×

সারাদেশ

চাঁপাইয়ে বিলুপ্তির পথে ভেড়ার লোমের বস্ত্রপণ্য শিল্প

Icon

কাগজ প্রতিবেদক

প্রকাশ: ১৬ অক্টোবর ২০২২, ১২:০৫ পিএম

চাঁপাইয়ে বিলুপ্তির পথে ভেড়ার লোমের বস্ত্রপণ্য শিল্প

ছবি: সংগৃহীত

চাঁপাইনবাবগঞ্জে ভেড়ার লোম থেকে কয়েকটি ধাপে তৈরি করা হয় সুতা। সেই সুতার বুননে তৈরি হয় নানান ধরনের বস্ত্রপণ্য। তবে এই শিল্পের চর্চা দেশে বিরল। বাবার কাছ থেকে শিখে ৫০ বছরেরও বেশি সময় ধরে সেই কাজটি করে আসছেন চাঁপাইনবাবগঞ্জ পৌরসভার নয়াগোলা এলাকার মোমিনপাড়া এলাকার আবদুল খালেক।

নিপুণ হাতের দক্ষতায় ভেড়ার লোম থেকে তিনি তৈরি করে আসছেন কম্বল থেকে শুরু করে জায়নামাজ, মাফলার ছাড়াও বিভিন্ন ধরনের শিল্পকর্ম। আবদুল খালেক জানান, বংশপরম্পরায় দীর্ঘ ৫ দশক ধরে নিজ বাড়িতেই ভেড়ার লোম থেকে কম্বল তৈরির কাজটি তিনি করে আসছেন। এ কাজে শিল্পকর্ম সৃজনের আনন্দ থাকলেও তাতে কষ্ট বেশি, পরিশ্রমের তুলনায় মুনাফাও খুব বেশি নয়। এ কারণেই পরবর্তী প্রজন্মের কেউ আর এ শিল্পচর্চায় খুব একটা আগ্রহী হচ্ছে না। ৬৪ বছর বয়সী আবদুল খালেকের মৃত্যু হলে এ শিল্পটি টিকে থাকবে কিনা, তা নিয়েই সংশয়ে রয়েছেন তিনি। এ বয়সে এসে তার চাওয়া,সরকারিভাবে প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করে এই শিল্পটি পরবর্তী প্রজন্মের মধ্যে ছড়িয়ে দেয়া হোক। স¤প্রতি আবদুল খালেকের বাড়িতে গিয়ে দেখা যায়, চরকাতে ভেড়ার লোম দিয়ে সুতা তৈরি করছেন তিনি।

ভোরের কাগজকে তিনি জানান- বেশ কয়েকটি ধাপ পেরিয়ে তৈরি করা হয় একেকটি কম্বল। প্রথমে বিভিন্ন ভেড়ার খামার থেকে লোম সংগ্রহ করেন। এরপর সেই লোম পানি দিয়ে ধুয়ে পরিষ্কার করতে হয়। পরে শুকিয়ে রং অনুযায়ী আলাদা করা হয় লোমগুলো। সেই লোম দিয়ে চরকায় তৈরি করা হয় সুতা। হাতে চালানো তাঁতের বুননে সেই সুতা থেকে তৈরি হয় কম্বল। সেই কম্বল পা ও হাত দিয়ে মাড়িয়ে নরম করা হয়।

চাঁপাইনবাবগঞ্জের ভেড়ার লোমের কম্বলের চাহিদা সারাদেশে আছে। বিদেশেও গেছে এ কম্বল। এখনো যে পরিমাণ চাহিদা, তা একা সামাল দিতে পারেন না বলে জানান আবদুল খালেক। তিনি বলেন, ৪/৫ হাত একেকটা কম্বলের দাম ৪ হাজার টাকা। আগে ২/১ দিনে একটা কম্বল বানাতে পারতাম। কিন্তু এখন একেকটা কম্বল বানাইতে এক সপ্তাহ লেগে যায়। এখনো চাহিদা আছে। তবে বয়সের ভারে বেশি কম্বল আর বানাইতে পারি না।

জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকেও নিজের হাতে বানানো ভেড়ার লোমের কম্বল উপহার দিয়েছিলেন আবদুল কাদের। সেই স্মৃতিচারণ করে তিনি বলেন, কম্বল পেয়ে তিনি (বঙ্গবন্ধু) খুব খুশি হয়েছিলেন। এ শিল্পটাকে যে করেই হোক টিকিয়ে রাখবেন বলে আশ্বাস দিয়েছিলেন। এখন কেউ এগিয়ে এলে আমার স্বপ্ন পূরণ হতো। যত খামার আছে সেগুলোর দিকে একটু দৃষ্টি দিলেই হবে। কাজ শেখানোর সময় একটু ভাতা দিলেই অনেকে কাজ শিখবে। তারপর আয় করে খেতে পারবে।

এ ব্যাপারে চাঁপাইনবাবগঞ্জ বিসিকের সহকারী মহাব্যবস্থাপক রায়হান আলী ভোরের কাগজকে বলেন, যতটুকু শুনেছি, ভেড়ার লোম থেকে কম্বল তৈরির জন্য চাঁপাইনবাবগঞ্জ এক সময় ছিল প্রসিদ্ধ। বর্তমানে এ শিল্প বিলুপ্তির পথে প্রায়। এখন মাত্র দুয়েকজন অবশিষ্ট আছেন, যারা এই শিল্পের সঙ্গে সম্পৃক্ত। বাকিরা অন্য পেশায় চলে গেছেন। তবে জেলার উদ্যোক্তাদের প্রশিক্ষণের মাধ্যমে এ শিল্পকে আবার ফিরিয়ে আনতে চেষ্টা করা হবে। এমনকি এ বিষয়ে যোগাযোগ করা হবে প্রধান কার্যালয়েও।

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App