×

সারাদেশ

উলিপুরে আ.লীগের সম্মেলন ২৪ অক্টোবর

Icon

কাগজ প্রতিবেদক

প্রকাশ: ১৩ অক্টোবর ২০২২, ০৮:৫৬ এএম

উলিপুরে দীর্ঘ এক দশক পর ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগের ত্রিবার্ষিক সম্মেলন অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে। আগামী ২৪ অক্টোবর তারিখ নির্ধারণ করা হয়েছে। সম্মেলনের দিন যতই এগিয়ে আসছে দলের অভ্যন্তরে পরিবেশ ততই উত্তপ্ত হচ্ছে। গত শনিবার বিকালে উলিপুর অডিটোরিয়াম হলে সম্মেলন পূর্ব প্রস্তুতিমূলক কর্মিসভায় সাংগঠনিক বিষয়ে নানা অনিয়ম তুলে ধরে বক্তব্য উপস্থাপন করলে সভায় উত্তেজনাকর পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়। বক্তব্যের এক পর্যায়ে উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক গোলাম হোসেন মন্টুকে লক্ষ্য করে দলীয় এক নেতা মঞ্চের দিকে চেয়ার ছুঁড়ে মারলে উপদলীয় কোন্দল প্রকাশ্য রূপ নেয়। উভয়পক্ষের মধ্যে উত্তেজনাকর পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়।

স্থানীয় সংসদ সদস্য অধ্যাপক এম এ মতিনের নেতৃত্বে একাংশ এবং উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান গোলাম হোসেন মন্টুর নেতৃত্বে আরেকাংশ কার্যত এখন মুখোমুখি অবস্থানে রয়েছে। উপজেলা থেকে তৃণমূল ইউনিয়ন ও ওয়ার্ড কমিটি পর্যন্ত উপদলীয় কোন্দল বিস্তৃত হয়েছে। উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যানের ওপর হামলা এবং দলীয় নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে মামলা দায়েরের ঘটনাকে কেন্দ্র করে পরিস্থিতির আরো অবনতি ঘটতে পারে বলে স্থানীয়রা আশঙ্কা করছে। উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান তার ওপর সন্ত্রাসী হামলার জন্য সরাসরি দলের স্থানীয় সংসদ সদস্য অধ্যাপক এম এ মতিনকে দায়ী করে বলেছেন, আমার ওপর হামলার একদিন আগে স্থানীয় সংসদ সদস্যের বাসায় সন্ত্রাসীদের নিয়ে বৈঠক হয়েছে। এরপরই আমার ওপর হামলা হয়।

উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যানের এ অভিযোগ অস্বীকার করে স্থানীয় সংসদ সদস্য অধ্যাপক এম এ মতিন এ প্রতিবেদককে বলেন, এটি সম্পূর্ণ মিথ্যা, বানোয়াট ও কাল্পনিক অভিযোগ। বরং দীর্ঘদিন ধরে চলা দলের ভেতর তার স্বেচ্ছাচারিতাসহ নানা অপকর্ম ও দুর্নীতি আড়াল করতে তিনি নাটক সাজিয়েছেন। তার লাগামহীন দুর্নীতির কারণে দলের ভাবমূর্তি এখন প্রশ্নবিদ্ধ।

এদিকে অভিযোগ, পাল্টা অভিযোগ আর উত্তপ্ত পরিবেশে শেষ পর্যন্ত নতুন নেতৃত্ব নির্বাচনের ক্ষেত্রে উপর মহলের চাপিয়ে দেয়া কমিটি দায়িত্ব পাবে না-কি দলের কাউন্সিলরদের প্রত্যক্ষ ভোটে পরীক্ষিত ও ত্যাগী নেতাদের নির্বাচন করা হবে এ নিয়ে খোদ কর্মীদের মাঝে সংশয় দেখা দিয়েছে। উপজেলা কমিটি ও ইউনিয়ন কমিটির একাধিক সম্ভাব্য কাউন্সিলর নাম প্রকাশ না করার শর্তে এ প্রতিবেদককে বলেন, দলের দুঃসময়ের ত্যাগী নেতাদের নেতৃত্বে বসানোর ক্ষেত্রে কাউন্সিলরদের প্রত্যক্ষ ভোটের বিকল্প নেই। তাদের মতে উপর মহল থেকে কমিটি চাপিয়ে দেয়া হলে দলে আবারো মারাত্মক বিপর্যয় নেমে আসবে। এমনিতেই প্রকাশ্যে উপদলীয় কোন্দলের কারণে দলের অভ্যন্তরে সাংগঠনিক কাঠামো নড়বড়ে ও দুর্বল হয়ে পড়েছে। দলের অভ্যন্তরে উপদলীয় কোন্দল তীব্র হওয়ায় ত্যাগী নেতাকর্মীদের মাঝে তীব্র ক্ষোভ ও হতাশা লক্ষ্য করা গেছে। দলের দপ্তর সম্পাদক নিমাই সিংহী বলেন, ইতোপূর্বে চারটি ইউনিয়ন সম্পর্কে আপত্তি উঠলে তা জেলা কমিটি কর্তৃক গঠিত তদন্ত কমিটির প্রতিবেদনের ভিত্তিতে নিষ্পত্তি করা হয়। এবারে ১৩টি ইউনিয়ন, একটি পৌরসভা ও উপজেলা কমিটি মিলে মোট ৫০৩ জন কাউন্সিলরের তালিকা চূড়ান্ত করা হয়েছে।

এদিকে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক দলের দুঃসময়ের দুজন ক্ষোভের সঙ্গে বলেন, আমরা এখন কর্মীর ভূমিকায় রয়েছি, এখন যাদের কালো টাকা থাকবে তারাই দলে সামনের দিকে এগিয়ে যাবে। আমরা দলের দুঃসময়ে সামনে ছিলাম ভবিষ্যতেও থাকব। তারা অভিযোগ করে বলেন, উপজেলায় উন্নয়ন বরাদ্দের কাজ সঠিকভাবে বাস্তবায়ন না হওয়ায় সরকারের ভাবমূর্তি প্রশ্নবিদ্ধ হচ্ছে। এজন্য প্রতিদিন তৃণমূলের নেতাকর্মীদের মানুষের কাছে নানা প্রশ্নের সম্মুখীন হতে হচ্ছে।

দল টানা তিন মেয়াদ ক্ষমতাসীন থাকায় দুঃসময়ের ত্যাগী নেতাকর্মীরা কাউন্সিলকে সামনে রেখে পাওয়া না পাওয়ার চুলচেরা হিসাব-নিকাশ শুরু করেছেন। বর্তমানে দায়িত্বে থাকা উপজেলার শীর্ষ নেতারা দলীয় অফিসে ঠিকমতো সময় না দেয়ায় ইউনিয়ন ও ওয়ার্ড পর্যায়ের সাধারণ কর্মীরা ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করছেন। সাংগঠনিক পদে থেকে জনপ্রতিনিধি নির্বাচিত হওয়ায় সাংগঠনিক ব্যাপারে আগ্রহ হারিয়ে ফেলায় মাঠের নেতাকর্মীরা তাদের কাছ থেকে কাঙ্ক্ষিত সহযোগিতা পাচ্ছেন না বলেও অভিযোগের আঙুল তোলেন অনেকে। ফলে দলের অভ্যন্তরে সাংগঠনিক শক্তি দুর্বল হয়ে পড়ে। এ অবস্থায় পরীক্ষিত ত্যাগী নেতাদের হাতে দলের দায়িত্ব দেয়া জরুরি বলে মনে করেন মাঠ পর্যায়ের অধিকাংশ ত্যাগী নেতাকর্মী। এ অবস্থায় নেতাকর্মীরা কাউন্সিলের জন্য অধীর আগ্রহে অপেক্ষা করছে।

এবারে সভাপতি হিসেবে সম্ভাব্য প্রার্থীরা হচ্ছেন স্থানীয় সংসদ সদস্য অধ্যাপক এম এ মতিন, অধ্যক্ষ আহসান হাবীব রানা, সাবেক সভাপতি আব্দুল মজিদ হাড়ী ও সাবেক সভাপতি মতিশিউলী।

অন্যদিকে সাধারণ সম্পাদক পদে সম্ভাব্য প্রার্থী হচ্ছেন বর্তমান সাধারণ সম্পাদক বীর মুক্তিযোদ্ধা গোলাম হোসেন মন্টু, পৌর আওয়ামী লীগ সভাপতি জাহাঙ্গীর আলম, মঞ্জুরুল ইসলাম বাবু, সাজাদুর রহমান সাজু তালুকদার, পৌর মেয়র মামুন সরকার মিঠু, রিয়াজুল ইসলাম সুজা ও স ম আল-মামুন সবুজ।

এদের মধ্যে মতিশিউলী বিগত ১৮ সালের জাতীয় নির্বাচনে দলের সভাপতি পদে থেকে সরাসরি দলের বিরুদ্ধে জাপা (মঞ্জু) প্রার্থী তার স্বামী প্রকৌশলী মনজুরুলের বাইসাইকেল মার্কার পক্ষে নির্বাচন করায় দল থেকে তাকে বহিষ্কার করা হয়েছিল। বহিষ্কারাদেশ প্রত্যাহার করা হলেও পরবর্তীতে তাকে কোন পদ দেয়া হয়নি। সাজাদুর রহমান সাজু তালুকদার বিদ্রোহী প্রার্থী হওয়ায় তাকেও বহিষ্কার করা হয়েছিল। ভবিষ্যতে তাদের কোনো পদ দেয়া হবে না বলে দলীয় সিদ্ধান্ত ছিল। ইতোমধ্যে সম্মেলন অনুষ্ঠানের সব প্রস্তুতি সম্পন্ন করা হয়েছে। দলের সাধারণ সম্পাদক গোলাম হোসেন মন্টু বলেন, কোনো ষড়যন্ত্রই সম্মেলন বানচাল করতে পারবে না। যে কোনো মূল্যে সম্মেলন অনুষ্ঠিত হবে।

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App