×

সারাদেশ

সাড়ে ৫ মাস পর মধ্যপাড়া খনিতে পাথর উত্তোলন শুরু

Icon

কাগজ প্রতিবেদক

প্রকাশ: ১৩ অক্টোবর ২০২২, ০৭:৩৬ পিএম

সাড়ে ৫ মাস পর মধ্যপাড়া খনিতে পাথর উত্তোলন শুরু

মধ্যপাড়া খনিতে পাথর উৎপাদন কার্যক্রম শুরু

দীর্ঘ সাড়ে ৫ মাস পর দিনাজপুরের পার্বতীপুরে দেশের একমাত্র ভূগর্ভস্থ পাথরখনি মধ্যপাড়া গ্রানাইট মাইনিং কোম্পানি লিমিটেড (এমজিএমসিএল) থেকে পাথর উত্তোলন কার্যক্রম শুরু হয়েছে। বৃহস্পতিবার (১৩ অক্টোবর) সকাল ৭টা থেকে খনি ভূ-গর্ভে পাথর উত্তোলনের আনুষাঙ্গিক কার্যক্রম শুরু হয়।

এর আগে গত বুধবার পাথর উত্তোলন কাজে ব্যবহৃত অন্যতম প্রধান উপাদান বিস্ফোরক (বিস্ফোরক) খনিতে এসে পৌঁছায়। দীর্ঘদিন উৎপাদন বন্ধ থাকায় প্রায় নিস্তব্ধ হয়ে পড়া পাথর খনিতে কর্মচাঞ্চল্য ফিরতে শুরু করেছে। খনি কর্মকর্তা-কর্মচারী এবং জিটিসি’র অধীনে কর্মরত প্রায় ৭০০ শ্রমিক-কর্মচারীর মাঝে স্বস্তি ফিরে এসেছে।

জানা গেছে, খনি ভূগর্ভে পাথর উত্তোলন কাজে ব্যবহৃত বিস্ফোরক (ইমালশন) সংকটে পড়ে গত ১ মে থেকে পাথর উত্তোলন বন্ধ হয়। এর আগে এমোনিয়াম নাইট্রেট সংকটে ১২ মার্চ থেকে ২৬ মার্চ পর্যন্ত উত্তোলন বন্ধ ছিল। এমোনিয়াম নাইট্রেট মজুদ থাকলেও এক্সফ্লোসিভ (ইমালশন) সংকটে পড়ে গত সাড়ে ৫ মাস খনি বন্ধ থাকায় সরকার প্রতিমাসে রাজস্ব হারিয়ে ৫০ কোটি টাকার বেশি।

এছাড়া একদিকে, খনি কর্তৃপক্ষের লোকসানের পাল্লা ভারি হয়েছে। অপরদিকে খনি রক্ষণাবেক্ষণ করতে গিয়ে ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান জিটিসিকে প্রায় শতকোটি টাকা লোকসান গুনতে হয়েছে। পাশাপাশি মধ্যপাড়ার পাথরের উপর নির্ভরশীল দেশের নির্মাণাধীন মেগা প্রকল্পগুলোতে পাথর সংকট দেখা দেয়।

সূত্রমতে, মধ্যপাড়া খনির ভূগর্ভে বিস্ফোরণ ঘটিয়ে পাথর উত্তোলন করা হয়। এজন্য বছরে ৫ থেকে ৬ কোটি টাকার বিস্ফোরক প্রয়োজন হয়। এমোনিয়াম নাইট্রেট, ইমালশনসহ বিস্ফোরণ কাজে ব্যবহৃত অন্যান্য মালামালের পুরোটাই বিদেশ থেকে আমদানি করতে হয়। লেবাননের বৈরুতে এমোনিয়াম নাইট্রেডের গুদামে বিস্ফোরণ, কোভিড-১৯ এবং সর্বশেষ ইউক্রেন যুদ্ধের কারণে সারাবিশ্বে বিস্ফোরক তীব্র সংকট দেখা দেয় হয়। তাছাড়া মুদ্রাস্ফীতি, জাহাজ সংকট ও আন্তর্জাতিক বাজারে এক্সফ্লোসিভের মূল্যবৃদ্ধি এবং উচ্চ পরিবহন খরচ বিষয়টি আরও জটিল করে তোলে। এসব মালামাল আমদানি করতে একাধিকবার দরপত্র আহ্বান করেও কারো সাড়া না পেয়ে এক পর্যায়ে খনি কর্তৃপক্ষ নিজস্ব ব্যবস্থাপনায় ভারত ও থাইল্যান্ড থেকে কয়েকদফা তা আমদানি করে পাথর উৎপাদন সচল রাখে।

সূত্র জানায়, মধ্যপাড়া খনির পাথর উৎপাদন ঠিকাদার বেলারুশের জেএসসি ট্রেস্ট সকটোস্ট্রয় ও দেশীয় প্রতিষ্ঠান জার্মানিয়া করপোরেশন লিমিটেড নিয়ে গঠিত জার্মানিয়া ট্রেস্ট কনসোর্টিয়াম (জিটিসি)গত বছরের ডিসেম্বরে আমদানিকৃত এমোনিয়াম নাইট্রেট ও বিস্ফোরকের গুণগত মান নিয়ে প্রশ্ন তোলে। পরে এমজিএমসিএল চলতি বছরের এপ্রিল মাসে এসব স্পর্শকাতর মালামাল আমদানির জন্য জিটিসিকেই অনুমতি দেয়। অনুমতি পেয়েই জিটিসি মে মাসে ভারত থেকে ২২৬ মে.টন এক্সফ্লোসিভ আমদানির জন্য এলসি খোলে। এরমধ্যে গত বুধবার ৭৫ টন বিস্ফোরক খনিতে পৌঁছেছে। চলতি মাসের শেষে অবশিষ্ট ১৫১ টন বিস্ফোরক বেনাপোল স্থলবন্দরে পৌঁছার কথা রয়েছে। এছাড়া আগামী ১৫ অক্টোবর ১২০ টন এমোনিয়াম নাইট্রেট চট্টগ্রাম বন্দরে পৌঁছার কথা রয়েছে। এসমস্ত মালামাল দিয়ে আগামী ৬ মাস নিরবচ্ছিন্ন খনি পরিচালনা করা যাবে বলে সূত্র জানায়।

মধ্যপাড়া গ্রানাইট মাইনিং কোম্পানি লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) আবু দাউদ মুহম্মদ ফরিদুজ্জামান সকাল ১০ টার দিকে বিস্ফোরক আসার বিষয়টি নিশ্চিত করে ভোরের কাগজকে জানান- সকাল ৭ টা থেকে পাথর উৎপাদন কার্যক্রম শুরু করেছে ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান জিটিসি। বিকেলের শিফট থেকে পাথর উত্তোলন হতে পারে। এখন থেকে তিন শিফটে পূর্ণমাত্রায় গড়ে প্রতিদিন ৫ হাজার মে.টন পাথর উত্তোলন হবে বলে তিনি আশাবাদ ব্যক্ত করেন।

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App