কক্সবাজারে প্রতিমা বিসর্জন অনুষ্ঠান সনাতন ধর্মাবলম্বী ও পর্যটকদের পদভারে মুখরিত হয়েছে। গতকাল বিকাল ৫টায় লাখো মানুষের অংশগ্রহণে বিশ্বের দীর্ঘতম সমুদ্রসৈকতে প্রতিমা বিসর্জন দেয়া হয়েছে। সনাতন ধর্মাবলম্বীদের সবচেয়ে বড় ধর্মীয় উৎসব শারদীয় দুর্গাপূজার শেষ দিন বিজয়া দশমীতে সৈকতের লাবণী পয়েন্টে দেবী দুর্গাকে বিসর্জন দেন সনাতন ধর্মাবলম্বীরা। গত বছর করোনা মহামারির থাবায় এই উৎসব উল্লেখযোগ্যভাবে পালন করতে পারেননি এই সম্প্রদায়ের মানুষ। যে কারণে এ বছর ব্যাপক উৎসাহ-উদ্দীপনার মধ্য দিয়ে পালন করেছেন সনাতন ধর্মাবলম্বীরা। তবে হিন্দু সম্প্রদায়ের পাশাপাশি দেবী দুর্গা বিসর্জনে দেখা গেছে দেশি-বিদেশি পর্যটকসহ সব স¤প্রদায়ের মানুষকে।

প্রতিমা বিসর্জন অনুষ্ঠানকে ঘিরে সৈকতের লাবণী পয়েন্টে বুধবার দুপুর ২টার পর থেকে জেলার উখিয়া, টেকনাফ, সদর ঈদগাহ, চৌফলদণ্ডী ছাড়াও নাইক্ষ্যাংছড়ি থেকে শোভাযাত্রা সহকারে প্রতিমা আসতে শুরু করে। একপর্যায়ে প্রতিমায় ভরে যায় সমুদ্রসৈকতের অনুষ্ঠানস্থল। লাবণী পয়েন্টে বিকাল ৩টা থেকে এক অনুষ্ঠানের আয়োজন করে কক্সবাজার জেলা পূজা উদযাপন পরিষদ। বিকাল প্রায় ৫টা পর্যন্ত সৈকতের বালুচরে রাখা দুর্গা প্রতিমা ঘিরে চলে ভক্তদের শেষ আরাধনা। শুধু তাই নয়, নাচে-গানে এক অন্য রকম আনন্দমুখর পরিবেশ সৃষ্টি হয় বিশ্বের দীর্ঘতম এ সৈকতে। অনুষ্ঠানকে ঘিরে সমাগম ঘটে পর্যটকসহ জেলার বিভিন্ন স্থান থেকে আসা লাখো মানুষের।

আয়োজকরা জানান, শুধু সৈকতের লাবণী পয়েন্টে বিভিন্ন উপজেলা থেকে আসা শতাধিক প্রতিমা বিসর্জন দেয়া হয়েছে। একই সময়ে কক্সবাজারের রামুর বাঁকখাল নদী, চকরিয়ার মাতামুহুরী, টেকনাফের সাগর ও নাফনদী, উখিয়ার ইনানীসৈকত এবং রেজুনদীতে প্রতিমা বিসর্জন দেয়া হয়েছে। রামু ও চকরিয়ায় পৃথক প্রতিমা বিসর্জন অনুষ্ঠিত হয়েছে।

কক্সবাজার জেলা পূজা উদযাপন পরিষদের সভাপতি উজ্জ্বল কর বলেন, মা দুর্গার কাছে আমাদের বিশেষ প্রার্থনা ছিল প্রাকৃতিক বিপর্যয় থেকে মানুষ যেন রক্ষা পায়। মা আমাদের প্রার্থনা শুনেছেন। যে কারণে আবহাওয়া অনুকূলেই রয়েছে।

বিকাল সাড়ে ৩টার দিকে সৈকতের লাবণী পয়েন্টের উন্মুক্ত মঞ্চে শুরু হয় বিসর্জনের আনুষ্ঠানিকতা। কক্সবাজার জেলা পূজা উদযাপন পরিষদের সভাপতি উজ্জ্বল করের সভাপতিত্বে এবং সাধারণ সম্পাদক বেল্টু দাশের সঞ্চালনায় অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন শিক্ষা উপমন্ত্রী মহিবুল হাসান চৌধুরী নওফেল এমপি। এতে বিশেষ অতিথি ছিলেন কেন্দ্রীয় আওয়ামী লীগের ধর্মবিষয়ক সম্পাদক এডভোকেট সিরাজুল মোস্তফা, আশেক উল্লাহ রফিক এমপি, জেলা প্রশাসক মো. মামুনুর রশিদ, কক্সবাজার জেলা আওয়ামী লীগের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি এডভোকেট ফরিদুল ইসলাম চৌধুরী ও সাধারণ সম্পাদক মুজিবুর রহমান।

অনুষ্ঠানে মন্ত্রী বলেন, বাংলাদেশ সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির দেশ। সব ধর্মের মানুষের অংশগ্রহণে ঈদ, পূজা, প্রবারণা ও বড়দিন পালিত হয়। বিজয়া দশমীর এ মহামিলন মেলার উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত।