা নগরবাসীর ভাগ্য উন্নয়নের মার্কা নৌকা। ২৭ ডিসেম্বর হবে নৌকা মার্কার বিজয়ের দিন। তিনি বলেন, রংপুর জেলা ও মহানগর আওয়ামী লীগসহ অঙ্গ সহযোগী সংগঠনের নেতাকর্মীরা এখন ঐক্যবদ্ধ। তাদের সবার সহযোগিতা ও সাধারণ মানুষের দোয়া এবং সমর্থন নিয়ে এবার নৌকা মার্কার জয় হবে ইনশাআল্লাহ।

এর আগে মঙ্গলবার নগরীর কাচারি বাজার এলাকায় গণসংযোগে এসে আওয়ামী লীগ প্রার্থী-রংপুরে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বিভিন্ন উন্নয়ন চিত্র তুলে ধরে নৌকা মার্কায় ভোট চান। এ সময় উপস্থিত ছিলেন জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট রেজাউল করিম রাজু, সিনিয়র সহসভাপতি বীর মুক্তিযোদ্ধা ইলিয়াস আহমেদ, সাংস্কৃতিকবিষয়ক সম্পাদক আতিক ঊল আলম কল্লোল, যুবলীগ নেতা মতিউর রহমান বাদশা, সোহেল পারভেজ, সাদ্দাম হোসেন পাভেল, সিরাজুম মনির বাশার, মুরাদ হোসেন, কামরুজ্জামান শাহীন, জেলা ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি মেহেদী হাসান রনি প্রমুখ।

এদিকে, গতকাল নগরীর পূর্ব গেট, পাকারমাথা, বাংলাদেশ ব্যাংক মোড় ও নগরীর গ্র্যান্ড হোটেল মোড়ে নির্বাচনী গণসংযোগ করেন জাতীয় পার্টির প্রার্থী মোস্তাফিজার রহমান মোস্তফা। এ সময় তিনি শতভাগ সেবা নিশ্চিতের আগে কোনো কর নেননি বলে দাবি করেন। তিনি বলেন, গত নির্বাচনে আমার ইশতেহারে ছিল রংপুর সিটি করপোরেশনের বর্ধিত ১৮টি ওয়ার্ডে শতভাগ সেবা নিশ্চিতের আগে কর না নেয়ার, সেই কথা রেখেছিলাম।

তিনি জানান, ১৫টি ওয়ার্ডের আদায় করা করের টাকা দিয়ে ৩৩টি ওয়ার্ড চালিয়েছি। এজন্য কর আদায়কারী, কর নির্ধারণকারীসহ সংশ্লিষ্ট সবাইকে কাজে লাগাতে হবে। আমরা করদাতাদের বাড়িতে বাড়িতে গিয়ে নাগরিক দায়িত্ব কর দেয়ার ব্যাপারটি জানিয়েছি।

এ সময় জাতীয় পার্টির মহানগর সাধারণ সম্পাদক এস এম ইয়াসির, সিনিয়র সহসভাপতি লোকমান হোসেন, সহসভাপতি জাহেদুল ইসলাম, জেলা জাপার সদস্য সচিব আব্দুর রাজ্জাক, নির্বাচন পরিচালনা কমিটির আইন সম্পাদক এডভোকেট সৈয়দ ফারুক আলম, মহানগর ছাত্রসমাজের সভাপতি ইয়াসিন আরাফাত আসিফ, জেলা আহ্বায়ক আরিফুল ইসলামসহ জাতীয় পার্টির নেতারা উপস্থিত ছিলেন।

এছাড়া রংপুর সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনে নৌকা এবং লাঙ্গল প্রতীকের বাইরে স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে আলোচনায় রয়েছেন ইঞ্জিনিয়ার লতিফুর রহমান মিলন। উন্নয়নের স্বার্থে নগরবাসী পরিবর্তন চায়, এ জন্য ভোটের মাঠে ব্যাপক সাড়া পাচ্ছেন বলে দাবি করেছেন এই প্রার্থী।

গতকাল বুড়িরহাটে গণসংযোগের সময় সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে তিনি এ দাবি করেন। তিনি বলেন, আধুনিক কৃষিভিত্তিক শিল্পনগরী গঠন ও পরিবর্তনের অঙ্গীকার নিয়ে ইতোমধ্যে ১৭ দফা নির্বাচনী ইশতেহার ঘোষণা করা হয়েছে। সারাদেশের উন্নয়নের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে রংপুর সিটির উন্নয়নে এবং আগামী প্রজন্মের জন্য বাসযোগ্য পরিকল্পিত নগরী গঠনে দফাগুলো অত্যন্ত সময়োপযোগী।

আগামী ২৭ ডিসেম্বর অনুষ্ঠেয় নির্বাচনে ৯ জন মেয়র প্রার্থীসহ ২৬০ জন প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন। এরমধ্যে ১১টি সংরক্ষিত নারী কাউন্সিলর পদের বিপরীতে ৬৮ জন এবং ৩৩টি সাধারণ আসনে কাউন্সিলর প্রার্থী ১৮৩ জন প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন।

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App