×

সারাদেশ

বিলীন হচ্ছে সুনামগঞ্জের ফসলি জমি-বাড়ি

Icon

কাগজ প্রতিবেদক

প্রকাশ: ১৬ ডিসেম্বর ২০২২, ১২:১৩ পিএম

বিলীন হচ্ছে সুনামগঞ্জের ফসলি জমি-বাড়ি

ছবি: ভোরের কাগজ

ভারতের মেঘালয় সীমান্তঘেঁষা একটি এলাকা হলো সুনামগঞ্জের তাহিরপুর উপজেলার বড়দল উত্তর ইউনিয়ন। এ ইউনিয়নের চানপুরসহ বেশ কয়েকটি গ্রামের ফসলি জমি, বসতবাড়ি ও বিদ্যালয়সহ রাস্তা-ঘাট মেঘালয় পাহাড় থেকে নেমে আসা বালুর আগ্রাসনে বিলীন হতে যাচ্ছে। বালুর আগ্রাসন থেকে রক্ষা পেতে ইতোমধ্যে অনেকেই ঘরবাড়ি ছেড়ে অন্যত্র বসবাস করছেন। স্থানীয় বাসিন্দাদের অভিযোগ, গত কয়েক বছর ধরে ভারতের মেঘালয়ে অপরিকল্পিতভাবে কয়লা ও ইউরেনিয়াম খনি খননের পর থেকেই পাহাড় ভেঙে তাহিরপুর উপজেলার সীমান্ত এলাকায় বিপর্যয় নেমে এসেছে। সীমান্ত এলাকায় ভারতীয় বালুর আগ্রাসনে ফসলি জমি, বসতবাড়ি, বিদ্যালয় ও রাস্তাঘাট বিলীন হলেও তা প্রতিরোধে কোনো ব্যবস্থা নিচ্ছে না সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ। এছাড়াও বালুর আগ্রাসনে স্থানীয় বিজিবি ক্যাম্পও হুমকির মুখে পড়েছে। সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, ভারতের মেঘালয় খাসিয়া পাহাড়ের সীমান্তঘেঁষা তাহিরপুর উপজেলার বড়দল উত্তর ইউনিয়নের চানপুর, রজনীলাইন, রাজাই, মাহারাম, বুরুঙ্গাছড়া ও শান্তিপুর গ্রাম অবস্থিত। গ্রামের দক্ষিণ পাশে খাইমারা ও পচাশোল হাওর। এ দুই হাওরে ছয়টি গ্রামের লোকজনের ফসলি জমি রয়েছে। তবে চানপুর গ্রামটি একেবারে মেঘালয় পাহাড়ের পাদদেশে। চনপুর উচ্চবিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মজিবুর রহমান জানান, স্কুলের আঙিনায় কয়েক বছর আগে কোনো বালু ছিল না। এখন বালুতে ঢেকে গেছে পুরো স্কুলের আঙিনা। এ জন্য কোমলমতি ছাত্র, ছাত্রীদের সর্দি-কাশি লেগেই থাকে। চানপুর বাজার বণিক সমিতির সভাপতি রাজা মিয়া বলেন, ‘এই বালু শুধু আমাদের পাশের দুই হাওরে নয়, একইভাবে টাঙ্গুয়ার হাওরেও যাচ্ছে। বালু আগ্রাসন দিন দিন বেড়েই যাচ্ছে। কিন্তু আগ্রাসন মোকাবিলায় প্রয়োজনীয় উদ্যোগ নেয়ার জন্য এলাকাবাসীর পক্ষ থেকে নানাভাবে দাবি জানানো হলেও কোনো ফল পাওয়া যায়নি।’ সাবেক ইউপি সদস্য মহিউদ্দিন আহম্মেদ জানান, গ্রামের উত্তরপাড়ায় অনেকের বাড়ি ছিল। কিন্তু চারপাশে বালুর স্তর পড়ায় অনেকেই অন্যত্র গিয়ে বাড়ি করেছেন। খাইমারা হাওরের কৃষক আব্দুর রাজ্জাক বলেন, ‘এই হাওরে আমার তিন বিঘা জমি আছে। কিন্তু মেঘালয় পাহাড় থেকে নেমে আসা বালুর স্তর পড়ে ফসলি জমি নষ্ট হয়ে গেছে। আরো পাঁচটি গ্রামের কৃষকদের একই অবস্থা। গত কয়েক বছরে এলাকার দুটি হাওরে প্রায় কয়েক হাজার একর ফসলি জমি নষ্ট হয়েছে।’ উত্তর বড়দল ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সহসভাপতি ও আদিবাসী নেতা শঙ্কর মারাক বলেন, ‘প্রতিবছরই মেঘালয় পাহাড় থেকে ঢলের সঙ্গে নেমে আসা বালি-পাথরে আমাদের এখানকার প্রাকৃতিক পরিবেশ ও কৃষিজমি নষ্ট হচ্ছে। এবার কড়ইগড়া কমিউনিটি ক্লিনিকের পাশের ফসলি জমি বালুতে ভরাট হয়ে গেছে। সীমান্তে বসবাসকারী কয়েকটি আদিবাসী পরিবার এ কারণে বাস্তুচ্যুত হয়ে অন্যত্র চলে গেছে।’ বাংলাদেশ আদিবাসী ফোরাম কেন্দ্রীয় কমিটির অর্থ সম্পাদক ও আদিবাসী নেতা এন্ড্রো সলোমার বলেন, ‘বালুর আগ্রাসনে আমার ২০ একর জমি নষ্ট হয়ে গেছে। এভাবে প্রতিবছরই ক্ষয়ক্ষতি হচ্ছে। এতে বিপাকে পড়ছেন প্রান্তিক কৃষকরা। বালির আগ্রাসন প্রতিরোধে ভারত-বাংলাদেশের মধ্যে জরুরিভিত্তিতে সংলাপ করে কার্যকর উদ্যোগ নিতে হবে।’ কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর সুনামগঞ্জের উপপরিচালক বিমল চন্দ্র সোম বলেন, ‘কৃষি জমি ছাড়া অন্য কোথায়ও বালু ভরাট হলে আমাদের কিছু করার নেই। তাহিরপুর উপজেলার সীমান্ত এলাকায় বালুর কারণে কি পরিমাণ ফসলি জমি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে, সে বিষয়ে তথ্য সংগ্রহ করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানানো হবে।’

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App