×

সারাদেশ

শেরপুরে অনুমোদনহীন ইটভাটায় বিপর্যস্ত পরিবেশ

Icon

কাগজ প্রতিবেদক

প্রকাশ: ১১ অক্টোবর ২০২২, ০৪:১৪ পিএম

শেরপুরে অনুমোদনহীন ইটভাটায় বিপর্যস্ত পরিবেশ

শেরপুরে পরিবেশ অধিদপ্তরের অনুমোদন ছাড়াই গড়ে তোলা হয়েছে অবৈধ ইটভাটা। ছবি: ভোরের কাগজ

নিয়ম-নীতির তোয়াক্কা না করে পরিবেশ অধিদপ্তরের অনুমোদন ছাড়াই শেরপুরে গড়ে তোলা হয়েছে অবৈধ ইটভাটা। অবৈধ এ ইটভাটায় জ্বালানি হিসেবে বনের কাঠ পোড়ানোর অভিযোগও অনেক পুরাতন। ফলে ভারসাম্য হারাচ্ছে প্রাকৃতিক পরিবেশ। আর অধিকাংশ ইটভাটাই পরিবেশ অধিদপ্তরের নিয়ম না মেনে লোকালয়ের ১০০ মিটার থেকে এক কিলোমিটারের মধ্যেই নির্মাণ করা হয়েছে। ফলে পরিবেশ বিপর্যয়সহ হুমকির মুখে পড়েছে জনস্বাস্থ্য।

পরিবেশ অধিদপ্তরসহ প্রশাসনের নীরবতা ও নিশক্রিয়তার মুখে শ্রীবরদী উপজেলার কুড়িকাহনিয়া ইউনিয়নে ২০১৯ সালে চালু হয় পরিবেশ বিধ্বংসী আরও একটি ইটভাটা। এনিয়ে শ্রীবরদী উপজেলায় অবৈধ ইটভাটার সংখ্যা ১৬ পেরিয়ে গেল। এসব ইটভাটার নির্গত কালো ধোঁয়ায় চরম হুমকির মুখে পড়েছে ইউনিয়নের প্রত্যন্ত গ্রামের সবুজ শ্যামল ধান ক্ষেত। ইটভাটায় জমির উপরিভাগের মাটি ব্যবহারের ফলে জমি হারাচ্ছে তার উর্বরতা। যার প্রভাব পড়ছে কৃষি উৎপাদনে।

সরেজমিনে উপজেলার কুড়িকাহনিয়া ইউনিয়নের ইন্দিলপুর গ্রামে গিয়ে দেখা যায়, অবৈধ এই ইটভাটার ২২০ মিটারের মধ্যে অবস্থিত তেজার কান্দি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, ৪০০ মিটারের মধ্যে অবস্থিত ইন্দিলপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় ও ইন্দিলপুর আব্দুল মজিদ উচ্চ বিদ্যালয়, ৬০০ মিটারের মধ্যে অবস্থিত ইন্দিলপুর বালিকা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় এবং ১০০ মিটারের মধ্যে অবস্থিত ইন্দিলপুর বালিকা উচ্চ বিদ্যালয় এবং ইটভাটার সিমানা প্রাচিরের সাথেই লাগানো তেজার কান্দি সেকান্দর আলী কওমি মাদ্রাসা। এছাড়াও এসব জনবসতি ও শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের আশপাশ ঘিরে রয়েছে বিস্তীর্ণ কৃষি জমি। এতে চরম ভাবে হুমকির মুখে শিশু শিক্ষার্থীদের স্বাস্থ্য সুরক্ষা।

ভাটার পার্শ্ববর্তী ইন্দিলপুর আব্দুল মজিদ উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক নূর হোসেন বলেন, জনবসতি পূর্ণ এলাকায় ইটভাটা করার অনুমতি স্থানীয় প্রশাসন কিভাবে দিয়েছে আমাদের বোধগম্য নয়। ইটভাটার কারণে বিদ্যালয়ের কোমলমতি শিশু শিক্ষার্থীদের স্বাস্থ্য ঝুঁকি বাড়ছে। অনেকেই আক্রান্ত হচ্ছেন হাঁপানি, এলার্জি, সর্দি-কাশিসহ বিভিন্ন রোগে। আমরা দ্রুত সময়ের মধ্যে এই ভাটা অপসারণ দাবি করছি।

সিভিল সার্জন ডা. অনুপম ভট্টাচার্য্য বলেন, ইদানীং যত্রতত্র তৈরি করা হচ্ছে ইটভাটা। এমনকি আবাসিক এলাকার মধ্যে একেবারে শহরের কাছেই গড়ে উঠছে এসব ভাটা। এতে ভাটার যে কালো ধোঁয়া নির্গত হচ্ছে তাতে পরিবেশ ও জনস্বাস্থ্যের উপর ব্যাপক আকারে প্রভাব পরছে। বিশেষ করে শিশু, নারী ও বৃদ্ধদের মধ্যে প্রবেশ করে অনেক ধরনের রোগ দেখা দিচ্ছে। জনস্বাস্থ্য রক্ষায় জরুরি পদক্ষেপ নেয়া প্রয়োজন।

এ ব্যাপারে শ্রীবরদী উপজেলা নির্বাহী অফিসার মো. ইফতেখার ইউনুস বলেন, আমি সদ্য যোগদান করার এই ইটভাটার ব্যাপারে বিস্তারিত জানিনা। তবে দ্রুত সময়ের মধ্যে তাদের ব্যাপারে তদন্ত পূর্বক আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।

শেরপুর পরিবেশ অধিদপ্তরের তথ্য মতে জেলায় মোট ইটভাটার সংখ্যা ৬৪টি। এগুলো মধ্যে শেরপুর সদর উপজেলায় ৩৫টি, শ্রীবরদী উপজেলায় ১৭টি, ঝিনাইগাতী উপজেলায় একটি, নালিতাবাড়ি উপজেলায় দুইটি এবং নকলা উপজেলায় নয়টি। তার মধ্যে নিবন্ধিত ইটভাটার সংখ্যা মাত্র তিনটি।

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App